Saturday, May 6, 2023

এলোহিম(ঈশ্বর) কেন ইস্রায়েল জাতির মধ্য দিয়ে পথের সন্ধান, ব্যবস্থা(শরীয়ত) ও উদ্ধার দিলেন?

 


এলোহিম(ঈশ্বর) কেন ইস্রায়েল জাতির মধ্য দিয়ে পথের সন্ধান, ব্যবস্থা(শরীয়ত) ও উদ্ধার দিলেন?


অনেক অবিশ্বাসী, নাস্তিক, সংশয়বাদী ও বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মাঝে এই প্রশ্ন আসে কেন এলোহিম ইয়াওয়ে(ঈশ্বর ইয়াওয়ে) কেবলমাত্র ইস্রায়েল(ইহুদী) জাতির মধ্য দিয়েই এত নিদর্শন, শরীয়ত(ব্যবস্থা), নবী, পরিত্রাণ দিতে যাবেন? অন্য জাতিদের মধ্য দিয়ে তিনি কেন এত কিছু করলেন না? এলোহিম কি এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দেন নি? এরকম নানা প্রশ্ন অনেক মানুষের মনে আসাটাই স্বাভাবিক। 

আমরা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, অনেক প্রাচীণকাল থেকেই সেই সব জাতির মাঝে এমন কিছু মৌলিক নৈতিক বিধান প্রচলিত ছিল যা বাইবেলের নৈতিকতার সাথে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন আমরা দেখতে পাই বিবাহের ব্যবস্থা, ব্যাভিচারের বিরূদ্ধে বিধিনিষেধ, চুরি না করার বিধান, হত্যা না করার বিধান, অন্যায় বিচার না করার বিধান, ন্যায়পরায়ণতার বিধান, ইত্যাদি প্রায় সকল জাতিগোষ্ঠীরই একটা কমন মানদন্ড ছিল। অর্থাৎ এই সকল বিষয়ের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, এলোহিমই এই সকল জাতির মাঝে এই রকম নীতি নৈতিকতার বিষয়গুলো জাগ্রত করেছিলেন যেন তারা পরিপূর্ণতার একটা সময় না আসা পর্যন্ত এলোহিমের ন্যুনতম নৈতিক মানদন্ডে চলতে পারে। এলোহিম যে সুপ্রাচীণকালে মানবজাতিকে এরকম নৈতিক শিক্ষা জাগ্রত করেছিলেন তার প্রমাণ আমরা বাইবেলেই পাই। যেখানে(নোহের জলপ্লাবনের আগে) এলোহিম ইয়াওয়ে যে তাঁর আত্মা দ্বারা মানুষকে চালিত করতে উদ্যোগী ছিলেন এর নিদর্শন দেখতে পাই-



3তাহাতে সদাপ্রভু কহিলেন, আমার আত্মা মনুষ্যদের মধ্যে নিত্য অধিষ্ঠান করিবেন না, তাহাদের বিপথগমনে তাহারা মাংসমাত্র; পরন্তু তাহাদের সময় এক শত বিংশতি বৎসর হইবে। 

আদিপুস্তক ৬ঃ৩


কিন্তু সময় আসলে পরে এলোহিম ইয়াওয়ে আব্রাহামের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েল জাতিকেই বেছে নিয়েছিলেন নিজ ব্যবস্থা, পরাক্রম, আশীর্বাদ দেয়ার জন্য যা পরে ইয়েহশুয়া হা মাসিয়াখের(যীশু খ্রীষ্টের) মধ্য দিয়ে সারা জগতের জন্য পূর্ণতা পায়। 

ইস্রায়েলের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশের পূর্বে বিভিন্ন মানুষ এলোহিম ইয়াওয়েকে জানার জন্য সাধনা ও ত্যাগ স্বীকার করলে এলোহিম তাদেরকে নিজ সম্পর্কে অল্প পরিমাণ জ্ঞান দিয়েছিলেন। ব্যক্তিবিশেষ এলোহিম সম্পর্কে কিছু কিছু ধারণা পেয়েছিল। হনোক এমনই একজন মানুষ ছিলেন। আবার ইস্রায়েল জাতি কনান দেশে প্রবেশ করতে যাবার প্রাক্ক্যালে আমরা নবী বিলিয়মকে দেখতে পাই, যিনি ইস্রায়েলী ছিলেন না কিন্তু এলোহিমের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল(গণনাপুস্তক ২২ঃ৫-১২) বিধায় এলোহিম তাঁকে ইস্রায়েলকে অভিশাপ দিতে বাধা প্রদান করেছিলেন। সুতরাং ইস্রায়েল জাতির বাইরেও নবীর অস্তিত্ব ছিল এটা যেমন সত্য তেমনি একমাত্র ইস্রায়েল জাতির মধ্য দিয়েই এলোহিম ইয়াওয়ে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন এটাও সত্য। 


কিন্তু এখানে মূল প্রশ্ন যা আসে তা হলো এলোহিম ইয়াওয়ে কেন ইস্রায়েল জাতির মধ্য দিয়ে এত নবী, ব্যবস্থা বা শরীয়ত ও রহমত দিলেন? অন্য কোন জাতির মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা ও রহমত/আশীর্বাদ কেন তিনি দিলেন না? এর জবাব আমরা নিজেদেরকেই যদি একটা প্রশ্ন করি তাহলে জানতে পারব। এলোহিম ইয়াওয়ে যদি বিভিন্ন জাতির মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা ও রহমত দিতেন তাহলে মানুষ কি বিভ্রান্ত হত না? তারা কি দ্বন্ধে পড়ে যেত না যে কোন ব্যবস্থা ও জাতিকে তারা মানদন্ড হিসাবে ধরে নিয়ে অনুসরণ করবে? অবশ্যই মানুষ দ্বিধায় পড়ে যেত। এলোহিম অবশ্যই এরকম চান না। তাই তিনি বাইবেলে বলেছেন-



আমি যখন জাতিদের মধ্য থেকে তোমাদের বের করে নিয়ে আসব এবং যেসব দেশে তোমরা ছড়িয়ে পড়েছ সেখান থেকে একত্র করব তখন সুগন্ধী ধূপের মতো আমি তোমাদের গ্রহণ করব। আমার পবিত্রতা তোমাদের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হবে এবং সেটি সমস্ত জাতি দেখবে

যিহিস্কেল ২০ঃ৪১


আমার দাস যাকোব ও আমার মনোনীত ইস্রায়েলের কারণে, আমি তোমার নাম ধরে তোমাকে ডাকি ও তুমি আমাকে না জানলেও আমি তোমাকে সম্মানের উপাধি দিয়েছি। আমিই সদাপ্রভু, অন্য আর কেউ নয়; আমি ছাড়া আর কোনো ঈশ্বর নেই। তুমি আমাকে না জানা সত্ত্বেও আমি তোমাকে শক্তিশালী করব। যেন সূর্যোদয়ের স্থান থেকে তার অস্তস্থান পর্যন্ত, লোকেরা জানতে পারে যে, আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমিই সদাপ্রভু, আর কেউ নয়।

যিশাইয় 45:4-6


 

আমি আমার মহান নামের পবিত্রতা দেখাব, যা জাতিগণের মধ্যে অপবিত্র করা হয়েছে, যে নাম তুমি তাদের মধ্যে অপবিত্র করেছ। আর জাতিগণ জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু, যখন আমি তাদের চোখের সামনে তোমাদের মধ্য দিয়ে নিজের পবিত্রতা দেখাব, এই কথা সার্বভৌম সদাপ্রভু বলেন।

যিহিষ্কেল 36:23 


আর আমি আমার মহত্ত্ব ও পবিত্রতা প্রকাশ করব, আর আমি অনেক জাতির সামনে নিজের পরিচয় দেব। তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’

যিহিষ্কেল 38:23


‘আমার লোক ইস্রায়েলীদের মধ্যে আমি আমার পবিত্রতা প্রকাশ করব। আমি আর আমার পবিত্র নাম অপবিত্র হতে দেব না, তাতে জাতিগণ জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের মধ্যে পবিত্রতম।

যিহিষ্কেল 39:7



এলোহিম ইয়াওয়ে আব্রাহামের মধ্য দিয়ে সমগ্র মানব জাতির সাথে একটি চুক্তি করেছিলেন। তিনি আব্রাহামকে বেছে নিয়েছিলেন এবং আব্রাহামের পুত্র ইসহাকের মধ্য দিয়ে সমগ্র মানব জাতির জন্য ব্যবস্থা(শরীয়ত) ও আশীর্বাদের (রহমতের) ঘোষণা দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে মোশির(মুসার) মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা দিয়েছেন, একের পর এক নবীদের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েল জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং সবার শেষে ইয়েহশুয়া হা মাসিয়াখের (যীশু খ্রীষ্টের) মধ্য দিয়ে ব্যবস্থার ও আশীর্বাদের পূর্ণতা করেছেন। এইজন্য বাইবেলে এলোহিম ইয়াওয়ে বলেছেন-


19তখন ঈশ্বর বললেন, “হ্যাঁ, কিন্তু তোমার স্ত্রী সারা তোমার জন্য এক ছেলের জন্ম দেবে, এবং তুমি তার নাম দেবে ইস্‌হাক। তার আগামী বংশধরদের জন্য এক চিরস্থায়ী নিয়মরূপে আমি তার সঙ্গে আমার নিয়ম স্থাপন করব। 

আদিপুস্তক ১৭ঃ১৯


4আমি তোমার(ইসহাক) বংশধরদের সংখ্যা আকাশের তারাগুলির মতো বিপুল সংখ্যক করব এবং তাদের এইসব দেশ দেব, এবং তোমার সন্তানসন্ততির মাধ্যমে পৃথিবীর সব জাতি আশীর্বাদ লাভ করবে,

আদিপুস্তক ২৬ঃ৪


আব্রাহামের সাথে কৃত এলোহিম ইয়াওয়ের এই চুক্তি ইস্রায়েল জাতির মাধ্যমে ব্যবস্থা, ভবিষ্যৎবাণী, দীর্ঘ ইতিহাসের নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে, নবীদের মধ্য দিয়ে একটি দৃষ্টান্তরূপে সমস্ত জাতিসমূহের নিকট এলোহিম ইয়াওয়ের কথার চূড়ান্ত সত্যতার সাথে উপস্থিত হয়েছে। এর মাধ্যমে সমস্ত জাতিসমূহ একমাত্র সত্য এলোহিম ইয়াওয়েকে জানতে, বুঝতে ও পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাচ্ছে। ইতিহাসের এই সত্যতা সমস্ত জাতির কাছে প্রমাণিত করার জন্য ইস্রায়েল জাতি এক নিদর্শন রূপে সকল জাতির কাছে বিদ্যমান। ইস্রায়েল জাতি মহান এলোহিম ইয়াওয়ের এক অনন্য নিদর্শন, যাকে কেউ কখনো অস্বীকার করতে পারবে না, মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে পারবে না।


অনন্তকালের প্রভূ মহান এলোহিম ইয়াওয়ে ও তাঁর পুত্র ইয়েহশুয়া হা মাসিয়াখের গৌরব যুগ পর্যায়ে যুগে যুগে অনন্তকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকুক। আমেন।


—------------------------------------------------------------

—----------------------------------------------

দানিয়েল স্টিফেন  



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: