Sunday, January 2, 2022

কুরআনের বৈপরীত্যঃ কে অবাক হল - আল্লাহ না মুহাম্মাদ?

 কুরআনের বৈপরীত্যঃ কে অবাক হল - আল্লাহ না মুহাম্মাদ?


মুসলিমদের দাবি হল, কুরআনের কোনো আলাদা আলাদা ভার্সন নেই। কুরআন হল একটাই ভার্সন!

তাদের দাবি হল, কুরআনের যে বিভিন্ন ক্বিরআত বা আবৃত্তি রয়েছে, সেগুলোও একটাই ভার্সনের কুরআন।

সেক্ষেত্রে যদি কুরআনের একটাই ভার্সন হয়, তাহলে বিভিন্ন ক্বিরআতের আয়াতগুলোও একটাই ভার্সনের অন্তর্ভুক্ত হবে।

ফলে বিভিন্ন কুরআনের বিভিন্ন ক্বিরআতের মধ্যে যদি আমরা বৈপরীত্য দেখতে পাই, তবে মুসলিমদের কুরআনের কন্সেপ্ট অনুযায়ী, আমরা একটা ভার্সনের কুরআনের মধ্যেই বৈপরীত্য পাব।

আর এমনই একটি বৈপরীত্য আমরা খুঁজে পাই কুরআন ৩৭:১২ আয়াতে যেখানে আমরা চার ধরণের বৈপরীত্য পাই:
১) শব্দের বানান অর্থাৎ অক্ষর বা হরফে বৈপরীত্য,
২) ক্বিরআত বা আবৃত্তিতে বৈপরীত্য,
৩) অর্থগত বৈপরীত্য,
৪) আকিদা বা বিশ্বাসগত বৈপরীত্য।

আসুন প্রথমে কুরআন ৩৭:১২ অর্থাৎ সূরা আস-সাফফাত এর ১২নং আয়াতের প্রচলিত আরবি ইবারতটি আমরা দেখি:

আরবি ইবারত: بَلۡ عَجِبۡتَ وَ یَسۡخَرُوۡنَ (বাল আজিবতা ওয়া ইয়াছ্ খরূন)

এই আয়াতের কতগুলো অনুবাদ মুসলিমদের থেকে আমরা এরূপে পাই:

👉 "বরং তুমি বিস্মিত হচ্ছ আর ওরা বিদ্রূপ করছে।" (অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)

👉 "(আল্লাহর শক্তি-ক্ষমতা-মহিমা দেখে) তুমি কর বিস্ময়বোধ, আর তারা করে বিদ্রূপ।" (অনুবাদ: তাইসিরুল কুরআন)

👉 "তুমিতো বিস্ময় বোধ করছ, আর তারা করছে বিদ্রুপ।" (অনুবাদ: মুজিবুর রহমান)

👉 "তুমি তো বিস্ময়বোধ করছ, আর ওরা করছে বিদ্রূপ।" (অনুবাদ: তাফসীরে আহসানুল-বায়ান (বঙ্গানুবাদ))

👉 "বরং আপনি বিস্ময় বোধ করেন আর তারা বিদ্রুপ করে।" (অনুবাদ: মুহিউদ্দিন খান)

👉 "But you wonder (at their denial), and they mock (at the idea of an Hereafter)." (Translation : Mufti Taqi Usmani)

👉 "But you wonder, while they mock," (Translation : Sahih International)

👉 "Truly dost thou marvel, while they ridicule," (Translation : Yusuf Ali)

"Nay, but thou dost marvel when they mock" (Translation : Pickthall)

এবার চলুন দেখি এই আয়াতের তাফসীরে কী বলা হচ্ছে!

আমরা প্রাচীন দুটি প্রসিদ্ধ তাফসীর এর রেফারেন্স পেশ করছি।

👉 তাফসীরে তাবারীতে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে,

"কাতাদাহ বলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্চর্য হচ্ছিলেন যে, এ কুরআন তাকে দেয়া হয়েছে, অথচ পথভ্রষ্টরা এটাকে নিয়ে উপহাস করছে। [তাবারী]"
অনলাইন উৎস - http://www.hadithbd.com/quran/link/?id=3800

তাহলে কে আশ্চর্য হচ্ছে?

উত্তর হল - মুহাম্মাদ।

আবার দেখুন, তাফসীর ইবনে কাসীরে বলা হচ্ছে,

"...আল্লাহ পাকের উক্তিঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তো বিস্ময়বোধ করছে আর তারা বিদ্রুপ করছে। কারণ তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে, আর তুমি তাতে দৃঢ় বিশ্বাসী..."
(তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরাহ আস-সাফফাত (সূরাহ নং ৩৭), ১১-১৯ নং আয়াতের তাফসীর হতে বিবৃত); অনলাইন উৎস - https://gtaf.org/apps/quran

সুতরাং, আবারও জিজ্ঞেস করি - উক্ত আয়াতে কে আশ্চর্য হচ্ছে?

উত্তর একই - মুহাম্মাদ।

দেখুন, তাফসীরে তাবারী ও তাফসীর ইবনে কাসীর উভয়ের থেকে আমরা রেফারেন্স পাচ্ছি এবং বিভিন্ন অনুবাদ থেকেও আমরা পাচ্ছি যে, সূরা আস-সাফফাত এর ১২ নং আয়াত অনুযায়ী, মুহাম্মাদ বিস্মিত হচ্ছে। আর এখানে আরবি ইবারত ছিল بَلۡ عَجِبۡتَ وَ یَسۡخَرُوۡنَ (বাল আজিবতা ওয়া ইয়াছ্ খরূন)।
.
.
এবার আমরা এই আয়াতের আরবির হরফে, ক্বিরআতে, অর্থে এবং আকিদাতে বৈপরীত্য দেখতে পাব।

🔴 হরফের মধ্যে বৈপরীত্য:

আয়াতের আরবি ইবারতটি ছিল بَلۡ عَجِبۡتَ وَ یَسۡخَرُوۡنَ (বাল আজিবতা ওয়া ইয়াছ্ খরূন)।

এখানে আমরা এই শব্দটির ওপর বিশেষ নজর দিচ্ছি যেটা হল عَجِبۡتَ (আজিবতা)।

হাফস, ক্বালুন, ওয়ারশ প্রভৃতি ক্বিরআতে عَجِبۡتَ (আজিবতা) পাঠ করা হয়েছে।
অথচ খালাফ (خلف عن حمزة), হারিছ (أبو الحارث عن الكسائي), দওরি (الدوري عن الكسائي) এরকম আরও বিভিন্ন ক্বিরআতে عَجِبۡتَ (আজিবতা) এর পরিবর্তে عَجِبۡتُ (আজিবতু) পাঠ করা হয়েছে।
(স্ক্রিনশটেও দ্রষ্টব্য)।

সুতরাং,
পরিবর্তিত ক্বিরআতে আমরা পাচ্ছি, 👉 بَلۡ عَجِبۡتُ وَ یَسۡخَرُوۡنَ (বাল আজিবতু ওয়া ইয়াছ্ খরূন)।

আর প্রচলিত ক্বিরআতে ছিল, 👉 بَلۡ عَجِبۡتَ وَ یَسۡخَرُوۡنَ (বাল আজিবতা ওয়া ইয়াছ্ খরূন)।

অর্থাৎ, প্রচলিত ক্বিরআতে عَجِبۡتَ (আজিবতা) এবং অন্য ক্বিরআতে عَجِبۡتُ (আজিবতু) রয়েছে।

👉👉 অর্থাৎ আমরা প্রথমে হরফের মধ্যে বৈপরীত্য পেলাম  عَجِبۡتَ (আজিবতা) এবং عَجِبۡتُ (আজিবতু)।
.
.
🔴 ক্বিরআতে বৈপরীত্য:

কুরআন ৩৭:১২ আয়াতের যে দুটি ভিন্ন ক্বিরআত আমরা পেয়েছি, তা হলঃ

প্রচলিত ক্বিরআতে 👉 بَلۡ عَجِبۡتَ وَ یَسۡخَرُوۡنَ (বাল আজিবতা ওয়া ইয়াছ্ খরূন)।

ভিন্ন ক্বিরআতে 👉 بَلۡ عَجِبۡتُ وَ یَسۡخَرُوۡنَ (বাল আজিবতু ওয়া ইয়াছ্ খরূন)।

সুতরাং, এটি ক্বিরআতে বৈপরীত্য!
.
.
🔴 অর্থগত বৈপরীত্য:

কুরআন ৩৭:১২ আয়াতের একটি ক্বিরআত بَلۡ عَجِبۡتَ وَ یَسۡخَرُوۡنَ (বাল আজিবতা ওয়া ইয়াছ্ খরূন) এর অর্থ হল:

"বরং তুমি বিস্মিত হচ্ছ আর ওরা বিদ্রূপ করছে।" (অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)

অর্থাৎ একটি ক্বিরআত বলছে যে, মুহাম্মাদ বিস্মিত বা অবাক হচ্ছে।

কিন্তু অন্য ক্বিরআতে بَلۡ عَجِبۡتُ وَ یَسۡخَرُوۡنَ (বাল আজিবতু ওয়া ইয়াছ্ খরূন) এর অর্থ:

"বরং আমি বিস্মিত হচ্ছি আর ওরা বিদ্রূপ করছে।"

অর্থাৎ অন্য ক্বিরআত অনুযায়ী, আল্লাহ নিজেই বিস্মিত বা অবাক হচ্ছে!

অর্থাৎ, এক ক্বিরআতে মুহাম্মাদ অবাক হচ্ছে; অথচ অন্য ক্বিরআতে আল্লাহ অবাক হচ্ছে - যা সুস্পষ্ট বৈপরীত্য!
.
.
🔴 আকিদাগত বৈপরীত্য:

এক ক্বিরআত অনুযায়ী, মুহাম্মাদ অবাক হচ্ছে!
অন্য ক্বিরআত অনুযায়ী, আল্লাহ অবাক হচ্ছে!

তাহলে মুহাম্মাদ যদি সৃষ্ট মানুষ হয় আর আল্লাহ যদি বিশ্বজগতের স্রষ্টা হন, তবে মানুষের বিস্ময়ের প্রকৃতি আর সৃষ্টিকর্তার বিস্ময়ের প্রকৃতি এক রকম নয়, কারণ কুরআন নিজেই বলছে:
لَيْسَ كَمِثْلِهِۦ شَىْ
"কোনো কিছুই তাঁর (আল্লাহর) সদৃশ নয়" (কুরআন ৪২:১১)

সেক্ষেত্রে কুরআন ৩৭:১২ আয়াতের এক ক্বিরআতে মুহাম্মাদের অবাক হওয়ার সিফাত/গুণ/বৈশিষ্ট্য আর অন্য ক্বিরআতে আল্লাহর অবাক হওয়ার সিফাত/গুণ/বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ ভিন্নতর যা তাওহীদুল আসমা ওয়া সিফাতের সঙ্গে সম্পর্কিত!

অর্থাৎ মুহাম্মাদ অবাক হচ্ছে আর আল্লাহ অবাক হচ্ছে - এটি আকিদাগত বৈপরীত্য!
.
.
অর্থাৎ কুরআন ৩৭:১২ আয়াতে আমরা একই সাথে হরফগত, ক্বিরআতগত, অর্থগত এবং আকিদাগত - এই চার ধরণের বৈপরীত্য দেখতে পাচ্ছি!

আর কুরআনের শর্ত অনুযায়ীই, যদি কুরআনে একটিও বৈপরীত্য থাকে, তবে তা আল্লাহর পক্ষ হতে নয় (কুরআন ৪:৮২)!
.
========================================
- MyBeloved Yashu

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: