Sunday, April 9, 2023

ইশ্মায়েল নাকি ইসহাক কাকে কুরবানী দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল?








লেখকঃ পাষ্টারঃ জনসন সরকার।


সালোম-এলাই-কেম[তোমাদের শান্তি হউক]

 

Peace be with you [ লূক ২৪:৩৬;মথি ১০:১৩; যোহন২০:১৯;২১;২৬; ৩যোহন ১:১৫;]

  

আমাদের পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ষিত হউক[ ২করিন্থীয়১:;]


সূচনাঃ

মুসলিম জগত এটা প্রচার করছে "ইশ্মায়েল ছিলেন প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান এবং তাকেই অব্রাহাম কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু ইহুদি এবং খ্রীষ্টানরা যুগ যুগ ধরে এটাই বিশ্বাস করে আসছে "ইসহাক ছিলেন প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান এবং তাকেই অব্রাহাম কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন মুসলিমরা কেন ইশ্মায়েলকে প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান মনে করছে? কারন ইশ্মায়েল যদি সেই প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান না হন তবে ইসলাম ধর্মের সমস্ত বিশ্বাস দূর্বল হয়ে উঠবে, কারন তারা বিশ্বাস করেন যে ইশ্মায়েল সেই ব্যক্তি যাকে কুরবানী দেবার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যদি এটা প্রমানিত হয় যে "ইশ্মায়েল নয় ইসহাক ছিলেন সেই প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান, এবং তাকেই অব্রাহাম[ইব্রাহীম] কুরবানী দিতে নিয়ে গেছিলেন তবে ইসলাম ধর্মের সূচনা থেকে হযরত মুহাম্মদের নবুওত, তার দেওয়া শিক্ষা, বিশ্বাস সবই প্রশ্নবিদ্ধ  হয়ে যাবে এবং অনেক সংশয়ের উত্থান ঘটবে আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, একই সাথে দুটি বিশ্বাস ঠিক হতে পারে না প্রকৃত সত্যকে উৎঘাটন করতে হলে আমাদের ঐতিহাসিক দলিল সমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার প্রয়জনীয়তা রয়েছে তবে আমরা যে কোন বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে অবগত  হতে পারব ইসলাম ধর্মের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থে [কুরআন, হাদিসে] ইশ্মায়েলের বিষয়ে এমন কোন সুস্পষ্ট দলিল নাই যার দ্বারা এটা প্রমানিত করা সম্ভব যে অব্রাহাম ইশ্মায়েলকে কুরাবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। হযরত মুহাম্মদের অনেক সাহাবি থেকে শুরু করে অনেক তাফসির ইসহাকের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আবার কিছু ব্যক্তি ইশ্মায়েলের পক্ষেও রায় দিয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায় তারা নিজেরাই উক্ত বিষয়ে ধাঁধার মধ্যে রয়েছে। যারা নিজেরাই একমত নন কাকে কুরবানী করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তবে আপনি কি  পরীক্ষা- নিরীক্ষা ছাড়াই তাদের এই পরস্পরবিরোধী মতবাদ মেনে নেবেন? নিশ্চই না। 

কে ছিল প্রতিজ্ঞাত সন্তান?

পবিত্র বাইবেল এবং মুসলিমদের কুরআনে কোথাও বলা হয় নি যে, ইশ্মায়েল ইয়াওয়ে এলোহীমের[ সদাপ্রভু ঈশ্বরের] প্রতিজ্ঞাত সন্তান সন্তান ছিলেন

আদিপুস্তক ১৫ অধ্যায় ৩-৪ পদে লেখা আছে,

"আর অব্রাম কহিলেন, দেখ তুমি আমাকে সন্তান দিলে না, এবং আমার গৃথজাত এক জন আমার উত্তরাধিকারী হইবে তখন দেখ, তাঁহার কাছে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হইল, যথা ঐ ব্যক্তি তোমার উত্তরাধিকারী হইবে না, কিন্তু যে তোমার ঔরসে জন্মিবে, সেই তোমার উত্তরাধিকারী "

অব্রাহাম [অব্রাম] যখন তার পুত্রের জন্য প্রার্থনা করেন তখন তার একটি স্ত্রী ছিল, সেই সময়ে হাজেরা তার স্ত্রী ছিলেন না তাই এই প্রার্থনা ইয়াওয়ে এলোহীম শ্রবন করেন এবং তাকে পুত্র দেবার প্রতিজ্ঞা করেন, তাই এই প্রতিজ্ঞা ছিল অব্রাহাম এবং তার স্ত্রী সারা জন্য মিসরীয় দাসি হাগারের এবং ইশ্মায়েলের জন্য প্রযোজ্য নয় যার জন্য ইসহাককে অব্রাহামেরএকজাত পুত্রবলা হয়েছে কারন ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] একজন সন্তানের জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যার দ্বারা তিনি সমগ্র পৃথিবীকে আশীর্বাদ করবেন অনেক মুসলিম প্রচারক দাবি করেন যেহেতু পবিত্র বাইবেলে উল্লেখিত রয়েছে একজাত পুত্রেরকথা, তাই তারা বলেন যে ইশ্মায়েল অব্রাহামের একজাতপুত্র ছিলেন  কিন্তু তারা যা উল্লেখ করেন না তা হলো আদিপুস্তক ১৭:১৩-২১; অনুসারে ইশ্মায়ের জন্মের পরেও ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] অব্রাহামের কাছে ঘোষণা করেন যে তার একজাত পুত্র যিনি তার প্রতিজ্ঞার ফল  হবেন তিনি ইশ্মায়েল নন বরং সেই প্রতিজ্ঞার ফল  হবেন ইসহাক সেই জন্য শাস্ত্রে এই কথা সুষ্টভাবে লেখা আছে,

কারন যাহারা ইস্রায়েল হইতে উৎপন্ন, তাহারা সকলেই ইস্রায়েল তাহা নহে; আর অব্রাহামের বংশ বলিয়া তাহারা যে সকলেই সন্তান, তাহাও নয়; কিন্তু ইসহাকেই তোমার বংশ আখ্যাত হইবে*[আদিপুস্তক২১:১২;] ইহার অর্থ এই, যাহারা মাংসের সন্তান, তাহারা যে ঈশ্বরের সন্তান, এমন নয়[যোহন১:১২-১৩;] কিন্তু প্রতিজ্ঞার সন্তানই বংশ বলিয়া গনিত হয় [রোমীয় ৯:-;]

অব্রাহামের অনেক সন্তান ছিল কিন্তু সবাই তার প্রকৃত বংশ বলে ধরা হয় নি শুধুমাত্র ইসহাক কেই তার বংশ বলে ধরা হয়েছিল। ইশ্মায়েলের বিষয়ে ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] কোন প্রতিজ্ঞা করেন নাই, ইশ্মায়েলের জন্মটা হয়েছিল অব্রাহামের স্ত্রী সারার সিদ্ধান্তের জন্য যেহেতু সেই ছেলে অব্রাহামের সন্তান তার জন্য তাকেও ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] ত্যাগ করেন নাই তাকেও আশীর্বাদ করেছেন কিন্তু নবুওয়তের হকদার তিনি ইসহাক ছাড়া আর কাউকে করে নি [আদিপুস্তক ১৭:১৩-২১;] ইশ্মায়েল প্রতিজ্ঞার সন্তান ছিলেন না তার কারন ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] ইশ্মায়েলের বিষয়ে অব্রাহামকে কোন প্রতিজ্ঞা করেন নাই, যেহেতু তিনি একজন ছেলের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই জন্যই ইসহাককে “একজাত পুত্র” বলা হয়েছে।

সুসংবাদের পুত্র কে ছিলেন?

অব্রামের সহিত ঈশ্বরের নিয়ম স্থাপন।

ঐ ঘটনার পরে দর্শনযোগে সদাপ্রভুর বাক্য অব্রামের নিকটে উপস্থিত হইল, তিনি বলিলেন, অব্রাম, ভয় করিও না, আমিই তোমার ঢাল ও তোমার মহা পুরস্কার। অব্রাম কহিলেন, হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আমাকে কি দিবে? আমি ত নিঃসন্তান হইয়া প্রয়াণ করিতেছি, এবং এই দম্মেশকীয় ইলীয়েষর আমার গৃহের ধনাধিকারী। আর অব্রাম কহিলেন, দেখ, তুমি আমাকে সন্তান দিলে না, এবং আমার গৃহজাত এক জন আমার উত্তরাধিকারী হইবে। তখন দেখ, তাঁহার কাছে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হইল, যথা, ঐ ব্যক্তি তোমার উত্তরাধিকারী হইবে না, কিন্তু যে তোমার ঔরসে জন্মিবে, সেই তোমার উত্তরাধিকারী হইবে।পরে তিনি তাঁহাকে বাহিরে আনিয়া কহিলেন, তুমি আকাশে দৃষ্টি করিয়া যদি তারা গণিতে পার, তবে গণিয়া বল; তিনি তাঁহাকে আরও বলিলেন, এইরূপ তোমার বংশ হইবে। তখন তিনি সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণনা করিলেন। আর তাঁহাকে কহিলেন, যিনি তোমার অধিকারার্থে এই দেশ দিবার জন্য কল্‌দীয় দেশের ঊর হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই সদাপ্রভু আমি।– [আদিপুস্তক১৫:-;]

পবিত্র বাইবেল সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে ইসহাক ছিলেন সেই, সুসংবাদের পুত্র ইশ্মায়েল নয়

আদিপুস্তক ১৮:১৮-২০ লেখা আছে,“অব্রাহাম হইতে মহতী ও বলবতী জাতি উৎপন্ন হইবে [যদিও তখন ইশ্মায়েলের জন্ম হয়েছিল] এবং পৃথিবীর যাবতীয় জাতি তাহাতেই আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইবে কেননা তাহাকে জানিয়াছি, যেন সে আপন ভাবী সন্তন গনকে [ইসহাক এবং তার পুত্র যাকবের কথা] ও পরিবারদিগকে আদেশ করে, যেন তাহারা ধর্মসঙ্গত ও নায্য আচরন করিতে করিতে সদাপ্রভুর পথে চলে; এইরূপে সদাপ্রভু যেন আব্রাহামের বিষয়ে কথিত আপনার বাক্য সফল করেন

আর ঈশ্বর অব্রাহামকে কহিলেন, তুমি তোমার স্ত্রী সারীকে আর সারী বলিয়া ডাকিও না; তাহার নাম সারা[রানী] হইলআর আমি তাহাকে আশীর্বাদ করিব করিব, এবং তাহা হইতে এক পুত্রও তাহাকে দিব; আমি তাহাকে আশীর্বাদ করিব, তাহাতে সে জাতিগনের আদিমাতা হইবে [হগার নয়], তাহা হইতে লোকবৃন্দের রাজাগন উৎপ্নন হইবে”[আদিপুস্তক ১৭:১৫-১৬;] যেখানে হাগারের পুত্র ইশ্মায়ের মধ্য হতে মাত্র কিছু রাজার জন্ম হয়েছিল অব্রাহামের মৃত্যুর পর ইয়াওয়ে এলোহীম ইশ্মায়েলকে নয় বরং ইসহককে আশীর্বাদ করেছিলেন[আদিপুস্তক২৫:১১;]

তানাখে [পুরাতন নিয়মে] এই বিষয়ে সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে: ইসহাক হলেন ইয়াওয়ে এলোহীমের [সদাপ্রভু ঈশ্বেরের] আশীর্বাদের সন্তান তিনি ইশ্মায়েল কেও আশীর্বাদ করেন এবং বলেন তার বংশ থেকেও একটা বড় জাতি সৃষ্টি হবে কিন্ত!!! ব্যবস্থার একমাত্র অংশীদার ইসহাক, ইশ্মায়েল নন ঈশ্বর অব্রাহামকে বললেন, “তোমার স্ত্রী সারীকে আমি এক নতুন নাম দেব| তার নতুন নাম হবে সারা অর্থাৎরানী| আমি তাকে আশীর্বাদ করব| আমি তাকে একটি পুত্র দেব এবং তুমি হবে সেই পুত্রের পিতা| সারা হবে বহু নতুন জাতির মাতা| সারা থেকে আসবে বহু জাতির বহু রাজা|”

ঈশ্বরকে যে তিনি মান্য করেন এই কথা বোঝাবার জন্যে অব্রাহাম আভূমি মাথা নত করলেন| কিন্তু তিনি নিজের মনে হেসে বললেন, “আমার ১০০ বছর বয়স| আমার আর সন্তান হতে পারে না| এবং সারার ৯০ বছর বয়স| সে সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না|” তখন অব্রাহাম ঈশ্বরকে বলল, আশা করি ইশ্মায়েল বেঁচে থেকে আপনার সেবা করবে|” ঈশ্বর বললেন, “না! আমি বলেছি যে তোমার স্ত্রী সারার একটি পুত্র হবে| তুমি তার নাম দেবে ইসহাক| তার সঙ্গে আমি আমার চুক্তি সম্পাদন করব| তার সঙ্গে ঐ চুক্তি এমন হবে যা তার উত্তরপুরুষগণের সঙ্গেও চিরকাল বজায় থাকবে| তুমি ইশ্মায়েলের কথা বলেছ এবং আমি সে কথা শুনেছি| আমি তাকে আশীর্বাদ করব| তার বহু সন্তানসন্ততি হবে| সে বারোজন মহান নেতার পিতা হবে| তার পরিবার থেকে সৃষ্টি হবে এক মহান জাতির| কিন্তু আমি ইসহাকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হব| সারার যে পুত্র হবে সে-ই হবে ইসহাক পরের বছর ঠিক এই সময় সেই পুত্রের জন্ম হবে|”- [আদিপুস্তক ১৭:১৩-২১;]

এখানে লক্ষনিয় বিষয় হলো অব্রাহাম ভাবছিলেন ইয়াওয়ে এলোহীম তার এই বৃদ্ধ বয়সে সন্তান দিতে অসমর্থ "তাই তিনি বললেন, “আশা করি ইশ্মায়েল বেঁচে থেকে আপনার সেবা করবে|” অব্রাহামের মনে হয়েছিল "ইশ্মায়েল সেই প্রতিজ্ঞাত সন্তান" কিন্তু ইয়াওয়ে এলোহীম বললেন, “না! আমি বলেছি যে তোমার স্ত্রী সারার একটি পুত্র হবে| তুমি তার নাম দেবে ইসহাক| তার সঙ্গে আমি আমার চুক্তি সম্পাদন করব| তার সঙ্গে ঐ চুক্তি এমন হবে যা তার উত্তরপুরুষগণের সঙ্গেও চিরকাল বজায় থাকবে| অর্থাৎ ইসহাকের সাথেই ইয়াওয়ে এলোহীমের চুক্তি [বিধিনিষেধ] সম্পন্ন হবে যেটা কোন মতেই ইশ্মায়েলের ক্ষোত্রে প্রযোজ্য হবে না  ইশ্মায়েল এবং ইসহাক দুজনকেই আশীর্বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে হতে বড় জাতি আসবে এটা থেকে প্রমানিত হয় না যে ইশ্মায়েল সেই প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান ছিলেন, কারন এই একই আশীর্বাদ ইসহাকও পেয়েছেন কিন্তু আসল জিনিষ যা ইসহাক পেয়ছেন যা ইশ্মায়েল পান নি, আর হলো হলো ইয়াওয়ে এলোহীমের সংগে চুক্তির একমাত্র অংশীদারিত্ব  ইয়াওয়ে এলোহীম এবং তার দুজন স্বর্গদূতের সাথে এসে ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ দিয়েছিলেন [আদিপুস্তক ১৮:-১০;] তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান হচ্ছেন ইসহাক, ইশ্মায়েল নন এছাড়াও ইয়াওয়ে এলোহীম সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, "ইসহাকের বংশকেই অব্রাহামের বংশ বলে ধরা হবে ইশ্মায়েলের নয়"- [আদিপুস্তক ২১:-১৩;]

তাই ইসহাকেই অব্রাহামের "একজাত" পুত্র বলা হয়েছে যদিও অব্রাহামের মধ্যে দিয়ে অনেক জাতি এসেছে কিন্তু শুধুমাত্র ইহুদী জাতিকে অব্রাহামের প্রতিজ্ঞাত বংশ বলা হয়েছে [আদিপুস্তক ১৫:১৩-১৪; রোমীয় ৯:--;]

 

৩।কুরআনেও এটা সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে ইসহাক ছিলেন প্রতিজ্ঞাত এবং সুংবাদের পুত্র ইশ্মায়েলে নন

সূরা ৫১ যারিয়াত আয়াতঃ২৮;ইহাতে উহাদের ভীতির সঞ্চার হইল উহারা বলিল, ভীত হইও না অতঃপর উহারা তাহাকে এক জ্ঞানি পুত্রের [ইসহাকের] সুসংবাদ দিলেনএই বিষয়ে আরো উল্লেখিত রয়েছে সূরা ১১ হূদ আয়তঃ৬৯-৭১;, সূরা ১৫ হিজর আয়াতঃ৫১-৫৪;

আমি তাহাকে [ইব্রাহীমকে] দান করিলাম ইসহাক ও ইয়াকূব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম”[সূরা ১৯ মারইয়াম আয়াতঃ৪৯]

নবী ইউসুফ বলেছেন, “আমি আমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক, এবং ইয়াকূবের মতবাদ অনুসরন করি”[সূরা ১২ ইউসুফ আয়াতঃ৩৮;] এখানেও ইশ্ময়েল বাদ পড়েছেন

সূরা ১১: হূদ ৬৯-৭১;

আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন!

কিন্তু যখন দেখলেন যে, আহার্য্যের দিকে তাদের হস্ত প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ হলেন এবং মনে মনে তাঁদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করতে লাগলেন তারা বলল-ভয় পাবেন না আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি

তাঁর স্ত্রীও নিকটেই দাড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল অতঃপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরের ইয়াকুবেরও

এখানে অব্রাহামের কাছে ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ নিয়ে আসা হয়েছে এবং ইসহাকের পর ইয়াকূবের যিনি পরের নবী অর্থাৎ ইসহাকের বংশ দিয়ে যে নবুয়ত চলবে এখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যখন কুরআনের ইব্রাহিম আল্লাহর কাছে ইশ্মেয়েলের জন্য দোয়া করেন আল্লাহ তার দোয়া অগ্রাহ্য করেন যেমনঃ  আমারা পবিত্র বাইবেলেও দেখতে পাই [আদিপুস্তক ১৭:১৮-১৯;] এবং কুরাআনের আল্লাহ বলেছেন তিনি ইসহাকের সাথেই নিজের নিয়ম স্থাপন করবেন তাকেই এবং তার বংধরদের নেতা করবেন কিন্তু ইশ্মায়েলের জন্য এবং তার বংশের জন্য তা করবেন না সূরা ২ বাকারা আয়াত ১২৪;.........আল্লাহ বলিলেন, আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা করেছি সে বলিল, আমার বংশধরগনের মধ্য হইতেও? আল্লাহ বলিলেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদের প্রতি প্রযোজ্য নহে

আল্লাহর সাথে যখন এই কথা ইব্রাহীমের হয়েছিল তখন তার ১টি সন্তান ছিল আর যিনি ছিলেন ইশ্মায়েল কারন তার পরের আয়াতগুলো পড়লে আমারা ইশ্মায়েলের কথা দেখতে পাই কিন্তু আল্লাহ ইশ্মায়েলের বংশধর হতে নেতা [নবীপাঠানোর বিষয়ে অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন ,আল্লাহ বলিলেন, ‘আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদের প্রতি প্রযোজ্য নহে

তাহলে দেখা যাচ্ছে অব্রাহাম মনে মনে চিন্তা করেছিলেন যে তার পরে নেতা এবং নবুওয়তের জন্য আল্লাহ ইশ্মায়েলকে আশীর্বাদ করবেন কিন্তু তা ঘটে নি আল্লাহ ইশ্মায়েলকে সেই আশীর্বাদ দিতে অস্বীকার করেছেন কিন্তু সেই আশীর্বাদ তিনি ইসহাক এবং তার বংশধরদের দিয়েছেন

এবং আমি ইব্রাহীমকে দান করিয়াছিলাম ইসহাক এবং পৌত্ররূপে ইয়াকূব; আর প্রত্যেককেই করিয়াছিলাম সৎকর্মপরায়ন; এবং তাহাদের করিয়াছিলাম নেতা; তাহাদেরকে ওহী প্রেরন করিয়াছিলাম সৎকর্ম করিতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে; তাহারা আমারই ইবাদত করিত”[সূরা ২১ আম্বিয়া আয়াতঃ৭১-৭২;]

সূরা ৩৮ সোয়াদ আয়াতঃ৪৫-৪৬;“স্মরন কর, আমার বান্দা ইব্রাহীম, ইসহাক, ইয়াকূবের কথা, উহারা ছিল শক্তিশালি ও সুক্ষ্ণদর্শী

এখানে ইশ্মায়েলের নাম উল্লেখ করা হয় নি অর্থাৎ এই লিষ্টের বাইহের আছেন

সূরা ২৯ আনকাবুত আয়াতঃ২৭;

আমি ইব্রাহীমকে দান করিয়া ছিলাম ইসহাক ও ইয়াকূব এবং তাহার বংশধরদের জন্য স্থির করিয়াছিলাম নবুওতকিতাব এবং আমি তাহাকে দুনিয়ায় পুরস্কৃত করিয়াছিলাম; আখিরাতেও সে নিশ্চই সৎকর্মপরায়নদের অন্যতম হইবে

কিতাব-নবুওয়তের আগমনের বিষয় সব কিছু অব্রাহামের প্রিয় পুত্র ইসহাকের ও তার থেকে ইয়াকূবের এবং তাদের বংশধরদের জন্য ইশ্মাইলের জন্য এমন কোন কথা কুরআনে বলা হয় নি যদি হত তবে অব্যসই লেখা থাকতইব্রাহীম, ইশ্মাইল এবং তার পুত্রদের কিতাব, নবুওত দিয়েছিকিন্তু কুরানের কোথাও লেখা নেই যে ইশ্মায়েলে  এবং তার পুত্রদের মধ্যে আল্লাহর নবুওতয় দান করেছেন

এছাড়াও সূরা আস সাফআত ৩৭:১০০-১০১ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম

তাহলে এখানেও দেখা যাচ্ছে যে, ইসহাকে সুসংবাদের সন্তান বলা হয়েছে এই বিষয়ে এক প্রতিজ্ঞা করা হচ্ছে তাই ইসহাক যে সেই প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান তার কুরআনেও বলা হয়েছে যখন অব্রাহাম এই দোয়া করেছিলেন [৩৭:১০০] তখন তার একটি স্ত্রী ছিল সারা কারন তার আগের আয়াত বর্নানা করে এই ঘটনা ছিল অব্রাহামের পিতার সাথে বিচ্ছেদের ঘটনা[৩৭:৮৩-৯৯] হাগারের [হাজেরার] সাথে অব্রাহামের অনেক পরে দেখা হয় মিশরে তাই এই দোয়া ইশ্মায়েলের জন্য হতেই পারে না ইয়াওয়ে এলোহীমের অলৌকিকতায় জন্ম নিয়েছিলেন ইসহাক, ইশ্মায়েল নন কারন সারা বন্ধা ছিলেন এবং তিনি বৃদ্ধা হয়ে গিয়ে ছিলেন তাই অব্রাহামের স্ত্রী সারার জন্য ছিল এটা "সুসংবাদ" কারন একটা বন্ধা নারীর কাছে এর থেকে বড় কোন সুসংবাদের কথা থাকতে পারে না" তার পাশাপাশি অব্রাহামের কাছেও এটা ছিল সুসংবাদ কারন তার প্রথম স্ত্রী যে বন্ধা ছিল সে বৃদ্ধা বয়সে সন্তান প্রসব করবে অন্যদিকে ইশ্মায়েলের জন্ম কোন অলৌকিক ভাবে হয় নি বরং তার জন্ম ত সাধারন ভাবে হয়েছিল তাই তিনি সুসংবাদের পুত্র কোন যুক্তিতে হতে পারেন না

এই বিষয়ে কুরআনের সাক্ষ্য এক যে কে সেই প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান ছিলেন!!! যদিও কুরআনে এই একই ঘটনা ভিন্ন ভাবে অন্য সূরাতে বর্ননা করা হয়েছে সূরা ৫১:যারিয়াত ২৪-২৯;

আপনার কাছে ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললঃ সালাম, তখন সে বললঃ সালাম এরা তো অপরিচিত লোক অতঃপর সে গ্রহে গেল এবং একটি ঘৃতেপক্ক মোটা গোবৎস নিয়ে হাযির হল সে গোবৎসটি তাদের সামনে রেখে বললঃ তোমরা আহার করছ না কেন? অতঃপর তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হলঃ তারা বললঃ ভীত হবেন না তারা তাঁকে একট জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল অতঃপর তাঁর স্ত্রী চীৎকার করতে করতে সামনে এল এবং মুখ চাপড়িয়ে বললঃ আমি তো বৃদ্ধা, বন্ধ্যা

এই সূরা ৫১: যারিয়াতের সাথে সূরা ১১ হূদের বর্নণায় কিছু অমিল লক্ষ করা যায়

সূরা ৫১:যারিয়াত ২৪-২৯;

সূরা ১১: হূদ ৬৯-৭২;

আপনার কাছে ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললঃ সালাম, তখন সে বললঃ সালাম এরা তো অপরিচিত লোক অতঃপর সে গ্রহে গেল এবং একটি ঘৃতেপক্ক মোটা গোবৎস নিয়ে হাযির হল সে গোবৎসটি তাদের সামনে রেখে বললঃ তোমরা আহার করছ না কেন? অতঃপর তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হলঃ তারা বললঃ ভীত হবেন না তারা তাঁকে একট জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল অতঃপর তাঁর স্ত্রী চীৎকার করতে করতে সামনে এল এবং মুখ চাপড়িয়ে বললঃ আমি তো বৃদ্ধা, বন্ধ্যা

 

আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন!কিন্তু যখন দেখলেন যে, আহার্য্যের দিকে তাদের হস্ত প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ হলেন এবং মনে মনে তাঁদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করতে লাগলেন তারা বলল-ভয় পাবেন না আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি

তাঁর স্ত্রীও নিকটেই দাড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল অতঃপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরের ইয়াকুবেরও সে বলিল, ‘কী আশ্চর্য! সন্তানের জননী হইব আমি, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এই আমার স্বামী বৃদ্ধ ইহা অবশ্যই এক অদ্ভুত ব্যপার

 

# সূরা হূদে বলা হয়েছে ফেরেশতাগনের কথা অথচ সূরা যারিয়াতের সম্মানিত মেহমানদের কথা

# সূরা হূদে বলা হয়েছে ভূনা করা বাছুর ফেরেশতাগনের সামনে উপস্থিত করা হয়েছে অথচ সূরা যারিয়াতের বলা হয়েছে "একটি ঘৃতেপক্ক মোটা গোবৎস নিয়ে হাযির হল" এখন প্রশ্ন হলো কেউ কি একটা একটি ঘৃতেপক্ক মোটা গোবৎসরান্না না করে খায়?”

# সূরা হূদে বলা হয়েছে সারা ইসহাকের জন্মের সুসংবাদের কথা শুনে হেঁসে ছিলেন "তাঁর স্ত্রীও নিকটেই দাড়িয়েছিল, আশ্চর্যবোধ করলেন"  কিন্তু সূরা যারিয়াতের বলা হয়েছে, "তাঁর স্ত্রী চীৎকার করতে করতে সামনে এল এবং মুখ চাপড়িয়ে বললঃ আমি তো বৃদ্ধা, বন্ধ্যা"

কুরাআন অনুসারে ইসহাক ছিলেন প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান, ইসহাকের জন্য ফেরেস্তাগণ অব্রাহামের বাড়িতে এসেছিলেন, ইসহাকের এবং তার পরে ইয়াকূবের জন্মের সুংবাদ দেন এবং তাদের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেন। কিন্তু সমগ্র কুরআনে  কোথাও কি লেখা আছে? ফেরেস্তাগন এসে ইশ্মায়েলের জন্মের সুসংবাদ এবং তার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করে করেছেন?  না সমগ্র কুরআনে এমন কোন আয়াত নাই। অনেকে বলেন যে কুরআনে নাই ত কি হয়েছে হাদিসে রয়েছে কিন্তু যারা এমন চিন্তা করেন তাদের এটাও জেনে রাখা দরকার উক্ত বিষয়ে  কোন হাদিসও নাই। আর যে বিষয়ে কোন স্পষ্ট দলিল নাই সেই বিষয়ের কোন গ্রহনযোগ্যতাও নাই।

অব্রাহাম কাকে কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন?

কুরআনে সূরা ৩৭:সাফআত ৯৯-১১২;

সে বললঃ আমি আমার পালনকর্তার দিকে চললাম, তিনি আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকিনিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছি ইসহাকের, সে সৎকর্মীদের মধ্য থেকে একজন নবী

# ৯৯ নং আয়াতে অব্রাহাম দোয়া করলেন এবং তার দোয়া কবুল করা হলো এবং তাকে বলা হলো "সুসংবাদের পুত্রের কথা" [১০০নং আয়াত] যিনি ইসহাক, ইশ্মায়েল নন

#১১২ নং আয়াতে বলা হয়েছে সেই সুসংবাদের সন্তান ছিলেন ইসহাক কারন এখানে অতীত কালের কথা বলা হয়েছে মুসলিমরা বলে এটা তার পরের কথা কিন্তু আয়াত পড়লে দেখা যায় যে "এটা ভবিষ্যতের কথা বলছেনা বরং এটা অতীতের কথা ঘোষনা করছে তাই এই বিষয়ে তাদের যুক্তি খুবই দূর্বল

সূরা ৩৭ সাফফাত আয়াতঃ১০২

Dr. Kamal Omar

So when he attained (reached the age of), ‘striving and effort along with him’, he (the father) said: “O my little son! I do see during the sleep that I will offer you in sacrifice (to some Cause of Allah), so look what you think.” He said: “O my dear father! Implement what you would be commanded; soon you would find me, in-shaa-Allaho [if Allah (so) willed] out of those who patiently persevere .

Muhammad Taqi Usmani

Thereafter, when he (the boy) reached an age in which he could work with him, he (Ibrahim) said, .O my little son, I have seen in a dream that I am slaughtering you, so consider, what is your opinion?. He said, .O my dear father, do what you have been ordered to do. You will find me, insha‘allah , (if Allah wills) one of those who endure patiently

 

#১০২ নং আয়াতে মুসলিমরা সত্য ঘটনাটি ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছেন তারা এখানে ইংরোজি অনুবাদে : "O my son" হিসাবে অনুবাদ করেছেন কিন্তু মূল আরবীতে যে শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো  ইয়া বুনায়া يَا بُنَيَّ যার অর্থ ছোট ছেলে My Little Son আপনি পৃথিবীর যে কোন আরবী ডিকশনারি মিলিয়ে দেখতে পারেন


https://www.almaany.com/en/dict/ar-en/يا-بني/


কিন্তু মুসলিমরা এখানে মিথ্যা অনুবাদ করে সত্যকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন মাত্র

কারন সূরা ১২:৫ নং আয়াতেও বুনায়া يَا بُنَيَّ শব্দের দ্বারা ইউসুফ নবীকেও বোঝানো হয়েছে "

 

Malik Quran Translation

He replied: "My dear little son! Do not say any thing about this dream to your brothers, lest they plot an evil scheme against you; for Shaitan is an open enemy to human beings.

 

Yusuf Ali Quran Translation

Said (the father): "My (dear) little son! relate not thy vision to thy brothers lest they concoct a plot against thee: for Satan is to man an avowed enemy!

 

 

 "My (dear) little son! " Yosuf Ali, Malik বিখ্যাত কুরআন অনুবাদরাও "My (Dear) little son হিসাবে অনুবাদ করেছেন তাই  ইয়া বুনায়া يَا بُنَيَّ শব্দের অর্থ প্রিয় পুত্র নয় বরং ছোট ছেলে তাই এখানে সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয় যে ইসহাক ছিলেন প্রতিজ্ঞাত সুসংবাদের সন্তান এবং তাকেই অব্রাহাম কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়ে ছিলেন

ইসলামের শীর্ষ তাফসীরদের ব্যাখ্যাঃ

ইসলামের  শীর্ষ তাফসীরগণ  সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন ইসহাক ছিলেন সেই ব্যক্তি যাকে অব্রাহাম কুরবানী দেওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন।

 

আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারির আল তাবারি (ফার্সি: محمد بن جریر طبری‎‎, আরবি: أبو جعفر محمد بن جرير بن يزيد الطبري‎‎) (২২৪ – ৩১০ হিজরি; ৮৩৯ –৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন বর্তমান ইরানের অন্তর্গত মাজানদারানের তাবারিস্তানের একজন খ্যাতনামা ও প্রভাবশালী পারসিয়ান পণ্ডিত, ইতিহাসবিদ ও মুফাসসির। ইসলামি বিষয়াদি ও ইতিহাসের উপর তার পান্ডিত্যের কারণে বর্তমানকালেও তিনি সমাদৃত। তিনি কাব্য, অভিধান, ব্যাকরণ, নীতিশাস্ত্র, গণিত  চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়েও লিখেছেন।

তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও পরিচিত কর্ম হল তাফসির আল তাবারি এবং তার ঐতিহাসিক গ্রন্থ তারিখ আল রসুল ওয়াল মুলুক (ইংরেজিতে “হিস্ট্রি অব দ্য প্রফেটস এন্ড কিংস’’ বলে পরিচিত) যা তারিখ আল তাবারি বলেও ডাকা হয়। তিনি তার নিজস্ব মাজহাব স্থাপন করেন যা সাধারণত তার নাম অনুসারে জারিরি বলা হয়।

কুরআনের এই আয়াত নিয়ে  তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এবং সুস্পষ্টভাবে বলেছেন"অব্রাহাম ইশ্মায়েলকে নয় বরং ইসহাককে কুরবানী করতে নিয়ে গিয়েছিলেন আর তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন উক্ত বিষয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে রয়েছে কুরআন এবং হযরত মুহাম্মদের শিক্ষা অনুরাসারে ইসহাক ছিলেন সেই সন্তান: "The earliest sages of our Prophet's nation disagree about which of Abraham's two sons it was that he was commanded to sacrifice. Some say it was Isaac, while others say it was Ishmael. Both views are supported by statements related on the authority of the Messenger of God. If both groups of statements were equally sound, then - since they both came from the Prophet - only the Quran could serve as proof that the account naming Isaac is clearly the more truthful of the two." (2: p. 82). [আল-তবারী ২য় খন্ড, ৮২ পৃষ্ঠা ]

এখানে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে অব্রাহাম কুরবানীর জন্য ইসহাককে নিয়ে গিয়েছিলেন ইশ্মায়েলকে নয়।

মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ( আরবি: مسند احمد ابن حنبل‎‎ ) হলো ইসলামী পণ্ডিত আহমদ ইবনে হাম্বল দ্বারা সংগৃহীত হাদীসের এক বিশাল সংগ্রহ, আর আহমদ ইবনে হাম্বল হলেন হাম্বলি মাযহাব এর প্রবক্তা। মাকাতাবা শামিলা অনুযায়ী, এটি ইসলামের ইতিহাসে লেখা বৃহত্তম হাদীস বই যেখানে সাতাশ হাজারেরও (২৭০০০) বেশি হাদিস রয়েছে । এখানে বিষয়ভিত্তিক হাদিস বর্ণনার বদলে প্রতিটি সাহাবী দ্বারা বর্ণিত হাদীস দ্বারা তা সংগঠিত হয়েছে, আর 'আশারাহ মুবাশারাহ ("দশ জন যাদের জান্নাত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল") এর হাদিস দিয়ে এটি শুরু হয়েছে। এটি তাদের মর্যাদা এবং আল্লাহর রাসূলের থেকে হাদিস পাওয়ার প্রচেষ্টা চালানোর স্বীকৃত দেয়ার জন্য করা হয়।

কেউ কেউ বলেন যে, ইবনে হাম্বল তাঁর গ্রন্থের বিষয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন যা নিম্নরূপে: "আমি এই বইটিতে কেবল সেইসব হাদীস অন্তর্ভুক্ত করেছি যেগুলো অন্য আলেমরা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে।।" যেমন কিছু কিছু হাম্বলী পণ্ডিত আবুল-ফারাজ ইবনুল জাওজি দাবি করেন, মুসনাদে এমন কিছু হাদিস রয়েছে যেখানে কোন বর্ণনাকারী কিছু অতিরিক্ত সংযোজন করেছে। কেউ কেউ বলেন এরকম নয়টি হাদীস আছে, বা অন্য কেউ বলেন পনেরটি হাদিস আছে এমন। তবে সবাই এটিতে একমত যে, যেইসব হাদীস বানোয়াট বলে সন্দেহ করা হচ্ছে সেগুলি নতুন কোন হাদীস নয়। 

 

Musnad Ahmad, Number 2658,

The messenger of God said that Gabriel took Abraham to Jamra al-Aqabah (the upper Jamrah, the pillar or place for stoning) and then Satan appeared to him. Then he stoned Satan with seven stones so he fainted him to faint. Then he came to the middle Jamrah, and Satan again appeared to him. He again stoned him with seven stones causing Satan to faint. He then came to the lower Jamrah, and Satan again appeared to him. Again he stoned Satan, causing him to faint once again. Now when Abraham wanted to slaughter his son Isaac, he said his father, "Father, tie me so I don’t get afraid and my blood splash all over you when you slaughter me." So he took him and he tied him up, and then he took the knife. And when he wanted to slay him a voice called from behind him, "O Abraham, the vision has been fulfilled."

এখানে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে অব্রাহাম কুরবানীর জন্য ইসহাককে নিয়ে গিয়েছিলেন ইশ্মায়েলকে নয়।

আল-বাদাওয়ি [al-Baidawi] : তিনি একজন বিখ্যাত ইসলামিক তাফসীর তিনিও স্বীকার করেছেন যে, অব্রাহাম কুরবানী দেবার জন্য তার ছেলে ইসহাক কে নিয়ে গিয়েছিলেন :

As He perfected it formerly on thy fathers: by appointing them as messengers. Some say (that God perfected his blessing) on Abraham by taking him as a ‘friend’ (khalil) and by saving him from the fire (into which the unbelievers had cast him), and (he perfected it) on Isaac by delivering him from the sacrifice and by ransoming him with a great victim (for the sacrifice) ... (Helmut Gätje, The Qur'an and Its Exegesis [Oneworld Publications, Oxford 1996], p. 107; bold italic emphasis ours)

প্রাচীন ইসলামি দলিল গুলোর মতে "ইসহাক ছিলেন সেই সন্তান যাকে অব্রাহাম কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলন"

ইবনে আব্বাসঃ তিনি একজন বিখ্যাত ইসলামিক তাফসীর কিন্তু নিজেও জানতেন না যে  অব্রাহামের কোন সন্তানকে কুরবানী দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তিনি তার তাফসীরে ইশ্মায়েল এবং ইসহাক দুজনের কথাই উল্লেখ করেছেন যাদের কাছে অব্রাহাম তার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন।

37.102 Abbas - Tanwîr al-Miqbâs min Tafsîr Ibn ‘Abbâs

(And when (his son) was old enough to walk with him) when his son was old enough to strive for Allah and obey Him; it is also said that this means: when his son was old enough to walk with him in the mountains, ((Abraham) said) to his son Ishmael; and it is also said: to his son Isaac: (O my dear son, I have seen in a dream that I must sacrifice thee) I am commanded in a dream vision to sacrifice you. (So look, what thinkest thou) what do you say? (He said: O my father! Do that which thou art commanded) of sacrificing me. (Allah willing, thou shalt find me of the steadfast) in the face of this sacrifice.

https://quranx.com/Tafsirs/37.102

তাফসীর আল-জালালাইন তিনিও সন্দেহে ছিলেন আসলে অব্রাহামের কোন সন্তানকে কুরবানী দেওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন যার জন্য তিনি ইশ্মায়েল এবং ইসহাকের  অর্থাৎ দুজনেরই নাম উল্লেখ করেছেন।

37.107 Jalal - Al-Jalalayn

Then We ransomed him, the one whom he had been commanded to sacrifice, namely, Ishmael or Isaac — two different opinions — with a mighty sacrifice, [a mighty] ram from Paradise, the same one that Abel had offered as as sacrifice: Gabriel, peace be upon him, brought it and the lord Abraham sacrificed it as he cried, Allāhu akbar, ‘God is Great’.

https://www.altafsir.com/Tafasir.asp?tMadhNo=0&tTafsirNo=74&tSoraNo=37&tAyahNo=107&tDisplay=yes&UserProfile=0&LanguageId=2

কিন্তু কিছু তাফসীরের উদ্ভব ঘটে যারা দাবি করে বসেন ইশ্মায়েলের বিষয়ে যদি এরা কেউ প্রাচীন তাফসীরদের সমর্থন পান না তাদের এই ভ্রান্ত শিক্ষা আজ মুসলিম সমাজে প্রচলিত রয়েছে এখন আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন যারা নিজেরাই এই বিষয়ে একমত নয় তবে এদের থেকে সত্য আবিস্কার করাটা কতটা কঠিন হতে পারে!

হযরত মুহাম্মদের সাহাবাদের সাক্ষ্যঃ

মুফতি মুহাম্মদ শাফি রচিত গ্রন্থ মারিফুল কুরআন পৃষ্ঠা৪৬৬-৪৬৭ উল্লেখ করেছেন যে অব্রাহাম ইসহাককে কুরবানী দেবার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন ইশ্মায়েলকে নয় এবং অসংখ্য ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করেছিলেন যারা হযরত মুহাম্মদের অনুসারিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তারা অধিকাংশ ইসহাকের পক্ষে রায় দিয়েছেন আর অল্প কিছু ব্যক্তিরা ইশ্মায়েলের পক্ষে রায় দিয়েছেন

Which son was to be slaughtered? Was it Sayyidna Isma'zl %&I? Or, was it SayyidnZ IshZq? The TafsTr of the verses cited above has been described on the assumption that the son who was to be slaughtered was SayyidnZ Isma'll @I. But, the truth of the matter is that there is a severe difference of opinion among commentators and historians about it. That this son was SayyidnE IshZq 8581 has been reported from among the SahZbah by SayyidnE 'Umar, SayyidnZ 'Ali, SayyidnZ 'AbdullZh Ibn Mas'Gd, Sayyidnii 'AbbEs, SayyidnE 'AbdullZh Ibn 'AbbZs and SayyidnE Ka'b al-AhbZr &, and from among the Tabi'in by Sa'ld Ibn Jubayr, QatEdah, Masriq, 'Ikrimah, 'Ata', MuqZtil, Zuhri and Suddiyy ;jk dl F, Counter to this is the narrations from Sayyidna 'Ali, SayyidnZ Ibn 'AbbZs, SayyidnE 'AbdullEh Ibn 'Umar, SayyidnE Abii Hurairah and SayyidnZ AbG-t-Tufayl from among the SahEbah, and Sa'id Ibn Musaiyyab, Sa'ld Ibn Jubayr, Hasan al-Bass, MujZhid, 'Umar Ibn 'Abd-ul-'Azlz, Sha'bi, Muhammad Ibn Ka'b al-Qurazi from among the Tabi'Tn from whom it has been reported that that this son was SayyidnZ Isma'il &%I. It is to be noted that the names of SayyidnZ 'Ali, Ibn 'AbbZs and Sa;id ibn Jubayr appear in both groups. This is because reports of both views are attributed to them. (Usman;)- Maariful Quran, by Mufti Muhammad Shafi, Volume 7, pp. 466-467

https://ia802707.us.archive.org/2/items/maarifulquran-english-pdf/MaarifulquranEnglishPdf-Vol7-Page443-498ByMuftiShafiUsmaniRah.pdf

এছাড়াও Journeys in Holy Lands: The Evolution of the Abraham-Ishmael Legends in Islamic Exegesis গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে তাফসীর ইবনে আব্বাস সহ হযরত মুহাম্মদের অধিকাংশ সাহাবীরা বিশ্বাস করতেন যে ইসহাক ছিলেন অব্রাহামের সেই সন্তান যাকে তিনি কুরবানী দেবার জন্য নিয়ে গিয়ে ছিলেন।

Journeys in Holy Lands: The Evolution of the Abraham-Ishmael Legends in Islamic Exegesis [State University of New York Press (SUNY), Albany 1990], Chapter 16: Isaac or Ishmael?, p. 135;

Most reports treating the Sacrifice directly or indirectly relate to the issue of who was the intended victim, and the intensity of interest in this matter is reflected in the great amount of space devoted to it. Exegetes cite traditions supporting both Isaac and Ishmael, and many even cite full lists of the early traditionists, such as Ibn ‘Abbas, Sa‘id b. Jubayr, al-Suddi, Mujahid, al-Hasan al-Basri, and ‘Ali, are cited in support of both, with some reports giving their opinion that it was Isaac and others claiming that it was Ishmael. When all the traditions are collated we find a surprisingly close count. One hundred thirty authoritative statements consider Isaac to be the intended victim; one hundred thirty consider it to have been Ishmael. (Firestone, Journeys in Holy Lands: The Evolution of the Abraham-Ishmael Legends in Islamic Exegesis [State University of New York Press (SUNY), Albany 1990], Chapter 16: Isaac or Ishmael?, p. 135;

 

হযরত মুহাম্মদের অধিকাংশ সাবাবিরা ইসহাক এর পক্ষে রায় দিয়েছেন তারা এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছিলেন। কিন্তু পরে তার কিছু অনুসারীরা ইশ্মায়েলের পক্ষে রায় দেওয়া শুরু করেন যার ফলে ইলামের এই বিষয়ে পরস্পবিরোধী মন্তব্য দেখতে পাওয়া যায়। ছেলে হিসাবে ইশ্মায়েল বড় হলেও হযরত মুহাম্মদের অধিকাংশ সাবাবিরা ইসহাক এর পক্ষে আগে রায় দিয়েছেন এবং পরে কিছু লোকেরা ঘটনাকে বিকৃত করেছেন এবং ইশ্মায়েলের পক্ষে রায় দেওয়া আরাম্ভ করেছিলেন যদিও তাদের কাছে এই শক্ত দলিল নাই অনুমান ব্যতীত। ইসহাকের পক্ষে যারা রায় দিয়েছেন তারা হলেন প্রাচীন সাহাবিদের অন্তরভুক্ত এখন আপনি কাদের  কথায় বিশ্বাস করবেন প্রাচীন সাহাবিদের নাকি তার পরের সাহাবিদের যাদের সাক্ষ্য নির্ভরযোগ্য নয়!

ইশ্মায়েল কি নবী ছিলেন এবং তিনি কি মক্কাতে কোন দিন গিয়ে ছিলেন?

এবারে আমরা দেখব ইশ্মায়েল কি নবী ছিলেন এবং তিনি কি মক্কাতে কোন দিন গিয়ে ছিলেন?

কুরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে হযরত মুহাম্মদের পূর্বে আরবীদের নিকটে কোন নবী আসেনি

#১ম প্রমান: সূরা ২৮ কাসাস, আয়াত: ৪৬;

আমি যখন মূসাকে আওয়াজ দিয়েছিলাম, তখন আপনি তুর পর্বতের পার্শ্বে ছিলেন না কিন্তু এটা আপনার পালনকর্তার রহমত স্বরূপ, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন ভীতি প্রদর্শনকারী আগমন করেনি, যাতে তারা স্মরণ রাখে

#২য় প্রমান:সূরা ৩২ সাজদাহ, আয়াত:;

তারা কি বলে, এটা সে মিথ্যা রচনা করেছে? বরং এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে সত্য, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি সম্ভবতঃ এরা সুপথ প্রাপ্ত হবে

#৩য় প্রমান:সূরা ৩৪: সাবা, আয়াত: ৪৪;

আমি তাদেরকে কোন কিতাব দেইনি, যা তারা অধ্যয়ন করবে এবং আপনার পূর্বে তাদের কাছে কোন সতর্ককারী প্রেরণ করিনি

 

#৪র্থ প্রমান: সূরা'৩৫: ফাতির, আয়াত:৪২;

তারা জোর শপথ করে বলত, তাদের কাছে কোন সতর্ককারী আগমন করলে তারা অন্য যে কোন সম্প্রদায় অপেক্ষা অধিকতর সৎপথে চলবে অতঃপর যখন তাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করল, তখন তাদের ঘৃণাই কেবল বেড়ে গেল

প্রতিটি আয়াতে পরিস্কার ভাবে লেখা আছে আরবীয়দের কাছে হযরত মুহাম্মদের আগে কোন নবী আসেন নি তার মানে এটা পরিস্কার যে ইশ্মায়েল আরবে যান নি এমনকি তার পিতা অব্রাহাম এবং তার দাসী হাগারও [হাজেরাও], তাদের নিয়ে যে কাহিনি মানুষে বিশ্বাস করে [যমযমের কূয়া, কাবা নির্মান] সবই ভিত্তিহীন  এখন যদি কুরআনের অন্য কোথাও বলা হয়ে থাকে যে অব্রাহাম, ইশ্মায়েল এবং হাগার [হাজেরা] আরবে গিয়েছিলেন তবে এটা হবে পরস্পরবিরোধী কথা  এখন যদি কেউ দাবি করেন: ইশ্মায়েল আরবে গিয়েছেন তবে কুরআন মতে তিনি নবী নন আর যদি নবী না হয়ে থাকেন তবে তিনি আরবে যান নি অর্থাৎ তার ক্ষোত্রে কোন বাক্যই ফলবে না কিছু ইসলামিক পন্ডিত রয়েছে যারা বলে থাকেন এখানে আরবের কুরাইশ জাতির কথা বলা হয়েছে কিন্তু এটা সঠিক নয় কারন সূরা২৮ কাসাস আয়াতঃ৪৬; জাতি বলতে [কাওমা] শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার দ্বারা কুরআনে অনেক জায়াগায় কোন গোত্র নয় বরং জাতিদের বোঝানো হয়েছে। তাই তাদের যুক্তিটি খুবই দূর্বল। তারা বিশ্বাস করেন ইশ্মায়েল তাদের আরবীয়দের আদি পিতা তবে  তাদের যুক্তি অনুসারে ইশ্মায়েল শুধু কুরাইশদের পিতা?

হাদিস দ্বারা প্রমানিত যে অব্রাহাম ইসহাক কে কুরবানী দেবার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেনঃ

কুরআনের পাশাপাশি সহি হাদিসেও সুপষ্টরূপে বর্ণনা করা হয়েছে নবী ইসহাক কে কুরবানী দেয়ার জন্য নবী অব্রাহাম নিয়ে গিয়েছিলেন। সূরা২বাকারা, আয়াতঃ১২৪; লেখা আছে “এবং স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীমকে তাহার প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করিয়াছিলেন।” অর্থাৎ এখানে কুরবানীর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এবং সূরা২বাকারা, আয়াতঃ১২৫-১২৭; অনুসারে অব্রাহামের পরীক্ষার পরেই ইশ্মায়েলের সাথে মিলে তিনি কাবা ঘর নির্মাণ করেন তার আগে নয়

সহি হাদিস অনুসারে অব্রাহাম ইশ্মায়েলের সাথে দ্বিতীয় বার দেখা করেন যখন ইশ্মায়েল বিবাহ করে সংসার জীবন যাপন করছিলেন তাই যাকে কুরাবানী দেওয়ার জন্য  অব্রাহাম প্রস্তুতি গ্রহন করেছিলেন সেই সন্তান ইশ্মায়েল হতে পারেন না কারন যখন এই কুরাবনীর ঘটনা ঘটেছিল তখন ইশ্মায়েল অব্রাহামের কাছে ছিলেন না। অব্রাহাম যখন ইশ্মায়েলকে ও তার মাকে বের করে দেন তার পরে তিনি আর ফিরে আসেন নি ইশ্মায়েলের বিবাহের আগ পর্যন্ত তাই কুরবানীর সময়ে ইশ্মায়েল অব্রাহামের সংগে ছিলেন না আর কুরবানীর ঘটনার সমাপ্তির বহু বছর পরে অব্রাহাম ইশ্মায়েলের সাথে দেখা করতে জান।


৩৩৬৩

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আনসারী (রহঃ) ইবনু জুরাইজ (রহঃ) সূত্রে বলেন যে, কাসীর ইবনু কাসীর বলেছেন যে, আমি ও উসমান ইবনু আবূ সুলাইমান (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে এরূপ বলেননি বরং তিনি বলেছেন, ইবরাহীম (‘আঃ), ইসমাঈল (‘আঃ) এবং তাঁর মাকে নিয়ে আসলেন। মা তখন তাঁকে দুধ পান করাতেন এবং তাঁর সঙ্গে একটি মশক ছিল। এ অংশটি মারফুরূপে বর্ণনা করেননি।হিহ হাদিস

http://ihadis.com/books/bukhari/hadis/3363

উক্ত হাদিস যিনি বর্ণনা করেছেন তিনি একটা বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছেন আর তা হচ্ছে অব্রাহাম যখন হাগারকে [হাজেরাকে] বের করে দেন তখন  ইশ্মায়েল নাকি শিশু ছিলেন। যদি তিনি শিশুই হবেন তবে কেন তাকে অব্রাহাম বের করে দেবেন? পবিত্র বাইবেলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কি কারনে  অব্রাহাম তাদের বের করে দিয়েছিলেন [যদিও হাদিসে এর কারন লেখা নাই]। ইসহাকের জন্মের আগে ত ইশ্মায়েলকে বের করে দেওয়া হয় নি। যখন ইসহাকের জন্ম হয়েছিল, ইসহাক তার মার দুধ পান করা ছেড়ে দেন সেই দিনে অব্রাহাম বড়ভাবে খাওয়া দাওয়ার অয়োজন করেন এবং সেই দিনে ইশ্মায়েল ইসহাককে পরিহাস করেন আর সেটা অব্রাহামের প্রথম স্ত্রী সারা দেখে ফেলেন যার কারনে ইশ্মায়েল এবং তার মাকে বের করে দেয়া হয়।[আদিপুস্তক২১:৮-১২;] তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি হাদিসের বর্ণানাকারি ঐতিহাসিক ভাবে দূর্বল ছিলেন। কারন এই ঘটনা ইহুদি, খ্রীষ্টান এবং মুসলিমরাও জানে যে ইসহাকের জন্মের পরে ইশ্মায়েলকে বের  করে দেওয়া হয় তার আগে নয়। আর যদি তারা দাবি করেন যে, ইসহাকের জন্মের আগেই ইশ্মায়েল করে বার করে দেওয়া হয়েছিল সেই বিষয়ে তাদের কাছে কোন সুস্পষ্ট দলিল নাই, আর যদি থেকে থাকেন তবে তারা পেশ করুক!


সহিহ বুখারী ৩৩৬৪

সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নারী জাতি সর্বপ্রথম কোমরবন্দ বানানো শিখেছে ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মায়ের নিকট থেকে। হাযেরা (‘আঃ) কোমরবন্দ লাগাতেন সারাহ (‘আঃ) থেকে নিজের মর্যাদা গোপন রাখার জন্য। অতঃপর ইবরাহীম (‘আঃ) হাযেরা (‘আঃ) এবং তাঁর শিশু ছেলে ইসমাঈল (‘আঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন এ অবস্থায় যে, হাযেরা (‘আঃ) শিশুকে দুধ পান করাতেন। অবশেষে যেখানে কাবার ঘর অবস্থিত, ইবরাহীম (‘আঃ) তাঁদের উভয়কে সেখানে নিয়ে এসে মসজিদের উঁচু অংশে যমযম কূপের উপরে অবস্থিত একটা বিরাট গাছের নীচে তাদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল কোন মানুষ, না ছিল কোনরূপ পানির ব্যবস্থা। পরে তিনি তাদেরকে সেখানেই রেখে গেলেন। আর এছাড়া তিনি তাদের নিকট রেখে গেলেন একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর আর একটি মশকে কিছু পরিমাণ পানি। অতঃপর ইবরাহীম (‘আঃ) ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা পিছু পিছু আসলেন এবং বলতে লাগলেন, হে ইবরাহীম! আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন? আমাদের এমন এক ময়দানে রেখে যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সাহায্যকারী আর না আছে কোন ব্যবস্থা। তিনি এ কথা তাকে বারবার বললেন। কিন্তু ইবরাহীম (‘আঃ) তাঁর দিকে তাকালেন না। তখন হাযেরা (‘আঃ) তাঁকে বললেন, এর আদেশ কি আপনাকে আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হাঁ। হাযেরা (‘আঃ) বললেন, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। অতঃপর তিনি ফিরে আসলেন। আর ইবরাহীম (‘আঃ) -ও সামনে চললেন। চলতে চলতে যখন তিনি গিরিপথের বাঁকে পৌছলেন, যেখানে স্ত্রী ও সন্তান তাঁকে আর দেখতে পাচ্ছে না, তখন তিনি কাবা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি দুহাত তুলে এ দুআ করলেন, আর বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার পরিবারের কতককে আপনার সম্মানিত ঘরের নিকট এক অনুর্বর উপত্যকায় .... যাতে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে- (ইবরাহীম ৩৭)আর ঈসমাঈলের মা ঈসমাইলকে স্বীয় স্তন্যের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। অবশেষে মশকে যা পানি ছিল তা ফুরিয়ে গেল। তিনি নিজে তৃষ্ণার্ত হলেন এবং তাঁর শিশু পুত্রটিও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুটির দিকে দেখতে লাগলেন। তৃষ্ণায় তার বুক ধড়ফড় করছে অথবা রাবী বলেন, সে মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। শিশু পুত্রের এ করুণ অবস্থার প্রতি তাকানো অসহনীয় হয়ে পড়ায় তিনি সরে গেলেন আর তাঁর অবস্থানের নিকটবর্তী পর্বত সাফা’-কে একমাত্র তাঁর নিকটতম পর্বত হিসাবে পেলেন। অতঃপর তিনি তার উপর উঠে দাঁড়ালেন এবং ময়দানের দিকে তাকালেন। এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন, কোথায়ও কাউকে দেখা যায় কিনা? কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন সাফাপর্বত থেকে নেমে পড়লেন। এমন কি যখন তিনি নিচু ময়দান পর্যন্ত পৌছলেন, তখন তিনি তাঁর কামিজের এক প্রান্ত তুলে ধরে একজন ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষের মত ছুটে চললেন। অবশেষে ময়দান অতিক্রম করে মারওয়াপাহাড়ের নিকট এসে তার উপর উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর এদিকে সেদিকে তাকালেন, কাউকে দেখতে পান কিনা? কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। এমনিভাবে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এজন্যই মানুষ এ পর্বতদ্বয়ের মধ্যে সায়ী করে থাকে। অতঃপর তিনি যখন মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন, তখন একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং তিনি নিজেকেই নিজে বললেন, একটু অপেক্ষা কর। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তো তোমার শব্দ শুনিয়েছ। যদি তোমার নিকট কোন সাহায্যকারী থাকে। হঠাৎ যেখানে যমযম কূপ অবস্থিত সেখানে তিনি একজন ফেরেশতা দেখতে পেলেনসেই ফেরেশতা আপন পায়ের গোড়ালি দ্বারা আঘাত করলেন অথবা তিনি বলেছেন, আপন ডানা দ্বারা আঘাত করলেন। ফলে পানি বের হতে লাগল। তখন হাযেরা (আঃ)-এর চারপাশে নিজ হাতে বাঁধ দিয়ে এক হাউজের মত করে দিলেন এবং হাতের কোষভরে তাঁর মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। তখনো পানি উপচে উঠছিলইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইসমাঈলের মাকে আল্লাহ রহম করুন। যদি তিনি বাঁধ না দিয়ে যমযমকে এভাবে ছেড়ে দিতেন কিংবা বলেছেন, যদি কোষে ভরে পানি মশকে জমা না করতেন, তাহলে যমযম একটি কূপ না হয়ে একটি প্রবাহমান ঝর্ণায় পরিণত হতো। রাবী বলেন, অতঃপর হাযেরা (‘আঃ) পানি পান করলেন, আর শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন, তখন ফেরেশতা তাঁকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে। এ শিশুটি এবং তাঁর পিতা দুজনে মিলে এখানে ঘর নির্মাণ করবে এবং আল্লাহ তাঁর আপনজনকে কখনও ধ্বংস করেন না। ঐ সময় আল্লাহর ঘরের স্থানটি যমীন থেকে টিলার মত উঁচু ছিল। বন্যা আসার ফলে তার ডানে বামে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। অতঃপর হাযেরা (‘আঃ) এভাবেই দিন যাপন করছিলেন। অবশেষে জুরহুম গোত্রের একদল লোক তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। অথবা রাবী বলেন, জুরহুম পরিবারের কিছু লোক কাদা নামক উঁচু ভূমির পথ ধরে এদিকে আসছিল। তারা মক্কাহ্‌য় নীচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং তারা দেখতে পেল একঝাঁক পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয় এ পাখিগুলো পানির উপর উড়ছে। আমরা এ ময়দানের পথ ধরে বহুবার অতিক্রম করেছি। কিন্তু এখানে কোন পানি ছিল নাতখন তারা একজন কি দুজন লোক সেখানে পাঠালো। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখতে পেল। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে সকলকে পানির সংবাদ দিল। সংবাদ শুনে সবাই সেদিকে অগ্রসর হল। রাবী বলেন, ইসমাঈল (আঃ)-এর মা পানির নিকট ছিলেন। তারা তাঁকে বলল, আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন কি? তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ। তবে, এ পানির উপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা হ্যাঁ, বলে তাদের মত প্রকাশ করল।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈলের মাকে একটি সুযোগ এনে দিল। আর তিনিও মানুষের সাহচর্য চেয়েছিলেন। অতঃপর তারা সেখানে বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পরিবার-পরিজনের নিকটও সংবাদ পাঠাল। তারপর তারাও এসে তাদেরও সাথে বসবাস করতে লাগল। পরিশেষে সেখানে তাদেরও কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হল। আর ইসমাইলও যৌবনে উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবী ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌঁছে তিনি তাদের নিকট অধিক আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। অতঃপর যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করলেন, তখন তারা তাঁর সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিল। এরই মধ্যে ইসমাঈলের মা হাযেরা (‘আঃ) ইন্তিকাল করেন। ইসমাঈলের বিবাহের পর ইবরাহীম (‘আঃ) তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা দেখার জন্য এখানে আসলেন। কিন্তু তিনি ইসমাঈলকে পেলেন না। তিনি তাঁর স্ত্রীকে তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। স্ত্রী বলল, তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। অতঃপর তিনি পুত্রবধূকে তাদের জীবন যাত্রা এবং অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, আমরা অতি দূরবস্থায়, অতি টানাটানি ও খুব কষ্টে আছি। সে ইবরাহীম (‘আঃ)-এর নিকট তাদের দুর্দশার অভিযোগ করল। তিনি বললেন, তোমার স্বামী বাড়ী আসলে, তাকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে নেয়। অতঃপর যখন ইসমাঈল (‘আঃ) বাড়ী আসলেন, তখন তিনি যেন কিছুটা আভাস পেলেন। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের নিকট কেউ কি এসেছিল? স্ত্রী বলল, হাঁ। এমন এমন আকৃতির একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং আমাকে আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ দিলাম। তিনি আমাকে আমাদের জীবন যাত্রা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন, আমি তাঁকে জানালাম, আমরা খুব কষ্ট ও অভাবে আছি। ইসমাঈল (‘আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি তোমাকে কোন নাসীহাত করেছেন? স্ত্রী বলল, হাঁ। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আপনাকে তাঁর সালাম পৌঁছাই এবং তিনি আরো বলেছেন, আপনি যেন ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলেন। ইসমাঈল (‘আঃ) বললেন, ইনি আমার পিতা। এ কথা দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে পৃথক করে দেই। অতএব তুমি তোমার আপন জনদের নিকট চলে যাও। এ কথা বলে, ইসমাঈল (‘আঃ) তাকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ঐ লোকদের থেকে অন্য একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন। অতঃপর ইবরাহীম (‘আঃ) এদের থেকে দূরে রইলেন, আল্লাহ যতদিন চাইলেন। অতঃপর তিনি আবার এদের দেখতে আসলেন। কিন্তু এবারও তিনি ইসমাঈল (‘আঃ)-এর দেখা পেলেন না। তিনি পুত্রবধূর নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে ইসমাঈল (‘আঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, তিনি আমাদের খাবারের খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। ইবরাহীম (‘আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেমন আছ? তিনি তাদের জীবন যাপন ও অবস্থা জানতে চাইলেন। তখন সে বলল, আমরা ভাল এবং স্বচ্ছল অবস্থায় আছি। আর সে আল্লাহর প্রশংসাও করল। ইবরাহীম (‘আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের প্রধান খাদ্য কী? সে বলল, গোশ্‌ততিনি আবার জানতে চাইলেন, তোমাদের পানীয় কী, সে বলল, পানি। ইবরাহীম (আঃ) দুআ করলেন, হে আল্লাহ্‌! তাদের গোশ্‌ত ও পানিতে বরকত দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঐ সময় তাদের সেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো না। যদি হতো তাহলে ইবরাহীম (‘আঃ) সে বিষয়েও তাদের জন্য দুআ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ছাড়া অন্য কোথাও কেউ শুধু গোশ্‌ত ও পানি দ্বারা জীবন ধারণ করতে পারে না। কেননা, শুধু গোশ্‌ত ও পানি জীবন যাপনের অনুকূল হতে পারে না।

ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, যখন তোমার স্বামী ফিরে আসবে, তখন তাঁকে সালাম বলবে, আর তাঁকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে যে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখে। অতঃপর ইসমাঈল (‘আঃ) যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি বললেন, তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি? সে বলল, হাঁ। একজন সুন্দর চেহারার বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং সে তাঁর প্রশংসা করল, তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। অতঃপর তিনি আমার নিকট আমাদের জীবন যাপন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি তাঁকে জানিয়েছি যে, আমরা ভাল আছি। ইসমাঈল (‘আঃ) বললেন, তিনি কি তোমাকে আর কোন কিছুর জন্য আদেশ করেছেন? সে বলল, হাঁ। তিনি আপনার প্রতি সালাম জানিয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি যেন আপনার ঘরের চৌকাঠ ঠিক রাখেন। ইসমাঈল (‘আঃ) বললেন, ইনিই আমার পিতা। আর তুমি হলে আমার ঘরের দরজার চৌকাঠ। এ কথার দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি। অতঃপর ইবরাহীম (‘আঃ) এদের থেকে দূরে রইলেন, যদ্দিন আল্লাহ চাইলেন। অতঃপর তিনি আবার আসলেন। (দেখতে পেলেন) যমযম কূপের নিকটস্থ একটি বিরাট বৃক্ষের নীচে বসে ইসমাঈল (‘আঃ) তাঁর একটি তীর মেরামত করছেন। যখন তিনি তাঁর পিতাকে দেখতে পেলেন, তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। অতঃপর একজন বাপ-বেটার সঙ্গে, একজন বেটা-বাপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে যেমন করে থাকে তাঁরা উভয়ে তাই করলেন। অতঃপর ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, হে ইসমাঈল! আল্লাহ্‌ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল (‘আঃ) বললেন, আপনার রব! আপনাকে যা আদেশ করেছেন, তা করুন। ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, তুমি আমার সাহায্য করবে কি? ইসমাঈল (‘আঃ) বললেন, আমি আপনার সাহায্য করব। ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, আল্লাহ্‌ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই বলে তিনি উঁচু ঢিলাটির দিকে ইশারা করলেন যে, এর চারপাশে ঘেরাও দিয়ে। তখনই তাঁরা উভয়ে কাবা ঘরের দেয়াল তুলতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল (‘আঃ) পাথর আনতেন, আর ইবরাহীম (‘আঃ) নির্মাণ করতেন। পরিশেষে যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল (‘আঃ) (মাকামে ইবরাহীম নামে খ্যাত) পাথরটি আনলেন এবং ইবরাহীম (‘আঃ)-এর জন্য তা যথাস্থানে রাখলেন। ইবরাহীম (‘আঃ) তার উপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ করতে লাগলেন। আর ইসমাঈল (‘আঃ) তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তখন তারা উভয়ে এ দুআ করতে থাকলেন, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবূল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন। তাঁরা উভয়ে আবার কাবা ঘর তৈরী করতে থাকেন এবং কাবা ঘরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে এ দুআ করতে থাকেন। হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবূল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন(আল-বাকারাহঃ ১২৭)

http://ihadis.com/books/bukhari/hadis/3364


সহিহ বুখারী ৩৩৬৫

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন ইবরাহীম (‘আঃ) ও তাঁর স্ত্রী (সারার) মাঝে যা হবার হয়ে গেল, তখন ইবরাহীম (‘আঃ) (শিশুপুত্র) ইসমাঈল এবং তার মাকে নিয়ে বের হলেন। তাদের সঙ্গে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল। ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা মশক হতে পানি পান করতেন। ফলে শিশুর জন্য তাঁর স্তনে দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইবরাহীম (‘আঃ) মক্কায় পৌঁছে হাযেরাকে একটা বিরাট গাছের নীচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। অতঃপর ইবরাহীম (‘আঃ) আপন পরিবারের (সারার) নিকট ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা কিছু দূর পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করলেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন তিনি পিছন হতে ডেকে বললেন, হে ইবরাহীম! আপনি আমাদেরকে কার নিকট রেখে যাচ্ছেন? ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, আল্লাহর কাছে। হাযেরা (‘আঃ) বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। রাবী বলেন, অতঃপর হাযেরা (‘আঃ) ফিরে আসলেন, তিনি মশক হতে পানি পান করতেন আর শিশুর জন্য দুধ বাড়ত। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল। তখন ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা বললেন, আমি যদি গিয়ে এদিক সেদিকে তাকাতাম! তাহলে হয়ত কোন মানুষ দেখতে পেতাম। রাবী বলেন, অতঃপর ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা গেলেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠলেন আর এদিকে ওদিকে তাকালেন এবং কাউকে দেখেন কিনা এজন্য বিশেষভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকেও দেখতে পেলেন না। তখন দ্রুত বেগে মারওয়া পাহাড়ে এসে গেলেন এবং এভাবে তিনি কয়েক চক্কর দিলেন। পুনরায় তিনি বললেন, যদি গিয়ে দেখতাম যে, শিশুটি কি করছে। অতঃপত তিনি গেলেন এবং দেখতে পেলেন যে, সে তার অবস্থায়ই আছে। সে যেন মরণাপন্ন হয়ে গেছে। এতে তাঁর মন স্বস্তি পাচ্ছিল না। তখন তিনি বললেন, যদি সেখানে যেতাম এবং এদিক সেদিকে তাকিয়ে দেখতাম। সম্ভবতঃ কাউকে দেখতে পেতাম। অতঃপর তিনি গেলেন, সাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং এদিকে সেদিক দেখলেন এবং গভীরভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। এমনকি তিনি সাতটি চক্কর পূর্ণ করলেন। তখন তিনি বললেন, যদি যেতাম তখন দেখতাম যে সে কী করছে। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনতে পেলেন। অতঃপর তিনি মনে মনে বললেন, যদি আপনার কোন সাহায্য করার থাকে তবে আমাকে সাহায্য করুন। হঠাৎ তিনি জিবরাঈল (‘আঃ)-কে দেখতে পেলেন। রাবী বলেন, তখন তিনি (জিবরাঈল) তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এরূপ করলেন অর্থাৎ গোড়ালি দ্বারা জমিনের উপর আঘাত করলেন। রাবী বলেন, তখনই পানি বেরিয়ে আসল। এ দেখে ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা অস্থির হয়ে গেলেন এবং গর্ত খুঁড়তে লাগলেন। রাবী বলেন, এ প্রসঙ্গে আবুল কাসিম [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেছেন, হাযেরা (‘আঃ) যদি একে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিতেন তাহলে পানি বিস্তৃত হয়ে যেত। রাবী বলেন, তখন হাযেরা (‘আঃ) পানি পান করতে লাগলেন এবং তাঁর সন্তানের জন্য তাঁর দুধ বাড়তে থাকে। রাবী বলেন, অতঃপর জুরহুম গোত্রের একদল উপত্যকার নীচু ভূমি দিয়ে অতিক্রম করছিল। হঠাৎ তারা দেখল কিছু পাখি উড়ছে। তারা যেন তা বিশ্বাসই করতে পারছিল না আর তারা বলতে লাগল এসব পাখি তো পানি ব্যতীত কোথাও থাকতে পারে না। তখন তারা সেখানে তাদের একজন দূত পাঠাল। সে সেখানে গিয়ে দেখল, সেখানে পানি মাওজুদ আছে। তখন সে তার দলের লোকদের নিকট ফিরে আসল এবং তাদেরকে সংবাদ দিল। অতঃপর তারা হাযেরা (‘আঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে ইসমাঈলের মা। আপনি কি আমাদেরকে আপনার নিকট থাকা অথবা (রাবী বলেছেন), আপনার নিকট বসবাস করার অনুমতি দিবেন? [হাযেরা (‘আঃ) তাদেরকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এভাবে অনেক দিন কেটে গেল]অতঃপর তাঁর ছেলে বয়ঃপ্রাপ্ত হল। তখন তিনি (ইসমাঈল) জুরহুম গোত্রেরই একটি মেয়েকে বিয়ে করলেন। রাবী বলেন, পুনরায় ইবরাহীম (‘আঃ)-এর মনে জাগল তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে (সারাহ) বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা সম্পর্কে খবর নিতে চাই। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল (‘আঃ)-এর স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, সে যখন আসবে তখন তুমি তাকে আমার এ নির্দেশের কথা বলবে, “তুমি তোমার ঘরের চৌকাঠখানা বদলিয়ে ফেলবে।ইসমাঈল (‘আঃ) যখন আসলেন, তখন স্ত্রী তাঁকে খবরটি জানালেন, তখন তিনি স্ত্রীকে বললেন, তুমি সেই চৌকাঠ। অতএব তুমি তোমার পিতামাতার নিকট চলে যাও। রাবী বলেন, অতঃপর ইবরাহীম (‘আঃ)-এর আবার মনে পড়ল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারাহ)-কে বললেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিবারের খবর নিতে চাই। অতঃপর তিনি সেখানে আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল (‘আঃ)-এর স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। পুত্রবধু তাঁকে বললেন, আপনি কি আমাদের এখানে অবস্থান করবেন না? কিছু পানাহার করবেন না? তখন ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, তোমাদের খাদ্য ও পানীয় কি? স্ত্রী বলল, আমাদের খাদ্য হল গোশ্‌ত আর পানীয় হল পানি। তখন ইবরাহীম (‘আঃ) দুআ করলেন, “হে আল্লাহ! তাদের খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের মধ্যে বরকত দিনরাবী বলেন, আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ)-এর দুআর কারণেই বরকত হয়েছে। রাবী বলেন, আবার কিছুদিন পর ইবরাহীম (আঃ)-এর মনে তাঁর নির্বাসিত পরিজনের কথা জাগল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারাহ)-কে বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের খবর নিতে চাই। অতঃপর তিনি এলেন এবং ইসমাঈলের দেখা পেলেন, তিনি যমযম কূপের পিছনে বসে তাঁর একটি তীর মেরামত করছেন। তখন ইবরাহীম (‘আঃ) ডেকে বললেন, হে ইসমাঈল! তোমার রব তাঁর জন্য একখানা ঘর নির্মাণ করতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল (‘আঃ) বললেন, আপনার রবের নির্দেশ পালন করুন। ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, তিনি আমাকে এও নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি যেন আমাকে এ বিষয়ে সহায়তা কর। ইসমাঈল (‘আঃ) বললেন, তাহলে আমি তা করব অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছিলেন। অতঃপর উভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ইবরাহীম (‘আঃ) ইমারত বানাতে লাগলেন আর ইসমাঈল (‘আঃ) তাঁকে পাথর এনে দিতে লাগলেন আর তাঁরা উভয়ে এ দুআ করছিলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজ কবুল করুন। আপনি তো সব কিছু শুনেন এবং জানেন। রাবী বলেন, এরই মধ্যে প্রাচীর উঁচু হয়ে গেল আর বৃদ্ধ ইবরাহীম (‘আঃ) এতটা উঠতে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন তিনি (মাকামে ইবরাহীমের) পাথরের উপর দাঁড়ালেন। ইসমাঈল তাঁকে পাথর এগিয়ে দিতে লাগলেন আর উভয়ে এ দুআ পড়তে লাগলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজটুকু কবূল করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন–(আল-বাকারাহঃ ১২৭)

http://ihadis.com/books/bukhari/hadis/3365

হাদিসের বর্ণনা অনুসারে ইশ্মায়েল যখন প্রথম বিয়ে করেন এবং সংসার জীবন যাপন করেন তখন আব্রাহাম তাকে দেখার জন্য আসেন কিন্তু তিনি তার দেখান পান না, অতঃপর তিনি আরো কিছু দিন পরে ইশ্মায়েলকে দেখতে আসেন যখন ইশ্মায়েল দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন কিন্তু সেই সময়েও অব্রাহামের সাথে ইশ্মায়েলের দেখা হয় না বরং তারও অনেক দিন পরে তিনি প্রথম বারের মত[অর্থাৎ তাকে বের করে দেবার পরে]  ইশ্মায়েলের দেখা পান এবং তার পরে তিনি কাবা ঘরের নির্মান করেন। কিন্তু কুরআন অনুসারে ইব্রাহীম তার দুই ছেলের মধ্যে যে ছেলে কে কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বয়স অনেক কম হওয়ার কথা।  সূরা৩৭:১০২; অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন।

কুরআনের বর্ণনা অনুসারে সেই ছেলে তখন কেবল হাঁটতে শিখেছিল, এবং সেই সন্তান কেই তিনি স্বপ্নে যবেহ করছিলেন আর হাদিস অনুসারে অব্রাহাম ইশ্মায়েলকে বের করে দেবার পর তার সাথে প্রথম দেখা হয় ইশ্মায়েলের ২য় বিবাহের পরে তাই অব্রাহাম যাকে স্বপ্নে যবেহ করছিলেন তিনি ইশ্মায়েল নন বরং তিনি ছিলেন ইসহাক।  

এছাড়াও আরেকটি হাদিসে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে যে ইসহাক কেই কুরবানী দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়ে ছিলঃ

Muhammad b. al-Muntashir told of a man who vowed to sacrifice himself if God rescued him from his enemy. He consulted Ibn ‘Abbas who told him to consult Masruq, and when he consulted him he replied, “Do not sacrifice yourself, for if you are a believer, you will kill a believing soul, and if you are an infidel you will hasten to hell; but buy a ram and sacrifice it for the poor, for Isaac was better than you and he was ransomed with a ram.”* He told Ibn ‘Abbas and he replied, “This is the decision I wanted to give you.” Razin transmitted it. *This agrees with the story in the Old Testament which says that Abraham was preparing to sacrifice Isaac, whereas the usual Muslim version is that it was Ishmael.

https://sunnah.com/mishkat:3445

৩৪৪৫-[২০] মুহাম্মাদ ইবনুল মুনতাশির (রহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি মানৎ করল, আল্লাহ তাআলা যদি তাকে শত্রুর মুকাবেলায় রক্ষা করেন, তাহলে সে নিজেকে কুরবানী করে দেবে এতদসম্পর্কে ইবনুআব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, মাসরূক (রহঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস কর সে ব্যক্তি মাসরূক (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তুমি নিজেকে কুরবানী করো না কেননা তুমি যদি মুমিন হও, তাহলে তুমি যেন এক মুমিনকে হত্যা করলে আর যদি কাফির হও, তাহলে জাহান্নামে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলে বরং তুমি একটি দুম্বা ক্রয় করে মিসকীনদের জন্য যাবাহ করে দাও কেননা, ইসহাক (আঃ) তোমার চেয়ে উত্তম মানব ছিলেন অথচ তাঁর বিনিময়ে একটি দুম্বা কুরবানী করাই যথেষ্ট ছিল পরে ইবনুআব্বাস -কে জানানো হলে তিনি বললেন, আমিও অনুরূপ ফতোয়া দিতে চেয়েছিলাম 

 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

 

বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মাদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-১৫: কসম ও মানৎ (كتاب الأيمان والنذور)

 

ইংরেজী হাদিসের সাথে বাংলা হাদিসের কিছু অনুবাদে তারতম্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। ইংরেজী হাদিস এই উক্তিটি দেওয়া হয়েছে যা বাংলা অনুবাদে লেখাই হয় নিঃ

 

Razin transmitted it. *This agrees with the story in the Old Testament which says that Abraham was preparing to sacrifice Isaac

 

এখানে বলা হয়েছে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের সাথে এই হাদিসটির মিল রয়েছে কারন এই দুটিতেই বলা হয়েছে ইসহাক কেই অব্রাহাম কুরাবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই এ থেকে ১০০% প্রামাণিত হয় অব্রাহাম ইসহাকেই কুরাবানী দেবার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন।

কোন হাদিসে উল্লেখ করা হয় নি যে অব্রাহাম ইশ্মায়েলকে কুরবাণী দিতে নয়ে গিয়েছিলেন, তবে এমন শিক্ষা তারা কোথা হতে উদ্ভব করল? ইশ্মায়েল সংক্রান্ত যে হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে তাতে কোন জায়াগায় লেখা নাই যে অব্রাহাম তাকে বের করে দেবার পরে ফিরে এসছিলেন এবং তাকে আরব দেশে কুরবানীর জন্য প্রস্তুত করছিলেন, এটা তাদের মিথ্যা অনুমান ব্যতীত কিছুই নয়।

 

 

 

 

উপসংহার

অব্রাহাম ইসহাককে কুরাবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন যা ঐতিহাসিক দলিল দ্বারা প্রামানিত, যা নিয়ে সন্দেহের কোন কারন নেই। কুরাআনে ইব্রাহীম তার প্রিয় ছোট ছেলের কথা উল্লেখ করেছিলেন যাকে তিনি স্বপ্নে কুরাবানী করছিলেন, হযরত মুহাম্মদের অধিকাংশ সাহাবিরাও বিশ্বাস করতেন ইসহাককেই কুরবানী দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এছাড়াও প্রাচীন তাফসীরগন এবং হাদিস দ্বারা উক্ত বিষয়ে প্রামানিত হয়েছে।  




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: