ঈশ্বরের বিধান লংঘনের শাস্তি কি আমরা দিতে পারি?
>>>দানিয়েল স্টিফেন
উত্তরঃ আমাদের অনেকের মাঝেই এই প্রশ্ন আসে, মোশির ব্যবস্থায় পাপের অনেক শাস্তি বিধানের জন্য মহান ঈশ্বর ইয়াওয়ে আদেশ দিয়েছেন। প্রভু যীশুর বিধানে এই শাস্তি প্রয়োগের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
এই প্রশ্নের উত্তর আমরা যীশুর জীবন, কর্ম, শিক্ষায় পুরাতন নিয়মের আইন তিনি কিভাবে প্রয়োগ করেছেন তা থেকে জানতে পারব।
এখানে মোটা দাগে দুরকম পাপের বিষয়ে আমরা জানার চেষ্টা করব-
১) কারো বিরূদ্ধে ব্যক্তিগত পাপ যা ঐ ব্যক্তিকে সম্পদ, জীবন, দৈহিক, মর্যাদাগত ক্ষতি সাধন করে।
২) ঈশ্বরের বিধান লংঘনজনিত পাপ যা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কিত।
আমরা এখন এই দুটি প্রেক্ষাপটে আলোচনার চেষ্টা করি--
১) কারো বিরূদ্ধে ব্যক্তিগত পাপ যা ঐ ব্যক্তিকে সম্পদ, জীবন, দৈহিক, মর্যাদাগত ক্ষতি সাধন করেঃ এরূপ পাপের ক্ষেত্রে ক্ষমা করাই হচ্ছে আদর্শ । এক্ষেত্রে সাধারণ নীতি হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে অন্যায়কারী ক্ষমা চাইবে এবং তিনি তাকে ক্ষমা করবেন।
এর রেফারেন্স হিসাবে আমরা নিন্মে বর্ণনা করা প্রভু যীশুর উক্তিগুলোর দিকে নজর দিতে পারি----
সুতরাং, তুমি যখন তোমার নৈবেদ্য বেদিতে উত্সর্গ করতে যাচ্ছ, সেই সময় যদি তোমার মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কোনো অভিযোগ আছে, তোমার নৈবেদ্য সেই বেদির সামনে রেখে চলে যাও। প্রথমে গিয়ে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে পুনর্মিলিত হও, তারপর এসে তোমার নৈবেদ্য উত্সর্গ করো।
“তোমার যে বিপক্ষ তোমাকে আদালতে নিয়ে যায়, তার সঙ্গে দ্রুত বিরোধের মীমাংসা কোরো। পথে থাকতে থাকতেই তার সঙ্গে এ কাজ কোরো, নইলে সে হয়তো তোমাকে বিচারকের হাতে সমর্পণ করবে, বিচারক তোমাকে পেয়াদার হাতে তুলে দেবেন ও তোমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে।
মথি 5:23-25
কিন্তু আমরা যদি ক্ষমা চাওয়ার আগেই অন্যকে ক্ষমা করি তাহলে সেটি অধিকতর মহত্ত্বর। কারণ তখন পিতা ঈশ্বর আমাদেরও অজানা ও অন্যের বিরূদ্ধে পাপসমূহ ক্ষমা করেন। প্রভুর প্রার্থনাতে যীশু এটা শিখিয়েছেন--
আমরা যেমন আমাদের বিরুদ্ধে অপরাধীদের ক্ষমা করেছি, তেমন তুমিও আমাদের অপরাধসকল ক্ষমা করো।
মথি 6:12
যীশু পরে এটি আরো পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন-
কারণ তোমরা যদি লোকের অপরাধ ক্ষমা করো, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতাও তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। কিন্তু তোমরা যদি লোকদিগের অপরাধ ক্ষমা না করো, তোমাদের পিতাও তোমাদের অপরাধসকল ক্ষমা করবেন না।
মথি 6:14-15
প্রভু যীশু নিজে ক্রুশে থাকা অবস্থায়ও তাঁর অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য পিতার নিকট অনুরোধ করেছিলেন যদিও অপরাধীরা ক্ষমা চায়নি--
যীশু বললেন, “পিতা, এদের ক্ষমা করো, কারণ এরা জানে না, এরা কী করছে।” আর গুটিকাপাত করে তারা তাঁর পোশাক ভাগ করে নিল।
লূক 23:34
২) ঈশ্বরের বিধান লংঘনজনিত পাপ যা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কিতঃ যীশু স্বয়ং বলেছেন তিনি জগতকে বিচার বা শাস্তি দিতে আসেননি বরং উদ্ধার করতে এসেছিলেন--
কারণ জগতের বিচার করতে ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে জগতে পাঠাননি, কিন্তু তাঁর মাধ্যমে জগৎকে উদ্ধার করতে পাঠিয়েছিলেন।
যোহন 3:17
প্রভু যীশুর অনুসারী হিসাবে যীশুও আমাদের বিচার করতে নিষেধ করেছেন-
তোমরা অপরকে বিচার কোরো না, নইলে তোমাদেরও বিচার করা হবে। কারণ যেভাবে তোমরা অপরের বিচার করবে, সেভাবেই তোমাদের বিচার করা হবে এবং যে মানদণ্ডে তোমরা পরিমাপ করবে, সেই একই মানদণ্ডে তোমাদেরও পরিমাপ করা হবে।
মথি 7:1-2
ব্যাভিচারী নারীকে যীশু বিচার করেননি বরং পাপ থেকে মন ফেরানোর আদেশ দিয়েছিলেন যদিও তিনি জানতেন যে সেই নারী দোষী ছিল। কারণ তিনি বিচার ও শাস্তি দিতে নয় বরং মানুষকে উদ্ধারের জন্য এসেছিলেন---
সে বলল, “একজনও নয়, প্রভু।”
যীশু বললেন, “তাহলে আমিও তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করি না। এখন যাও, আর কখনও পাপ কোরো না।”
যোহন 8:11
তেমনি উপস্থিত জনতাকেও তিনি ঐ নারীকে শাস্তি দেয়ার আগে নিজেদের বিচার করে দেখতে বলেছিলেন যে, তারা নিজেরাই পাপী কি না----
তাঁরা যখন তাঁকে বারবার প্রশ্ন করছিলেন, তিনি সোজা হয়ে তাঁদের বললেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নিষ্পাপ থাকে, তাহলে প্রথমে সেই তাকে পাথর মারুক,”
যোহন 8:7
শমরীয় নারীও বিবাহ বহির্ভুত ব্যাভিচারে লিপ্ত ছিল,
প্রকৃত সত্য হল, তোমার পাঁচজন স্বামী ছিল আর এখন যে পুরুষটি তোমার সঙ্গে আছে, সে তোমার স্বামী নয়। তুমি যা বলেছ তা সম্পূর্ণ সত্য।
যোহন 4:18
কিন্তু তিনি তাকে দোষী করে বিচার করেননি, বরং পরিত্রাণের পথে আহবান করেছেন---
কিন্তু আমি যে জল দান করি, তা যে পান করবে, সে কোনোদিনই তৃষ্ণার্ত হবে না। প্রকৃতপক্ষে, আমার দেওয়া জল তার অন্তরে এক প্রস্রবণে পরিণত হবে, যা অনন্ত জীবন পর্যন্ত উথলে উঠবে।
যোহন 4:14
উপরের ব্যাভিচারের ঘটনা একটা বড় পাপের উদাহারণ যা দশ আজ্ঞার লংঘন। এছাড়াও ঈশ্বরনিন্দা, মা বাবাকে অসন্মান, বিশ্রামবার লংঘন অন্যান্য অনেক পাপও পুরাতন বিধান অনুযায়ী মৃত্যুদন্ডের উপযোগী পাপ। প্রভু যীশু ঈশ্বরপুত্র হয়েও ঈশ্বরের বিধান মতে তাদের দোষী করেননি, শাস্তিও দেননি, কারণ তিনি শাস্তি দিতে নয়, বিচার করতে নয়, পরিত্রাণের জন্য এসেছিলেন। তাহলে যীশুর অনুসারী হয়ে বিধান লংঘনের শাস্তি আমরা কি দিতে পারি? অবশ্যই নয়। আমাদের কর্তব্য তাদের মন ফেরানোর শিক্ষা দেয়া। এরপরও তারা মন না ফেরালে তাদের বিচারের জন্য ঈশ্বর আছেন। এটাই ঈশ্বর চান--
বিচার কোরো না, তাহলে তোমরাও বিচারিত হবে না। কাউকে দোষী কোরো না, তাহলে তোমাদেরও দোষী সাব্যস্ত করা হবে না। ক্ষমা কোরো, তাহলে তোমাদেরও ক্ষমা করা হবে।
লূক 6:37
ঈশ্বর আমাদের মাঝে দয়া চান---
‘আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়,’ এই বচনের মর্ম যদি আপনারা বুঝতেন, তাহলে নির্দোষীদের আপনারা দোষী সাব্যস্ত করতেন না।
মথি 12:7
বিঃ দ্রঃ-
দেশের আইনে বিচারঃ দেশের আইন লংঘন করে যদি কেউ অপরাধী হয় তাহলে তার বিচার দেশের আইনে হবে। যীশু বলেছেন---
তারা উত্তর দিল, “কৈসরের।”
তখন তিনি তাদের বললেন, “কৈসরের যা দেওয়ার তা কৈসরকে দাও, এবং যা ঈশ্বরের, তা ঈশ্বরকে দাও।”
মথি 22:21
এর মাধ্যমে যীশু আমাদের দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন এবং দেশীয় আইন লংঘনের শাস্তি যে কেউ প্রাপ্য।
0 coment rios: