দানিয়েল স্টিফেন
জবাবঃ মুসলিম প্রচারকদের কয়েকটি অভিযোগ প্রায়শই আমরা দেখতে পাই। অভিযোগগুলো নিম্নরূপঃ


মথি 10:5-7

এবং

মথি 15:24



রোমীয় 9:6-8

মথি ১০ঃ৫-৭ ও মথি ১৫ঃ২৪ নিয়ে আলোচনায় আসি। যীশু তার প্রচার গ্রহণের প্রথম সুযোগ ইহুদিদের দিয়েছিলেন। কারণ পবিত্র শাস্ত্রের ধারক বাহক ও ঈশ্বরের ব্যবস্থার অনুসারী হিসাবে নতুন ব্যবস্থার যে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল(যিরমিয় ৩১ঃ৩১) পূর্বের নবীদের মাধ্যমে তা গ্রহণের প্রথম দাবীদার ইহুদীরাই ছিল। কিন্তু ইহুদিদের বড় অংশের প্রত্যাখ্যানের পরে তা যে পরজাতিদের জন্য খুলে যাবে তা যীশুই উপমা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

“তারপর তিনি আরও বেশি দাসকে পাঠিয়ে বললেন, ‘আমন্ত্রিত লোকদের গিয়ে বলো, আমি আমার ভোজ প্রস্তুত করেছি: আমার বলদ ও মোটাসোটা বাছুরদের জবাই করা হয়েছে এবং সবকিছুই প্রস্তুত আছে। আপনারা সবাই বিবাহভোজে আসুন।’
“তারা কিন্তু কোনও আগ্রহ না দেখিয়ে নিজের নিজের কাজে চলে গেল—একজন তার মাঠে, অন্যজন তার ব্যবসায়। অবশিষ্ট লোকেরা তাঁর দাসদের ধরে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করল ও তাদের হত্যা করল। রাজা ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি তাঁর সৈন্যদল পাঠিয়ে সেইসব নরঘাতকদের ধ্বংস করলেন ও তাদের নগর পুড়িয়ে দিলেন।
“তারপর তিনি তাঁর দাসদের বললেন, ‘বিবাহভোজ তো প্রস্তুত, কিন্তু যাদের আমি নিমন্ত্রণ করেছিলাম, তারা এর যোগ্য ছিল না। তোমরা পথের কোণে কোণে যাও ও যে কারও সন্ধান পাও, তাকে বিবাহভোজে আমন্ত্রণ করো।’ অতএব দাসেরা পথের কোণে কোণে গেল ও তারা যত লোকের সন্ধান পেল, ভালো-মন্দ সবাইকে ডেকে একত্র করল। এইভাবে বিবাহ বাসর অতিথিতে ভরে গেল।”
মথি 22:1-10

এখানে আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা অর্থাৎ ইহুদীরা মোটা দাগে প্রত্যাখ্যান করায় যারা আমন্ত্রিত নয় অর্থাৎ অনিমন্ত্রিত অইহুদীরা বিবাহ ভোজের অংশীদার হওয়ার সুযোগ পেল।
যীশুর আরো কয়েকটি সরাসরি উক্তি দেখব যেখানে ক্রুশে যাওয়ার আগেই পরজাতিদের কাছে সুসমাচার প্রচারের ভবিষ্যৎবাণী করেছেন-

যোহন 10:16


মার্ক 13:10


মথি 24:14


মথি 26:13

যীশুর পূর্বের নবীরাও মসীহ যে সমগ্র জগতের জন্য আসবেন তার ভবিষ্যৎবাণী করেছেন-

“যাকোবের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে পুনঃস্থাপিত করার
এবং আমার সংরক্ষিত ইস্রায়েলের লোকদের ফিরিয়ে আনার জন্য
তুমি যে আমার দাস হবে, তা অতি সামান্য ব্যাপার।
আমি তোমাকে অইহুদিদের কাছে দীপ্তিস্বরূপ করব,
যেন পৃথিবীর প্রান্তসীমা পর্যন্ত তুমি আমার পরিত্রাণ নিয়ে আসতে পারো।”
যিশাইয় 49:6


হে পৃথিবীর শাসকবর্গ, সাবধান হও।
সম্ভ্রমে সদাপ্রভুর আরাধনা করো
আর কম্পিত হৃদয়ে তাঁর শাসন উদযাপন করো।
তাঁর পুত্রকে চুম্বন করো, নতুবা তিনি ক্রুদ্ধ হবেন
এবং তোমার পথ তোমাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে,
কারণ তাঁর ক্রোধ মুহূর্তে জ্বলে উঠতে পারে।
ধন্য তারা, যারা তাঁর শরণাপন্ন।
গীত 2:10-12

তাহলে আমরা দেখছি মসীহ যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুর মিশনের আগে প্রাথমিক পরিচর্যার সময়ই যীশু খ্রীষ্ট সকল জাতির কাছে সুসমাচার প্রচারের বিষয়ে পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যা পুরাতন নিয়মের নবীরাও বিভিন্ন সময়ে মসীহের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। যীশু উপমার মাধ্যমেও বিষয়টি পরিস্কার করেছেন। প্রথমে ইহুদীদের কাছে পরে সমস্ত জগতের জন্য সুসমাচার প্রচারিত হবে। ঈশ্বর এক্ষেত্রে যা যৌক্তিক ও স্বাভাবিক তা ই করেছেন। কুরআনেও আমরা এরকম নজির দেখতে পাই। যেমন কুরআন প্রথমত আরবদের জন্য নাজিল হয়েছিল বলে কুরআনে দাবী করা হয়েছে।

(QS. Ash-Shuraa 42: Verse 7)

কিন্তু পরে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

(QS. Al-Baqarah 2: Verse 187)

এখন প্রশ্ন হল নিজেদের ক্ষেত্রে তারা এই বিষয়টি বুঝলেও অন্যের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে না বুঝার ভান করা তাদের বিবেচনাবোধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
এই কুরআনই তাওরাত ও ইঞ্জিল অর্থাৎ যীশুর সুসমাচারকে সমস্ত মানবজাতির জন্য বলে নিশ্চিত করেছে। সেখানে যীশুর সুসমাচার সমস্ত মানবজাতির নয় বললে তারা কুরআনেরই বিরূদ্ধাচারণ করবেন।
"তিনি সত্য সহকারে তোমার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যা পূর্বতন কিতাবের সমর্থক এবং তিনি তাওরাত ও ইঞ্জীল অবতীর্ণ করেছেন ।"
"ইতোপূর্বে মানবজাতির পথ প্রদর্শনের জন্য; আর তিনি সেই মানদন্ড নাযিল করেছেন যা হাক্ব ও বাতিলের পার্থক্য দেখিয়ে দেয়; নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফুরী করে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, দন্ডদাতা।"
(QS. Ali 'Imran 3: Verse 3-4)
আবার এই কুরআনেই যীশুকে বনী ইস্রায়েলের জন্য প্রেরিত বলা হয়েছে।

(QS. As-Saff 61: Verse 6)

তাহলে কি মুসলিমরা কি বলবেন যে, কুরআনে পরস্পরবিরোধী কথা আছে? অবশ্যই তারা বলবেন না এই কথা। তাহলে আমরা বুঝতে পারে কথা দুটি একটি আরেকটির পরিপূরক। সাংঘর্ষিক নয়। অনেকে বলবেন এখানে যে ইঞ্জিলের কথা বলা হয়েছে তা হারিয়ে গেছে। খ্রিস্টানদের কাছে সেই ইঞ্জিল নাই, বিকৃত হয়ে গেছে। কিন্তু মুহাম্মদের সময়ের ও তারও আগের ইঞ্জিল আমাদের কাছে আছে। আর এই ইঞ্জিলকেই মুহাম্মদ সত্য ইঞ্জিল বলে কুরআনের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন। আর সেই ইঞ্জিলই এখন খ্রিস্টানদের কাছে আছে। কোন পরিবর্তন হয় নাই। একথার বিরোধিতাকারী নিশ্চিতভাবে কুরআনের বাণীর বিরোধীতা করে।

(QS. Al-Baqarah 2: Verse 101)

ক্রুশীয় মৃত্যুর মাধ্যমে যীশু তার জাগতিক মিশন শেষ করেছেন। আর তারপর সমস্ত জগতের মানুষের জন্য এই সুসংবাদ ছড়িয়ে দিতে শিষ্যদের দায়িত্ব দিয়ে যান।

মথি 28:19


লূক 24:46-47


প্রেরিত 1:7-8





মথি 7:6

এই বাক্য দিয়ে ইস্রায়েল ছাড়া বাকী সবাইকে কুকুর ও শুকরতুল্য বলা হয়েছে যাদের কাছে যীশু সুসমাচার প্রচার করতে মানা করেছেন।
জবাবঃ মুসলিম সমালোচকরা এই পদ দেখিয়ে বলতে চান, এখানে অইহুদীদের কুকুর ও শুকরের সাথে তুলনা করে তাদের কাছে পবিত্র বস্তু অর্থাৎ সুসমাচার প্রচার করা যাবে না বলে প্রচার করে থাকেন। কিন্তু এটা যদি সত্যি হয় তাহলে যীশু কেন মথি ২৮ঃ১৯, লুক ২৪ঃ৪৬-৪৭, প্রেরিত ১ঃ৭-৮ পদসহ অনেক স্থানে কেন অইহুদীদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে বলেছেন? আমরা বুঝতে পারছি অহেতুক অভিযোগ দেয়ার মানস ছাড়া এ ধরনের অভিযোগের কোন ভিত্তিই নাই। আমরা যেন অযোগ্য লোক যে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও জিজ্ঞাসা রাখেনা বরং জাগতিক কামনা বাসনায় জর্জরিত হয়ে ঈশ্বরের বাক্যকে বাধা দিতে প্রস্তত এমন মানুষের কাছে পবিত্র বাক্য প্রচার না করি এখানে যীশু সেই নির্দেশই দিয়েছেন। কারণ এরকম অবস্থায় সে ঈশ্বরের বাক্য ও ঈশ্বরকে উল্টো অসন্মান করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য কনানীয় মহিলা যিনি যীশুর কাছে বিশ্বাস নিয়ে এসেছিলেন(মথি ১৫ঃ২২) তার প্রসংগে যীশু যে কুকুর শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা কুকুর ছানা বা গৃহপালিত কুকুর বুঝায়। স্ট্রং নাম্বার g2952
Strong's g2952
- Lexical: κυνάριον
- Transliteration: kunarion
- Part of Speech: Noun, Neuter
- Phonetic Spelling: koo-nar'-ee-on
- Definition: a little dog, a house dog.
- Origin: Neuter of a presumed derivative of kuon; a puppy.
- Usage: dog.
- Translated as (count): dogs (4).
কিন্তু মথি ৭ঃ৬ এ কুকুর হিসাবে যে গ্রীক শব্দটি ব্যবহার হয়েছে যা দিয়ে অযোগ্য লোকদের বুঝানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ আলাদা। স্ট্রং নাম্বার g2965
Strong's g2965
- Lexical: κύων
- Transliteration: kuón
- Part of Speech: Noun, Masculine
- Phonetic Spelling: koo'-ohn
- Definition: a dog, universally despised in the East.
- Origin: A primary word; a dog ("hound") (literally or figuratively).
- Usage: dog.
- Translated as (count): dogs (4), A dog (1).
আমরা দেখছি সকল অবিশ্বাসীদের নয় বরং যারা অযোগ্য লোক তাদের ক্ষেত্রে যীশু এই কথাগুলো বলেছিলেন কিন্তু যারা এই অভিযোগ নিয়ে এসেছেন সেই মুসলমানদের কুরআন সকল অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে কি শব্দ ব্যবহার করেছে তা একটু দেখি-

(QS. Al-Anfal 8: Verse 55

অর্থাৎ আল্লাহর দৃষ্টিতে যারা আল্লাহ ও মুহাম্মদকে স্বীকার করে না কুকুর ও শুকর থেকেও অধম।


প্রেরিত 10:28


আমরা এর দুই অধ্যায় আগেই দেখি পিতর ও যোহন শমরীয় যারা ইহুদী নয় তাদের গ্রামে সুসমাচার প্রচার করেছেন।

প্রেরিত 8:25

সুতরাং অইহুদীদের কাছে প্রচারে যীশুর আদেশের কথা তারা জানতেন না, এটা পরবর্তী সংযোজন, এই দাবী ভিত্তিহীন। হ্যাঁ অইহুদী রীতিনীতির সাথে একাত্ম না হওয়ার জন্য যতটুকু সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন তারা তা করতেন এবং অইহুদীদের তারা অশুচি বলে মনে করতেন। ঈশ্বর এই মনোভাব দূর করার জন্যই ঐ দর্শন পিতরকে দেখিয়েছেন যেন ইহুদী অইহুদী সবাইকে তিনি খ্রীষ্টে একইরকম মূল্যায়ন করেন, পার্থক্য না করেন।
এরপর মুসলিম সমালোচকদের দ্বিতীয় দাবী, জেরুশালেম মন্ডলীর অনেক বিশ্বাসী অইহুদীদের কাছে প্রচারের বিষয়ে যীশুর আদেশের কথা জানতেন না। এক্ষেত্রে তাদের রেফারেন্স -

প্রেরিত 11:1-3

আমরা এখানে দেখছি জেরুশালেমের বিশ্বাসীদের অনেকে যীশুর পরজাতিদের কাছে প্রচারের বিষয়ে অবগত ছিলেন না। তাদের মূল আপত্তি ছিল অশুচিতার বিষয়ে। তারা এ ব্যাপারে পিতরের কাছে জিজ্ঞেস করলে পিতর তাদের ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত দর্শনের উল্লেখ করেন। পিতর এখানে নিকট অতীতের দর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন, যীশুর আদেশের কথা বলেননি, এতে কোনই অস্বাভাবিকতা নাই। বরং সংক্ষেপে কর্তব্য কাজ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন।
0 coment rios: