ঈশ্বর মানুষ নন, এই কথা দ্বারা পবিত্র শাস্ত্রে কি বুঝানো হয়েছে?
সদাপ্রভু মানুষ নন যে তাঁকে মিথ্যা বলতে হবে,
মনুষ্য সন্তান নন যে তাঁর মতের পরিবর্তন করবেন।
তিনি কথা দিয়ে কী কার্যে রূপায়িত করেন না?
প্রতিজ্ঞা করে তিনি পূর্ণ কী করেন না?
গণনা পুস্তক 23:19
আমার ভয়ংকর ক্রোধ আমি কার্যকর করব না,
কিংবা ইফ্রয়িমের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাঁকে ছারখার করব না।
কারণ আমি ঈশ্বর, মানুষ নই,
তোমাদের মধ্যবর্তী আমি সেই এক ও অদ্বিতীয় পবিত্রজন।
তাই আমি সক্রোধে উপস্থিত হব না।
হোশেয় 11:9
উপরের ভার্স দুটি দেখিয়ে অনেক অবিশ্বাসীদের বলতে শোনা যায় যে, ঈশ্বর মানুষ নন। তাই ইয়েহশুয়াও(যীশুও) ঈশ্বর নন। এই বিষয়ে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আলোচনা করা হল-
প্রথম পয়েন্টঃ
ইয়েহশুয়া হা মাসিয়াখ(যীশু খ্রীষ্ট) কি প্রকৃতিগতভাবে আমাদের মত মানুষ ছিলেন? মোটেই নয়। তিনি প্রকৃতিগতভাবে ছিলেন ঈশ্বরের বাক্য (যোহন ১ঃ১)[1]। তিনি আব্রাহামের পূর্ব থেকেই ছিলেন(যোহন ৮ঃ৫৮)[2]। আমরা দেখছি তিনি প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ নয় ঐশ্বরিক ছিলেন। আলোচ্য পদগুলো অবশ্যই আমাদের মত প্রকৃতিগতভাবে মানুষদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইয়েহশুয়ার ক্ষেত্রে এ কথাগুলো প্রযোজ্য নয়।
দ্বিতীয় বিষয়, ইয়েহশুয়া হা মাসিয়াখ (যীশু খ্রীষ্ট) কি আমাদের মত সাধারণভাবে জন্মেছিলেন? উত্তর হল, না, তিনি পবিত্র আত্মার শক্তিতে বিনা পিতাতে জন্মেছিলেন। এখানেই তাঁকে অন্য সকল মানুষ থেকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই পদ দুটো মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইয়ে্হশুয়ার(যীশুর) জন্য নয়। এখানে অনেকে এই আর্গুমেন্ট আনতে পারেন যে, আদমও তো বিনা পিতা মাতায় জন্মেছিলেন? এর জবাব হল, এই ভার্স দুটো আদমের সময়ে নয় বরং ইয়াওয়ে এলোহিম(সদাপ্রভু ঈশ্বর) এই কথাগুলো অনেক পরে মোশি ও হোশেয়ের সময়ে বলেছেন মানুষের স্বভাবজাত দূর্বলতাকে নির্দেশ করে। আবার আদম থেকেও যে কোন বিচারে ইয়েহশুয়া(যীশু) শ্রেষ্ঠ ছিলেন। আদম অবাধ্য হয়েছিলেন, ইয়েহশুয়া বাধ্য ছিলেন। ইয়েহশুয়ার(যীশুর) নিবাস স্বর্গে(যোহন ৩ঃ১৩, যোহন ৮ঃ২৩)[3][4]। তিনি অতি অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে এসে তাঁর মিশন শেষ করেছিলেন। কিন্তু আদম প্রথমে এদন বাগানে ছিলেন,যা এই পৃথিবীতেই ছিল, পরে তিনি সে স্থান থেকে বহিস্কৃত হলে এই পৃথিবীতেই বাকী সময়টুকু অতিবাহিত করেন। সুতরাং এই দুই হিসাবেও ইয়েহশুয়া আদম থেকে শ্রেষ্ঠ।
দ্বিতীয় পয়েন্টঃ
পদ দুটিতে মানবীয় প্রকৃতির দূর্বলতার কথা বলে এটাই বুঝানো হচ্ছে যে ঈশ্বর মানবীয় প্রকৃতিবিশিষ্ট নন, বরং তিনি মানবীয় প্রকৃতির দূর্বলতার বহু উর্ধ্বে। উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলতে পারি ঈশ্বর মিথ্যা বলেন না, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেননা, তিনি ন্যায্য বলেই আমাদের ন্যায্যতার বিচার করেন। কিন্তু মানুষ এসকল প্রবণতা থেকে মুক্ত নয়। যদিও আমরা অনেক সময় দাবী করি আমরা সত্য বলি, প্রতিশ্রুতি পালন করি কিন্তু সুক্ষ্ম বিচারে আমরা মিথ্যাবাদী, প্রতিশ্রুতি ভংগকারী। আমরা অনেক সময় অনেককে বলি, আমি তোমার সাথে সবসময় আছি। কিন্তু বাস্তবে একজন মানুষের পক্ষে আরেকজনকে সর্বক্ষেত্রে পাশে থাকা ও সহযোগিতা সম্ভব নয়। কিন্তু ঈশ্বর যখন প্রতিশ্রুতি দেন তিনি আমাদের সাথে সবসময় আছেন, তখন তা আক্ষরিকভাবেই সত্য কারণ তিনি আমাদের ভেতর পবিত্র আত্মায় বিরাজমান থেকে সর্বসময় সহযোগিতা করতে সমর্থ ও তিনি যাকে ইচ্ছা এভাবে সহযোগিতা করেন।
তৃতীয় পয়েন্টঃ
ঈশ্বরীয় সত্ত্বা কখনও মানুষ হিসাবে আসতে পারবেন না, এমন কোন পূর্বাভাস বা ইংগিত এখানে দেয়া হয়নি। তাহলে সমালোচকরা কিভাবে এই পদ দুটো প্রভু ইয়েহশুয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে চান যেখানে তিনি বহু পরে মানুষ হিসাবে এসেছিলেন? ঈশ্বরীয় সত্ত্বা যে একসময় মানুষ হিসাবে আসবেন তা তো যিশাইয় বইতেই বহু আগে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে--
কারণ আমাদের জন্য এক শিশুর জন্ম হয়েছে,
আমাদের কাছে এক পুত্রসন্তান দেওয়া হয়েছে,
রাজ্যের শাসনভার তাঁরই কাঁধে দেওয়া হবে।
আর তাঁকে বলা হবে
আশ্চর্য পরামর্শদাতা, পরাক্রমী ঈশ্বর,
চিরন্তন পিতা, শান্তিরাজ।
যিশাইয় 9:6
উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, প্রকৃতিগত মানুষের ক্ষেত্রে আলোচিত পদ দুটি সংশ্লিষ্ট। প্রকৃতিগতভাবে ঈশ্বরীয় সত্ত্বার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। কারণ প্রকৃতিগতভাবে ঈশ্বরীয় সত্ত্বা একজন ঈশ্বর, তিনি মানুষ নন। আবার প্রকৃতিগতভাবে একজন মানুষ, ঈশ্বর নন, বরং মানুষ। আশা করি বিষয়টি সকলের বোধগম্য হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
[1] আদিতে বাক্য ছিলেন, সেই বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন এবং বাক্যই ঈশ্বর ছিলেন।
যোহন 1:1
[2] যীশু উত্তর দিলেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, অব্রাহামের জন্মের পূর্ব থেকেই আমি আছি।”
যোহন 8:58
[3] স্বর্গলোক থেকে আগত সেই একজন, অর্থাৎ, মনুষ্যপুত্র ব্যতীত আর কেউ কখনও স্বর্গে উত্তরণ করেনি।
যোহন 3:13
[4] তিনি কিন্তু বলে চললেন, “তোমরা অধোলোকের, আমি ঊর্ধ্বলোকের। তোমরা এই জগতের, আমি এই জগতের নই।”
যোহন 8:23
>>> Daniel Stephen
0 coment rios: