যীশুর পূর্বে যারা এসেছিল তারা ছিলেন চোর ও ডাকাত। যীশু কাদের ব্যাপারে এ কথা বলেছিলেন?
দানিয়েল স্টিফেন
অভিযোগ: যোহন ১০ অধ্যায় ৮ পদের রেফারেন্স দিয়ে অনেক সমালোচক (বিশেষ করে অনেক মুসলিম) এই কথা বলতে চান যীশু তাঁর পূর্বে আসা নবীদের চোর ও ডাকাত বলেছেন। যোহন লিখিত সুসমাচার।
যোহন ১০ঃ৮
যাহারা আমার পূর্ব্বে আসিয়াছিল, তাহারা সকলে চোর ও দস্যু, কিন্তু মেষেরা তাহাদের রব শুনে নাই।
জবাবঃ যীশু নিজে নবীদের রেফারেন্স তার কথায় দিয়েছেন। নবীদের বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। সুতরাং তাঁর এই কথাগুলোতে নিশ্চিতভাবেই বুঝা যায় আগের নবীদের সম্পর্কে তিনি একথা বলেন নি। তিনি এখানে বলেননি আমার আগের "নবীরা" সব চোর ডাকাত ছিল। তিনি এখানে "নবী" শব্দটি ব্যবহার করেননি। তাহলে কাদের সম্পর্কে বলেছেন?
মালাখি পুরাতন নিয়মের শেষ নবী ছিলেন যার থেকে যীশু পর্যন্ত প্রায় চারশ বছর ইস্রায়েলে কোন নবী আসেননি। শুধুমাত্র মোশির আগে ইস্রায়েলে এরকম ঘটেছিল। এই বিরাট সময়ের ব্যবধানে অনেক ভন্ড নবী তাদেরকে নবী হিসাবে দাবী করেছিল। তাদের সম্পর্কেই তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন। এই ভন্ড নবী ও মসীহদের সম্পর্কে আমরা রেফারেন্স ইহুদী ধর্মগুরুদের জবানীতেই পাই যা প্রেরিত পুস্তকে লেখা আছে।
প্রেরিতদের কার্য্য-বিবরণ। ৫
৩০ আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সেই যীশুকে উত্থাপন করিয়াছেন, যাঁহাকে আপনারা গাছে টাঙ্গাইয়া বধ করিয়াছিলেন;
৩৩ এই কথা শুনিয়া তাঁহারা মর্ম্মাহত হইলেন, ও উহাঁদিগকে বধ করিবার মনস্থ করিলেন।
৩৪ কিন্তু মহাসভায় গমলীয়েল নামে এক জন ফরীশী, যিনি সকল লোকের নিকটে মান্য ব্যবস্থা-গুরু ছিলেন, তিনি উঠিয়া ঐ লোকদিগকে কিছু ক্ষণের নিমিত্ত বাহির করিবার আজ্ঞা দিলেন।
৩৫ পরে তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, হে ইস্রায়েল-লোকেরা, সেই লোকদের বিষয়ে তোমরা কি করিতে উদ্যত হইয়াছ, তদ্বিষয়ে সাবধান হও।
৩৬ কেননা ইতিপূর্ব্বে থুদা উঠিয়া আপনাকে মহাপুরুষ করিয়া বলিয়াছিল, এবং কমবেশ চারি শত জন তাহার সঙ্গে যোগ দিয়াছিল; সে হত হইল, এবং যত লোক তাহার অনুগত হইয়াছিল, সকলে ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িল, কেহই রহিল না।
৩৭ সেই ব্যক্তির পরে নাম লিখিয়া দিবার সময়ে গালীলীয় যিহূদা উঠিয়া কতকগুলি লোককে আপনার পশ্চাৎ টানিয়া লইয়াছিল; সেও বিনষ্ট হইল, এবং যত লোক তাহার অনুগত হইয়াছিল, সকলে ছড়াইয়া পড়িল।
৩৮ এক্ষণে আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা এই লোকদের হইতে ক্ষান্ত হও, তাহাদিগকে থাকিতে দেও; কেননা এই মন্ত্রণা কিম্বা এই ব্যাপার যদি মনুষ্য হইতে হইয়া থাকে, তবে লোপ পাইবে,
৩৯ কিন্তু যদি ঈশ্বর হইতে হইয়া থাকে, তবে তাহাদিগকে লোপ করা তোমাদের সাধ্য নয়, কি জানি, দেখা যাইবে যে, তোমরা ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিতেছ।
তাহলে আমরা প্রেরিত পুস্তকেই এধরণের দুজন ভন্ড নবী/মসীহের সন্ধান পেলাম। এতে এটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে ঐ সময়ে এমন কিছু লোকের উদ্ভব হয়েছিল যারা নিজেদের নবী/মসীহ দাবী করেছিল। সুতরাং যীশুর এই কথা পূর্বের স্বীকৃত নবীদের উদ্দেশ্য করে তো নয়ই বরং যীশু পুরাতন নিয়মের নবীদের সত্যায়ন করে গেছেন আর তাঁরা যে যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা ই সুসমাচারে বুঝিয়ে দিয়েছেন-
লুকলিখিত সুসমাচার। ২৪
২৫ তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, হে অবোধেরা, এবং ভাববাদিগণ যে সমস্ত কথা বলিয়াছেন, সেই সকলে বিশ্বাস করণে শিথিল-চিত্তেরা,
২৬ খ্রীষ্টের কি আবশ্যক ছিল না যে, এই সমস্ত দুঃখভোগ করেন ও আপন প্রতাপে প্রবেশ করেন?
২৭ পরে তিনি মোশি হইতে ও সমুদয় ভাববাদী হইতে আরম্ভ করিয়া সমুদয় শাস্ত্রে তাঁহার নিজের বিষয়ে যে সকল কথা আছে, তাহা তাঁহাদিগকে বুঝাইয়া দিলেন। সুতরাং পুরো আলোচনায় এটা পরিস্কার যে যীশু পুরাতন নিয়মের প্রকৃত নবী বা ভাববাদীদের নয় বরং যীশুর পুর্বের বিগত বছরগুলোতে নিজেদের নবী বলে দাবী করা ভন্ডদের বিষয়েই আলোচ্য কথাগুলো বলেছিলেন।
সুতরাং যীশু খ্রীষ্টের আলোচ্য কথাগুলো যীশুর সময়ের কিছু আগে আসা কতিপয় ভন্ড নবী ও মসীহের বিষয়ে, সত্য নবীদের বিষয়ে নয়, বরং সত্য নবীদের সত্যতা তিনি নিজের উক্তির দ্বারা প্রকাশ করেছেন।
0 coment rios: