Friday, September 2, 2022

লোটকে কি পাপী হিসাবে দেখানো হয়েছে?



লোটকে কি পাপী হিসাবে দেখানো হয়েছে?

মুসলিম দা'য়ীদের অভিযোগঃ
বাইবেলে বর্ণিত আছে, লূত (আ) নিজের মেয়ের সাথে যৌনাচারে (অজাচার) লিপ্ত হয়েছিলেন-
“তারা তাদের পিতাকে আঙ্গুর-রস খাইয়ে মাতাল করলো। তারপর বড় মেয়েটি তার পিতার সঙ্গে শুতে গেলো। কিন্তু কখন সে শুলো আর কখনই বা উঠে গেল লূত তা টেরও পেলেন না। পরের দিন বড়টি ছোটটিকে বলল, ‘দেখ, কাল রাতে আমি বাবার সংগে শুয়েছিলাম। চল! আজ রাতেও তাঁকে তেমনি করে মাতাল করি। তারপর তুমি গিয়ে তাঁর সঙ্গে শোবে। তাহলে বাবার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বংশ রক্ষা করতে পারব।
এইভাবে তারা সেই রাতেও তাদের পিতাকে আঙ্গুর-রস খাইয়ে মাতাল করলো এবং ছোট মেয়েটি বাবার সঙ্গে শুতে গেল। মেয়েটি কখন যে তাঁর কাছে শুলো এবং কখনই বা উঠে গেল তিনি তা টেরও পেলেন না। এইভাবে লুতের দুই মেয়েই তাদের পিতার দ্বারা গর্ভবতী হলো। পরে বড় মেয়েটির একটি ছেলে হলে সে তার নাম রাখল মোয়াব (যার মানে ‘বাবার কাছ থেকে’)।” [Holy Bible, Genesis (আদিপুস্তক) 19:33-37]

মুসলিম দা'য়ীদের দাবী, যে লুতকে আল্লাহ অশ্লীলতায় লিপ্ত জাতি থেকে উদ্ধার করেছিলেন তিনি কিভাবে এমন অশ্লীল কাজ করতে পারেন? এর দ্বারা বাইবেলে ইচ্ছাকৃতভাবে নবীদের পাপী হিসাবে দেখানো হয়েছে।

জবাবঃ মুসলিম প্রচারকরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে এটা মানেন যে, নবীরা নিস্পাপ। তারা ভুল করতে পারেন কিন্তু পাপ করতে পারেন না। লোট এর বিষয়ে তাদের এই অভিযোগের জবাব নীচে ধারাবাহিকভাবে দেয়া হল।

প্রথমত ইসলাম মতে লোট নবী হতে পারেন কিন্তু বাইবেল মতে তিনি একজন সৎ লোক কিন্তু নবী নন। কারণ নবী হওয়ার ক্ষেত্রে বাইবেলের মানদন্ড কয়েকটি। ১) বাইবেলে তাঁকে নবী হিসাবে উল্লেখ করতে হবে। ২) তাঁর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য প্রচারিত হতে হবে। ৩) তিনি ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় কোন বই লিখবেন। এর কোন একটি বা একাধিক বৈশিষ্ট্য কারো মাঝে বিদ্যমান থাকলেই তিনি বাইবেলের মানদন্ডে নবী বলে গণ্য হবেন। কিন্তু লোট এইসবের একটি বৈশিষ্ট্যও ধারণ করেননি যে কারণে তিনি নবী নন।

দ্বিতীয়ত লোট নিজে থেকে এই অজাচার করেননি।  এর জন্য পূর্ণত দায়ী তাঁর দুই কন্যা। 

তৃতীয়ত অনেক মুসলিম এটা দাবী করেন যে, লোটকে মদ্যপান করানো হয়েছে, এটা তিনি না চাইলে সম্ভব হত না।  এর মানে দাঁড়ায় তিনি মদ্যপানের মাধ্যমে পাপী হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছেন যা একজন নবীর জন্য বেমানান।  কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে নিষিদ্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত মদ ইসলামে হালাল ছিল। নীচের হাদিসটি দেখি-
🔺
‘আবদুল ‘আযীয ইবনু সুহায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মানুষেরা আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল ‘ফাযীখ’ (খেজুরের তৈরি মদ) সম্পর্কে। তিনি বললেন, তোমরা যাকে ‘ফাযীখ’ বলে সম্বোধন কর, তোমাদের এ ফাযীখ ব্যতীত আমাদের আর কোন মদ-ই ছিল না। আমি আমাদের ঘরে আবূ তাল্‌হা, আবূ আইয়ূব (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আরো কতিপয় সাহাবীকে মদপান করাতে মত্ত ছিলাম। এমন সময় এক লোক এসে বলল, তোমাদের নিকট কি কোন সংবাদ এসেছে? আমরা বললাম, না। সে বলল, মদ তো সম্পূর্ণরুপে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি (আবূ তালহা) বললেন, হে আনাস! এ মদের কলসগুলো ঢেলে দাও। তিনি বলেন,তারা উক্ত ব্যক্তির সংবাদের পর কোন খোঁজখবরও করেননি। এ সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসাবাদও করেননি। (ই.ফা. ৪৯৬৮ ই.সে. ৪৯৭৬)
 

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫০২৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস🔺

ইসলামের নবীর সময়েই যদি মদ হালাল হয়ে থাকে তাহলে পূর্ববর্তীদের এজন্য দোষারোপ করা স্ববিরোধীতার নামান্তর।

চতুর্থত লোট এর সময়ে মদ খেয়ে  মাতাল না হওয়ার নির্দেশ ঈশ্বর দেননি কারণ তখন পূর্ণাঙ্গ কোন বিধান ছিল না, বিধান এসেছে অনেক পরে মোশির মাধ্যমে যেখানে মাতাল হওয়াকে দূষণীয়রূপে  দেখানো হয়েছে(দ্বিতীয় বিবরণ ২১ঃ১৮-২১)।[1] আদমের সময় ভাইবোনের মাঝে বিয়ে প্রচলিত থাকলেও মোশির তোরাহ-তে সেটা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল(লেবীয় ১৮ঃ৯)। [2] যারা বাইবেল সম্পর্কে এই বিষয়ে খুঁত ধরতে চান সেই মুসলিম ভাইদের বলতে হয় কুরআনেও প্রথমদিকে মদকে বৈধ করা হয়েছিল পরে [3] অবৈধ করা হয়েছে[4]। সুতরাং আল্লাহই যা একসময় বৈধ করেছিলেন তা নিয়ে উপহাস বা সমালোচনা করার অর্থ আল্লাহর বিচারবোধকেই প্রশ্ন করা। আবার আমরা দেখি যে মদ নিয়ে মুসলিম ভাইদের এই অভিযোগ তাদেরই আবার বেহেশতে মদ দ্বারা আপ্যায়িত করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে[5]। প্রশ্ন থেকে যায় পৃথিবীতে যা একসময় বৈধ করা হয়েছে তাকে আবার শয়তানের কাজ বলে চিহ্নিত করার পর আবার কেন বেহেস্তে এই বস্তু দ্বারাই আপ্যায়িত করা হবে?

পঞ্চমত বাইবেলের এই বর্ণনায়, লোটের এই কাজগুলো ঈশ্বর করতে বলেননি বা ঈশ্বরের অনুমোদনে হয়নি। বাইবেল এখানে শুধু ঘটনা বর্ণনা করেছে।

ষষ্ঠত মুসলিম দা'য়ীদের এইসব খড়ের গাদায় খুঁজে বাইবেলের প্রতি করা অভিযোগগুলো নিজেদের প্রতিই ব্যাকফায়ার করে যখন আমরা সুরা নিসা(৪ নং সুরা)-এর ২৩ নং পর্যবেক্ষণ করি। এখানে স্ত্রীর সাথে সহবাস না করলে সেই স্ত্রীর আগের পক্ষের মেয়েকেও বিয়ে করা জায়েজ করা হয়েছে। এমনকি সহবাস হওয়ার আগে তালাক দেয়া স্ত্রীর মা-কেও বিয়ে করা ইসলামে জায়েজ। এই আয়াতের তাফসীরেও (ইবনে কাসিরের তাফসির) 
বিষয়টি স্পষ্ট। এমনকি ইমাম সাফীঈ এর মতানুযায়ী ব্যাভিচার দ্বারা জন্মানো মেয়েকেও বিয়ে করে সহবাস করা জায়েজ। 

An-Nisa' ৪:২৩
  
Bengali - Bayaan Foundation

তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র করা(তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


Bengali - Tafsir Ibn Kathir

বংশজাত, দুগ্ধ পান সম্বন্ধীয় এবং বৈবাহিক সম্বন্ধের কারণে যেসব স্ত্রীলোক পুরুষদের জন্যে হারাম এ আয়াতে তাদেরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সাত প্রকারের নারী বংশের কারণে এবং সাত প্রকারের নারী বৈবাহিক সম্বন্ধের কারণে পুরুষদের উপর হারাম করা হয়েছে।

অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন। ভগ্নি কন্যাগণ পর্যন্ত তো হচ্ছে বংশজাত আত্মীয়। জমহুর উলামা এ আয়াত দ্বারা দলীল নিয়েছেন যে, ব্যভিচার দ্বারা যে মেয়ে জন্মগ্রহণ করবে সে মেয়েটিও ঐ ব্যভিচারীর উপর হারাম হবে। কেননা, সেও মেয়ে, অতএব হারাম। ইমাম আবু হানীফা (রঃ), ইমাম মালিক (রঃ) এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-এর এটাই মাযহাব। ইমাম শাফিঈ (রঃ) হতে এর বৈধতার কথা বর্ণিত আছে। কেননা, শরীয়ত হিসেবে এটা কন্যা নয়। সুতরাং উত্তরাধিকারের ব্যাপারে যেমন মেয়ের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সে উত্তরাধিকার পায় না, তদ্রুপই আয়াতের মধ্য যে কয়জনকে হারাম করা হয়েছে তাদের অন্তর্ভুক্ত সে নয়।

এরপর বলা হচ্ছে-‘তোমাদের আপন মাতা যেমন তোমাদের উপর হারাম, তদ্রপ তোমাদের দুধ-মাতাও তোমাদের জন্য হারাম।' সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে রয়েছেঃ ‘জন্ম যাকে হারাম করে স্তন্যপানও তাকে হারাম করে।' সহীহ মুসলিমের মধ্যে রয়েছে যে, বংশের কারণে যে হারাম হয়, দুগ্ধ পানের কারণেও সে হারাম হয়।

ধর্মশাস্ত্রবিদগণ এতে চারটি অবস্থা এবং কেউ কেউ ছয়টি অবস্থা নির্দিষ্ট করেছেন যা আহকামের শাখার গ্রন্থরাজির মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত কথা এই যে, এর মধ্যে কিছুই নির্দিষ্ট নেই। কেননা, ওরই মত কতগুলো অবস্থা বংশের মধ্যেও পাওয়া যায় এবং ঐ অবস্থাগুলোর মধ্যে কতগুলো শুধু বৈবাহিক সম্বন্ধের কারণেই হারাম হয়ে থাকে। সুতরাং হাদীসের উপর কোন প্রতিবাদ উঠতে পারে না। 

এখন কয়বার দুধপান করলে অবৈধতা সাব্যস্ত হয় সে ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। দুধপান করামাত্রই অবৈধতা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। ইমাম মালিক (রঃ) এ কথাই বলেন। হযরত ইবনে উমার (রঃ), সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ), উরওয়া (রঃ), ইবনে যুবাইর (রঃ) এবং যুহরী (রঃ)-এর উক্তিও এটাই। দলীল এই যে, স্তন্য পান এখানে সাধারণ।

কেহ কেহ বলেন যে, তিনবার পান করলে অবৈধতা সাব্যস্ত হবে। যেমন সহীহ মুসলিমে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “একবার চোষণ করা বা দু’বার পান করা হারাম করেনা।' এ হাদীসটি বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত আছে। ইমাম আহমাদ (রঃ), ইসহাক ইবন রাহওয়াইহ (রঃ), আবু উবাইদাহ (রঃ) এবং আবু সাউরও এ কথাই বলেন। আলী (রাঃ), আয়িশা (রাঃ), উম্মে আফযাল (রাঃ), ইবন যুবাইর (রঃ), সুলাইমান ইবন ইয়াসার (রঃ) এবং সাঈদ ইবন যুবাইর (রঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। তাদের দলীল হচ্ছে সহীহ মুসলিমের উপরোক্ত হাদীসটি।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, পূর্বে কুরআন পাকের মধ্যে দশবার দুধ পানের উপর অবৈধতার হুকুম অবতীর্ণ হয়েছিল। পরে ওটা রহিত হয়ে পাঁচবারের উপর রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মৃত্যু পর্যন্ত ওটা পঠিত হতে থাকে। দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে হযরত সালহা বিনতে সাহীল (রাঃ)-এর বর্ণনাটি, তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন হযরত আবু হুযাইফার (রাঃ) গোলাম হযরত সালিম (রাঃ)-কে পাঁচবার দুধপান করিয়ে দেন।

কোন স্ত্রীলোক তার নিকট কোন পুরুষ লোকের যাতায়াতকে পছন্দ করলে এ হাদীসটি অনুযায়ীই হযরত আয়েশা (রাঃ) তাকে এ নির্দেশই দিতেন। ইমাম শাফিঈ (রঃ) এবং তাঁর সহচরগণেরও ঘোষণা এটাই যে, পাঁচবার দুধ পানই নির্ভরযোগ্য। এটা স্মরণীয় বিষয় যে, জমহূরের মতে এ দুধপান শিশুর দুধ ছেড়ে দেয়ার পূর্বে অর্থাৎ দু'বছরের মধ্যেই হতে হবে। এর বিস্তারিত বিবরণ সূরা-ই-বাকারার حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ (২:২৩৩)-এর তাফসীরের মধ্যে দেয়া হয়েছে। আবার এ দুধ পানের ক্রিয়া দুধ মাতার স্বামী পর্যন্ত পৌছবে কি-না এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। 

জমহুর ও ইমাম চতুষ্টয়ের মতে এটা স্বামীর উপরও ক্রিয়াশীল হবে কিন্তু পূর্ববর্তী কোন কোন মনীষীর মতে এটা শুধু দুধ দাত্রী পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে, দুধ পিতা পর্যন্ত পৌছবে না। এর ব্যাখ্যার স্থান হচ্ছে আহকামের বড় বড় গ্রন্থগুলো, তাফসীর নয়। 

আল্লাহ পাক বলেনঃ শাশুড়ী হারাম।' যে মেয়ের সাথে বিয়ে হবে, এ বিবাহ বন্ধনের সাথে সাথেই তার মা হারাম হয়ে যাবে, মেয়ের স্বামী তার সঙ্গে সঙ্গম করুক আর নাই করুক। হ্যাঁ, তবে যে নারীকে বিয়ে করছে তার সাথে তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যা রয়েছে। এখন যদি বিয়ের পর ঐ স্ত্রীলোকটির স্বামী তার সাথে সঙ্গম করে থাকে তবে তার মেয়েটি তার স্বামীর জন্যে হারাম হয়ে যাবে।

আর যদি সঙ্গমের পূর্বেই স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয় তবে তার কন্যা তার স্বামীর জন্যে হারাম হবে না। এজন্যেই এ আয়াতে এ শর্ত লাগানো। হয়েছে। কোন কোন লোক هُنَّ সর্বনামটিকে শাশুড়ী ও প্রতিপালিতা মেয়ে উভয়ের দিকেই ফিরিয়েছেন। তাঁরা বলেন যে, শাশুড়ীও ঐ সময় হারাম হয় যখন তার মেয়ের সঙ্গে তার জামাতার নির্জনবাস হয়, নচেৎ হারাম হয় না। শুধু বিবাহ বন্ধন দ্বারা স্ত্রীর মাতাও হারাম হয় না এবং স্ত্রীর মেয়েও হারাম হয় না।

হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি কোন মেয়েকে বিয়ে করেছে, অতঃপর সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিয়েছে, সে ঐ মেয়ের মাতাকে বিয়ে করতে পারে, যেমন প্রতিপালিতা মেয়েকে এভাবেই তার মাতাকে তালাক দেয়ার পর বিয়ে করা যায়। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) হতেই আর একটি বর্ণনা রয়েছে যে, যখন ঐ স্ত্রী তার স্বামীর সাথে সঙ্গমের পূর্বেই মারা যাবে এবং এ স্বামী তার উত্তরাধিকার গ্রহণ করবে তখন তার মাতাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করা মাকরূহ হবে। হ্যা, তবে যদি সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিয়ে দেয় তবে ইচ্ছে করলে তার মাতাকে বিয়ে করতে পারে। (সংক্ষেপিত)




স্ত্রীর আগের স্বামীর ঔরসে জন্মানো মেয়েকে বিয়ের ব্যাপারে এই ফতোয়া থেকেও আমরা নিশ্চিত হতে পারি-

https://fiqh.islamonline.net/en/ruling-on-marrying-a-step-daughter/


মন্তব্যঃ সুতরাং উপরের আলোচনায় এটা পরিস্কার যে, লোট ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু নবী ছিলেন না। লোটের সময়ে মদ খেয়ে মাতাল হওয়ার বিরূদ্ধে ঈশ্বর থেকে কোন বিধান ছিল না এবং লোট নিজের ইচ্ছায় কোন পাপ করেননি বরং তাঁর মেয়েরাই এজন্য দায়ী ছিল। পুরো ঘটনা ঈশ্বরের আদেশে হয়নি বরং ইতিহাস বর্ণনার অংশ হিসাবে বাইবেলে এই ঘটনা মূলতঃ এসেছে বলে আমরা ধারণা করতে পারি।

সূত্রঃ
[1]যদি কারও ছেলে একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী হয় যে তার বাবা ও মায়ের অবাধ্য এবং তাদের কথা শোনে না যখন তারা তাকে শাসন করে, তার বাবা ও মা তাকে তাদের নগরের দ্বারে বয়স্ক নেতাদের কাছে ধরে নিয়ে যাবে। তারা নগরের বয়স্ক নেতাদের বলবে, “আমাদের এই ছেলে একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী। সে আমাদের অবাধ্য। সে আমাদের অর্থ উড়িয়ে দেয় এবং সে মাতাল।” তখন সেই নগরের সমস্ত পুরুষেরা তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে। তোমাদের মধ্য থেকে সেই মন্দতা শেষ করতে হবে। সমস্ত ইস্রায়েল সেই বিষয় শুনবে এবং ভয় পাবে।
দ্বিতীয় বিবরণ 21:18-21

[2] ‘তোমার ভগ্নীর সাথে অর্থাৎ তোমার বাবার কন্যার সাথে অথবা তোমার মার কন্যার সাথে যৌন সম্পর্ক রেখো না; হতে পারে সে একই গৃহে অথবা অন্যত্র জন্মেছে।
লেবীয় পুস্তক 18:9

[3]An-Nahl ১৬:৬৭

وَمِن ثَمَرَٰتِ ٱلنَّخِيلِ وَٱلْأَعْنَٰبِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًاۗ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَةً لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

Bengali - Bayaan Foundation

আর তোমরা খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর থেকে মাদক* ও উত্তম রিয্ক গ্রহণ কর। নিশ্চয় এতে এমন কওমের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা বুঝে।

* ইমাম তাবারী বলেন, আয়াতটি মাদক নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।

English - Sahih International

And from the fruits of the palm trees and grapevines you take intoxicant and good provision. Indeed in that is a sign for a people who reason.

Bengali - Mujibur Rahman

আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।

[4]Al-Ma'idah ৫:৯০

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِنَّمَا ٱلْخَمْرُ وَٱلْمَيْسِرُ وَٱلْأَنصَابُ وَٱلْأَزْلَٰمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ ٱلشَّيْطَٰنِ فَٱجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

Bengali - Bayaan Foundation

হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।

English - Sahih International

O you who have believed, indeed, intoxicants, gambling, [sacrificing on] stone alters [to other than Allah], and divining arrows are but defilement from the work of Satan, so avoid it that you may be successful.

Bengali - Mujibur Rahman

হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শাইতানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়।

[5]Muhammad ৪৭:১৫

مَّثَلُ ٱلْجَنَّةِ ٱلَّتِى وُعِدَ ٱلْمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنْهَٰرٌ مِّن مَّآءٍ غَيْرِ ءَاسِنٍ وَأَنْهَٰرٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُۥ وَأَنْهَٰرٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنْهَٰرٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّىۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْۖ كَمَنْ هُوَ خَٰلِدٌ فِى ٱلنَّارِ وَسُقُوا۟ مَآءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَآءَهُمْ

Bengali - Bayaan Foundation

মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হল, তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্নাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্নাধারা। তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?

English - Sahih International

Is the description of Paradise, which the righteous are promised, wherein are rivers of water unaltered, rivers of milk the taste of which never changes, rivers of wine delicious to those who drink, and rivers of purified honey, in which they will have from all [kinds of] fruits and forgiveness from their Lord... [Are its inhabitants] like those who abide eternally in the Fire and are given to drink scalding water that will sever their intestines?

Bengali - Mujibur Rahman

মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্তঃ ওতে আছে নির্মল পানির নহর; আছে দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। সেখানে তাদের জন্য থাকবে বিবিধ ফলসমূহ ও তাদের রবের ক্ষমা। মুত্তাকীরা কি তাদের ন্যায় যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়িভুড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিবে?

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: