Saturday, March 18, 2023

আল্লাহ কি সত্যিই প্রার্থনা করে?

 

আল্লাহ কি সত্যিই প্রার্থনা করে?

কুরআনের সূরা আহযাব এর ৫৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে:
إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِىِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ صَلُّوا۟ عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا
"আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর সালাত সম্পাদন করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্য প্রার্থনা করো এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ করো।"
(কুরআন ৩৩:৫৬)
উক্ত আয়াতে স্পষ্টই বলা আছে যে, আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِىِّۚ (ইউসল্লুনা আ'লান্নাবী) অর্থাৎ নবী (মুহাম্মাদ) এর ওপর 'সালাত' সম্পাদন করে।
এখানে মূল শব্দ يُصَلُّونَ (ইউসল্লুনা) এর মূলে রয়েছে صلو (সল্লু) যা দিয়ে "প্রার্থনা" অর্থ বোঝায়।
অর্থাৎ আল্লাহ আর ফেরেশতা মুহাম্মাদের ওপর সালাত সম্পাদন করে, অর্থাৎ মুহাম্মাদকে উদ্দেশ্য করে তার জন্য প্রার্থনা করে।
কিন্তু এখানে মুসলিমগণ এসে বলা শুরু করবে যে, এখানে يُصَلُّونَ عَلَى (ইউসল্লুনা আ'লা) রয়েছে; আর صلو (সল্লু) এর সাথে عَلَى (আ'লা) যুক্ত হলে তার অর্থ প্রার্থনা নয়, বরং বরকত বা আশীর্বাদ বা blessing বর্ষণ করা বোঝায়।
তাই আল্লাহ আসলে মুহাম্মাদের ওপর আশীর্বাদ বর্ষণ করছেন আর ফেরেশতারা রহমতের দুয়া করছে বা, দরুদ পাঠ করছে!
কিন্তু এই ব্যাখ্যা পুরোপুরি মিথ্যাচার!
মুসলিমরা তাদের নামাজের সময় দরুদে ইব্রাহীম পাঠ করে থাকে।
সেখানে আরবিতে এভাবে পাঠ করা হয়:
"মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) .... হাকাম (রহঃ) হতে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।
‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লায়তা আলা ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাক্‌তা আলা আলি ইরবাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।’’"
[গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৯৭৮
হাদিসের মান - সহিহ]
অনলাইন সোর্স - http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=23282
এখানে খেয়াল করুন দুবার দুই কথা রয়েছে:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ
(আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ)
اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ
(আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ)
এখানে صَلِّ (সল্লি) থেকে 'সালাত' আর بَارِكْ (বারিক) থেকে 'বরকত' দুটো বিষয় আমরা একবারে এখানে পাচ্ছি।
এথেকে বোঝা যায়, "সালাত" আর "বরকত" দুটো ভিন্ন বিষয়।
বরকত হল আশীর্বাদ বা blessings, আর 'সালাত' হল দুয়া বা প্রার্থনা।
এখানে সালাত আর বরকত উভয়েরই ক্ষেত্রে দরুদের মধ্যে 'আলা' (عَلَى) অর্থাৎ 'ওপর' বলা হয়েছে।
আর দরুদে ইব্রাহীমে যে صَلِّ (সল্লি) শব্দ এসেছে, সেই একই শব্দ কুরআনের অন্য আয়াতে 'দুয়া' অর্থাৎ প্রার্থনা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে যা মুসলিম মাওলানারাই অনুবাদ করেছে!
خُذْ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
"তাদের সম্পদ থেকে সদাকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।
**আর তাদের জন্য দো‘আ কর, নিশ্চয় তোমার দো‘আ** তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।"
(কুরআন ৯:১০৩, অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)
এই আয়াতে স্পষ্ট صَلِّ عَلَيْهِمْۖ (সল্লি আলাইহিম) আছে। তাহলে এখানে "সল্লি আলা" বললে প্রার্থনা অর্থ হবে, আর আল্লাহর বেলায় "আলা" আছে বলে আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রার্থনা হবে না, বরং আশীর্বাদ বর্ষণ হবে - এগুলো অর্থ বিকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়!
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, এই صَلِّ (সল্লি) শব্দ জানাযার নামাজকে বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন কুরআনের আরেকটি আয়াতে আমরা পাই:
وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٍ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَدًا وَلَا تَقُمْ عَلَىٰ قَبْرِهِۦٓۖ إِنَّهُمْ كَفَرُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَمَاتُوا۟ وَهُمْ فَٰسِقُونَ
"আর তাদের মধ্যে যে মারা গিয়েছে, তার উপর তুমি জানাযা পড়বে না এবং তার কবরের উপর দাঁড়াবে না। নিশ্চয় তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তারা ফাসিক অবস্থায় মারা গিয়েছে।"
(কুরআন ৯:৮৪, অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)
এখানেও জানাযার নামাজকে বোঝাতে تُصَلِّ عَلَىٰٓ (তুসল্লি আ'লা) ব্যবহৃত হয়েছে।
এখানেও সেই عَلَىٰٓ (আলা) শব্দ আছে, অথচ এখানে 'আলা' থাকার পরও অর্থ "আশীর্বাদ", "বরকত" এসব না নিয়ে সরাসরি নামাজ অর্থাৎ প্রার্থনা নেওয়া হয়েছে! আর এই একই জাতীয় শব্দ আল্লাহর বেলায় আসলে সেই বেলায় ইচ্ছা করে এর অর্থ পালটে মিথ্যাচার শুরু করে দেওয়া হয়!
আরও উল্লেখ্য যে, এই صَلِّ (সল্লি) শব্দের মূলে সেই একই صلو (সল্লু) শব্দ রয়েছে যা উপরেই কুরআন ৩৩:৫৬ আয়াতের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছিলাম - যেখানে আল্লাহ এবং ফেরেশতা মুহাম্মাদের ওপর সালাত সম্পাদন করছিল!
এগুলো থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ আর ফেরেশতা মুহাম্মাদকে উদ্দেশ্য করে যে সালাত সম্পাদন করে, তা প্রকৃতপক্ষে প্রার্থনা!
ইসলামিক হাদিসের একটি ওয়েবসাইট সুন্নাহ ডট কম-এ আদাবুল মুফরাদ এর একটি সহিহ হাদিসকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে যেখানে মুহাম্মাদ বলছে, "যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার প্রার্থনা করে, আল্লাহ তার ওপর দশ বার প্রার্থনা করবেন" (If anyone prays once on me, Allah will pray ten times on him)।
হাদিসটি নিম্নে ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক সহ দেওয়া হল:
Al-Adab Al-Mufrad 645:
Abu Hurayra reported that the Messenger of Allah, may Allah bless him and grant him peace, said, "If anyone prays once on me, Allah will pray ten times on him.'"
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ قَالَ‏:‏ أَخْبَرَنِي الْعَلاَءُ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ‏:‏ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ وَاحِدَةً صلى الله عليه وسلم عَشْرًا‏.‏
Grade: Sahih (Al-Albani) صـحـيـح (الألباني)حكم :
Reference : Al-Adab Al-Mufrad 645In-book reference : Book 31, Hadith 42English translation : Book 31, Hadith 645
.
.
এর অর্থ হল, আল্লাহও স্বয়ং প্রার্থনা করে!
তাহলে যীশু খ্রিস্ট প্রার্থনা করলে যদি যীশু খ্রিস্ট ঈশ্বর না হন, তাহলে একই যুক্তিতে আল্লাহও প্রার্থনা করার কারণে বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা নন!
===========================================
>>>>My Beloved Yashu

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: