লেখকঃ পাষ্টর জনসন সরকার।
সমালোচকের দাবিঃ
আদিপুস্তকে পৃথিবী সৃষ্টির বর্ণনা শেষে লেখেছে: ‘‘পরে ঈশ্বর আপনার নিমিত্ত বস্ত্ত সকলের প্রতি দৃষ্টিপাত
করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম (very
good)। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে ষষ্ঠ দিবস হইল।’’ (আদিপুস্তক ১/৩১)
জুবিলী বাইবেল: ‘‘পরমেশ্বর তাঁর তৈরি করা সমস্ত কিছুর দিকে তাকিয়ে দেখলেন; আর সত্যি, সেই সমস্ত কিছু খুবই মঙ্গলময়...।’’
মো-০৬: ‘‘আল্লাহ তাঁর নিজের তৈরি সব কিছু
দেখলেন। সেগুলো সত্যিই খুব চমৎকার হয়েছিল।’’
এ থেকে আমরা জানছি
যে, সৃষ্টিজগত স্রষ্টার
দৃষ্টিতে very good: অতি উত্তম, মঙ্গলময়
ও চমৎকার বলে প্রতিভাত হল। কিন্তু এর বিপরীতে আদিপুস্তকেরই পরবর্তী ৬ অধ্যায় বলছে
যে, ঈশ্বরের সৃষ্টি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অতি মন্দ, অমঙ্গময় ও অ-চমৎকার বলে গণ্য হয়। ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির জন্য
অনুশোচনা ও অনুতাপে দগ্ধ হন এবং অন্তরের ব্যাথায় আক্রান্ত হন: ‘‘আর সদাপ্রভু দেখিলেন, পৃথিবীর মানুষের দুষ্টতা বড়,
এবং তাহার অমত্মঃকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ। তাই
সদাপ্রভু পৃথিবীতে মনুষ্যের নির্মাণ প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন (repented), ও মনঃপীড়া পাইলেন (grieved at his heart)।’’
(আদিপুস্তক ৬/৫-৬)
জুবিলী বাইবেল: ‘‘পৃথিবীতে যে তিনি মানুষকে নির্মাণ
করলেন, তার জন্য প্রভুর দুঃখ হল, তিনি
মনঃক্ষুণ্ণ হলেন।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘মাবুদ অন্তরে ব্যাথ্যা পেলেন। তিনি পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন বলে
দুঃখিত হয়ে বললেন।’’
সর্বজ্ঞ
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ক্ষেত্রে এ বড় অদ্ভুত বৈপরীত্য! তিনিই সৃষ্টিকে খুব ভাল বলে
গণ্য করছেন এবং তিনিই কিছুদিন পরে সে সৃষ্টিকে মন্দ ও অমঙ্গলময় বলে গণ্য করছেন এবং
অনুতপ্ত, দুঃখিত,
ব্যথিত ও মনক্ষুণ্ণ হচ্ছেন!
জবাবঃ
ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] যখন
সৃষ্টি করেন তখন সব কিছুই উত্তম ছিল[1]
কিন্তু যখন মানুষ পাপ করে তখন ইয়াওয়ে এলোহীম ভূমিকে অভিশপ্ত করেছেন[2]
যার কারনে তাঁর সুন্দর সৃষ্টি তখন আর উত্তম থাকল না, কারন আদম এবং হবা তাঁর আদেশ
অমান্য করে নিষিদ্ধ গাছে ফল খেয়েছিল।[3]
সেই জন্য তিঁনি মানুষকে মৃত্যুর বিধান দিলেন এবং বললেন “যে পর্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে; তুমি তো তাহা হইতে গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।”[4] কুরআনের মধ্যেও এই কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে, “মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, মাটিতেই আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব এবং মাটি থেকেই তোমাদেরকে পুনরায় বের করে আনব। আল-বায়ান”[5]
ইয়াওয়ে এলোহীম যখন সব কিছু সৃষ্টি করেছিলেন তখন সব কিছু উত্তম ছিল যেহেতু তা ছিল সর্বশক্তিমানের সৃষ্টি। কিন্তু মানুষ নিজের পাপের কারনে অভিশপ্ত হয়েছে এবং অনেক আশীর্বাদ হারিয়েছে।
এখন আমরা দেখব ইয়াওয়ে এলোহীম কি সত্যিই অনুশচনা করেছেন?
আদিপুস্তক ৬:৬ পদে “অনুশোচনার” জন্য যে হিব্রু শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা হলো נָחַם
(nacham)যার একটি অর্থঃ সান্তনা (comforted)
যা পবিত্র বাইবেলে অনেক স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে যেমনঃ
১। আদিপুস্তক ৫:২৯;
לֵאמֹ֑ר זֶ֞ה֠ יְנַחֲמֵ֤נוּ מִֽמַּעֲשֵׂ֙נוּ֙ וּמֵעִצְּב֣וֹן
KJV: saying, This
[same] shall comfort us concerning our work
২।আদিপুস্তক ২৪:৬৭;
לְאִשָּׁ֖ה וַיֶּאֱהָבֶ֑הָ וַיִּנָּחֵ֥ם יִצְחָ֖ק אַחֲרֵ֥י
KJV: her: and Isaac was comforted after
এবং আদিপুস্তক ৬:৬ পদে যে “মনঃপীড়া” জন্য ব্যবহৃত হয়েছে তা হলো עָצַב (atsab) যার বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে “মনঃপীড়া” অনেক ইংরেজি অনুবাদে grieved at his heart লেখা হয়েছে। তাই অনেকে বলেছেন আপনাদের ঈশ্বর ““মনঃপীড়া” করেন এটা কেমন কথা!!! কিন্তু হিব্রু শব্দ עָצַב (atsab) পবিত্র বাইবেলে অনেক জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে যেমনঃ
১ রাজবলী১:৬;
এখানে এই শব্দটির অনুবাদ করা হয়েছে “অসন্তুষ্ট” হিসাবেঃ
তাহার পিতা কোন সময়ে তাহাকে এই কথা বলিয়া অসন্তুষ্ট করেন নাই যে, তুমি কেন এমন করিয়াছ? এবং সেও পরম সুন্দর পুরুষ ছিল; আর অবশালোমের পরে তাহার জন্ম হয়। -কেরী
KJV: And his father had not displeased him at any time
তাই আমরা বুঝতে
পারি যে ইয়াওয়ে এলোহীম সেই সময়ের পাপের কারনে তার
সৃষ্টির উপরে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং তার নিজের মনকে “শান্তনা”
দিয়েছিলেন তিনি “অনুশোচনা” করেন নি এবং মনঃপীড়া পান নি। একটি শব্দের অনেক অর্থ থাকে ইংরেজি শব্দ Patient এর অর্থ “রোগী”
আবার এই একি শব্দের অর্থ “ধৈর্যশীল” তাই আমরা যে কোন শব্দের একটি অর্থ ব্যবহার করে
সিদ্ধাতে আসতে পারিনা।
then God laid it to heart that
he had made man upon the earth, and he pondered it deeply.
এবারে আমরা দেখব স্রষ্টার কি মনে আনন্দ/কষ্ট হতে পারে কিনা?
অনেকে দাবি করেন স্রষ্টার মনে আনন্দ/কষ্ট হতে পারে না! যদিও কথাটি সত্য নয়। পবিত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন যখন কোন পাপী ভাল পথে আসে তখন স্বর্গে আনন্দ হয়ঃ
“তদ্রূপ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, একজন পাপী মন ফিরাইলে ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়।”[6]
এছাড়াও প্রভু
যীশু খ্রীষ্ট উপমার দ্বারা তা বুঝিয়েছেনঃ “কিন্তু
আমাদের আমোদ প্রমোদ ও আনন্দ করা উচিত হইয়াছে, কারণ তোমার এই ভাই মরিয়া গিয়াছিল,
এখন বাঁচিল; হারাইয়া গিয়াছিল, এখন পাওয়া গেল।”[7]
প্রভু যীশু খ্রীষ্টের কথার প্রতিধ্বনি হাদিসেও রয়েছে যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে আল্লাহ ভালবাসেন এবং অপছন্দ করেনঃ (যদিওপচ্ছন্দ-অপচ্ছন্দ করা মানুষের একটি গুন):
সহি মুসলিম ৬৪৬৫
যুহায়র
ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন জিবরীল (আলাইহিস
সালাম) কে ডেকে পাঠান এবং বলেন, আমি অমুককে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাস। তিনি
বলেন, তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাকে ভালবাসেন। এরপর তিনি আসমানে ঘোষণা দিয়ে
বলেন, নিশ্চয়ই আল্লহ অমুককে ভালবাসেন, সুতরাং আপনারাও তাকে ভালবাসুন। তখন আসমানের
অধিবাসীরা তাকে ভালবাসে। তিনি বলেন, এরপর পৃথিবীবাসীর অন্তরে তার গ্রহনযোগ্যতা
স্থাপিত হয়, (সে মকবুল বান্দা হিসেবে গণ্য হয়)।
আর আল্লাহ
যখন কোন বান্দাকে অপছন্দ করেন তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে ডেকে বলেন, আমি অমুক
বান্দাকে অপছন্দ করি, তুমিও তাকে অপছন্দ কর। তিনি বলেন, তখন জিবরীল (আলাইহিস
সালাম) তাকে অপছন্দ করেন। এরপর তিনি আসমানের অধিবাসীদের প্রতি ঘোষণা দিয়ে বলেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা অমুককে অপছন্দ করেন। সুতরাং আপনারাও তাকে অপছন্দ করুন। তিনি
বলেন, তখন তারা তার তাকে অপছন্দ করেন। এরপর পৃথিবীবাসীর অন্তরে তার প্রতি
অপছন্দনীয়তা স্থাপিত হয়।[8]
কুরআনে
দেখা যায় আল্লাহ রেগেও যান তারও রাগ আছে (যদিও পছন্দ-অপছন্দ করা মানুষের একটি গুন):
তাদের পথ, যাদের উপর আপনি
অনুগ্রহ করেছেন। যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন।যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়। আল-বায়ান[9]
কুরআন হাদিসেও আমরা দেখতে
পাচ্ছি যে মানুষের মতন আল্লাহর পচ্ছন্দ/ অপচ্ছন্দ আছে মানুষের মতন তারও রাগ/ক্রোধ
আছে। তাই বাইবেলের ঈশ্বর যদি মানুষের খারাপ কাজ দেখে অসুন্তষ্ট হন তবে
আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? তিনি ত রোবট নন যে তার কোন অনুভূতি থাকবে না। পবিত্র বাইবেল
বলে ইয়াওয়ে এলোহীম মানুষকে তার সাদৃশ্যে সৃষ্ট করেছেন যার জন্য ইয়াওয়ে এলোহীমের
অনেক গুনাবলি মানুষের মধ্যে রয়েছেঃ “পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মাণ করি;
আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত
পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্তৃত্ব করুক।”[10]
হাদিসেও বিষয়টি উল্লেখিত
রয়েছেঃ
মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫২৫-[১৬] উক্ত রাবী
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে মারধর করে, তাহলে যেন
মুখমণ্ডলে না মারে। কেননা, আল্লাহ
তা‘আলা আদম (আঃ)-কে তার আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[11]
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক
ফাউন্ডেশন)৬৯০০। মুহাম্মদ ইলূন রাফি'
(রহঃ) ... হাম্মাম ইবন মুনাব্বি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হচ্ছে (সে সব
হাদীস) যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
আমাদের শুনিয়েছেন। (এভাবে) তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেন। এর মধ্যে একটি হল এ ই
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম) কে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি
করেছেন। তার দৈর্ঘ্য হল ষাট হাত। …”
তাই মানুষের সাথে স্রষ্টার কিছু গুনাবলির মিল থাকতেই পারে এর দ্বারা সৃষ্টার সম্মানের হানি হয় না বরং স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া যায় যে আমরা তাঁর সাদৃশ্যে সৃষ্টি হয়েছি।
[1]
আদিপুস্তক১:৩১;
[2]
আদিপুস্তক৩:১৮-১৯;
[3]
আদিপুস্তক৩:৬;
[4]
আদিপুস্তক৩:১৯;
[5]
সূরা২০:৫৫;
[6]
লূক১৫:১০;
[7]
লূক১৫:৩২;
[9]
সূরা ১:৭;
[10]
আদিপুস্তক১:২৬;
0 coment rios: