Thursday, May 25, 2023

মাইকেল এইচ হার্টের লেখা THE HUNDRED গ্রন্থ নিয়ে অ-খ্রীষ্টানদের মিথ্যাচারের জবাব।

 

লেখকঃ পাষ্টর জনসন সরকার।

সমালোচকের দাবিঃ মাইকেল এইচ হার্ট একজন প্রখ্যাত আমেরিকান লেখক। তিনি বিশ্বের ইতিহাস, মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও সভ্যতার বিকাশে, মানবমণ্ডলীর চিন্তাধারা ও জীবনপ্রণালীতে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী বিভিন্ন মহামানবের জীবন ও কর্মধারা বিশ্লেষণ করে একশজন বিশিষ্ট ব্যক্তির একটি তালিকা প্রস্তুত করেছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ধর্ম-প্রচারক, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, আবিষ্কারক, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়ক, শিল্পী, সমরনায়ক ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণির মনীষী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তির নাম। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তি হিসাবে তিনি মুহম্মদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর নাম উল্লেখ করেছেন। এজন্য তিনি তাঁর মতের সমর্থনে জোরালো যুক্তি ও বিভিন্ন বাস্তব নিদর্শন উল্লেখ করেছেন।

লেখক নিজে খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও খ্রিষ্টান ধর্ম-প্রচারক যিশুখ্রিষ্টকে তিন নম্বরে স্থান দিয়েছেন। বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আইজ্যাক নিউটনকে দুই নম্বরে, বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধকে চার নম্বরে, চীনের ধর্মগুরু কনফুসিয়াসকে পাঁচ, সেন্ট পলকে ছয়, শা. আই. লুনকে সাত, জোহান গুটেনবার্গকে আট, ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে নয়, বৈজ্ঞানিক আলবার্ট আইনস্টাইনকে দশ, কমিউনিজমের প্রবর্তক কার্ল মার্কসকে এগারো নম্বরে স্থান দিয়েছেন। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত এ গ্রন্থটি সারা বিশ্বে চিন্তাশীল মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রকাশের পর বহুবার বহু দেশে এ গ্রন্থ প্রকাশিত ও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। গ্রন্থের পূর্ণ শিরোনাম : THE HUNDRED - A Ranking of The Most Influential Persons in History. বাংলাভাষী পাঠকের সুবিধার জন্য এখানে ‘মুহম্মদ’ শিরোনামের প্রথম প্রবন্ধটি বাংলায় অনূদিত হলো। -অনুবাদ}

জবাবঃ

মাইকেল এইচ হার্টের লেখা THE HUNDRED - A Ranking of The Most Influential Persons in History গ্রন্থে তিনি ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদকে প্রথমে এবং ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁকের (যীশু খ্রীষ্টের) নাম ৩ স্থানে লিখেছেন তাই মুসলিম ধর্ম প্রচারকেরা দাবি করেছেন যে, ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁকের থেকে বড় (ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয় বল। তিনি সঙ্কটকালে অতি সুপ্রাপ্য সহায়। গীতসংহিতা৪৬:১;)  সত্যি কি মাইকেল এইচ হার্ট তার গ্রন্থে লিখেছেন, “ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁকের থেকে বড়?” নাকি এখানে মানুষের বোঝার ভূল আছে?

মাইকেল এইচ হার্ট তার গ্রন্থের সূচনাতেই লিখেছেন যে, “এই গ্রন্থে ইতিহাসের ১০০ জন প্রভাব বিস্তারকারী মানুষের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন কিন্তু এই তালিকা মোটেই পৃথিবীর শ্রেষ্ট মানুষদের করা হয় নি” অর্থাৎ এই গ্রন্থে যিনি ১ নাম্বারে আছেন তিনি যে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মানুষ তা নয়। 


 The 100 A ranking of the most influential persons in history by Michael H. Hart, page:xxviii

মাইকেল এইচ হার্ট তার গ্রন্থে ১০০ জন প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করেছেন শ্রেষ্ট ব্যক্তিদের তালিকা নয়। তাই যারা দাবি করেছেন “নবী হযরত মুহাম্মদ ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁকের থেকে বড়” তাদের দাবি সত্য নয়।

মাইকেল এইচ হার্ট বলেছেন, “এই তালিকাটি রচনা করার সময়, আমি কেবল ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত বা মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নির্বাচন করিনি। না খ্যাতি, না প্রতিভা, না চরিত্রের আভিজাত্য প্রভাব হিসাবে একই জিনিস। এইভাবে, বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, মার্টিন লুথার কিং, জুনিয়র, বেবে রুথ, এমনকি লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন-যদিও কেউ কেউ একশত অনুসরণকারী সম্মানিত উল্লেখগুলির মধ্যে একটি স্থান খুঁজে পান। অন্যদিকে, প্রভাব সবসময় কল্যাণকরভাবে প্রয়োগ করা হয় না; সুতরাং, হিটলারের মতো একজন দুষ্ট প্রতিভা অন্তর্ভুক্তির মানদণ্ড পূরণ করে।”

The 100 A ranking of the most influential persons in history by Michael H. Hart, page:xxviii

অর্থাৎ মাইকেল এইচ হার্ট এই গ্রন্থে মোটেই বিশ্বের শ্রেষ্ট ১০০ জন ব্যক্তির তালিকা করেন নি, তিনি অনেক ভাল ব্যক্তিদের নাম এই তালিকায় যুক্ত করেন নি। তিনি তার গ্রন্থে সেই ১০০ জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন যারা পৃথিবীতে তাদের ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন। হিটলারের মতন বাজে লোকও এই ১০০ তালিকার প্রথমে থাকতে পারে এতে আশ্চর্য্য হওয়ার  মতন কিছুই নেই।

মাইকেল এইচ হার্ট বলেছেন, “আমার র‌্যাঙ্কিং মুহাম্মাদকে যীশুর চেয়ে বেশি, কারণ আমার বিশ্বাস যে খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচারে যীশুর চেয়ে মুসলিম ধর্ম গঠনে মুহাম্মদের ব্যক্তিগত প্রভাব অনেক বেশি ছিল। এর মানে এই নয় যে, আমি মনে করি মুহাম্মদ যীশুর চেয়েও বড় মানুষ ছিলেন।

The 100 A ranking of the most influential persons in history by Michael H. Hart, page:xxix

মাইকেল এইচ হার্ট হযরত মুহাম্মদ সম্পর্কে বলেছেন, “তৎকালীন অধিকাংশ আরব ছিল পৌত্তলিক, এবং অনেক দেবদেবীতে বিশ্বাসী ছিল। মক্কায় অবশ্য অল্প সংখ্যক ইহুদি ও খ্রিস্টান ছিল; তাদের কাছ থেকে, সম্ভবত, মুহাম্মদ প্রথম একজন একক, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন যিনি সমগ্র বিশ্বকে শাসন করেছিলেন। যখন তার বয়স চল্লিশ বছর, তখন মুহাম্মদ নিশ্চিত হয়েছিলেন যে এই এক সত্য ঈশ্বর (আল্লাহ) তার সাথে কথা বলছেন (প্রধান দূত গ্যাব্রিয়েলের মাধ্যমে) এবং তাকে সত্য বিশ্বাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন।”

The 100 A ranking of the most influential persons in history by Michael H. Hart, page:4;

মাইকেল এইচ হার্ট তার গ্রন্থে বলেছেন, “হযরত মুহাম্মদ এক ঈশ্বরের ধারনা মূলত তার সময়ে  আরবে বসবাসরত ইহুদি খ্রীষ্টানদের কাছ থেকে শিখেছিলেন।” মুসলিমরা  মাইকেল এইচ হার্টের দলিল পেশ করতে ভালবাসে তবে তারা কি এখন এটা মেনে নিবে যে, হযরত মুহাম্মদ এক ঈশ্বরের ধারনা মূলত তার সময়ে আরবে বসবাসরত ইহুদি খ্রীষ্টানদের কাছ থেকে শিখেছিলেন?

কেন মাইকেল এইচ হার্ট হযরত মুহাম্মদকে ১০০ জনের তালিকায় ১ম  করেছিলেন?

মাইকেল এইচ হার্ট তার গ্রন্থে বলেছেন, “মুহাম্মাদকে যীশু খ্রীষ্টের চেয়ে উচ্চ স্থান দেওয়া
হয়েছে এই সিদ্ধান্তের দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, খ্রীষ্টধর্মের বিকাশে যীশুর চেয়ে 
মুহাম্মদ ইসলামের বিকাশে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যদিও 
যীশু খ্রীষ্ট খ্রীষ্টধর্মের প্রধান নৈতিক ও নৈতিক অনুশাসনের জন্য দায়ী ছিলেন 
(যদিও এগুলি ইহুদি ধর্মের থেকে আলাদা ছিল), তবে তিনি ছিলেন সেন্ট পল যিনি
 খ্রীষ্ট ধর্মতত্ত্বের প্রধান বিকাশকারী, এর প্রধান ধর্মান্তরকারী এবং নিউ টেস্টামেন্টের 
একটি বড় অংশের লেখক।”

The 100 A ranking of the most influential persons in history by Michael H. Hart, page:9;

অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ ইসলামের বিকাশেঅনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন

করেছিলেন অন্য দিকে সেন্ট পল খ্রীষ্ট ধর্ম বিকাশে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন

এবং নূতন নিয়মে তাঁর বড় অংশের লেখা রয়েছে।

মাইকেল এইচ হার্ট তার গ্রন্থে বলেছেন, মুহাম্মদ অবশ্য ইসলামের ধর্মতত্ত্ব এবং এর

প্রধান নৈতিক ও নৈতিক নীতি উভয়ের জন্য দায়ী ছিলেন। উপরন্তু, তিনি নতুন বিশ্বাসকে 
ধর্মান্তরিত করতে এবং ইসলামের ধর্মীয় অনুশীলন প্রতিষ্ঠায় মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। 
তিনি মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানের লেখক, মুহাম্মদের বিবৃতিগুলির 
একটি সংগ্রহ যা তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে ঐশ্বরিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। 
এই উচ্চারণগুলির বেশিরভাগই মুহাম্মদের জীবদ্দশায় কমবেশি বিশ্বস্ততার সাথে 
অনুলিপি করা হয়েছিল এবং তার মৃত্যুর খুব বেশিদিন পরেই প্রামাণিক আকারে 
একত্রিত হয়েছিল। কুরআন মুহাম্মদের ধারণা এবং শিক্ষাগুলিকে ঘনিষ্ঠভাবে 
প্রতিনিধিত্ব করে এবং যথেষ্ট পরিমাণে, তার সঠিক শব্দগুলিকে। খ্রীষ্টের শিক্ষার 
এই ধরনের কোনো বিস্তারিত সংকলন টিকে নেই। যেহেতু বাইবেল খ্রীষ্টানদের 
কাছে কুরআন অন্তত মুসলমানদের জন্য ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, তাই কুরআনের 
মাধ্যমে মুহাম্মদের প্রভাব ছিল প্রচুর। এটা সম্ভব যে ইসলামের উপর মুহাম্মদের 
আপেক্ষিক প্রভাব খ্রিস্টধর্মের উপর যীশু খ্রীষ্ট এবং সেন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের
চেয়ে বেশি। বিশুদ্ধভাবে ধর্মীয় স্তরে, তখন মনে হয় যে মুহাম্মদ মানব ইতিহাসে 
যীশুর মতোই প্রভাবশালী ছিলেন।”

The 100 A ranking of the most influential persons in history by Michael H. Hart, page:9;

মাইকেল এইচ হার্ট বলেছেন, হযরত মুহাম্মদ ইসলামের ধর্মতত্ত্ব মূলত মুহাম্মদের কাছে 
দায়বদ্ধ ছিল, তিনি কুরআন লিখেছিলেন, কুরআন মূলত হযরত মুহাম্মদের নিজেস্ব ধারনার গ্রন্থ এবং
কুরআনের দ্বারাই তিনি সারা বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করেছেন।
যদিও মুসলিমরা মাইকেল এইচ হার্টের কথার সাথে মোটেই একমত পোষণ করবে না 
কারন তাদের শিক্ষা হলো, মুহাম্মদ ইসলামের ধর্মতত্ত্ব মূলত আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ 
হযরত মুহাম্মদের কাছে নয়,  কুরআন মুহাম্মদের ধারনার লিখিত রূপ নয় এবং 
সে কুরআনের লেখকও নয়। নিশন্দেহে মুসলিমরা মাইকেল এইচ হার্টের ধারনা 
গুলোকে ভূল বলে মনে করবেন ঠিক তেমনি খ্রীষ্টানরাও মাইকেল এইচ হার্টের 
ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁকের সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা চিহ্নিত করেন।

 

মাইকেল এইচ হার্টের ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁকের সম্পর্কে কিছু ভুল কথা বলেছেন,

 “খ্রীষ্টের শিক্ষার এই ধরনের কোনো বিস্তারিত সংকলন টিকে নেই।” এই বাক্যটি শতভাগ ভুল কারন পৃথিবীর ইতিহাসে ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁকের বানীর প্রত্নতাত্ত্বিক দলিলের সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য গ্রন্থের চেয়ে অনেক বেশি।

মাইকেল এইচ হার্ট কি ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁকে  হযরত মুহাম্মদের থেকে শ্রেষ্ট মনে

করতেন?

মাইকেল এইচ হার্টের আরেকটি গ্রন্থ আছে

A VIEW FROM THE YEAR 3000 A RANKING OF THE 1OO MOST

INFLUENTIAL PERSONS OF ALL

TIME by ARTURO KUKINI A DESCENDANT OF MICHAEL H. HART এই গ্রন্থে তিনি ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁকের পরে হযরত মুহাম্মদের র‍্যাংকিং করেছেন



এখন আমরাও মাইকেল এইচ হার্টের এই গ্রন্থের দলিল পেশ করে বলতে পারি

তিনি ইয়েশূয়া-হা-ম্যাসিয়াঁক কে হযরত মুহাম্মদের থেকে শ্রেষ্ট মানব হিসাবে বিশ্বাস করতেন।






শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: