লেখকঃ পাষ্টর জনসন সরকার।
কুরআনে যেভাবে ত্রিত্ববাদের ধারনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা দেখে একজন খ্রীষ্টানের মনে ধারনা আসতে পারে “কুরআন যিনি লিখেছিলেন তিনি কি আদৌ ত্রিত্ববাদ বুঝতেন?” আর এই ধরনের চিন্তা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় তার উল্লেখযোগ্য কারন পেশ করছি।
১। কুরআন অনুসারে পিতা ঈশ্বর ত্রিত্বের তৃতীয় ব্যক্তিঃ সূরা ৫:৭৩;
অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তিন জনের তৃতীয়জন’। যদিও এক ইলাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আর যদি তারা যা বলছে, তা থেকে বিরত না হয়, তবে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব স্পর্শ করবে। আল-বায়ান
hey have certainly disbelieved who say, "Allah is the third of three." And there is no god except one God. And if they do not desist from what they are saying, there will surely afflict the disbelievers among them a painful punishment. -Sahih International
Surely, disbelievers are those who said: “Allah is the third of the three
(in a Trinity).” But there is no ilah (god) (none who has the right to be
worshipped) but One Ilah (God -Allah). And if they cease not from what they
say, verily, a painful torment will befall the disbelievers among them.-
They surely disbelieve who say: Lo! Allah is the third of three; when there is no Allah save the One Allah. If they desist not from so saying a painful doom will fall on those of them who disbelieve.-
Indeed they have already disbelieved, the ones who have said, “Surely Allah is the third of three.” And in no way is there any god except One God. And in case they do not refrain from what they say, indeed there will definitely touch the ones of them that have disbelieved a painful torment.-
আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة - আয়াতঃ ৭৩ এর তাফসীর করতে গিয়ে কুরআনের তাফসীরকারীরা এই ভুল তুলে ধরেছেন,
১) অর্থাৎ ঈসা মসীহ আলাইহিস সালাম, রূহুল কুদ্স ও আল্লাহ, কিংবা মসীহ, মারইয়াম ও আল্লাহ -সবাই আল্লাহ। তাদের মধ্যে একজন অংশীদার হলেন আল্লাহ। এরপর তারা তিনজনই এক এবং একজনই তিন। এ হচ্ছে নাসারাদের সাধারণ বিশ্বাস। নাসারাদের মালেকিয়া, ইয়াকুবিয়্যা ও নাসতুরিয়্যা এ তিনটি দলই উপরোক্ত বিশ্বাস পোষণ করে। [ইবন কাসীর] এ যুক্তিবিরোধী ধর্মবিশ্বাসকে তারা জটিল ও দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় ব্যক্ত করে। অতঃপর বিষয়টি যখন কারো বোধগম্য হয় না, তখন একে ‘বুদ্ধি বহির্ভূত সত্য বলে আখ্যা দিয়ে ক্ষান্ত হয়। সুদ্দি বলেন, এখানে তিনের এক ইলাহ বলা হয়েছে। তিনজন বলতে, ঈসা, তার মা মারইয়াম এবং আল্লাহকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, অন্য আয়াতে কোন কোন নাসারাদের দ্বারা ঈসা ও তার মাকে ইলাহ হিসেবে গণ্য করার কথা উল্লেখ করে তা খণ্ডন করা হয়েছে। [আল-মায়েদাহ: ১১৬] ইবন কাসীর বলেন, এ মতটি অধিক প্রাধান্যপ্রাপ্ত। [ইবন কাসীর]-তাফসীরে জাকারিয়া[1]
এখানে স্পষ্ট দেখা যায় কুরআনের বেনামী লেখক মরিয়মকে ত্রিত্ববাদের অংশ হিসাবে মনে করতেন “তিনজন বলতে, ঈসা, তার মা মারইয়াম এবং আল্লাহকে বোঝানো হয়েছে।”
৩। সূরা ৫ আয়াত১৬৬ স্পষ্ট বলা হয়েছে খ্রীষ্টনরা মরিয়মকে ত্রিত্বের অংশ বলে মনে করে,
আর যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মারইয়াম! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলেঃ তোমরা আল্লাহর সাথে আমার ও আমার মায়েরও ইবাদাত কর? ঈসা নিবেদন করবেঃ আপনি পবিত্র! আমার পক্ষে কোনক্রমেই শোভনীয় ছিলনা যে, আমি এমন কথা বলি যা বলার আমার কোন অধিকার নেই; যদি আমি বলে থাকি তাহলে অবশ্যই আপনার জানা থাকবে; আপনিতো আমার অন্তরে যা আছে তাও জানেন, পক্ষান্তরে আপনার জ্ঞানে যা কিছু রয়েছে আমি তা জানিনা; সমস্ত গাইবের বিষয় আপনিই জ্ঞাত।- মুজিবুর রহমান
And [beware the Day] when Allah will say, "O Jesus, Son of Mary, did you say to the people, 'Take me and my mother as deities besides Allah?'" He will say, "Exalted are You! It was not for me to say that to which I have no right. If I had said it, You would have known it. You know what is within myself, and I do not know what is within Yourself. Indeed, it is You who is Knower of the unseen. Sahih International
বর্তমান তথাকথিত মুসলিম দাঈ যারা আছেন তারা দাবি করে বলেন “না না এখানে ত্রিত্ববাদের অংশ হিসাবে মরিয়মকে নাম উল্লেখ করা হয় নি।” তারা এও দাবি করেন “কাথলিকরা মরিয়মের উপাসনা করে তাই এই আয়াতে ঠিকি লেখা আছে।”
হাস্যকর বিষয় হলো তারা প্রথমেই দাবি করে এই আয়াতে ত্রিত্ববাদে মরিয়মের অবস্থান নিয়ে কিছু বলা হয় নি কিন্তু তার পরের যুক্তিতেই কাথলিকদের দিলীল পেশ করে। তাদের এটা জানে রাখা উচিত কথালিকরা মরিয়মের উপাসনা করলেও তারা তাকে ত্রিত্বের ঈশ্বর হিসাবে মনে করে না।
ভুলঃ “এই আয়াতে ত্রিত্ববাদে মরিয়মের অবস্থান নিয়ে কিছু বলা হয় নি” তাফসীরকারীদের দলীল প্রমানিত করে এই আয়াতে স্পষ্ট ত্রিত্ববাদে মরিয়মের অবস্থান নিয়ে কথা বলা হয়েছে
“[1] এ হল খ্রিষ্টানদের দ্বিতীয় ফির্কা, যারা তিন ঈশ্বরের দাবীদার ছিল। যেটাকে তারা (One God in Three Person) বলে। আর এর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে যদিও খোদ তাদের মধ্যেই মতবিরোধ বিদ্যমান, তবুও সঠিক কথা এই যে, তারা ঈসা (আঃ) ও তাঁর মা মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)-কেও আল্লাহর সাথে (সমকক্ষ ভেবে) মাবূদ বা উপাস্যরূপে গণ্য করতো; যেরূপ কুরআন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। আল্লাহ কিয়ামতের দিন ঈসা (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করবেন, {أأنتَ قُلتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَهَيْنِ مِن دُونِ اللّه} অর্থাৎ, তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার আম্মাকে মা’বূদ (উপাস্য) বানিয়ে নাও? (সূরা মাইদাহ ১১৬) এখান থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ) ও তাঁর মাতা মারয়্যাম (‘আলাইহিস্ সালাম)-কে উপাস্য হিসাবে গণ্য করে। আর আল্লাহ তৃতীয় উপাস্য বা মা’বুদ। যাকে তারা ‘তিনের তৃতীয়’ বলে আখ্যায়ন করে। তাদের প্রথম বিশ্বাসের মতই আল্লাহ এ বিশ্বাসকেও কুফরী বলে মন্তব্য করেছেন। -তাফসীরে আহসানুল বায়ান[2]
এথেকে বোঝায় যায় কুরআনের লেখক সে মনে করত খ্রীষ্টানদের ত্রিত্ববাদ বলতে তারা বিশ্বাস করে “পুত্র(যীশু খ্রীষ্ট), মাতা এবং পিতা(আল্লাহ)”। সেই জন্য কুরআনের বেনামী লেখক দাবি করেছেন “আল্লাহর কিভাবে পুত্র হতে পারে তার কোন স্ত্রী নাই”
“‘আর নিশ্চয় আমাদের রবের মর্যাদা সমুচ্চ। তিনি কোন সংগিনী গ্রহণ করেননি এবং না কোন সন্তান’।” ৭২:৩ আল-বায়ান”
“আর তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র মহান; বরং আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা তাঁরই । সব তাঁরই অনুগত।” ২:১১৬ আল-বায়ান
মুসলিমরা দাবি করে, “কুরআন আল্লাহর কিতাব” একজন খ্রীষ্টানের অবশ্যই মনে হতে পারে, “এটা কিভাবে সম্ভব! সৃষ্টিকর্তা ত্রিত্ববাদের ধারনা জানেন না? যেহেতু কুরআনে ত্রিত্ববাদ নিয়ে ভূল ব্যাখ্যা করা হয়েছে?
0 coment rios: