ভূমিকা: রাহব ছিলেন একজন কনানীয় বেশ্যা। তিনি একসময় তাঁর দেহ পুরুষের মাংসিক কামনা অর্থের বিনিময়ে মিটাতেন। কিন্তু প্রভুর করুণায় আগত নিশ্চিত ধ্বংস থেকে বেঁচে ছিলেন । রাহব বেশ্যার কাহিনী হতে পারে অনেক পাপীতাপী মানুষের মুক্তির পথ উন্মোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা।
#✝পবিত্র বাইবেলে তাঁর অবস্থান:
পবিত্র বাইবেলের পুরাতন নিয়মে দু'বার তাঁর ঘটনার উল্লেখ আছে ( যিহোশূয় ২,৬)। নতূন নিয়মে তিনবার তাঁর নাম উল্লেখ আছে :
প্রথমত: প্রভু যীশুর জন্ম তালিকায় ( মথি ১:৫)
দ্বিতীয়ত : বিশ্বাসের বীরদের তালিকায় ( ইব্রীয় ১১: ৩১)তৃতীয়ত: বিশ্বাস ও কাজের আদর্শের উদাহরণ (যাকোব ২:২৫)
✝#রাহব বেশ্যার স্মরণীয় কাজ :
যিহোশূয়ের বর্ণনা অনুসারে রাহব বেশ্যা ইস্রায়েল জাতির প্রেরিত দু'জন চরদের রক্ষা করেছিলেন । তার পূর্বে ইস্রায়েল জাতি এবং তাদের ঈশ্বরের পরাক্রম সম্পর্কে তিনি জেনে ছিলেন। জেনে ছিলেন ইস্রায়েলের ঈশ্বরই জীবন্ত ঈশ্বর, তিনি ছাড়া আর উদ্ধারকর্তা নাই ।
তিনি চরদের বলেছিলেন ,
"
-- আমি জানি, সদাপ্রভু তোমাদিগকে এই দেশ দিয়াছেন, আর তোমাদের হইতে আমাদের উপরে মহাভয় উপস্থিত হইয়াছে, ও তোমাদের সম্মুখে এই দেশনিবাসী সমস্ত লোক গলিয়া গিয়াছে।
------
কেননা মিসর হইতে তোমরা বাহির হইয়া আসিলে সদাপ্রভু তোমাদের সম্মুখে কি প্রকারে সূফসাগরের জল শুষ্ক করিয়াছিলেন, এবং তোমরা যর্দনের ওপারস্থ সীহোন ও ওগ নামে ইমোরীয়দের দুই রাজার প্রতি যাহা করিয়াছ, তাহাদিগকে যে নিঃশেষে বিনষ্ট করিয়াছ, তাহা আমরা শুনিলাম;
আর শুনিবামাত্র আমাদের হৃদয় গলিয়া গেল; তোমাদের হেতু কাহারও মনে সাহস রহিল না, কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু উপরিস্থ স্বর্গে ও নিচস্থ পৃথিবীতে ঈশ্বর।"
(যিহোশূয় ২:৯-১১)।
প্রকৃতপক্ষে রাহব বেশ্যা সত্য ঈশ্বরের পরিচয় পেয়ে তাঁকেই বিশ্বাস করেছিলেন এবং বিশ্বাসের ফল হিসাবে চরদের রক্ষা করেছিলেন ।
✝#তাঁর কাজের ফলাফল:
✝প্রথমত: রাহব বেশ্যাসহ তাঁর পরিবার ও পরিজন আগত ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিল ।
পবিত্র বাইবেল এ সম্পর্কে বলে,
" কিন্তু যিহোশূয় রাহব বেশ্যাকে, তাহার পিতৃকুলকে ও তাহার স্বজন সকলকে জীবিত রাখিলেন; সে অদ্যাপি ইস্রায়েলের মধ্যে বসতি করিতেছে; কারণ যিরীহো নিরীক্ষণ করিবার জন্য যিহোশূয়ের প্রেরিত দুই দূতকে সে লুকাইয়া রাখিয়াছিল।"
( যিহো: ৬:২৫)
✝দ্বিতীয়ত#নতুন পরিচয় লাভ: ঈশ্বরের অনুগ্রহে সলমন নামে একজন যিহূদা বংশীয় ইস্রায়েলীয়ের সাথে বিয়ে হয় যার গর্ভে বোয়স নামে ছেলে হয় । বোয়সই হলেন আমাদের অতি পরিচিত রূতের স্বামী(রূত ৪:২০ -২২ তুলনীয় মথি ১:৫)। পরবতীর্তে আমরা দেখতে পাই, রূতের নাতি যিশয়ের পুত্র রাজা দায়ুদ । যে বংশধারায় আমাদের প্রভু যীশুর জন্ম হয়েছে ( মথি ১:১৬)
✝#তৃতীয়ত: ব্যক্তিগত পাপ থেকে রক্ষা: রাহব বেশ্যার মূলত দুই পাপ ছিল : বেশ্যাবৃত্তি যা ব্যভিচার ও তা মৃত্যুর যোগ্য পাপ এবং একজন কনানীয় হিসাবে তিনি ছিলেন মূর্তি পূজক,তাও মৃত্যুর যোগ্য পাপ ছিল । প্রথম পাপ দৈহিক ব্যভিচার এবং দ্বিতীয় পাপ হচ্ছে আত্মিক ব্যভিচার । এই দু'পাপই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ঘৃণিত। আমাদের জানা প্রয়োজন যে, ইস্রায়েল জাতি কনান দেশে প্রবেশ করার পূর্বে রাহব বেশ্যাসহ কনানীয়রা বিদেশীদের ব্যভিচার ও মূর্তিপূজাসহ অন্যান্য অনেক পাপে পতিত করেছিল। সেই কারণে ঈশ্বরের ক্রোধ কনানীয়সহ রাহব বেশ্যার উপর ছিল।
কিন্তু কি ঘটনা হলো ? ফলাফল হল উল্টা । যখন পবিত্র, ঈশ্বরের মনোনীত জাতির লোক যখন রাহব বেশ্যার সাথে দেখা করতে গেল, তখন রাহব বেশ্যার বিশ্বাস তাঁকে রক্ষা করল । ইস্রায়েলের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসেরই কারণে তিনি ইস্রায়েলের দু'জন চরকে রক্ষা করে বাঁচানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন ।
বস্তুতঃ রাহব বেশ্যা মহা দন্ডাজ্ঞার মধ্যেই ছিলেন কিন্তু অনুগ্রহেই রক্ষা পেয়েছিলেন । সে এমন এক নিয়মের সাথে আবদ্ধ হয়েছিল যা পাবার তাঁর কোন কথা ছিল না । অধিকন্তু, কোন অধিকার ছিল না । আশ্চর্যের বিষয় নতুন নিয়মের লেখকেরা অনেক গুরুত্ব দিয়ে তাঁর বিশ্বাসের আদর্শ প্রচার করেছিল যা বর্তমান যুগের সমস্ত বেশ্যাসহ মহাপাপীদের জন্য মংগল সুসমাচার নিয়ে আসতে পারে ।
✝✝✝যা আমাদের করণীয়:-
✝#প্রথমত: মুক্তির জন্য ইস্রায়েলের ঈশ্বর- যিনি অব্রাহামের , ইসহাকের ও যাকবের ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে হবে । রাহব বেশ্যা পরজাতীয় হয়ে তাই করেছিলেন । আজকে আমাদের যা করণীয় তা হচ্ছে আগত ক্রোধ বা শেষ বিচারের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্যে প্রভু যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সুসমাচার বিশ্বাস করতে হবে। প্রভুর বাক্য এভাবে আমাদের শিক্ষা দেয়,
"কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে-উহারা বিনামূল্যে তাঁহারই অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি দ্বারা, ধার্মিক গণিত হয়।"
( রোমীয় ৩:২৩,২৪)
খ্রীষ্টের মৃত্যু থেকে পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর শেষ বিচারের চিহ্ন দিয়েছেন যেন তা বিশ্বাস করে আগত বিচার থেকে রক্ষা পায়।
,"কেননা তিনি একটি দিন স্থির করিয়াছেন, যে দিনে আপনার নিরূপিত ব্যক্তি দ্বারা ন্যায়ে জগৎ সংসারের বিচার করিবেন; এই বিষয়ে সকলের বিশ্বাস যোগ্য প্রমাণ দিয়াছেন, ফলতঃ মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইয়াছেন।"
(প্রেরিত ১৭:৩১)
তাই আজই প্রভুকে গ্রহণ করে আপনি ধন্য ও পূর্ণ হতে পারেন।
✝#দ্বিতীয়ত : বিশ্বাসের ফল প্রকাশ করতে হবে। খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস শুধু কথায় নয় কাজে রূপান্তরের কথা বলে। রাহব বেশ্যা চরদের রক্ষা করে তার প্রমাণ দিয়েছিলেন । ঈশ্বর খ্রীষ্টের বিশ্বাসীদের এজন্যই পরিত্রাণ দিয়েছেন যেন তারা ফলবান জীবন যাপন করে , সৎ কাজ করে ও পবিত্রতার অন্বেষণ করে ।
" কারণ আমরা তাঁহারই রচনা, খ্রীষ্ট যীশুতে বিবিধ সৎক্রিয়ার নিমিত্ত সৃষ্ট; সেইগুলি ঈশ্বর পূর্বে প্রস্তুত করিয়াছিলেন, যেন আমরা সেই পথে চলি।" ( ইফি:২:১০)
"কিন্তু যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, সেই পবিত্রতমের ন্যায় আপনারাও সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও;"
(১ পিতর ১:১৫)।
ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর পবিত্র আত্মাকে দিয়েছেন যেন আমরা পৃথকীকৃত জীবন যাপন করি।
✝#উপসংহার: আজকে আপনি নিজেকে যত মহাপাপী মনে করেন না , প্রভুর কাছে আশ্রয় আছে। আছে ক্ষমা ও পরিত্রাণের নিশ্চয়তা । রাহব বেশ্যা হল তার প্রকৃত উদাহরণ । প্রভু
যীশু বলেছেন তৎকালীন ভন্ড ফরীশিদের বলেছিলেন ,----' করগ্রাহী ও বেশ্যারা তোমাদের অগ্রে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতেছে।"
(মথি ২৩:৩১)। তা কিভাবে? তা ঈশ্বরের অনুগ্রহেই যা আমি এই প্রবন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি।
ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ বুঝার শক্তি দান করুন যেন তাঁর দয়ার মাহাত্ম্য অনুধাবন করে সৎ পথে চলতে পারি।। আমেন।।