Saturday, July 9, 2022

কুরবানী বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের পূজার উৎসর্গ খাওয়া যাবে কি না?



কুরবানী বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের পূজার উৎসর্গ খাওয়া যাবে কি না? 


মুসলমানদের ঈদ উল আযহা বা কুরবানীর ঈদ এর সময় অনেক মুসলমান ভাই খ্রিস্টানদের দাওয়াত করে। আবার অনেকে মাংস বাসায় পাঠিয়ে দেয়, আবার অনেক সময় ভিখারীরা এই মাংস কম দামে বাজারেও বিক্রি করে। অনেকের প্রশ্ন এই মাংস খাওয়া যাবে কি না? আমার এই লেখায় আমি বাইবেল ভিত্তিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করব। কোন মুসলমান ভাই-বোনকে কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। এখানে কয়েকটি মূল প্রশ্ন চলে আসে? সেগুলোর ভিত্তিতেই এই প্রশ্নের জবাবটি উঠে আসবে। 

 ১) আল্লাহ কি বিজাতীয় ঈশ্বর না আব্রাহামের ঈশ্বর?

 ২) বিজাতীয় ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা খাদ্যের ক্ষেত্রে বাইবেল কি বলে? 

 ৩) আমরা কি সমঝোতা করব না কি যা ঈশ্বরের পথ তাকে যে কোন মূল্যে আঁকড়ে ধরে চলব? 

 আসুন উপরোক্ত পয়েন্টগুলোতে আলোচনা করি--

 ১) আল্লাহ কি বিজাতীয় ঈশ্বর না আব্রাহামের ঈশ্বর? 

 যদিও মুসলমান ভাইরা দাবী করে থাকেন আল্লাহই আব্রাহামের ঈশ্বর, আমরা যদি বাইবেলের নবীদের পরম্পরা, তাদের বিশ্বাস ও তাদের কাছে ঈশ্বরের প্রকাশকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব আল্লাহ কখনোই আব্রাহামের ঈশ্বর ছিলেন না। এ ব্যাপারে আপনারা এই লেখাটি দেখতে পারেন- https://www.responsetoantichrist.com/2022/07/blog-post.html 

 ২) বিজাতীয় ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা খাদ্যের ক্ষেত্রে বাইবেল কি বলে?

 আসুন বাইবেলে বিজাতীয় ঈশ্বর যা প্রতিমা সমতুল্য তাদের কাছে উৎসর্গ করা খাদ্য বিষয়ে কি বলে দেখি-- 

পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর এরকম বলিদ্রব্য ভোজন থেকে আমাদের বিরত থাকার পরিস্কার আদেশ দিয়েছেন।

🔺সাবধান, সেই দেশে বসবাসকারী লোকদের সঙ্গে চুক্তি কোরো না; কারণ তারা যখন তাদের দেবতাদের কাছে বেশ্যাবৃত্তি করবে ও তাদের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করবে, তখন তারা তোমাকে আমন্ত্রণ জানাবে ও তুমি তাদের বলি দেওয়া প্রসাদ খেয়ে ফেলবে।
যাত্রা পুস্তক 34:15🔺

এখন আমরা এ বিষয়ে নতুন নিয়মের উদ্ধৃতিগুলো দেখব-

 🔺তবুও আমাদের জন্য আছেন একমাত্র সেই পিতা ঈশ্বর, যাঁর কাছ থেকে সবকিছুরই উদ্ভব হয়েছে এবং যাঁর উদ্দেশ্যে আমরা প্রাণধারণ করি; আবার প্রভুও আছেন একজনই, তিনি যীশু খ্রীষ্ট। তাঁরই মাধ্যমে সবকিছু উদ্ভূত হয়েছে এবং তাঁরই মাধ্যমে আমরা জীবনধারণ করি। কিন্তু প্রত্যেকেই একথা জানে না। কিছু সংখ্যক মানুষ প্রতিমাদের বিষয়ে এমনই অভ্যস্ত, তারা যখন এধরনের খাবার খায়, তারা মনে করে যে, সেই খাদ্য যেন কোনো প্রতিমার কাছে উত্সর্গ করা হয়েছে, আর যেহেতু তাদের বিবেক দুর্বল, তাই তা কলুষিত হয়। কিন্তু খাদ্যবস্তু আমাদের ঈশ্বরের নিকটে নিয়ে আসে না; আমরা যদি সেই খাদ্যগ্রহণ না করি, আমাদের ক্ষতি হয় না; আবার তা গ্রহণ করলেও কোনো লাভ হয় না। কিন্তু, তোমরা সতর্ক থেকো, তোমাদের এই অধিকার যেন কোনোভাবেই দুর্বল মানুষের কাছে বিঘ্নের কারণ না হয়। কারণ দুর্বল বিবেকবিশিষ্ট যদি কেউ তোমাকে, অর্থাৎ তোমার মতো জ্ঞানবিশিষ্ট মানুষকে, প্রতিমার মন্দিরে ভোজন করতে দেখে, তাহলে সে কি প্রতিমাদের কাছে উত্সর্গীকৃত বস্তু ভোজন করতে সাহস পাবে না? তাই, তোমার জ্ঞানের জন্য এই দুর্বল বিশ্বাসী, যার জন্য খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছেন, তাকে নষ্ট করা হয়। তোমরা যখন তোমাদের ভাইবোনের বিরুদ্ধে পাপ করো ও তাদের দুর্বল বিবেককে আঘাত করো, তোমরা খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে পাপ করো। এই কারণে, আমি যা ভোজন করি, তা যদি অপর বিশ্বাসীর পাপে পতনের কারণস্বরূপ হয়, আমি আর কখনও সেই খাদ্য ভোজন করব না, যেন আমি তার পতনের কারণ না হই। 1 করিন্থীয় 8:6-13🔺 

 উপরের ভার্সটি দেখিয়ে অনেকে এটা দাবী করতে চান যে, পৌল এখানে এধরণের খাদ্যের প্রতি বৈধতা দিয়েছেন। তবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখব, যাদের বিবেক দুর্বল, যারা ঈশ্বর ও যীশুকে চিনে না, তাদের সম্পর্কেই পৌল একথাগুলো বলেছেন। উপরন্তু এই ধরনের কাজ দুর্বল বিবেকের অধিকারীদের উৎসাহিত করবে যা খ্রীষ্টের বিরূদ্ধে পাপ। যদি তারপরও আমরা এ ব্যাপারে পৌলের মতামত বুঝতে অক্ষম হই তাহলে এই অধ্যায়ের দু অধ্যায় পরেই পৌল বিজাতীয় দেবতার কাছে উৎসর্গ করা খাদ্যের বিষয়ে কি বলছেন তা দেখব--- 

 🔺ইস্রায়েল জাতির বিষয়ে বিবেচনা করে দেখো। যারা বিভিন্ন বলির মাংস আহার করে, তারা কি যজ্ঞবেদিতে অংশগ্রহণকারী হয়ে ওঠে না? তাহলে আমি একথাই বোঝাতে চাইছি যে, প্রতিমার কাছে উত্সর্গীকৃত বলির কী-মূল্য? বা কোনও প্রতিমারই বা কী-মূল্য? কিছু নয়, কিন্তু পৌত্তলিকদের নিবেদিত সব বলিদান ভূতদের উদ্দেশে নিবেদিত হয়, ঈশ্বরের উদ্দেশে নয়। আর আমি চাই না, তোমরা ভূতদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী হও। তোমরা একইসঙ্গে প্রভুর পানপাত্র ও ভূতদের পানপাত্র থেকে অংশগ্রহণ করতে পারো না। 1 করিন্থীয় 10:18-21🔺

 তাহলে বিজাতীয় দেবতার কাছে উৎসর্গ করা খাদ্যের বিষয়ে পৌল এখানে একদম দ্বিধাহীনভাবে এরকম খাদ্য গ্রহণের বিরূদ্ধে তাঁর মতামত দিয়েছেন। অনেকে রোমীয় ১৪ঃ১-২৩ পদকে এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে চান, কিন্তু এই পদগুলো প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার বিষয়ে নয়। যীশুর শিষ্যরা পৌলকে এই কমিশন দিয়ে প্রচারে পাঠিয়েছিলেন - 

🔺“অতএব আমার বিচার এই, যে সমস্ত অইহুদি ঈশ্বরের অভিমুখ হচ্ছে, আমরা তাদের কষ্ট দেব না। বরং আমরা পত্র লিখে তাদের জানিয়ে দেব, যেন তারা প্রতিমাদের দ্বারা কলুষিত খাদ্যদ্রব্য, অবৈধ যৌন-সংসর্গ, শ্বাসরোধ করে মারা প্রাণীর মাংস ও রক্ত ভোজন করা থেকে বিরত থাকে। কারণ প্রাচীনকাল থেকে প্রতিটি নগরেই মোশির বিধান প্রচার করা হয় এবং প্রতি বিশ্রামবারে তা সমাজভবনগুলিতে পঠিত হয়।” প্রেরিত 15:19-21🔺 

 এখানে প্রতিমার কাছে উৎসর্গ খাবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যিশুখ্রীষ্টের ভাই যাকোব কি বলেছেন দেখি-- 

 🔺কিন্তু যে নিখুঁত বিধানের প্রতি আগ্রহভরে দৃষ্টি দেয়, যা স্বাধীনতা প্রদান করে ও যা শুনেছে তা ভুলে না গিয়ে নিরন্তর তা পালন করতে থাকে, সে সবকাজেই আশীর্বাদধন্য হবে। কেউ যদি নিজেকে ধর্মনিষ্ঠ বলে মনে করে, কিন্তু নিজের জিভকে লাগাম দিয়ে বশে না-রাখে, সে নিজের সঙ্গেই প্রতারণা করে এবং তার ধর্ম অসার। যাকোব 1:25-26🔺

 বাইবেলের শেষ বই প্রকাশিত বাক্যের মধ্য দিয়ে যীশুর প্রিয় শিষ্য যোহনকে পবিত্র আত্মা এই কথাই বলেছেন- 

 🔺তা সত্ত্বেও, তোমার বিরুদ্ধে আমার কয়েকটি অভিযোগ আছে: তুমি সেখানে বিলিয়মের শিক্ষাবলম্বী কিছু মানুষকে থাকতে দিয়েছ, যে বালাককে কুশিক্ষা দিয়েছিল, যেন সে ইস্রায়েলীদের প্রলুব্ধ করে, যেন তারা প্রতিমার কাছে উৎসর্গীকৃত বলি ভক্ষণ করার ও অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার পাপ করে। একইভাবে, তোমার মধ্যেও নিকোলায়তীয়দের শিক্ষালম্বী কিছু মানুষ আছে। সেই কারণে, মন পরিবর্তন করো! অন্যথায়, আমি শীঘ্রই তোমার কাছে এসে আমার মুখের তরোয়াল দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করব। প্রকাশিত বাক্য 2:14-16🔺 

 🔺তবুও, তোমার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ এই: তুমি ওই নারী ঈষেবলকে সহ্য করে আসছ, যে নিজেকে মহিলা-ভাববাদী বলে। তার শিক্ষামালার দ্বারা সে আমার দাসদের অবৈধ যৌনাচার ও প্রতিমাদের কাছে উত্সর্গীকৃত বলি ভক্ষণ করার জন্য ভ্রান্তপথে চালিত করে। তার ব্যভিচার থেকে মন পরিবর্তন করার জন্য আমি তাকে সময় দিয়েছিলাম, কিন্তু সে ইচ্ছুক হয়নি। সেই কারণে, আমি কষ্টভোগের জন্য তাকে শয্যাশায়ী করব এবং যারা তার সঙ্গে ব্যভিচার করে, তারা যদি তার পথসমূহ থেকে মন পরিবর্তন না করে, তাহলে তাদেরও প্রচণ্ড ক্লেশভোগে ফেলে দেব। প্রকাশিত বাক্য 2:20-22🔺 

 প্রকাশিত বাক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। ঈশ্বরের পক্ষ থেকে প্রেরিতদের কাছে শেষ কথা। বিশেষ করে এই বইটি সম্পর্কেই কিন্তু ঈশ্বরের আত্মা বলেছেন- 

 🔺যারা এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচনগুলি শোনে, আমি তাদের প্রত্যেককে সতর্ক করে বলছি: যদি এগুলির সঙ্গে কেউ আরও কিছু যোগ করে, ঈশ্বর সেই ব্যক্তির প্রতি এই গ্রন্থে লিখিত বিপর্যয়গুলিও যোগ করবেন। আবার কেউ যদি ভাববাণীর এই গ্রন্থ থেকে কোনও বচন হরণ করে, তাহলে ঈশ্বর এই গ্রন্থে লিখিত জীবনবৃক্ষ থেকে ও সেই পবিত্র নগর থেকে তার অংশও হরণ করবেন। প্রকাশিত বাক্য 22:18-19🔺 

তাই উপরে উল্লিখিত প্রকাশিত বাক্যের উদ্ধৃতিগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। 

 ৩) আমরা কি সমঝোতা করব না কি যা ঈশ্বরের পথ তাকে যে কোন মূল্যে আঁকড়ে ধরে চলব? 

 আমরা পবিত্র বাইবেল থেকে এটা পরিস্কার বুঝলাম যে যে কোন বিজাতীয় ঈশ্বর যা প্রতিমাসদৃশ, তাদের কাছে উতসর্গকৃত পশু বা খাদ্য খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের জন্য জঘন্য পাপ সদৃশ। জগতের লোভ যদি আমরা সবলে ত্যাগ করতে না পারি তাহলে আমরা এখনো ঈশ্বরের হতে পারিনি। ঈশ্বরকে ভালবাসলে ও জীবনে ঈশ্বরের আনন্দ ধরে রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই তাঁর পথেই চলতে হবে। কিন্তু আমাদের বহু সংখ্যক মানুষ আত্মায় নয়, জগতের মোহ ও লালসায় চলতে চায়। দুঃখের বিষয় যাদের সচেতন করা দরকার তাদেরও অনেকে আজ এই জঘন্য পাপে মগ্ন। আমরা বিজাতীয় ভাইদের যদি বলি এটা আমাদের নিষেধ তাহলে কি সমস্যা? তারা কি মনে করবে এটা ভেবে কি আমি পাপ করতে পারি? বরং বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে আমাদের ধর্মের পবিত্রতা ও পার্থক্যই তাদের চোখে ধরা পড়বে।

🔺কারণ এ জগতের সমস্ত বিষয়—পাপী মানুষের শারীরিক অভিলাষ, চোখের অভিলাষ ও জীবনচর্যার গর্ব—পিতা থেকে নয়, কিন্তু জগৎ থেকে উদ্ভূত। আর জগৎ ও তার কামনা-বাসনা বিলুপ্ত হবে, কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে চিরকাল জীবিত থাকবে। 1 যোহন 2:16-17🔺 

 ঈশ্বরের প্রেম আমাদের সকলের মাঝে থাকুক। আমেন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: