আদিপুস্তক ১ অধ্যায়ের সৃষ্টি তত্ত্বের যৌক্তিক
ব্যাখ্যা।
লেখকঃ মি.জনসন সরকার।
আদিপুস্তক ১ অধ্যায় মানব ইতিহাসে লেখা সমস্ত
প্রাচীন লেখার চেয়ে ভিন্ন তাই আমার অন্য কোন সাধারন মানব রচিত গ্রন্থের দ্বারা এই
ঐশি গ্রন্থের পূর্নাঙ্গ ব্যাখ্যা করতে পারি না। আমাদের যদি প্রকৃতপক্ষ আদিপুস্তক ১
অধ্যায় বুঝতে হয় তবে আমাদের সেই প্রাচীন হিব্রু ভাষার যে তাৎপর্য তখন ছিল, সেই
দৃষ্টিকোন দিয়ে এটা আমাদের বুঝতে হবে। তবেই আমার এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হব
কারন পবিত্র বাইবেল নিজেই নিজেকে ব্যাখ্যা করে।
בראשית ברא אלהים את השמים ואת הארץ׃
“In a beginning Elohim created the heavens and the
earth.”- Genesis 1:1; Interlinear Scripture Analyzer version
“আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্মান করিলেন”-আদিপুস্তক ১:১; কেরী
ভারশন।
অনেকেই এটা মনে করেন যে, “এখানে সব কিছুর শুরু বোঝানো হয়েছে”। কিন্তু সত্য বলতে এটা তাদের বোঝার ভুল হয়েছে শাস্ত্রের নয়। এখানে আদিতে বা শুরুতে বোঝানোর জন্য যে শব্দ ব্যবহৃত
হয়েছে তা হলো “ব্যারাশিট”[ בְּרֵאשִׁית], এই শব্দের
অর্থ কখনই এটা নয় যে, এটা বোঝায় “সব কিছুর প্রথমমে [শুরুতে]” কারন পবিত্র বাইবেলে “ব্যারাশিট”[
בְּרֵאשִׁית], শব্দটি আর
অনেক স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে আর কোন স্থানে, “সব কিছুর প্রথমে [শুরুতে]” বোঝাতে
ব্যবহৃত হয় নাই বরং যে কোন কিছুর একটি “শুরুকে
বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে”।
“যোশিইয়ের
পুত্র যিহূদা –রাজ যিহোয়াকীমের রাজ্যত্বের আরাম্ভে [শুরুতে] এই বাক্য
সদাপ্রভু হইতে উপস্থিত হইল”-যিরমিয় ২৬:১; [কেরী ভারশন] এখানে কি
কোথাও বোঝানো হয়েছে , “রাজ যিহোয়াকীমের রাজ্যত্ব সৃষ্টির প্রথমে [শুরুতে]
ছিল”? না বরং এখানে বোঝানো হয়েছে তার “রাজত্বের শুরুকে” বোঝানো হয়েছে।
এছাড়াও যিরমিয় ২৮:১; এবং ৪৯:৩৪ পদেও “আরাম্ভকে”[শুরুকে]
বোঝানো হয়েছে। তাই আমারা সুনিশিত ভাবে বলতে পারি যে, আদিপুস্তক ১:১; এখানে সব
কিছু প্রথম আরাম্ভ কিংবা শুরুকে বোঝানো হয় নি। ১৯৮৫ সালে Jews Publication Society [JPS] Version
আদিপুস্তক ১:১; এর একটি
ভিন্ন ধরনের অনুবাদ উপস্থাপন করেন
“1. When God began to create heaven
and earth 2. the earth being unformed and void, with darkness over the surface
of the deep the water.” – Genesis 1:1-2;
এছাড়াও
অন্যান্য বাইবেলে অনুবাদেও এই অনুবাদকে সমর্থন করা হয়েছে যেমনঃ The COMMAON ENGLISH BIBLE [CEB]
VERSION, THE LIVING BIBLE.
তবুও কিছু
লোক দাবি করতে পারে যে, “এই অনুবাদ ভিত্তিহীন বা নিজেদের তৈরীকৃত!” আসুন আদিপুস্তক ২:৪;পদ পড়ে
দেখি,
“সৃষ্টিকালে
যে দিন সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবী এবং আকাশমন্ডল নির্মান করিলেন, তখনকার আকাশমন্ডল ও
পৃথিবীর বিত্তান্ত এই।” -কেরী ভারশন এখানেও
ব্যারা শব্দটি בְּהִבָּרְאָם [বি-ইব্যারা-এম]
ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু এখানে সব কিছুর আরাম্ভে [শুরুতে] বোঝাতে ব্যবহৃত হয় নি বরং “When they are created” হিসাবে
অনুবাদ করা হয়েছে। তাই Jews Publication
Society [JPS] Version, The COMMAON
ENGLISH BIBLE [CEB] VERSION, THE LIVING BIBLE এরা কেউ মিথ্যা অনুবাদ করেন নি কারন একই
ব্যারা শব্দটি আদিপুস্তক ১:১; পদেও ব্যবহৃত হয়েছে।
সমালোচকদের কিছু প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তরঃ
প্রথম দিনে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্মান করিলেন,
কিন্তু আলো সৃষ্টি করলেন তারপরে [৩ পদ অনুযায়ি] এটা কিভাবে সম্ভব?
উত্তরঃ “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্মান
করিলেন”-আদিপুস্তক ১:১; কেরী
প্রথমত, এখানে কোথাও বলা হয় নি যে, এটা
সৃষ্টির প্রথম ছিল।
দ্বিতীয়ত, এখানে
কোথাও হিব্রু শব্দ ইয়োম/দিন [יֹום] ব্যবহার কার
হয় নি। তবে এখানে সমাচলোচকরা “প্রথম দিন” কথাটি কোথা হতে উদ্ভব করলেন? আদিপুস্তক
১:১-২; আকাশ মন্ডল
ও পৃথিবীর সৃষ্টির সূচনার কথা লেখা হয়েছে কিন্তু কিভাবে এই সৃষ্টি সম্পূর্ন হয়েছে
সেই বর্ননা পরে করা হয়েছে। যেমনঃ আকাশ্-মন্ডল [আদিপুস্তক ১:৬-৮:] পৃথিবী [আদিপুস্তক ১:১০;]।
ভাব-সম্প্রসারন,
রচনা, দরখাস্তের বিষয়ের মতন। কারন পবিত্র বাইবেল উচ্চতর হিব্রু গ্রামারের ব্যবহার
করা হয়েছে। একটি রচনার ভুমিকা পড়ে কি আপনি বুঝতে পারবেন সমগ্র রচনাতে কি বলা
হয়েছে? নিশ্চয় নয়। কিংবা ভাব-সম্প্রসারন, দরখাস্তের প্রথমের বিষয় পড়ে পড়ে আমরা সব
কিছু বুঝতে পারব না। ঠিক তেমনি পবিত্র বাইবেলেও আদিপুস্তক ১:১-২;
ভাব-সম্প্রসারনের মত যা এই পৃথিবীর সমস্ত ব্যাকারনের নিয়মের সাথে মিল রয়ছে। কারন
আদিপুস্তক ১:৩; পদে
সুস্পষ্টভাবে বর্নাণা করা হয়েছে, যখন কোন কিছু ছিল না তখন ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু
ঈশ্বর] বলেছিলেন, ই-হাই আ-য়র [וַיְהִי אֹור] “Let there be light be” [দিপ্তি হউক], আর তখনি দিপ্তি [আলো]
সৃষ্টি হয়ে ছিল “and light come
to be so”- আদিপুস্তক ১:১; এই বিষয়ে আমাদের মনে কোন যেন কোন ধরনের সন্দেহ
না থাকে তার জন্য পবিত্র বাইবেলে আমাদের এটাও নিশ্চিত করে দেয় প্রথম ইয়োমে/দিনে [יֹום] আলোর
সৃষ্টি হয়েছে ছিল [আদিপুস্তক ১:-৩-৫;]। এটা বিজ্ঞানের
বিগ ব্যাং তত্ত্বের সাথে হুবহু মিলে যায়ঃ
প্রথম সৃষ্টির দিন [ সম্পর্কে
www.nasa.gov
#সূর্য চন্দ্র, নক্ষত্র সৃষ্টি করলেন চতুর্থ দিনে [আদিপুস্তক
১:১৪-১৬;অনুযায়ি] আলো সৃষ্টি হয়েছিল কবে?
উত্তরঃ প্রথম প্রশ্নের উত্তরে এই প্রশ্নের অর্ধেক
উত্তর দেওয়া হয়েছে, ইয়াওয়ে
এলোহীম প্রথম দিনে আলোর
সৃষ্টি করেছিলেন [আদিপুস্তক ১:-৩-৫;]। তবে এখানে যে
সূর্য চন্দ্র, নক্ষেত্র ইত্যাদি সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে কেন? এখানে যে হিব্রু
শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো וַיַּעַשׂ [ওয়েই-আ-আঁশ] যার অর্থ নতুন সৃষ্টি
করা কে বোঝায় না বরং পূর্বে সৃষ্ট বস্তুকে পূর্ন কারাকে নির্দেশ করে পবিত্র
বাইবেল নিজেই এই শব্দের অর্থকে ব্যাখ্যা করে। যেমনঃ
“Then Noah did [וַיַּעַשׂ ] according
to
all that Yahweh Elohim had instructed him; he did just so.” -Genesis
6:22; Interlinear Scripture Analyzer
version
“Noah did[וַיַּעַשׂ ]
according to all that Yahweh Elohim had instructed him.”- Genesis
7:5; Interlinear Scripture Analyzer
version
Joseph gave instructions to fill their lvessels with cereal grain, to restore their money, each man's into his sack, and to
give them provisions for the journey. Accordingly
one
did[וַיַּעַשׂ ] so
for them. -Genesis 42:25; Interlinear Scripture
Analyzer version
ইত্যাদি।
পবিত্র
বাইবেলে অসংখ্যবার এই শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে যার কখনই নতুন সৃষ্টিকে বোঝায় না
বরং পূর্বে সৃষ্ট জিনিসকে পূর্নাতা দান করাকে বোঝায়। এমন কি! আদিপুস্তক ১:৬; এখানে বলা
হয়েছে, প্রথমে আকাশ মণ্ডলকে সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে এবং আদিপুস্তক ১:৭; এখানে বলা
হয়েছে, আকাশ-মণ্ডলের
প্রক্রিয়া
শেষ করা হয়েছ।
[And God said, Let there be a
firmament in the midst of the waters, and let it divide the waters from
the waters. And God made [וַיַּעַשׂ
] the firmament, and divided
the waters which were under the firmament from the waters which were above the
firmament : and it was so. –Genesis 1:6-7; KJV]
পবিত্র
বাইবেল নিজেই וַיַּעַשׂ [ওয়েই-আ-আঁশ] শব্দের
পূর্ন ব্যাখ্যা করেছে তাই এখানে দ্বিমত হবার কোন সুযোগ নেই। এমন কি Lexical from Hebrew to English
Dictionary তেও וַיַּעַשׂ [ওয়েই-আ-আঁশ] শব্দের অর্থ
করা হয়েছেঃ
Visible, show হিসাবেও অনুবাদ
করা হয়েছে।
#সূর্য-চন্দ্র ইত্যাদি আলোদানকারী বস্তুসমূহ যদি
চতুর্থ দিনে সৃষ্টি হয় তবে আর আগে কিভবে দিন রাত সংগঠিত হতে পারে?
উত্তরঃ পবিত্র বাইবেল এটা বলে না যে, চতুর্থ দিনে সূর্য
সৃষ্টি হয়েছিল বরং পবিত্র বাইবেল আমাদের এটা বলে প্রথম দিনে আলোর সৃষ্টি হয়েছিল[আদিপুস্তক ১:৩;]
পৃথিবী
যেহেতু তখন পূর্ন আকার পায় নি তাই এটি অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল[আদিপুস্তক ১: ২; যিহিষ্কেলঃ ৩২:৭-৮;] এবং চতুর্থ দিনে সেই আলোদান কারী জ্যতিষ্কসমূহ পূর্নতা
পেয়ে দৃশ্যমান হয়েছিল[আদিপুস্তক
১:১৪-১৬;]।
পবিত্র
বাইবেল যখন সৃষ্টি সম্পর্কিত দিন দীর্ঘ দিন গুলো নিয়ে আলোচনা করে তখন আমাদের এটাকে ২৪ ঘন্টার দিন হিসাবে মনে
করলে ভূল হবে। তার কারন পবিত্র বাইবেল সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করে ইয়াওয়ে এলোহীমের
দিন এবং আমাদের দিন আলাদা[গীতসংহিতা ৯০:৪;২পিতর ৩:৮;]।
পবিত্র বাইবেল নিজেই এই দিনের বিষয়ে
ব্যাখ্যা প্রদান করে যেমন ধরুনঃ
গীতসংহিতা৯০:৬; এখানে, জীবনের শুরু এবং শেষকে
বোঝানো হয়েছে।
[In the morning it blossoms, but it passes by; By evening
it is snipped off and has dried up.]
তাই আমার এটা বুঝতে পারছি যে, আদিপুস্তক ১ অধ্যায়ে যে দিন রাতের কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে
একটি ধাপের আরাম্ভ এবং সমাপ্ত। এছাড়াও পবিত্র বাইবেল দীর্ঘ মেয়াদি দিন সম্পর্কে
আলোচনা করে, যেমনঃ
উপদেশক ১২:৩; এখানে, এমন এক দীর্ঘ দিনের কথা বলা
হয়েছে যেদিন মানুষ বৃদ্ধ হবে, তখন তার হাতে পায়ে শক্তি কমে যাবে। চোখের
দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণ করার ক্ষমতা কমে যাবে এবং দাঁত দুর্বল হয়ে পড়বে।
[In the day when the keepers of the house stir in a sweat, And the men
of valor bend down, When the grinding maids halt because they are few, And those
seeing out through the crevices are darkened,]
যিশাইয় ৪:১; এখাণে ভবিষ্যৎবণী
করা হয়েছে এমন এক “দিন” আসবে “সেই দিন” ৭টা মেয়ে একটি ছেলেকে বিয়ে করতে চাইবে এবং
তারা সেই ছেলেটিকে বলবে আমাদের নিজেদের ভরনপোষণ আমারা করে নেব তোমাকে করতে হবে না,
তুমি শুধু আমাদের বিয়ে কর যাতে করে লোকে আমাদের সম্মান করে।
[And seven women will hold fast to one man in that day, saying-: Our own bread shall we eat, And with our own raiment shall we
clothe ourselves; But let your name be called upon us; Gather up our reproach.]
প্রকাশিত বাক্য ১৪:১১; এখাণে বলা হয়েছে যারা শয়তানের চিহ্ন কপালে এবং হাত ব্যবহার করবে তারা “দিন
এবং রাতে বিশ্রাম পাবে না”।
[And the fumes of their torment are ascending for the eons of the
eons. And they are having no rest day and night, those worshiping the wild beast
and its image, and if anyone is getting the emblem of its name.]
সুতরাং এখানে ২৪ ঘন্টার দিনের কথা বোঝানো হচ্ছে না,
কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি দিনের কথা সুস্পষ্ট ভাবে বোঝানো হচ্ছে। তাই এখানে পবিত্র
বাইবেলের কোন সমস্যা নেই যদি সমস্যা থেকে থাকে তবে সেটা সমালোচকদের মস্তিস্কে
রয়েছে।
পরিশেষে আমার এটা বলতে পারি পবিত্র বাইবেলে যে
সৃষ্টিতত্ত্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে তা সম্পূর্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক।