বাইবেল ও কুরআন মতে ইস্রায়েলের ভূমি কাদের জন্য নির্ধারিত? ইহুদীদের না কি মুসলিমদের?
জবাবঃ মুসলিম উগ্রবাদীদের কাছে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে কারণে তারা অনেক ক্ষেত্রেই কুরআনের রায় লঙ্ঘন করে মতামত দিতে ও কাজ করতেও দ্বিধা বোধ করে না। পবিত্র ভূমি ইস্রায়েলের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। কুরআনে পরিস্কারভাবে এই ভূমির অধিকার ইহুদীদের জন্য নির্দিষ্ট বলা হলেও অন্য ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করে তাদের হীন অবস্থায় দেখানোর মানসে মুসলিম উগ্রবাদীরা এই কথা কখনোই স্বীকার করতে চায় নি যদিও তাঁদের অনেক মুহাদ্দিস এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে মতামত দিয়েছেন।
কুরআনের সুরা মায়েদা(৫)এর ২০ থেকে ২৬ নং আয়াত দেখি-
(20 যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে পয়গম্বর সৃষ্টি করেছেন, তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করেছেন এবং তোমাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কাউকে দেননি।
(21 হে আমার সম্প্রদায়, পবিত্র ভুমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং পেছন দিকে প্রত্যাবর্তন করো না। অন্যথায় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
(22 তারা বললঃ হে মূসা, সেখানে একটি প্রবল পরাক্রান্ত জাতি রয়েছে। আমরা কখনও সেখানে যাব না, যে পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। তারা যদি সেখান থেকে বের হয়ে যায় তবে নিশ্চিতই আমরা প্রবেশ করব।’
(23 খোদাভীরুদের মধ্য থেকে দু’ব্যক্তি বলল, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেনঃ তোমরা তাদের উপর আক্রমণ করে দরজায় প্রবেশ কর। অতঃপর তোমরা যখন তাতে পবেশ করবে, তখন তোমরাই জয়ী হবে। আর আল্লাহর উপর ভরসা কর যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
(24 তারা বললঃ হে মূসা, আমরা জীবনেও কখনো সেখানে যাব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে। অতএব, আপনি ও আপনার পালনকর্তাই যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করে নিন। আমরা তো এখানেই বসলাম।
(25 মূসা বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমি শুধু নিজের উপর ও নিজের ভাইয়ের উপর ক্ষমতা রাখি। অতএব, আপনি আমাদের মধ্যে ও এ অবাধ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করুন।
(26 বললেনঃ এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাদের জন্যে হারাম করা হল। তারা ভুপৃষ্ঠে উদভ্রান্ত হয়ে ফিরবে। অতএব, আপনি অবাধ্য সম্প্রদায়ের জন্যে দুঃখ করবেন না।
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=695
কিন্তু পরিতাপের বিষয় মুসলিমদের সৃষ্টিকর্তা যা লিখে দিয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থাৎ এটি একটা চিরস্থায়ী অধিকাররূপের ইহুদীদের দেয়া হয়েছে, এই সহজ বিষয়টি রাজনৈতিক কারণে মুসলিমরা স্বীকার করতে চায় না। তাঁরা মুখে আল্লাহকে মান্য করে বললেও কাজে তা স্বীকার করে বলে মোটেই মনে হয় না, তা না হলে ইস্রায়েল দেশ ইহুদীদের থেকে কেড়ে নেয়ার দাবী তাঁরা কখনও করত না।
কুরআনে বর্ণিত ইস্রায়েলের রাজা দায়ুদ ও সোলায়মান এই ভূমিতেই রাজ্য শাসন করেছিলেন। এক্ষেত্রে বাইবেলের সাথেও কুরআনের মিল পরিলক্ষিত হয় -
https://www.bible.com/bible/2412/NUM.14.BCV
কিন্তু কুরআন এবং বাইবেল উভয় থেকেই এটা পরিস্কার যে, তাঁদের জন্য এই ভূমি অধিকার হিসাবে দেয়া হয়েছিল এবং এলোহিমের((ঈশ্বরের) প্রতি অবিশ্বাসের জন্য তাঁদের জন্য সাময়িকভাবে এই ভূমি কিছু অবাধ্য মানুষের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কুরআন ও বাইবেল উভয়েই এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করে যে বেশ কিছু ইহুদীকে পাপ ও অবাধ্যতার জন্য শাস্তি দেয়া হয়েছিল কিন্তু পুরো ইহুদী জাতিকে এই ভূমি থেকে অধিকারচ্যুত করার কোন ঘোষণা কুরআন বা বাইবেল দেয় নাই। বাইবেলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ঘটনাক্রম হিসাবে বলা হলে এ ব্যাপারে নিম্নোক্তভাবে ব্যখ্যা করা যায়-
১) আব্রাহামের প্রতি এই দেশ দেয়ার প্রতিজ্ঞাঃ আদিপুস্তক ১৫ঃ১৮
https://www.bible.com/bible/2412/GEN.15.BCV
২) ইস্রায়েলীদের পাপের কারণে শাস্তি দেয়া হলেও, এমনকি দেশ থেকে বিতাড়িত করলেও এলোহিম তাঁদের পূর্বপুরুষদের প্রতি করা প্রতিজ্ঞাকে স্মরণ করবেনঃ লেবীয় ২৬ঃ৪৪
https://www.bible.com/bible/2412/LEV.26.BCV
৩) মোশির নিকট পুনরায় এই ঘোষণা ব্যক্ত করা হয়েছেঃ দ্বিতীয় বিবরণ ৩৪ঃ৪
https://www.bible.com/bible/2412/DEU.34.BCV
৪) ইয়েহশুয়া(যিহোশুয়)-এর নেতৃত্বে পবিত্র ভূমি ইস্রায়েলে প্রবেশঃ যিহোশুয় ৪ঃ১৯
https://www.bible.com/bible/2412/JOS.4.BCV
৫) পাপের দরূন আসিরিয়ার রাজা কর্তৃক উত্তরের রাজ্য ইস্রায়েলের পতন ও ইস্রায়েলীদের আসিরিয়ায় বন্দী করে নিয়ে যাওয়ার ভবিষ্যৎবাণীঃ ১ রাজাবলী ১৪ঃ১৫
https://www.bible.com/bible/2412/1KI.14.BCV
৫) দক্ষিণের রাজ্য যিহুদার পতন ও যিহুদার ইহুদীদের ব্যাবিলনে বন্দী করে নিয়ে যাওয়ার বর্ণনাঃ ২ রাজাবলী ২৪ অধ্যায়
https://www.bible.com/bible/2412/2KI.24.BCV
৬) ইস্রায়েলীদের ব্যাবিলনে ৭০ বছর নির্বাসিত থাকার ভবিষ্যৎবাণীঃ যিরমিয় ২৫ঃ ১১
https://www.bible.com/bible/2412/JER.25.BCV
৭) ৭০ বছরের নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে ইস্রায়েলে ফিরে আসার ডিক্রি জারিঃ ইষ্রা ১ঃ১-২
https://www.bible.com/bible/2412/EZR.1.BCV
৮) জেরুশালেম ধবংসের ব্যাপারে ইয়েহশুয়া হা মাসিয়াখ(যীশু খ্রীষ্ট)-এর ভবিষ্যৎবাণীঃ মার্ক ১৩ঃ২
https://www.bible.com/bible/2412/MRK.13.BCV
৯) শেষ সময়ে ইহুদীদের/ইস্রায়েলীদের আবার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ইস্রায়েলে ফিরে আসা ও ইস্রায়েল রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যৎবাণীঃ যিহিস্কেল ৩৬ অধ্যায়
https://www.bible.com/bible/2412/EZK.36.BCV
১০) এই ইস্রায়েল রাস্ট্রের পতন আর হবে নাঃ
যিহিস্কেল ৩৭ অধ্যায় ২৫ পদ
যে দেশ আমি আমার দাস যাকোবকে দিয়েছি, যে দেশে তাদের পূর্বপুরুষেরা বাস করেছে সেখানেই তারা বাস করবে। তারা, তাদের ছেলেমেয়েরা ও নাতিপুতিরা সেখানে চিরকাল বাস করবে এবং আমার দাস দাউদ চিরকাল তাদের রাজা হবে।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম বাইবেলে ইহুদী জাতির প্রতি এই ইস্রায়েল দেশ দেয়ার প্রতিশ্রুতি যেমন ব্যক্ত হয়েছে তেমনি পাপের কারণে তাঁদের এই ভূমি থেকে সাময়িকভাবে বিতাড়িত করারও ভবিষ্যৎবাণী বাইবেলে আছে যা পরে আসিরিয় ও ব্যাবিলনীয় রাজাদের কর্তৃক তাঁদের নির্বাসিত করার মাধ্যমে এর পরিপূর্ণতা পায়। ইয়েহশুয়া হা মাসিয়াখ(যীশু খ্রীষ্ট) আরেকবার জেরুশালেম মন্দির ধ্বংসের ভবিষ্যৎবাণী করেন যা ৭০ সালে পূর্ণ হয়। এবার বেশীরভাগ ইহুদীরা মধ্যপ্রাচ্য,
উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এবং অল্প অংশই ইস্রায়েলে থেকে যায়। পরে ১৯৪৮ সালে ইস্রায়েলের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ইস্রায়েল রাস্ট্র পূনর্গঠিত হওয়ার আগে ও পরে ইহুদীরা বিভিন্ন দেশ থেকে ইস্রায়েলে বসতি স্থাপন করে যার ভবিষ্যৎবাণী যিহিস্কেল ৩৬ অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয়েছে। যিহিস্কেল ৩৭ঃ২৫ পদ অনুযায়ী এরপর থেকে ইস্রায়েল রাস্ট্র থেকে ইহুদীরা আর বিতাড়িত হবে না আর এর মধ্য দিয়ে আদিপুস্তক ১৫ঃ১৮ পদে আব্রাহামকে করা এলোহিমের প্রতিশ্রুতির পরিপূর্ণতা পাবে।
আশ্চর্যজনকভাবে কুরআনেও এই কথাগুলোই ভিন্নভাবে ব্যক্ত হয়েছে। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ইহুদীদের অবাধ্যতা ও পাপের কথা বিবৃত হয়েছে, কিন্তু এই পাপের কারণে তাদেরকে ইস্রায়েল রাস্ট্রের অধিকার থেকে বিচ্যুত করা হয়েছে এমন বর্ণনা কুরআনের কোথায়ও নেই, কিন্তু কিছু আয়াতের অপব্যাখ্যা করে কিছু মুসলিম দা’য়ী রাজনৈতিক কারণে এটা দেখাতে প্রচেষ্টা পায় যে, ইহুদীদের ইস্রায়েল রাস্ট্রের দাবী কুরআন প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু তাঁদের এই অপচেষ্টাকে কুরআনই নস্যাৎ করে দিয়েছে। মুসলিম দা’ইয়ীরা এই প্রচেষ্টায় যে আয়াতগুলোকে ব্যবহার করে সেগুলো হলো-
আল কুরআন, আরাফ ৭ : ১২৮
আল কুরআন, ইউনুস ১০ : ৮৪
আল কুরআন, ইউনুস ১০ : ৭২
আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ১৩২
আল কুরআন, আলে ইমরান ৩ : ৬৭
আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ১২৪
আল কুরআন, মায়িদাহ ৫ : ১২-১৩
আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ৬১
আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ৮৭
আল কুরআন, বাইয়িনাহ ৯৮ : ৬
উপরের আয়াতগুলো যেগুলোকে মুসলিম দা’ইয়ীরা ইহুদীদের পবিত্র ভূমি ইস্রায়েলের অধিকার হতে তাঁদের বিচ্যুত করার দলিল হিসাবে উপস্থাপন করে, আয়াতগুলো যে কেউ পড়লে এটা পরিস্কার বুঝতে পারবেন যে, এগুলোতে ইস্রায়েলের পবিত্র ভূমির দাবীকে কোথায়ও প্রত্যাহার করা হয়নি, বরং তাঁদের বিভিন্ন অবাধ্যতার কথাই ব্যক্ত হয়েছে। সুতরাং এই আয়াতগুলোকে ইস্রায়েলের দাবী থেকে ইহুদীদের অস্বীকার করার করার দলিল হিসাবে উপস্থাপন করা কুরআনের মর্মবাণীকে অস্বীকার করার সামিল ।
আমরা নীচের গুরুত্বপূর্ণ আয়াতের দিকে নজর দেই-
১৭ নম্বর সুরা ইসরা বা বনী ইস্রাঈল-এর ১০৩-১০৪ নং আয়াতে আমরা দেখতে পাই-
অতঃপর সে তাদেরকে দেশ থেকে উৎখাত করার ইচ্ছা করল; তখন আমি তাকে ও তার সাথে যারা ছিল সকলকে ডুবিয়ে দিলাম। আল-বায়ান
আর আমি এরপর বনী ইসরাঈলকে বললাম, ‘তোমরা যমীনে বাস কর, অতঃপর যখন আখিরাতের ওয়াদা আসবে তখন আমি তোমাদেরকে জড়ো করে নিয়ে আসব’। আল-বায়ান
মুসার সময়ে ফেরাউন যখন বনী ইসরাঈলকে উৎখাত করতে চেয়েছিল তখনকার ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে আলোচ্য আয়াতে। ফেরাউনের এই প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হল তখনই বনী ইসরাঈলকে জমিনে অর্থাৎ ইস্রায়েলে বসবাস করতে বলা হয়েছে এবং তখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত তাঁদের এই জমিন অর্থাৎ ইস্রায়েলে বসবাস করতে বলা হয়েছে। এরপর কেয়ামতের সময় সবাইকে বিচারের জন্য জড়ো করা হবে। অর্থাৎ কুরআন অনুযায়ী নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইস্রায়েল ভূমির অধিকার ইহুদীদের দেয়া হয়েছে পরিস্কারভাবে । এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে আহসানুল বায়ানও এই কথাই ব্যক্ত করেছে-
(১০৪) এরপর আমি বানী ইস্রাঈলকে বললাম, ‘তোমরা এই দেশে বসবাস কর।[1] অতঃপর যখন কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে, তখন তোমাদের সকলকেই আমি একত্রিত করে উপস্থিত করব।’
[1] বাহ্যিকভাবে ‘এই দেশে’ বলতে মিসরই উদ্দেশ্য; যেখান থেকে ফিরআউন মূসা (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়কে বের করে দেওয়ার ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু বানী-ইস্রাঈলের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, তারা মিসর থেকে বের হওয়ার পর পুনরায় মিসর যায়নি। বরং চল্লিশ বছর ‘তীহ’ প্রান্তরে থাকার পর ফিলিস্তীনে প্রবেশ করে। আর এই সাক্ষ্য সূরা আ’রাফ ইত্যাদিতে কুরআনের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়। কাজেই সঠিক উক্তি হল, এ দেশ থেকে ফিলিস্তীনকে বুঝানো হয়েছে।
কুরআনের স্পষ্ট ও দ্বর্থ্যহীন বাক্যকে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ও অন্য জাতির উপর জবরদস্তি চালানোর হীন মানসিকতায় বহু মুসলিম দা’ইয়ী ইস্রায়েল ভূমিতে ইহুদীদের দাবীকে অস্বীকার করার প্রচেষ্টা চালান যা অতীব নিন্দনীয়। আমরা তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এই কামনাই করি এবং এই পৃথিবীকে সংঘাতহীন ও শান্তিপূর্ণ করতে অবদান রাখার আহবান জানাই।
তিনটি মুসলিম কুযুক্তিঃ
১) আল্লাহর ওয়াদা জালিমদের জন্য নয়ঃ কোন কোন মুসলিম দা’য়ী সুরা বাকারার ১২৪ নাম্বার আয়াত দেখিয়ে এটা প্রমাণ করতে চান যে, ইহুদী জাতিদের ইস্রায়েল ভূমি থেকে অধিকার প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে-
সুরা বাকারা ২ঃ১২৪
আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমকে তার রব কয়েকটি বাণী দিয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর সে তা পূর্ণ করল। তিনি বললেন, ‘আমি তোমাকে মানুষের জন্য নেতা বানাব’। সে বলল, ‘আমার বংশধরদের থেকেও’? তিনি বললেন, ‘যালিমরা আমার ওয়াদাপ্রাপ্ত হয় না’। আল-বায়ান
আমরা পূর্বের আলোচনা থেকে দেখতে পাই এই কথাগুলো শুধু তাঁদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যারা অবাধ্য, এর নিদর্শন আমরা সুরা মায়েদার(৫) ২১ থেকে ২৬ নং আয়াতেও দেখতে পাই যা নিয়ে একেবারে প্রথমেই আলোচনা করা হয়েছে, অর্থাৎ ইহুদী বা ইস্মায়েলীয় যেই হোক না কেন যারা অবাধ্য তাঁদের জন্য আল্লাহর ওয়াদা প্রযোজ্য নয়, শুধুমাত্র বাধ্যরাই এই ওয়াদার অন্তর্ভূক্ত। কুরআন এক্ষেত্রে বাইবেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কারণ বাইবেলেও অবাধ্য ইস্রায়েলীদের কারনে তাঁদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল কিন্তু এলোহিম শেষ পর্যন্ত তাঁদের বংশধরদের পুনরায় ইস্রায়েলে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
২) মুসলিম সাহাবীরা কেন জেরুশালেম দখল করে ইসলামী খেলাফতের অধীনে এনেছিলেনঃ
রাজনৈতিক কারণে ইস্রায়েল মুসলিম শাসনে আসলেও ইস্রায়েলের প্রতি ইহুদীদের অধিকার খর্ব হয় না এবং মুসলিম খলিফারা এজন্য জেরুশালেম থেকে ইহুদীদের উৎখাতও করেননি যা তাঁরা মক্কা মদিনা ও আরবের ক্ষেত্রে করেছিলেন। শুধু তাই নয় খলিফা উমর বায়তুল মোকাদ্দাসের স্থানে কোন মসজিদও নির্মান করেননি। সুতরাং এই যুক্তি ইহুদীদের ইস্রায়েল ভূমি দাবীর সাথে সম্পর্কহীন।
৩) অনেক মুসলিম দা’ইয়ী দাবী করেন ইহুদীরা মুমিন নয় বা মুসলিম নয়, তাই তাঁরা কোন অঙ্গীকারের অধীন নয়, তাঁরা মুহাম্মদকে নবী হিসাবে মানে নি তাই তাঁরা বর্তমানে ইস্রায়েল রাস্ট্রের অধিকার থেকে বিচ্যুত হয়েছে, এখন এই ভূমি মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু এ সকল তথাকথিত দা’ইয়ী কুরআনের বিরূদ্ধেই একথাগুলো বলে থাকেন। ৫ নং সুরা মায়েদার ৪৩ নং আয়াতে পরিস্কারভাবে মুমিন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তারা যদি কুরআনের অন্য আয়াত দেখিয়ে ইহুদীরা মুমিন নয় বলে দাবী করেন তাহলে এটা তারা স্বীকার করে নেন যে, কুরআন বৈপরীত্যে পূর্ণ। আমরা আয়াতটি দেখব-
কুরআন, ৫ সুরা মায়েদা ৫ঃ৪৩
আর কীভাবে তারা তোমাকে ফয়সালাকারী বানায়? অথচ তাদের কাছে রয়েছে তাওরাত, যাতে আছে আল্লাহর বিধান, তা সত্ত্বেও তারা এরপর মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তারা মুমিনও নয়। আল-বায়ান
এই আয়াতে ইহুদীদের কাছে রক্ষিত তাওরাতের বিধান যারা অস্বীকার করে তারা মুমিন নয় এ কথাই স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে। সুতরাং তাওরাত অনুসরনকারী ইহুদীরা মুহাম্মদকে অনুসরন না করলেও বা মেনে না নিলেও কুরআনের দৃষ্টিতে মুমিন বলে গণ্য। সুতরাং মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গীতেও তাওরাত অনুসরণকারী ইহুদী মুমিনরা নিশ্চিতভাবেই পবিত্র ভূমি ইস্রায়েলের দাবীদার।
শেষ কথাঃ মুসলিম দা’ইয়ীদের দাবী মুসলিমরা এখন ন্যায্য ধর্ম, ন্যায্য পথের অনুসারী আর ইহুদীরা অভিশপ্ত(সুরা ফাতেহার তাফসির অনুযায়ী)। তাহলে প্রশ্ন হল এই অভিশপ্ত(?) ইহুদীরা কিভাবে আল্লাহর সঠিক দ্বীনের অনুসারী মুসলিম আরব রাস্ট্রগুলিকে সীমিত শক্তি ও সম্পদ দিয়ে ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালে পরাজিত করেছে? আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া যদি কিছু না হয়ে থাকে তাহলে এই পরাজয় আল্লাহ মুসলিমদের কপালে অভিশপ্ত(?) ইহুদীদের দ্বারা কেন লিখে দিলেন?
0 coment rios: