Tuesday, December 31, 2019

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি শুধুমাত্র ইস্রাইয়েলের জন্য এসেছিলেন?

লেখকঃ মি. জনসন সরকার।
অনেক আগে থেকেই অনেক খ্রীষ্টধর্ম সমালোচকরা এটা দাবি করে আসছেন যে , “যীশু খ্রীষ্ট শুধু মাত্র ইস্রায়েলের জন্য এসেছিলেন তিনি ইহুদিদের নবী, তাই তার পথে চলার কোন প্রয়োজন নেই।” এর জন্য তারা মথি ১০ অধ্যায় ৫পদ এবং ১৫ অধ্যায় ১৪ পদের ব্যবহার করে বলেন, “এই দেখ! তোমাদের যীশু শুধুমাত্র ইস্রায়েলের জন্য এসেছিলেন তাই তোমাদের তার দেখানো পথে চলবার কোন প্রয়োজন নেই।”

পবিত্র বাইবেলের আলোকে আমার প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরিত্রানের মিশনকে ৪ ভাগে বিভক্ত করতে পারিঃ
প্রথম মিশন অনুসারেঃ প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তিনি  ইস্রায়েলিয়দের কাছে সুসমাচার প্রচার করে ছিলেন T[Mমথি১০: ৫;  ১৫ :১৪;]
দ্বিতীয় মিশন অনুসারেঃ  তিনি সামেরীয়াতে সুসমাচার প্রচার করে ছিলেন [ যোহন ৪:-৪২;]
তৃতীয় মিশন অনুসারেঃ তিনি  গ্রীকদের কাছে সুসমাচার প্রচার করে ছিলেন [ যোহন ১২:২০-৩২]
চতুর্থ মিশন [ফাইনাল মিশন] অনুসারেঃ  প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তিনি নিজে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যখন তিনি ক্রুশবিদ্ধ হবেন তখন তিনি সমগ্র মানব জাতিকে তার দিকে আকর্ষন করবেন  [যোহন ১২:৩২-৩৩;]। তিনি তার শিষ্যদের সমগ্র পৃথিবীর মানুষের কাছে তার সুসমাচার প্রচার করতে বলে গিয়েছেন  [মথি২৮:১৯; মার্ক ১৬:১৫; যোহন ১৭:১৮;],  তার অনুসারিরা তার কথা মত পৃথিবীর চারিদিকে সুসমাচার প্রচার করে ছিলেন [ প্রেরিত ৮:৪-১৩;]
ইহুদিজাতি ছিল ইয়াওয়ে এলোহীমের [সদাপ্রভু ঈশ্বরের]  মনোনিত জাতি। যাদের বংশেই তিনি তার নবীদের প্রেরন করে ছিলেন। পবিত্র বাইবেলে এই ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে যে সমগ্র মানব জাতির পরিত্রাতা প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এহূদার বংশে জন্ম গ্রহন করবেন [আদিপুস্তক ৪৯:১০;], তিনি এক ইহুদি কুমারীর গর্ভে জন্ম নেবেন [যিশাইয় ৭:১৪;],  এবং তিনি বেথলহেম ইফ্রাতাতেই জন্ম গ্রহন করবেন [মিখা৫:২;]
পবিত্র শাস্ত্রের সাক্ষ্য অনুসারে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট প্রথমত ইহুদিদের কাছে  সুসমাচার প্রচার করেছেন এবং দ্বিতীয়ত তিনি অ-ইহুদিদের কাছে সুসমাচার প্রচার করেছেন
তিনি স্বর্গারোহনের পূর্বে তার শিষ্যদের পরিস্কার ভাবে বলে গেছেন “তোমার সমুদয় জগতে যাও এবং সমস্ত সৃষ্টির কাছে সুসমাচার প্রচার কর” [মথি২৮:১৯; মার্ক ১৬:১৫;]।

প্রেরিত পিতর যখন অইহুদিদের কাছে খ্রীষ্টের সুসমাচার প্রচার কর ছিলেন না তখন স্বর্গীয় দর্শন দিয়ে তাকে বোঝানো হয়ে ছিল যেন তিনি অইহুদিদের কাছে খ্রীষ্টের সুসমাচার প্রচার করেন [প্রেরিত ১০ অধ্যায়]
প্ররিত ফিলিপ তিনি ইথিওপিয়া দেশের কান্দাকি রানীর অধীন উচ্চ পদস্থ নপুংসক অধ্যক্ষকের কাছে সুসমাচার প্রচার করে ছিলেন এবং তাকে খ্রীষ্ট ধর্মে বাপ্তাইজতি করে ছিলেন [প্রেরিত ৮:২৬-৩৯;] খ্রীষ্টের সুসমাচার যে শুধু পুরুষ এবং নারীর মধ্যে সীমাবদ্ধ তা নয় পবিত্র আত্মা তা প্রমাণ করে ছিলেন।
প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যেহেতু ইহুদি বংশে জন্ম নিয়ে ছিলেন তাই তিনি প্রথমে তার নিজের বংশের লোকেদের কাছে সুসমাচার প্রচার করে ছিলেন এবং তারপর তিনি অইহুদিদের কাছে সমাচার প্রচার করে ছিলেন। আপনি মনে করেন, গনিত বিষয়ে সুশিক্ষা অর্জন করেছেন। আপনি কি প্রথম অবস্থায় তাদেরকে গনিত শিক্ষা দেবেন না যারা আগে থেকে গনিতের নিয়ম কানুন সম্পর্কে অবগত রয়েছে!!! নাকি যারা গনিত কি তাই বোঝে না তাদেরকে বোঝেতে যাবেন প্রথম অবস্থায়?
নিশ্চই আপনি প্রথম অবস্থায় তাদেরকেই গনিতের নতুন নিয়ম সম্পর্কে বোঝাবেন যারা আগে পুরাতন গনিতের নিয়ম জানে।
 ঠিক তেমনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টও প্রথমে যারা শাস্ত্র বোঝে তাদের কাছে অর্থাৎ ইহুদিদের কাছে পরিত্রানের নতুন নিয়মের কথা ঘোষনা করলেন  এবং তারপরে অন্য জাতির লোকেদের কাছে সুসমাচার প্রচার করে ছিলেন। কারন তিনি সুস্পষ্ট রূপেই ঘোষণা করে ছিলেন , “ইহুদিদের মধ্য হইতেই পরিত্রাণ” [যোহন ৪:২২;]। সামেরীয়ার এক নারী যখন প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সাথে ইহুদি এবং অইহুইদের বিষয়ে কথা বলছিলেন তখন তিঁনি এটা পরিস্কারভাবে সেই সেই নারীকে বুঝিয়ে ছিলেন ‘এমন এক সময়ের কথা যখন ইহুদি এবং অ ইহুদির মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবেনা সকলেই ইয়াওয়ে এলোহিমের [সদাপ্রভু ঈশ্বরের] উপাসনাকারীদের অন্তরভুক্ত হবে [যোহন ৪:২৩;]।
প্রভু যীশু বলেছেন,
“আমি এই জগতের জ্যোঁতি”- যোহন ৮:১২;
-তিনি কোথাও বলেন নি যে, আমি কেবল ইস্রায়েলের জ্যোঁতি। বরং তিনি বলেছেন, তিনি সমগ্র পৃথিবীর জ্যোঁতি।  
তিনি বলেছেন। আমিই পথ, সত্য ও জীবন আমার মাধ্যমে না আসলে কেউ পিতার কাছে যেতে পারে না।”- যোহন ১৪:৬;
-তিনি কোথাও বলেন নি যে,  আমি কেবল ইস্রায়েলদের জন্য  পথ, সত্য, জীবন।
বরং তিনি বলেছেন, তিনি সমগ্র  মাবন জাতির জন্য কেবল একটি  পথ, সত্য এবং জীবন।
এছাড়াও পবিত্র বাইবেলে সুস্পষ্ট ভবিষ্যত বানী রয়েছে যে তিনি সমগ্র মানব জাতির জন্য আসবেনঃ
“তাঁর উপরে অ-ইহুদিরা আশা রাখবে” -যিশাইয় ১১:৪০; ৪২:৪; মথি ১২:২১;
 প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্মের সময়ে  পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত ধার্মিক শিমিয়ন জেরুশালের পবিত্র উপাসনালয়ে তাঁকে দেখতে পেয়ে বলেন, “আমার চোখ তোমার পরিত্রানের ব্যবস্থা দেখেছে, ...... অন্য জাতির কাছে এটা পথ দেখানোর জ্যোঁতি এবং তোমার প্রজা ইস্রায়েলের গৌরব।”– লুক ২:৩১-৩২;
শিষ্যদের বিষয়ে কি বলা যায়?
একটি ছোট উপমার দ্বারা বিষটি আরো সুস্পষ্ট করা যাকঃ
যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করেন তাদের আমরা আরমি বলে থাকি। আচ্ছা যেসব আরমিদের বিদেশে যুদ্ধের জন্য পাঠাণো হয় তার কি ট্রেনিং না করেই বিদেশে যুদ্ধ করতে যায়? অবস্যই না। তাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্ত ট্রেনিং দিয়ে তারপরে তাদের বিদেশে যুদ্ধের জন্য পাঠানো হয়। ঠিক তেমনি প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তার শিষ্যদের দক্ষ করে তোলার জন্য প্রথমে ইহুদিদের কাছে পাঠিয়ে ছিলেন এবং পরে তাদেরকে সমগ্র পৃথিবীতে প্রেরন করেছিলেন। 

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.