Wednesday, November 24, 2021

অভিযোগঃ বাইবেলে ধর্ষণের বৈধতা দেয়া হয়েছে?

অভিযোগঃ বাইবেলে ধর্ষণের বৈধতা দেয়া হয়েছে?
⛔জবাব দিয়েছেন দানিয়েল স্টিফেন।
⛔জবাবঃ খ্রীষ্ট বিদ্বেষী মুসলিমরা বাইবেলের কিছু পদ বিচ্ছিন্নভাবে নিয়ে এসে এটা বুঝাতে চায় যে বাইবেলে ধর্ষণকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তারা এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ ব্যবহার করেন। 

✡️যদি কোনও পুরুষ বিয়ে হয়নি এমন কোনও কুমারী মেয়েকে পেয়ে ধর্ষণ করে এবং তারা ধরা পড়ে, তাকে মেয়েটির বাবাকে পঞ্চাশ শেকল রুপো দেবে। মেয়েটিকে নষ্ট করেছে বলে, তাকে বিয়ে করতে হবে। সে জীবনে তাকে ছেড়ে দিতে পারবে না।
দ্বিতীয় বিবরণ 22:28-29✡️ 

আমরা আলোচনার সুবিধার্থে এই ভার্সের সাথে সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকটি ভার্স নিয়ে এসে খ্রীষ্টবিরোধীদের মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করব। এখানে উল্লেখ্য আমরা পুরাতন নিয়মের ব্যবস্থাকেই এই আলোচনায় গুরুত্ব দেব যেহেতু অভিযোগটি পুরাতন নিয়ম থেকে এসেছে। 

✡️যদি কোনও লোক, যার বাগদান হয়নি এমন এক কুমারীর সতীত্ব হরণ করে ও তার সাথে শোয়, তবে সে অবশ্যই কন্যা-পণ দেবে এবং সেই কুমারী তার স্ত্রী হয়ে যাবে। 
যাত্রা পুস্তক 22:16

সেই কুমারীর বাবা যদি তাকে তার হাতে তুলে দিতে নিছক অস্বীকার করে, তা হলেও, তাকে কুমারীদের জন্য ধার্য কন্যা-পণ দিতেই হবে।
যাত্রা পুস্তক 22:17 

কিন্তু বিয়ে ঠিক হয়ে আছে এমন কোনও মেয়েকে মাঠে যদি পেয়ে তাকে কোনও পুরুষ ধর্ষণ করে, তবে যে লোকটি তা করবে কেবল তাকেই মেরে ফেলবে।
দ্বিতীয় বিবরণ 22:25✡️ 

📛মন্তব্যঃ এখানে আমরা মোটা দাগে দুটি পরিস্থিতি দেখছি। একটি বাগদান হওয়া মেয়ে আর বাগদান না হওয়া মেয়ে। বাগদান হওয়া মেয়েকে ধর্ষণের ক্ষেত্রে পরিস্কার সিদ্ধান্ত দ্বিতীয় বিবরণ ২২ঃ২৫ এ দেওয়া হয়েছে, আর তা হল মৃত্যুদণ্ড। 

এখন দ্বিতীয় পরিস্থিতি অর্থাৎ বাগদান না হওয়া কুমারী মেয়েকে ধর্ষণের প্রসঙ্গে আসি। এ প্রসংগে কিছু ক্ষুদ্র সংযোজন ছাড়া দ্বিতীয় বিবরণ ২২ঃ২৮-২৯ আর যাত্রাপুস্তক ২২ঃ১৬ পদে প্রায় একই কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যাত্রাপুস্তক ২২ঃ১৭ পদে একটা নতুন বিষয় আমরা দেখি যা খ্রীষ্টবিরোধীরা কখনও উল্লেখ করেনা। আমরা এই তিনটি ভার্স থেকে পাওয়া সিদ্ধান্তগুলো একের পর এক সাজাই-
১) যদি কোনও পুরুষ বিয়ে হয়নি এমন কোনও কুমারী মেয়েকে পেয়ে ধর্ষণ করে এবং তারা ধরা পড়ে, তাকে মেয়েটির বাবাকে পঞ্চাশ শেকল রুপো দেবে। মেয়েটিকে নষ্ট করেছে বলে, তাকে বিয়ে করতে হবে। দ্বিতীয় বিবরণ ২২ঃ২৮-২৯ 

যদি কোনও লোক, যার বাগদান হয়নি এমন এক কুমারীর সতীত্ব হরণ করে ও তার সাথে শোয়, তবে সে অবশ্যই কন্যা-পণ দেবে এবং সেই কুমারী তার স্ত্রী হয়ে যাবে। যাত্রা পুস্তক 22:16
🚫এখানে প্রথম ভার্সে পঞ্চাশ শেকল রুপোর কথা বলা হলেও পরের ভার্সে এ ব্যাপারে কোন পরিমানের উল্লেখ করা হয়নি। এতে আমরা বুঝতে পারি এটি একটি পরিবর্তনশীল ব্যবস্থা যেখানে তৎকালীন সময়ের উপযোগী পঞ্চাশ শেকল রুপো দেয়ার কথা থাকলেও সময় প্রেক্ষিতে প্রচলিত কণ্যা-পণই এখানে প্রযোজ্য হবে। দ্বিতীয় বিষয় হল সে তার স্ত্রী হবে। কিন্তু এই স্ত্রী হওয়া বাধ্যতামূলক কি না তা আমরা একটু পরে জানতে পারব।
২) সে জীবনে তাকে ছেড়ে দিতে পারবে না।
দ্বিতীয় বিবরণ 22:29
🚫 এখানে এই মেয়েকে সে কখনও ছেড়ে দিতে পারবে না। এর তাৎপর্য্য হল, এই ধরণের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া যে মোটেই ছেলেখেলা হবে না তা ধর্ষণকারী অবগত থাকবে আর এ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে মানসিক সচেতনতা সমাজে তৈরী হবে। এ ধরণের বাধ্যবাধকতা একদিকে যেমন এই লোকের জন্য সামাজিকভাবে অপমানজনক, অন্যদিকে মেয়েটির জন্য রক্ষাকবচ।  কারণ এমন পুরুষ এরকম কাজ করে ডিভোর্স দিয়ে পুনরায় ধর্ষণ ও করে আবার বিয়ে করে একটা বিকৃত খেলায় মেতে উঠতে পারে, যা থেকে এমন ব্যবস্থা বিরত রাখবে। 
৩) সেই কুমারীর বাবা যদি তাকে তার হাতে তুলে দিতে নিছক অস্বীকার করে, তা হলেও, তাকে কুমারীদের জন্য ধার্য কন্যা-পণ দিতেই হবে।
যাত্রা পুস্তক 22:17
🚫 এই ভার্সের মাধ্যমে কয়েকটি বিষয় আয়াদের কাছে পরিস্কার হয়। 
-যে কোন বিয়ের ব্যাপারে মেয়ের পিতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। 
- মেয়ের পিতা এই ধরনের বিয়েতে অস্বীকার করলে এই বিয়ে হতে পারবেনা।  সুতরাং এই বিয়ে কখনও বাধ্যতামূলক নয় বরং মেয়ের পিতার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। 
- বিয়ে না হলেও সেই পুরুষকে কুমারীদের জন্য ধার্য্য কন্যাপন দিতে হবে যা তার জন্য একটা সামাজিক অপমানের বিষয় হয়ে থাকবে। এখানে "কুমারীদের জন্য ধার্য্য কন্যা-পণ" দ্বারা আমরা আবারো বুঝতে পারি এটি সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তনশীল একটি বিধান যা পঞ্চাশ শেকলে নির্দিষ্ট নয় বরং দেশ, কাল, সময় প্রেক্ষিতে পরিবর্তনশীল। 

⭕সিদ্ধান্তঃ পুরো আলোচনায় আমরা যে কয়েকটি বিষয় পাই তার সারমর্ম দাড়ায়-
১) বাগদত্তা মেয়েকে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। 
২) যে কোন ক্ষেত্রে মেয়ের পিতার সম্মতি বিয়ের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিষয়।
৩)অবাগদত্তা মেয়েকে ধর্ষণের ক্ষেত্রে মেয়ের পিতার সম্মতিসাপেক্ষে বিয়ে হতে পারে।
৪) বিয়ে হলে তাকে প্রচলিত উপযুক্ত কন্যা-পণ দিতে হবে।
৫) এই বিয়ে বিচ্ছেদযোগ্য হবে না।
৬) বিয়ে না হলেও অর্থাৎ এই বিয়েতে মেয়ের পিতা রাজী না হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি কন্যা-পণ দিতে বাধ্য থাকবে। 

ধর্ষণের কারণে একটি মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাকে নানা সামাজিক গঞ্জনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ঈশ্বর এই সামাজিক সমস্যার সামাজিক সমাধান করেছেন, যেন একদিকে এরকম কাজ সমাজে অপমানের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, অন্যদিকে মেয়েটির ভবিষ্যৎ ও মর্যাদা রক্ষিত হয়।
এখন যারা এই ধরণের অভিযোগ বাইবেল তথা সত্য ঈশ্বরের উপর আনতে চান সেই মুসলিম দা'য়ী দের প্রতি প্রশ্ন, কুরআনে ধর্ষণ ও এর বিধিবিধান সংক্রান্ত কোন আয়াত নেই কেন?  সম্ভবত কুরআনের আল্লাহ এই ধর্ষণ করাকে কোন গুরুতর অপরাধ বলেই মনে করে না। বা নারীদের দোষ দেয়ার জন্য এতে কেবল পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যভিচার নিয়েই শাস্তির কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু নারীর বিরূদ্ধে যৌন নির্যাতনের কোন বিধান এতে নেই। বাইবেলের পরে আসা একটা কিতাব যা নিজেকে স্রস্টা প্রদত্ত বলে দাবী করে অথচ এতে পূর্ববর্তী কিতাবের একটা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয় নিয়েই কোন আলোচনা নেই। সহীহ হাদিসেও আমরা বাইবেলের মত এত বিস্তারিত কোন বিধান পাই না।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

1 comment: