Saturday, October 17, 2020

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি পৃথিবীতে অশান্তি দিতে এসেছেন?

লেখকঃ P.Johnson Sarkar.

দাবিঃ মথি ১০:৩৪-৩৬; এবং লূক ১২:৪৯-৫৩; অনুসারে যীশু খ্রীষ্ট পৃথিবীতে আশান্তি দিতে এসেছেন

 উত্তরঃ

“খড়গ[তরবারি] দিতে এসেছি”

পবিত্র বাইবেলে খড়গ[তরবারি] অনেক সময়ে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয় যেমন লূক ২:৩৫; যেখানে শিমিয়োন নামক একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন যিনি পবিত্র আত্মার আবেশে ভবিষ্যৎবানী করেন, ‘খ্রীষ্টের মৃত্যুর সময়ে মরিয়মের অন্তর খড়গ বিদ্ধ হবে’, “আর তোমার নিজের প্রাণও খড়গে বিদ্ধ হইবে-যেন অনেক হৃদয়ের চিন্তা প্রকাশিত হয়”[লূক ২:৩৫;] এখানে তরবারি কথাটি দুঃখ-কষ্টকে চিহ্নিত করে এমন কি পবিত্র বাইবেল সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করে পরিত্রানের প্রচারের জন্য যে অস্ত্র-সস্ত্রের কথা বলা হয় তা কোন টাই জাগতিক অস্ত্র-সস্ত্র নয় বরং তা সবই আধ্যাত্বিক [২করিন্থীয় ১০:৪-৫; ইব্রীয় ৪:১২;]

পবিত্র শাস্ত্রে এমন অনেক উদাহরন আমরা দেখতে পাই যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, খ্রীষ্টকে গ্রহন করলে জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসবে

“জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস কর, আমি জগতকে জয় করেছি” [যোহন ১৬:৩৩;]

“সেই সময়ে ক্লেশ দিবার জন্য তোমাদিগকে সমর্পন করিবে ও তামাদিগকে বধ করিবে, আর আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদের দ্বেষ করিবে”[মথি ২৪:৯;]

“আমি [প্রভু যীশু খ্রীষ্ট] তাহাকে [পৌলকে] দেখাইয়া দিব, আমার নামের জন্য তাহাকে কত ক্লেশ ভোগ করিতে হইবে[প্রেরিত ৯:১৬;]

“অগ্নি নিক্ষেপ করিতে আসিয়াছি”

ইয়াওয়ে এলোহীমের [সদাপ্রভু ঈশ্বরের] বাক্যকে পবিত্র বাইবেলে আগুনের সাথে তুলনা দেওয়া হয়েছে [যিরমিয় ২৩:২৯;] এছাড়াও ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] নবী যিরমিয়কে বলেছেন, “এই কারনে বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমার এই কথা বলিতেছি, এই জন্য দেখ, আমি তোমার মুখস্থিত আমার বাক্যকে অগ্নিস্বরূপ ও এই জাতিকে কাষ্ঠস্বরূপ করিব, উহা ইহাদিগকে গ্রাস করিবে[যিরমিয় ৫:১৪;]

এখানে ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] তার বাক্যকে অগুনের সাথে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন তার বাক্য হবে পাপীদের জন্য কাঠের স্বরূপ যা তাদের পুড়িয়ে ছারখার করে দেবেতার মানে এই নয় যে, ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] স্বর্গ হতে আগুন পাঠিয়ে পাপীদের ধ্বংস করবেনতার পবিত্র বাক্য হচ্ছে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী যা প্রকাশিত হলে মিথ্যার বিলুপ্তি ঘটে এমন কি নবী যিরমিয় বলেছেন, যখন তিনি ইয়াওয়ে এলোহীমের [সদাপ্রভু ঈশ্বরের] বাক্য প্রচার করেন না তখন তার সারা শরিরে সেই অগ্নি ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি তা সহ্য করতে পারেন না [যিরমিয় ২০:৯;] প্রভু যীশু খ্রীষ্ট মৃত হতে জীবিত হবার পরে তার দুজন শিষ্যকে পূর্ন শাস্ত্র বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তখন তারাও তাদের অন্তরে সেই আগুনে উত্তাত অনুভব করে ছিলেন [লুক ২৪:৩২;] পবিত্র শাস্ত্রের অনুসারে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যখন বলেছেন , “অগ্নি নিক্ষেপ করিতে আসিয়াছি” তার অর্থ হচ্ছে ‘তিনি পাপের রাজ্যত্বকে এই জগত হতে বিলুপ্ত করতে এসেছেন’ মানব পাপে পতীত হবার সময়ে ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছিল [ আদিপুস্তক ৩:১৫;] কারন তিনি সয়ং ঈশ্বরের বাক্য [যোহন ১:১;১৪ প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৩;] আর ঈশ্বরের বাক্যকে আগুনের সাথে অনেক বার তুলনা করা হয়েছে [যিরমিয় ৫:১৪; যিরমিয় ২০:৯; যিরমিয় ২৩:২৯; লুক ২৪:৩২;] আর যখন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন , “অগ্নি নিক্ষেপ করিতে আসিয়াছি” তার অর্থই তিনি ঈশ্বরের বাক্যকে এই মন্দ জগতে প্রতিষ্টিত করতে এসেছেন পবিত্র বাইবেল আমাদেরকে বলে, “সমস্ত জগত সেই পাপ আত্মার [শয়তানের] মধ্যে শুয়ে আছে” এবং শয়তান হলো এই জগতের খনস্থায়ী ‘অধিপতি’ [যোহন ১২:৩১; ১৪:৩০; ১৬:১১;] শয়তান এটা জানে যে তার ‘রাজ্যত্ব কাল সংক্ষিপ্ত’[প্রকাশিত বাক্য ১২:১২;] প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যেখানে তার ১২ শিষ্যদের বলেছিলেন “অগ্নি নিক্ষেপ করিতে আসিয়াছি” কথা গুলো সমাপ্ত করে তিনি জনগেনর কাছে বললেন ,“কপটীরা তোমরা পৃথিবীর ও আকাশের ভাব বুঝিতে পার, কিন্তু এ সময় বুঝিতে পার না, এ কেমন?” [লূক১২:৫৬;] সেই জন্য প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তার বানী প্রচারের আরাম্ভে বলেছিলেন “কাল [সময়] সম্পূর্ন হইল, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট হইল; তোমরা মন ফিরাও, ও সুসমাচারে বিশ্বাস কর”[মার্ক১:১৪-১৫;]

দিক্ষা গুরু যোহন প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, “আমি তোমাদিগকে জলে বাপ্তাইজ করিতেছি বটে, কিন্তু আমার পশ্চাৎ যিনি আসিতেছেন, তিনি আমা অপেক্ষা শক্তিমান; আমি তাঁহার পাদুকা বহিবার যোগ্য নহি; তিনি তোমাদিগকে পবিত্র আত্মায় ও অগ্নিতে বাপ্তাইজ করিবেন তাঁহার কুলা তাঁহার হস্তে আছে, আর তিনি আপন খামার সুপরিস্কার করিবেন, এবং আপন গোম গোলায় সংগ্রহ করিবেন, কিন্তু তুষ [পাপ] অনির্বান অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবেন[মথি ৩:১২;] অর্থাৎ প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এই জগতের পাপি লোকেদের পাপ সকল ধব্বংস করবেন এবং তার অনুসারিদের অনন্ত জীবন দান করবেন [যোহন ৩:১৬-১৭; যোহন১০:৯;]

 

“পরিবার পরিজন হতে বিচ্ছেদ ঘটাইতে আসিয়াছি”

এই কথাটি উল্লেখিত রয়েছে মিখা ৭:৬; “কেননা পুত্র পিতাকে লঘুজ্ঞান করে, কন্যা আপন মাতার,ও পুত্রবধূ আপন শাশুড়ীর বিরুদ্ধে উঠে, আপন আপন পরিবার পরিজনই মনুষ্যদের শত্রু এটি আমাদের পাপময় জগতের সত্যতা তুলে ধরেছে সমগ্র পৃথিবীতেই এই ধরনের সমস্যা বিরাজমান রয়েছে যা অস্বীকার কারার কোন পথ নেই অন্যদিকে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যে বিভেদের [বিচ্ছেদের] কথা বলেছেন তা তিনি শুধুমাত্র তার ১২ জন শিষ্যকে বলেছিলেন সকলকে নয় [মথি ১১:১;] তাই এই দাবিটি সকলকের জন্য প্রযোজ্য নয় আর যুক্তির খাতিরে আমরা যদি মেনেও নেই যে এটা সবার জন্য তাও এতে কোন সমস্যা নেই তার কারন পৃথিবীতে যত ধর্ম শিক্ষক রয়েছে তাদের থেকে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শিক্ষা এই সম্পূর্ন আলাদা, তাই তার শিক্ষা যদি কোন পরজাতির লোক গ্রহন কবরে তখন তার পরিবার তার অত্নীয়স্বজন তার শত্রুতে রুপান্তর হয়ে উঠবে পরজাতিদের মধ্য হতে যারা খ্রীষ্টকে গ্রহন করেছেন তাদের পরিবার তার অত্নীয়স্বজন তার শত্রুতে রুপান্তর হয়েছে নবী যিরমিয় বলেছেন, যখন তিনি ইয়াওয়ে এলোহীমকে [সদাপ্রভু ঈশ্বরকে] পূর্ন রূপে বিশ্বাস করেন তখন সবাই তাকে উপহাস করা আরাম্ভ করে, তাকে ঠাট্টা করে এমন কি তিনি বলেছেন ইয়াওয়ে এলোহীমের [সদাপ্রভু ঈশ্বরের] বাক্যের জন্য তাকে সব সময়ে টিটকারি ও বিদ্রুপ করা হয় [যিরমিয়২০:৭-৮;]

প্রভু যীশূ খ্রীষ্টের শিষ্য স্থিফান যিনি ইহুদি ছিলেন তিনি প্রভুর সুমাচার প্রচার করার জন্য তার নিজের জাতের লোকেরাই তাকে পাথর মেরে হত্যা করেছিল [প্রেরিত ৭:৫৬-৬০;]

যার এই বাক্যের সমালোচনা করেন তাদের মধ্যে একজনও যদি খ্রীষ্টকে গ্রহ্ন করে তবে তার পবিরাব শত্রুতে রুপান্তরিত হবে এবং তাকে হত্যা করবে কারন এমন আদেশ তাদের দেওয়া আছে “যে ব্যক্তি তার ইসলাম ধর্মকে পরিবর্তন করল, তখন তাকে হত্যা কর” Sahih Bukhari 9:84:57;, Sahih Bukhari 9:84:58;

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, “শান্তি আমি তোমাদের কাছে রাখিয়া যাইতেছি, আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি; জগত যেরূপ দান করে আমি সেই রূপ করি না [যোহন ১৪:২৭;] প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন তাঁর  দেওয়া শান্তি এবং জাগতিক শান্তি এক নয় দুটি আলাদা আমার যদি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শান্তি গ্রহন করি তবে আমরা জাগতিক শান্তি হারাব কিন্তু আমরা যদি জাগতিক শান্তি গ্রহন করি তবে আমরা আধ্যাত্মিক শান্তি হারাব প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যখন তার শিষ্যদের বলেছিলেন তিনি এই পৃথিবীতে তিনি শান্তি দিতে আসেন নি খড়গ দিতে এসেছেন [মথি ১০:৩৪-৩৬; এবং লূক ১২:৪৯-৫৩;], এটা ছিল জাগতিক শান্তির কথা আধ্যাতিক শান্তির নয় আধ্যাত্মিক শান্তি একমাত্র তিনি দিতে পারেন [যোহন১৪:২৭;] আমেন  

 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: