Saturday, May 8, 2021

প্রশ্নঃ যিশাইয় ৪২ অধ্যায়ের ১-১২ পদে কি মোহাম্মদের বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে

লেখক: দানিয়েল স্টিফেন

জবাবঃ ইদানীং আমরা দেখছি মুসলিমরা বাইবেলের আনাচে কানাচে থেকে কিছু ভার্স বা শব্দের মাঝে মোহাম্মদকে খুঁজে পেতে চায়। কিন্তু তারা সমস্ত বাইবেলে যে যীশুর বিষয়ে ও তাঁরই উপলক্ষে উল্লেখ করা হয়েছে তা সচেতনভাবে এড়িয়ে যায়। যীশু এই নবীদের বই সম্পর্কে কি বলেছেন তা একটু দেখি। লুক ২৪ অধ্যায় ৪৪ পদ, "আমি যখন তোমাদের সঙ্গে ছিলাম তখন বলেছিলাম, মোশির আইন-কানুনে, নবীদের লেখায় ও গীতসংহিতার মধ্যে আমার বিষয়ে যে যে কথা লেখা আছে তার সব পূর্ণ হতেই হবে।" এখানে আমরা দেখছি পুরো পুরাতন নিয়ম বা ওল্ড টেস্টামেন্ট জুড়ে যীশুর বিষয়েই লেখা হয়েছে।

মুসলিম দা’য়ীদের দাবী বুক অব আইজাইয়া এর ৪১ অধ্যায়ের ১ থেকে ১২ পদে মোহাম্মদের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। বিশেষ করে তারা এজন্যই এটা তুলে ধরতে চায় কারণ এর ১১ পদে কেদার যিনি মোহাম্মদের পূর্বপুরুষ ছিলেন ও সেলার কথা বলা হয়েছে যা মদিনার একটা পাহাড়ের নাম। আমরা ৪১ অধ্যায়ের ১ থেকে ১২ পদ একটু দেখি।

যিশাইয় ৪২

১সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, আমার দাস, যাকে আমি সাহায্য করি; আমার বাছাই করা লোক, যার উপর আমি সন্তুষ্ট। আমি তাঁর উপরে আমার আত্মা দেব আর তিনি জাতিদের কাছে ন্যায়বিচার নিয়ে আসবেন। ২তিনি চীৎকার করবেন না বা জোরে কথা বলবেন না; তিনি রাস্তায় রাস্তায় তাঁর গলার স্বর শোনাবেন না।৩তিনি থেঁৎলে যাওয়া নল ভাংবেন না আর মিট্মিট করে জ্বলতে থাকা সলতে নিভাবেন না। তিনি সততার সঙ্গে ন্যায়বিচার করবেন। ৪পৃথিবীতে ন্যায়বিচার স্থাপ্ন না করা পর্যন্ত তিনি দুর্বল হবেন না বা ভেংগে পড়বেন না। দূরের লোকেরা তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে।“

৫সদাপ্রভু ঈশ্বর আকাশ সৃষ্টি করে মেলে দিয়েছেন; তিনি পৃথিবী ও তাতে যা জন্মায় তা সব বিছিয়ে দিয়েছেন; তিনি সেখানকার লোকদের নিঃশ্বাস দেন আর যারা সেখানে চলাফেরা করে তাদের জীবন দেন। তিনি বলছেন, ৬”আমি সদাপ্রভু তোমাকে ন্যায়ভাবে ডেকেছি; আমি তোমার হাত ধরে রাখব। আমি তোমাকে রক্ষা করব এবং আমার লোকদের জন্য তোমাকে একটা ব্যবস্থার মত করব আর অন্যান্য জাতিদের জন্য করব আলোর মত। ৭তুমি অন্ধদের চোখ খুলে দেবে, জেলখানা থেকে বন্দীদের মুক্ত করবে আর সেখানকার অন্ধকার গর্তে রাখা লোকদের বের করে আনবে।

৮”আমি সদাপ্রভু, এ-ই আমার নাম। আমি অন্যকে আমার গৌরব কিম্বা প্রতিমাকে আমার পাওনা প্রশংসা পেতে দেব না। ৯দেখ, আগেকার ঘটনাগুলো ঘটে গেছে আর এখন আমি নতুন ঘটনার কথা ঘোষণা করব; সেগুলো ঘটবার আগেই তোমাদের কাছে তা জানাচ্ছি।“

সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে প্রশংসার গান

১০হে সাগরে চলাচলকারীরা, সাগরের

      মধ্যেকার সব প্রাণী,

     হে দূরের দেশগুলো আর তার মধ্যেকার

     বাসিন্দারা,

    তোমরা সবাই সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে একটা

    নতুন গান কর,

   পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে তাঁর প্রশংসার

    গান গাও।

১১ মরু এলাকা ও তার শহরগুলো জোরে

     জোরে প্রশংসা করুক;

    কেদরীয়দের গ্রামগুলোও তা করুক,

    শেলার লোকেরা আনন্দে গান করুক,

   পাহাড়ের চূড়াগুলো থেকে আনন্দে চিৎকার

   করুক।

   ১২ তারা সদাপ্রভুর গৌরব করুক;

       দূরের দেশগুলোর মধ্যে তাঁর প্রশংসা

       ঘোষণা করুক।

এবার আসি যিশাইয় ৪২ নং অধ্যায়ের ১-১২ পদে। এর আগের অধ্যায় অর্থাৎ ৪১ অধ্যায়ের ৮-৯ পদে ঈশ্বর ইস্রায়েলকে তাঁর দাস বলেছেন ৮"সদাপ্রভু বলছেন, "কিন্তু হে আমার দাস ইস্রায়েল, আমার বেছে নেওয়া যাকোব, আমার বন্ধু আব্রাহামের বংশ, ৯ আমি তোমাকে পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে এনেছি, তোমাকে সবচেয়ে দূরের জায়গা থেকে ডেকে এনেছি। আমি বলেছি , 'তুমি আমার দাস'; আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি, অগ্রাহ্য করিনি।" কিন্তু ৪২ অধ্যায়ে ইস্রায়েল জাতিকে নয় বরং একজন ব্যক্তিকে “দাস” বলা হয়েছে(৪২ এর ১-২ পদ দেখুন) । এখন দেখব ৪২ অধ্যায়ের আগে ৪১ অধ্যায়ে এই ব্যক্তি দাস সম্পর্কে কোন পরিচয় আমরা পাই কি না। একটা কথা আমরা ধরে নিতে পারি এই দাস অবশ্যই ইস্রায়েল জাতি সম্পর্কিত কারণ উপরোল্লিখিত ৪১ এর ৯ পদে ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে দাস বলেছেন। এখন যদি আমরা ৪১ এর ২৭-২৮ পদ দেখি তাহলে এই ব্যক্তি দাস সম্পর্কে ধারণা পাব। ৪১ এর ২৭-২৮ পদ” ২৭আমিই প্রথমে সিয়োনকে বলেছি, আর দেখ, তারা এসে গেছে। আমি যিরূশালেমকে একজন সুসংবাদদাতা দিয়েছি। ২৮ আমি চেয়ে দেখলাম কেউ নেই; পরামর্শ দেবার জন্য তাদের মধ্যে কেউ নেই যে, তাদের জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে পারে।

তাহলে আমরা দেখছি এর পরপরই ৪২ অধ্যায় শুরু যেখানে প্রথম পংক্তিতেই সদাপ্রভু তাঁর দাসের কথা বলেছেন। তাহলে এই দাস অবশ্যই যিরূশালেমের সুসংবাদদাতা(৪১ এর ২৭-২৮ পদ অনুসারে)। এবার আরও নিশ্চিৎ হওয়ার জন্য ৪২ অধ্যায়ের সংশ্লিষ্ট পদগুলো আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি। ৪২ এর ১ পদ কি বলছে? “সদাপ্রভু বলছেন, ‘দেখ, আমার দাস,………যার উপর আমি সন্তুষ্ট। আমি তাঁর উপরে আমার আত্মা দেব আর তিনি জাতিদের কাছে ন্যায়বিচার নিয়ে আসবেন।“ আমাদের কাছে কি এই বাক্যগুলো পরিচিত মনে হচ্ছে না? আসুন দেখি মথি ৩ অধ্যায় ১৬-১৭ পদ কি বলছে। মথি ৩ এর ১৬-১৭ পদ “.১৬বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার পর যীশু জল থেকে উঠে আসবার সঙ্গে সংগেই তাঁর সামনে আকাশ খুলে গেল। তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কবুতরের  মত হয়ে তাঁর উপরে নেমে আসতে দেখলেন। ১৭তখন স্বর্গ থেকে বলা হল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এঁর উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট।“ তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যার উপর ঈশ্বর সন্তুষ্ট ও যার উপর আত্মা দেয়ার কথা যিশাইয় ৪২ এর ১ পদে বলা হয়েছে তিনি হচ্ছেন যীশু খ্রীষ্ট। এখন আমরা ৪২ অধ্যায়ের এর পরের ভার্সগুলোর বিশ্লেষণ করব।

২ পদ- তিনি চিৎকার করবেন না বা জোরে কথা বলবেন না,------যীশু নম্রতায় তাঁর শিক্ষা দিয়েছেন।

৩ পদ- থেঁতলে যাওয়া নল ভাংবেন না , মিট্মিট জ্বলতে থাকা সলতে নিভাবেন না।-------যীশু বিচার করতে আসেন নি মুক্তি দিতে এসেছেন, তিনি পাপীদের বিচার করেন নি, বরং মন পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছেন(ব্যভিচারী নারী, শমরীয় নারী)।

৪ পদ- পৃথিবীতে ন্যায় বিচার স্থাপন না করা পর্যন্ত তিনি দুর্বল হবেন না বা ভেংগে পড়বেন না।--------যীশুর অনন্তকালীন পরিত্রাণ ও ভালোবাসার শিক্ষা চলমান আর তিনি জীবিত আছেন, তাঁর পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

৫-৬ পদ- ঈশ্বর এই দাসকে ইস্রায়েলের জন্য একটা বেন আলোর মতব্যবস্থার মত করবেন আর অন্যান্য জাতিদের জন্য কর।-----------ধার্মিক শিমিয়োন শিশু যীশুকে কোলে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে কি বলেছিলেন? মথি ২ এর ৩২ পদ “ অন্য জাতির কাছে এটা পথ দেখাবার আলো, আর তোমার ইস্রায়েল জাতির কাছে এটা গৌরবের বিষয়।

৭ পদ- তিনি অন্ধদের চোখ খুলে দেবেন, বন্দীদের মুক্ত করবেন--------যীশু বলছেন মথি ১১ এর ২৮ পদ “ তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস, আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব।“ তিনি স্বর্গরাজ্যের নিগুড় তত্ব আমাদের কাছে প্রকাশ করে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। পাপের শৃংখল থেকে আমাদের মুক্ত করেছেন।

৮-৯ পদ – ঈশ্বর আগেকার ঘটনার পরিবর্তে নতুন ঘটনার কথা ঘোষণা করেছেন------- যীশু নতুন নিয়মের মাধ্যমে আমাদের মুক্ত করেছেন, মথি ২৬ অধ্যায় ২৮ পদের যীশু বলেছেন, “কারণ এই আমার রক্ত, নতুন নিয়মের রক্ত, যা অনেকের পাপক্ষমার জন্য দেয়া হয়।“

 

এরপর যদি আমরা ১০-১২ পদ দেখি তাহলে এটা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যিরূশালেম থেকে যে পরিত্রাণের সুসমাচার ছড়িয়ে পড়বে তার উদযাপন দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়বে, এজন্য ঐ সব এলাকাগুলোতে আনন্দ গান করার জন্য ঈশ্বর বলছেন। এখানে পরিস্কার বুঝা যায় যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রশংসা গান পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে করবে। এখানে কেদরীয় ও সেলার কথা আলাদাভাবে বলার কারণ হল, এখানে এর বিরোধীতা থাকবে । কিন্তু তারপরও এখানেও এই গান হবে। কারন গীতসংহিতা ৮৩ এর ৬ পদে ইশ্মায়েলীয় ও হাগারীয়দের ঈশ্বরবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাহলে আমরা দেখছি যে পরিত্রাণের উৎপত্তি যিরূশালেমে যীশুর মাধ্যমে শুরু হবে তা সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে এমনকি কেদার ও সেলা ও  একসময় এই সুসমাচারের আনন্দে গান করবে। সুতরাং এই পুরো অধ্যায় কখনই হযরত মোহাম্মদের ভবিষ্যৎবাণী নয়।    


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

1 comment: