Friday, July 15, 2022

কুরআন হাদিসে যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্ব(১): ইসলামিক বর্ণনায় সৃষ্টিকার্যে ত্রিত্ববাদের ধারণার ইঙ্গিত

 


 ইসলামিক বর্ণনায় সৃষ্টিকার্যে ত্রিত্ববাদের ধারণার ইঙ্গিত....


মুসলিমগণ তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যায় সৃষ্টিকর্তার ধারণাকে Unitarian চিন্তাধারায় পেশ করে থাকে।


অথচ যদি আমরা ভালভাবে দেখি, তবে কুরআনে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির ধারণায় Trinitarian বা ত্রিত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত রয়েছে।


ত্রিত্ববাদী ঈশ্বরের সৃষ্টির ধারণা হল এই যে, ঈশ্বর হলেন একক সত্ত্বা। সেই ঈশ্বর "পিতা" হিসেবে বিবেচিত, যে "পিতা" একটি আধ্যাত্মিক উপাধি - যা মানুষের মত পিতাকে বোঝায় না, কেননা ঈশ্বর চূড়ান্ত অস্তিত্বে মানুষ নন (গণনাপুস্তক ২৩:১৯ দ্রষ্টব্য)। ঈশ্বর সৃষ্টিকে সন্তানের মত ভালবাসার কারণে পিতা হিসেবে অভিহিত (১যোহন ৩:১ দ্রষ্টব্য), সৃষ্টিকে চালনার মাধ্যমে প্রতিপালনের প্রকাশস্বরূপ পিতা হিসেবে বিবেচ্য (রোমীয় ৮:১৪ দ্রষ্টব্য) প্রভৃতি।


এই একক ঈশ্বর এর অস্তিত্বে তাঁর "বাক্য" বা "কালাম" বিদ্যমান (যোহন ১:১ দ্রষ্টব্য) যাঁর চূড়ান্ত অস্তিত্ব মানুষ নয়, বরং অবস্তুগত। আর এই বাক্য বা কালাম[১] এর দ্বারাই সমস্ত সৃষ্টিজগৎ সৃষ্ট হয়েছে (যোহন ১:৩ দ্রষ্টব্য) বিধায় "সকলই তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত সৃষ্ট হইয়াছে" (কলসীয় ১:১৬ (কেরী))।

একারণে এই বাক্য বা কালাম-কেও সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পিতা ঈশ্বরের সিদ্ধান্তে ও অনুমতিক্রমে ঈশ্বরের একক অস্তিত্বে বিদ্যমান ঈশ্বরের বাক্য বা কালাম এর দ্বারা সবকিছুই সৃষ্ট হয়েছে!


আর এই সৃষ্টিকার্যে ঈশ্বরের অস্তিত্বে ঈশ্বরের আত্মা বা রূহ বিদ্যমান ছিল (আদিপুস্তক ১:২) যা মানুষের আত্মা বা রূহ থেকে ভিন্নতর ও পৃথক এবং "পবিত্র আত্মা" নামে পরিচিত।


অর্থাৎ, ঈশ্বর হলেন পিতা এবং একক সত্ত্বার ঈশ্বরে তাঁরই বাক্য বা কালাম বিদ্যমান - যেখানে ঈশ্বরের আত্মা বা রূহও সেই একক ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিদ্যমান।

পিতা ঈশ্বর এর সিদ্ধান্তে ও অধীনে বাক্য বা কালাম এর মাধ্যমে সৃষ্টিজগৎ সৃষ্ট হয় (যোহন ৫:৩০ দ্রষ্টব্য) যেখানে ঈশ্বরের আত্মা বা রূহ অর্থাৎ, পবিত্র আত্মা একক ঈশ্বরের অস্তিত্বেই বিদ্যমান থাকে।


ঈশ্বরের বাক্য বা কালাম মনুষ্য রূপ ধারণ করে যীশু খ্রিস্ট রূপে আমাদের মধ্যে আসেন (যোহন ১:১৪; ফিলিপীয় ২:৭  দ্রষ্টব্য), যদিও তাঁর মনুষ্য শরীর ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্ব এবং মূল অস্তিত্ব বাক্য বা কালাম (যোহন ১:১ দ্রষ্টব্য) যা প্রকৃত অস্তিত্বে ঐশ্বরিক (ফিলিপীয় ২:৬ দ্রষ্টব্য)।

এখন, এই বাক্য "পুত্র" হিসেবে অভিহিত যেহেতু ঈশ্বরের সত্ত্বা থেকেই ঈশ্বরের বাক্য বা কালাম আগত হয়েছে। আর তাই যীশু খ্রিস্ট মনুষ্য দেহে আগমন করলেও তিনি "ঈশ্বরের পুত্র" হিসেবেই পরিচিত - সৃষ্টির পূর্বে থেকেই (যোহন ১৭:৫ দ্রষ্টব্য)।


অর্থাৎ, সার বক্তব্যে আমরা পেলাম যে, একক ঈশ্বর এর সত্ত্বায় পিতা, পুত্র, পবিত্র আত্মা বিদ্যমান এবং পিতা ঈশ্বরের সিদ্ধান্তে ও পবিত্র আত্মার উপস্থিতিতে পুত্র যীশু (যিনি মূল অস্তিত্বে বাক্য বা কালাম) এর মাধ্যমে সকল কিছুর সৃষ্টি হয়।


এবার এই ত্রিত্ববাদী ঈশ্বরের সৃষ্টির ধারণাকে আমরা ইসলামিক বর্ণনাগুলোর মধ্যে দেখার চেষ্টা করব।


এক্ষেত্রে কুরআন এর সূরা আস-সাফফাত (সূরা নং ৩৭) এর ১২৫নং আয়াতে বলা হয়েছে:


أَتَدْعُونَ بَعْلًا وَتَذَرُونَ أَحْسَنَ ٱلْخَٰلِقِينَ 

"তোমরা কি বা’আল দেবতার এবাদত করবে এবং সর্বোত্তম স্রষ্টাকে পরিত্যাগ করবে।"[২]

(কুরআন ৩৭:১২৫, অনুবাদ: মুহিউদ্দিন খান)


উক্ত আয়াতে আল্লাহকে বলা হয়েছে ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) যার অর্থ করা হয়েছে "সর্বোত্তম স্রষ্টা"। একই শব্দ ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) এর উল্লেখ করা হয়েছে কুরআন ২৩:১৪ আয়াতেও।


এই ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন)-কে যখন 'সর্বোত্তম স্রষ্টা' বলা হচ্ছে, তখন এর অর্থ হল একাধিক স্রষ্টার মধ্যে আল্লাহ হলেন সবচেয়ে উপরে।

একারণে ইংরেজিতে  ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) এর অর্থ হল "Best of Creators" অর্থাৎ স্রষ্টাদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ!


একারণে ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) এর ইংরেজি "Best of Creators" অনুবাদ করেছেন বহু মুসলিম অনুবাদক। নীচে তার কিছু নমুনা দেওয়া হল:


"Will ye call upon Baal and forsake the Best of Creators"

(Quran 37:125, tr. Yusuf Ali)


"Do you invoke Ba‘l, and ignore the Best of the creators"

(Quran 37:125, tr. Mufti Taqi Usmani)


"Will you call upon Ba‘l (a well known idol of his nation whom they used to worship) and forsake the Best of creators"

(Quran 37:125, tr. Mohsin Khan & Taqi-ud-Din al-Hilali)


"Do you call upon ˹the idol of˺ Ba’l and abandon the Best of Creators"

(Quran 37:125, tr. Dr. Mustafa Khattab)


"Do you call upon Ba’l and leave the best of creators"

(Quran 37:125, tr. Sahih International)


"Will ye cry unto Baal and forsake the Best of creators"

(Quran 37:125, tr. Pickthall)


তাহলে আমরা দেখছি যে, আল্লাহ হলেন ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) অর্থাৎ, স্রষ্টাদের মধ্যে সবার উপরে।


তাহলে 'স্রষ্টাদের' বলতে নিশ্চয় একজন বোঝায় না, একের অধিক স্রষ্টা বোঝায়! সেক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য স্রষ্টা তাহলে কে?


কুরআনই আমাদের এর উত্তর দিচ্ছে!


এটি বোঝার আগে আল্লাহর সৃষ্টির একটি ধরণ আমাদের দেখা প্রয়োজন। কুরআন বর্ণনা করছে:


"তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি থেকে তারপর নির্ধারণ করেছেন একটি কাল..."

(কুরআন ৬:২; অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)


"আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি একজন মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে’।

‘অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং **তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব,** তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও’।"

(কুরআন ১৫:২৯; অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)


অর্থাৎ, আল্লাহর সৃষ্টির একটি ধরণ হল, কাদা-মাটি থেকে জড় নির্জীব দেহ গঠন করে সেটিতে ফুঁক দেওয়ার মাধ্যমে জীবিত করা!


আর ঈসাও ঠিক একই প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করেছেন! কুরআন বলছেঃ


إِذْ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ ٱذْكُرْ نِعْمَتِى عَلَيْكَ وَعَلَىٰ وَٰلِدَتِكَ إِذْ أَيَّدتُّكَ بِرُوحِ ٱلْقُدُسِ تُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِى ٱلْمَهْدِ وَكَهْلًاۖ وَإِذْ عَلَّمْتُكَ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَۖ وَإِذْ تَخْلُقُ مِنَ ٱلطِّينِ كَهَيْـَٔةِ ٱلطَّيْرِ بِإِذْنِى فَتَنفُخُ فِيهَا فَتَكُونُ طَيْرًۢا بِإِذْنِىۖ وَتُبْرِئُ ٱلْأَكْمَهَ وَٱلْأَبْرَصَ بِإِذْنِىۖ وَإِذْ تُخْرِجُ ٱلْمَوْتَىٰ بِإِذْنِىۖ وَإِذْ كَفَفْتُ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ عَنكَ إِذْ جِئْتَهُم بِٱلْبَيِّنَٰتِ فَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنْهُمْ إِنْ هَٰذَآ إِلَّا سِحْرٌ مُّبِينٌ 


"যখন আল্লাহ বলবেন, ‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার উপর ও তোমার মাতার উপর আমার নি‘আমত স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম পবিত্র আত্মা দিয়ে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে। আর যখন আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল;


**আর যখন আমার আদেশে কাদামাটি থেকে পাখির আকৃতির মত গঠন করতে এবং তাতে ফুঁক দিতে, ফলে আমার আদেশে তা পাখি হয়ে যেত।**


আর তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতে এবং যখন আমার আদেশে তুমি মৃতকে জীবিত বের করতে। আর যখন তুমি স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে তখন আমি বনী ইসরাঈলকে তোমার থেকে ফিরিয়ে রেখেছিলাম। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল, এতো স্পষ্ট যাদু।"

(কুরআন ৫:১১০, অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)


উক্ত আয়াতে আমরা স্পষ্ট দেখি যে, ঈসা মাসীহকে উল্লেখ করে বলা হচ্ছে যে,

"যখন আমার আদেশে কাদামাটি থেকে পাখির আকৃতির মত গঠন করতে এবং তাতে ফুঁক দিতে, ফলে আমার আদেশে তা পাখি হয়ে যেত..." (কুরআন ৫:১১০)


অর্থাৎ, আল্লাহ কাদামাটির দেহ গঠন করে সেটিতে ফুঁক দিয়ে জীবিত করার মাধ্যমে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক একই পদ্ধতিতে ঈসা মাসীহ অর্থাৎ খ্রিস্টও কাদামাটির দেহ গঠন করে তাতে ফুঁক দিয়ে জীবিত করার মাধ্যমে সৃষ্টি করছেন!


আর উক্ত আয়াতে এই সৃষ্টির বর্ণনার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে:


"ফলে আমার আদেশে তা পাখি হয়ে যেত" (কুরআন ৫:১১০)


অর্থাৎ এই সৃষ্টি আল্লাহর অধীনে সম্পন্ন হচ্ছে। ঠিক একই পদ্ধতি আমরা প্রথমে ত্রিত্ববাদী ঈশ্বরের সৃষ্টির ক্ষেত্রে দেখেছিলাম (লেখার প্রথম অংশ পড়ুন) যেখানে পিতা ঈশ্বরের অধীনেই পুত্র যীশু সকল কার্য করেন (যোহন ৫:৩০ দ্রষ্টব্য) এবং এই পুত্র হলেন মূলত ঈশ্বরের কালাম বা বাক্য (যোহন ১:১ দ্রষ্টব্য) যার দ্বারা সকল কিছুর সৃষ্টি হয়েছে (যোহন ১:৩; কলসীয় ১:১৬ দ্রষ্টব্য)।


একারণে আমরা দেখছি যে, আল্লাহও স্রষ্টা আবার ঈসা মাসীহ অর্থাৎ খ্রিস্টও স্রষ্টা!


তাই এখানে একাধিক স্রষ্টার কথা বলা হচ্ছে! একারণে আমরা উপরে দেখছিলাম যে, কুরআন আল্লাহকে বলছে ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) [কুরআন ৩৭:১২৫; ২৩:১৪] অর্থাৎ, (একাধিক) স্রষ্টাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যিনি।


কিন্তু সেক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তা তো কেবল একজনই! তবে একাধিক স্রষ্টা কীভাবে হতে পারে!


এর উত্তর রয়েছে ত্রিত্ববাদী ঈশ্বরের সৃষ্টিকার্যের ধারণায়।


এখানে খেয়াল করুন যে, ঈসা মাসীহ এর সৃষ্টির ক্ষেত্রে কুরআনে বলা হচ্ছিল:


فَتَكُونُ طَيْرًۢا بِإِذْنِىۖ

(ফাতাকুনু তইরন্ বি-ইয্বনী)

"আমার অনুমতিতে তা পাখি হয়ে যেত" (কুরআন ৫:১১০)


এখানে بِإِذْنِىۖ (বি-ইয্বনী) অর্থ "by My permission" বা, 'আমার অনুমতির দ্বারা';

source - https://bit.ly/3Irzmel


অর্থাৎ, যখন আল্লাহর অনুমতিতে ঈসা মাসীহ সৃষ্টি করছেন, তখন ঈসা মাসীহ আল্লাহর অধীনে রয়েছেন; একারণে আল্লাহর ইচ্ছাতে সৃষ্টি হচ্ছে বিধায় আল্লাহকে বলা হচ্ছে  ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) অর্থাৎ, স্রষ্টাদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ।


আর এটাই ত্রিত্ববাদী ঈশ্বরের সৃষ্টির ধারণায় আমরা দেখেছি - যেখানে খ্রিস্ট বলছেন, "পিতা আমার চেয়ে মহান" (যোহন ১৪:২৮); কেননা খ্রিস্ট যিনি ঈশ্বরের কালাম বা বাক্য, তিনি পিতা ঈশ্বরের অধীনেই সকল সৃষ্টিকাজ সম্পন্ন করছেন (যোহন ৫:৩০; যোহন ১:৩ দ্রষ্টব্য)।


আর এই সৃষ্টিকার্য সম্পন্নের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের আত্মা অর্থাৎ পবিত্র আত্মার উপস্থিতি আমরা দেখতে পাই (আদিপুস্তক ১:২) যেখানে ঈসা মাসীহ এর এই সৃষ্টিকার্যের ক্ষেত্রে তিনি পবিত্র আত্মার উপস্থিতিতে শক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন - যেমনটি উপরে উল্লিখিত কুরআনের আয়াতেই আমরা পাই যে:


"...আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম পবিত্র আত্মা দিয়ে....আর যখন আমার আদেশে কাদামাটি থেকে পাখির আকৃতির মত গঠন করতে এবং তাতে ফুঁক দিতে, ফলে আমার আদেশে তা পাখি হয়ে যেত..."

(কুরআন ৫:১১০, অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)


এখানে উক্ত আয়াতে স্পষ্টই আরবিতে بِرُوحِ ٱلْقُدُسِ (বিরূহিল কুদুস) বলা হয়েছে যার আক্ষরিক অর্থ হল "পবিত্র আত্মা দ্বারা" বা, "পবিত্র আত্মার সাহায্যে"।


অর্থাৎ, এখানে নাম উল্লেখ করে কুরআনে পবিত্র আত্মার কথা বলা হচ্ছে - যে পবিত্র আত্মা খ্রিস্টের সৃষ্টিকার্যের সময় উপস্থিত ছিলেন।


মুসলিমরা এখানে পবিত্র আত্মাকে জিব্রাইল ফেরেশতা বলে চালিয়ে দেয়! অথচ আরবিতে কোথাও পবিত্র আত্মা বা রুহুল কুদ্দুসকে ফেরেশতা বলে উল্লেখ করা হয়নি! এমনকি হাদিসে জিব্রাইল ফেরেশতা এবং রুহুল কুদ্দুস বা পবিত্র আত্মাকে পৃথক করে দেখানো হয়েছে! সহীহ মুসলিম এর একটি হাদিসের শেষের দিকে বলা হচ্ছে:


"...জিবরাঈল (আঃ) আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত সম্মানিত বাণীবাহক (দূত) এবং তিনি রুহুল কুদ্দুস (পবিত্র আত্মা) যার সমকক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই।"


[গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়ঃ ৪৬/ সাহাবী (রাঃ) গণের ফযীলত (كتاب فضائل الصحابة رضى الله تعالى عنهم), হাদিস নম্বরঃ ৬১৭০, হাদিসের মান - সহিহ]

source - http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=18493


এখানে ইংরেজি অনুবাদ আরও স্পষ্ট:


"...And Gabriel, the Messenger of Allah is among us, and the Holy Spirit who has no match."


[Sahih Muslim (Islamic Foundation), hadith no. 6170, Grade - Sahih]

source - http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=18493


এখানে উক্ত হাদিসের আরবিতে বিষয়টি খেয়াল করুন:


وَجِبْرِيلٌ رَسُولُ اللَّهِ فِينَا وَرُوحُ الْقُدْسِ لَيْسَ لَهُ كِفَاءُ

source - http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=18493


এখানে, وَجِبْرِيلٌ رَسُولُ اللَّهِ فِينَا (ওয়া জিবরীলুন রসূলুল্লাহি ফীনা) অর্থাৎ, "আর আল্লাহর বার্তাবাহক জিব্রীল আমাদের মধ্যে আছেন"


আর পরের অংশ বলছে:

وَرُوحُ الْقُدْسِ لَيْسَ لَهُ كِفَاءُ

(ওয়া রূহুল কুদসী লাইসা লাহু কিফাউ)

অর্থাৎ, "এবং 'পবিত্র আত্মা' (رُوحُ الْقُدْسِ) এর সমকক্ষ কেউ নেই"


তাহলে হাদিসের আরবিতে স্পষ্ট জিব্রাইল ফেরেশতা আর রুহুল কুদ্দুস বা পবিত্র আত্মাকে আলাদা করে বলা হচ্ছে যে, 

'আল্লাহর বার্তাবাহক জিব্রীল আমাদের মধ্যে আছেন এবং পবিত্র আত্মা' (رُوحُ الْقُدْسِ) এর সমকক্ষ কেউ নেই'!


অর্থাৎ, রুহুল কুদ্দুস বা পবিত্র আত্মা জিব্রাইল ফেরেশতা নয়, তা স্বয়ং ঈশ্বরের আত্মা - যিনি সৃষ্টি করার সময় ঈসা মাসীহ অর্থাৎ খ্রিস্টের সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন কুরআন অনুসারেই (যা কুরআন ৫:১১০ আয়াতে আমরা দেখত পাই)


এক্ষেত্রে মুসলিমগণ দাবি করে থাকেন যে, ঈসা মাসীহ স্রষ্টা নন, বরং সৃষ্টির অংশ ছিলেন!


এক্ষেত্রে তারা এই আয়াতটি উদ্ধৃত করে থাকে:


"নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মত, তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাকে বললেন, ‘হও’, ফলে সে হয়ে গেল।" (কুরআন ৩:৫৯, অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)


উক্ত আয়াতের এই অংশটুকু খেয়াল করুন:


"তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন" (কুরআন ৩:৫৯)


অর্থাৎ, মাটি দ্বারা সৃষ্ট মনুষ্য দেহের কথা বলা হচ্ছে। একারণে এখানে ঈসা মাসীহ এর মনুষ্য দেহ আদমের মত - যা সৃষ্ট হয়েছে - এটাই এখানে বলা হচ্ছে!

কিন্তু এই মনুষ্য দেহই কি ঈসা মাসীহের একমাত্র অস্তিত্ব? না! ঈসা মাসীহের মূল অস্তিত্ব হল "কালাম" যে সম্পর্কে কুরআন বলছে:

ٱلْمَسِيحُ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ ٱللَّهِ وَكَلِمَتُهُ

(আল মাসীহু ঈসা ইবনু মারইয়ামা রসূলুল্লাহি ওয়া কালিমাতুহু)

"মরিয়ম পুত্র ঈসা মাসীহ আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালাম"

(কুরআন ৪:১৭১)


অর্থাৎ, ঈসা মাসীহ যখন রাসূল (رَسُولُ), তখন তাঁর মনুষ্য দেহ আদমের মত যা সৃষ্ট হয়েছে এবং তা ধ্বংসও হবে! তাই এই ধারণকৃত মনুষ্য দেহ ক্ষণস্থায়ী!


কিন্তু মাসীহ এর মূল অস্তিত্ব হল كَلِمَتُهُ (কালিমাতুহু) অর্থাৎ "তাঁর কালাম" বা, আল্লাহর কালাম বা, ঈশ্বরের বাক্য।


তাই খ্রিস্টের মূল অস্তিত্ব হল 'কালাম' বা 'বাক্য'। আর 'কালাম' সৃষ্টির অংশ নয়, তা সৃষ্ট হয়নি! জনৈক মুসলিম আলেম আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এ সম্পর্কে তার গ্রন্থে লিখেছেন:


"...মুসলিম উম্মাহর ইমামগণ একমত যে, ‘কালাম’ বা ‘কথা বলা’ আল্লাহর অনাদি বিশেষণসমূহের একটি। কুরআন আল্লাহর কালাম এবং তা সৃষ্ট নয়, বরং তা স্রষ্টার একটি বিশেষণ..."

[গ্রন্থঃ আল-ফিকহুল আকবর, অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বিশেষণ, তাকদীর ইত্যাদি/আল্লাহর কালাম বা কথা]

online source:

http://www.hadithbd.com/books/link/?id=7153


উল্লেখ্য যে, কুরআন এর আল্লাহর কালাম হিসেবে দুটি চরিত্র স্বীকার করা হয়:-

একটি বস্তুগত চরিত্র যা কাগজ, কালি, পৃষ্ঠাতে লিপিবদ্ধ কুরআন যা সৃষ্টির অংশ এবং

অপরটি লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ কুরআন যা অসৃষ্ট।


এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থে লিখেছেন:


"কুরআন পাঠে আমাদের জিহবার উচ্চারণ সৃষ্ট, কুরআনের জন্য আমাদের লিখনি সৃষ্ট, আমাদের পাঠ সৃষ্ট, কিন্তু কুরআন সৃষ্ট নয়..."

[গ্রন্থঃ আল-ফিকহুল আকবর, অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বিশেষণ, তাকদীর ইত্যাদি/আল্লাহর কালাম বা কথা]

online source:

http://www.hadithbd.com/books/link/?id=7153


সুতরাং, একই বিচারে আল্লাহর কালাম হিসেবে মাসীহ এরও দুটি চরিত্র:-

একটি তাঁর বস্তুগত দেহ যা মনুষ্য চরিত্রের প্রকাশ এবং

অপরটি তাঁর মূল অস্তিত্ব 'কালাম' যা অসৃষ্ট!


তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। তা হল, কুরআন কালাম হওয়া সত্ত্বেও কুরআন এর সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু আমরা উপরে কুরআন ৫:১১০ আয়াতে দেখলাম যে, ঈসা মাসীহ (যিনি আল্লাহর কালাম) তাঁর সৃষ্টির ক্ষমতা রয়েছে!


তবে এখানে দুই কালামে পার্থক্য কোথায়?


পার্থক্য হল এই যে, ঈসা মাসীহ হল মূল অস্তিত্বে অনন্ত কালাম - যে কালাম এর দ্বারা বিভিন্ন কিছু প্রকাশিত হয় এবং সৃষ্টিকার্যও সেই কালামের দ্বারাই সম্পন্ন হয়।

উদাহরণস্বরূপ, কুরআনের সূরা বাকারায় বলা হয়েছে:


بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِۖ وَإِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ 


"তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়।"

(কুরআন ২:১১৭, অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)


এখানে كُن (কুন) অর্থাৎ "হও" বলার মাধ্যমে সৃষ্টি সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ, আল্লাহ "হও" কথা বলেছেন সৃষ্টির জন্য। কিন্তু আল্লাহ কি শুধু "হও"-ই বলেন? আর কিছু কি তিনি বলেন না? নিশ্চয়ই বলেন! কারণ কথা বলা আল্লাহর অনন্ত বিশেষণ, অনাদিকাল ধরে তিনি কথা বলেন। সেই সমস্ত কথা লিপিবদ্ধ করা শুরু করলে কুরআন বলছে যে, তা শেষ করা যাবে না:


"পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় এবং এই যে সমুদ্র, এর সাথে যদি আরও সাতটি সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয় তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবে না...." (কুরআন ৩১:২৭, অনুবাদ: মুজিবুর রহমান)


একারণে সৃষ্টির পূর্বেও যখন কিছুই ছিল না, যৌক্তিক বিচারে তখনও আল্লাহ কথা বলেছেন অনন্তকাল ধরে!


একারণে "হও" কথা আল্লাহর অনন্ত কালামের একটি ক্ষুদ্র প্রকাশ মাত্র। আল্লাহর কালাম এর মাধ্যমে 'কুন' (كُن) বা 'হও' শব্দটি প্রকাশিত হয়েছে। তাই 'কুন' বা 'হও' অনন্ত কালাম থেকে আগত একটি ছোট প্রকাশ মাত্র যা প্রকাশিত হয়েছে সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইচ্ছার প্রকাশস্বরূপ হিসেবে আর তাই সৃষ্টি এসেছে সেই অনন্ত কালাম এর সূত্র ধরেই।


সেই অনন্ত কালামের আরেকটি প্রকাশ হিসেবে মুসলিমগণ 'কুরআন'-কে বিশ্বাস করে থাকে যা পৃথক আকারে "লওহে মাহফুজ"-এ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে কুরআন অনুসারে (কুরআন ৮৫:২১-২২ দ্রষ্টব্য)।


কিন্তু সেই অনন্ত কালামটি কী?


সেই অনন্ত কালাম হল ঈসা মাসীহ যাঁকেই একমাত্র কুরআন ৪:১৭১ আয়াতে সরাসরি বলা হয়েছে كَلِمَتُهُ (কালিমাতুহু) অর্থাৎ "তাঁর কালাম" বা, আল্লাহর কালাম বা, ঈশ্বরের বাক্য।


আর ঈসা মাসীহ কেন অনন্ত কালাম? কারণ আমরা দেখেছিলাম কুরআন ২:১১৭ আয়াতে যে, সৃষ্টির জন্য আল্লাহ 'কালাম' করছেন 'হও'; অর্থাৎ কালামের মাধ্যমে সৃষ্টি সম্পন্ন হয় এবং আল্লাহর কালাম 'ঈসা মাসীহ'-ই একমাত্র সৃষ্টি করতে পারেন (কুরআন ৫:১১০ অনুসারে)!


একারণে যৌক্তিক বিচারে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, যেহেতু সৃষ্টির জন্য 'হও' কথাটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশিত হয়েছে (অর্থাৎ 'হও' কথার একটি শুরু রয়েছে) এবং সৃষ্টি করার অনন্ত বৈশিষ্ট্য একমাত্র স্রষ্টার মধ্যেই বিদ্যমান - যে সৃষ্টি করার অনন্ত বৈশিষ্ট্যের কোনো শুরু ও শেষ নেই, একারণে ঈসা মাসীহ এর মধ্যে সৃষ্টি করার বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতা থাকায় ঈসা মাসীহ-ই সেই অনন্ত কালাম - যে অনন্ত কালাম হতে কালামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকাশ (যেমন كُن (কুন) বা 'হও') বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ লাভ করেছে!


অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁর অনন্ত কালাম ঈসা মাসীহ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালামকে প্রকাশ করেন আর এই অনন্ত কালামের মাধ্যমে সৃষ্টিকার্যও সম্পন্ন হয়। আর এই অনন্ত কালাম ঈসা মাসীহ অর্থাৎ খ্রিস্ট এর সঙ্গে রুহুল কুদ্দুস বা পবিত্র আত্মাও সৃষ্টিকার্যে উপস্থিত থাকেন (কুরআন ৫:১১০ দ্রষ্টব্য)।


এক্ষেত্রে আমরা উপরে দেখেছিলাম যে, ঈসা মাসীহ অর্থাৎ খ্রিস্ট এর মনুষ্য দেহ আসল অস্তিত্ব নয়, তা ধারণকৃত ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্ব - যেখানে তাঁর মূল অস্তিত্ব হল সেই অনন্ত অবস্তুগত কালাম যাঁকেই একমাত্র বলা হয়েছে "কালিমাতুহু" (كَلِمَتُهُ)!


এছাড়াও ঈসা মাসীহ যে আল্লাহর কালাম, তা স্বয়ং মুহাম্মাদও তার হাদিসে উল্লেখ করেছেন! সহীহ মুসলিম এর হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে:


"দাউদ ইবনু রুশায়দ.....উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ


....নিশ্চয় ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা, তার বান্দীর (মারইয়ামের) পুত্র ও তার সে কালিমা- যা তিনি মারইয়ামকে পৌঁছিয়েছেন এবং তার পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি রূহ মাত্র..."


(গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)/অধ্যায়ঃ ১। ঈমান [বিশ্বাস] (كتاب الإيمان)/হাদিস নম্বরঃ ৪৬, হাদিসের মানঃ সহিহ)

source - http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=46803


এখানে সহিহ হাদিসেও স্পষ্ট মুহাম্মাদ বলছেন যে,


"...ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা....ও তার সে কালিমা..."

(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ৪৬)


উক্ত হাদিসের আরবিতেও আমরা দেখি:

عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَابْنُ أَمَتِهِ وَكَلِمَتُهُ

(ঈসা আব্দুল্লাহি ওয়াব্-নু আমাতিহি ওয়া কালিমাতুহু)

source - http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=46803


অর্থাৎ ঈসা মাসীহ-কে স্পষ্টই হাদিসে সেই একই كَلِمَتُهُ (কালিমাতুহু) অর্থাৎ "তাঁর (আল্লাহর) কালাম" বলা হয়েছে!


আবার উক্ত হাদিসে ঈসা মাসীহকে عَبْدُ اللَّهِ (আব্দুল্লাহি) বলেও উল্লেখ করা হয়েছে যা হল 'আল্লাহর বান্দা বা দাস'। আর এটাই হল খ্রিস্টের ধারণকৃত ক্ষণস্থায়ী মনুষ্য দেহ এর প্রকাশ - যে মনুষ্য দেহে তিনি বান্দা ও রাসূলের রূপ ধারণ করেছেন - যেমনটি বাইবেল ব্যাখ্যা করছে:


"তিনি স্বভাবগতরূপে ঈশ্বর হয়েও ঈশ্বরের সমকক্ষ হওয়ার অবস্থান আঁকড়ে ধরে রাখার কথা ভাবেননি, কিন্তু নিজেকে রিক্ত করে দিয়ে, তিনি ক্রীতদাসের রূপ ধারণ করলেন, মানব-সদৃশ হয়ে জন্ম নিলেন ও মানবাকারে প্রত্যক্ষ হয়ে তিনি

নিজেকে অবনত করলেন মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি ক্রুশমৃত্যু পর্যন্ত,

তিনি অনুগত থাকলেন।"

(ফিলিপীয় ২:৬-৮ (BCV))


আর খ্রিস্টের এই মনুষ্য দেহেরই সৃষ্টি ও ধ্বংসের কথা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে - যেখানে খ্রিস্টের মূল অস্তিত্ব হল তিনি অনাদি ও অবিনশ্বর বাক্য বা কালাম!


আর এই খ্রিস্ট পবিত্র আত্মার উপস্থিতিতে সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন করেন পিতা ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে!


আর তাইতো ইসলামিক ঈশ্বরের ধারণার ব্যাখ্যায় প্রায়ই যে "তাওহীদ" (توحيد) শব্দ ব্যবহার করা হয়, এর মধ্যেও আমরা একক ঈশ্বরের মধ্যে বহু ব্যক্তির অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাই!


"তাওহীদ" সম্পর্কে প্রখ্যাত মুসলিম আলেম খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখেছেন:


"ইসলামী ঈমান বা বিশ্বাসকে ‘তাওহীদ’ বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং এ বিষয়ক জ্ঞানকে ‘ইলমুত তাওহীদ’ বা তাওহীদের জ্ঞান বলা হয়..."


(গ্রন্থঃ আল-ফিকহুল আকবর/অধ্যায়ঃ আল-ফিকহুল আকবার ও ইসলামী আকীদা/ঈমান, আকীদা ও অন্যান্য পরিভাষা; লেখক: ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর)

online source - http://www.hadithbd.com/books/link/?id=7078


অথচ এই "তাওহীদ" (توحيد) শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল unification, putting together, union, combination, gather together; যার বাংলায় অর্থ করলে দাঁড়ায় 'একীভূতকরণ' বা 'অনেক কিছুকে মিলে এক করা' ইত্যাদি;

source - https://bit.ly/3uGYZCi


অর্থাৎ, "তাওহীদ" (توحيد) শব্দের মধ্যেও আমরা বহুবচন এর ইঙ্গিত দেখতে পাই যা দিয়ে পিতা, পুত্র, পবিত্র আত্মার একীভূতকরণের মাধ্যমে একক ঈশ্বরের ধারণার ইঙ্গিত মেলে - যা ত্রিত্ববাদী ঈশ্বরের ধারণাকেই সমর্থন করে!

.

.

_________________________________________________

ফুটনোট:


[১] খ্রিস্টকে ঈশ্বরের বাক্য বলা হলে বাইবেলও তো ঈশ্বরের বাক্য হিসেবে খ্রিস্টীয় বিশ্বাসীরা মনে করেন! সেক্ষেত্রে ঈশ্বরের বাক্য হওয়ার কারণে বাইবেলও কি আরেকটি ঈশ্বর নয়?

এই সমস্যাটি মূলত ইসলামের, খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের নয়। কারণ ইসলামে কুরআনকে তারা আল্লাহর সত্ত্বা হতে আগত কালাম বলে বিশ্বাস করে - যেখানে কুরআনও আল্লাহর মত অনাদি ও অসৃষ্ট! তাই তারা এবার কুরআনকে কি ইলাহ বা উপাস্য হিসেবে বিশ্বাস করবে কি করবে না - সেটা তারাই ঠিক করুক! কিন্তু এই সমস্যা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যই নয়! কারণ খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে এটা কখনই দাবি করা হয় না যে, বাইবেল ঈশ্বরের সত্ত্বা হতে আগত বাক্য। বিভিন্ন সাহিত্যের ভঙ্গিতে উল্লিখিত বাইবেলের মধ্যবর্তী বিভিন্ন বচন থেকে কারও মনে হতে পারে যে, ঈশ্বরের মুখ নিঃসৃত বাক্য হওয়ার জন্য বাইবেলও ঈশ্বরের সত্ত্বার অংশ হতে আগত! অথচ এই ধরণের প্রকাশভঙ্গি কেবলই রূপক বর্ণনা, কেননা ঈশ্বর চূড়ান্ত অস্তিত্বে মানুষ নন (গণনাপুস্তক ২৩:১৯) যে, তাঁর মানুষের মত মুখ থাকবে; বরং তিনি হলেন আত্মিক অর্থাৎ অবস্তুগত (যোহন ৪:২৪)। একারণে এই জাতীয় বর্ণনা মূলত বাইবেল যে ঈশ্বরের কাছ থেকে আগত ও ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা অনুপ্রাণিত - এই বিষয়কে প্রকাশ করে। আর তাই এক্ষেত্রে খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে কখনও এটি দাবি করা হয় না যে, বাইবেল ঈশ্বরের সত্ত্বা হতে আগত হওয়ায় এর আদি ও অন্ত নেই! বরং বাইবেলের ক্ষেত্রে ধারণা হল এই যে, তা মূলত সৃষ্ট একটি গ্রন্থ, অর্থাৎ তা অসৃষ্ট নয়। বাইবেল গ্রন্থটি মনুষ্য ভাষায় বিভিন্ন মানুষের দ্বারাই রচিত হয়েছে; কিন্তু সেই মনুষ্য ভাষায় রচনার মধ্যে ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা বাইবেলের লেখকগণ অনুপ্রাণিত ও চালিত হয়েছেন এবং সেই মনুষ্য ভাষায় লেখনির মধ্য দিয়েই ঈশ্বর তাঁর ঐশ্বরিক বার্তাকে মানবজাতির উদ্দেশ্যে তুলে ধরেছেন। একারণে যেহেতু খ্রিস্টীয় বিশ্বাসীগণ বাইবেলকে ঈশ্বরের বাক্য বলতে সৃষ্ট বাক্যের মধ্যে ঐশ্বরিক বার্তার প্রকাশকে বুঝে থাকে, তাই বাইবেল সৃষ্টির অংশ হওয়ায় এই জাতীয় প্রশ্ন তোলাই অবান্তর যে, "বাইবেলও উপাস্য কিনা?" বরং এই জাতীয় প্রশ্ন ইসলামের ক্ষেত্রেই বেশি প্রাসঙ্গিক!


[২] অনেকে দাবি করতে পারে যে, ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) বলার মাধ্যমে পৌত্তলিক উপাস্যগুলো - যারা মিথ্যা স্রষ্টা - তাদের তুলনায় আল্লাহকে শ্রেষ্ঠতম বলে বোঝানো হয়েছে!

সৃষ্টিকর্তা সকল সৃষ্টির উর্ধ্বে - এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) দিয়ে যদি আল্লাহকে পৌত্তলিক উপাস্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠতম স্রষ্টা বলে দাবি করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে যৌক্তিকভাবে এটাই দাঁড়াবে যে, কুরআন আরও বিভিন্ন পৌত্তলিক দেব-দেবী - যারাও সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে, তাদের অস্তিত্বকে সত্য বলে স্বীকার করছে! কারণ সেক্ষেত্রে স্রষ্টাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ যখন বলা হচ্ছে, তখন অন্য স্রষ্টাদের অস্তিত্ব যদি নাই থাকে, তবে যাদের অস্তিত্বই নেই, সেই কল্পিত উপাস্যদের স্রষ্টা বানিয়ে সেই কল্পিত স্রষ্টাদের সাথে আল্লাহকে বসিয়ে শ্রেষ্ঠতম দাবি করাটাই হাস্যকর ও অযৌক্তিক!

একমাত্র তখনই সেটা যৌক্তিক হতে পারে যখন অন্য স্রষ্টাদের সত্য অস্তিত্ব থাকবে আর আল্লাহ তাদের মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্ঠতম দাবি করবেন! নয়ত কাল্পনিক জিনিসের সাথে প্রতিযোগিতা করা ছায়ার সাথে লড়াই করারই নামান্তর! তাই কুরআনের এই বক্তব্যকে যৌক্তিক ধরতে হলে অন্য স্রষ্টার অস্তিত্বের সত্যতাকে স্বীকার করতে হবে! কিন্তু ইসলামে পৌত্তলিক দেব-দেবীদের মিথ্যা বলেই উল্লেখ করা হয়েছে যেহেতু তাদের সৃষ্টির কোনো ক্ষমতা নেই:

"তারা তাঁর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট..." (কুরআন ২৫:৩, অনুবাদ: মুহিউদ্দিন খান)

একারণে অন্য স্রষ্টার সত্য অস্তিত্ব স্বীকার করতে হলে ঈসা মাসীহকেই স্বীকার করতে হবে; কারণ কুরআন ৫:১১০ আয়াত অনুযায়ী অন্য স্রষ্টা হলেন একমাত্র ঈসা মাসীহ!

উল্লেখ্য যে, কুরআন ৩৭:১২৫ আয়াতে পৌত্তলিক বা'আল দেবতার প্রসঙ্গ দেখিয়ে ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন)-কে পৌত্তলিক দেবতাদের সাথে পেশ করা অর্থহীন; কেননা কুরআন ২৩:১৪ আয়াতেও একই ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে - যেখানে পৌত্তলিক দেব-দেবীর কোনো প্রসঙ্গই নেই, বরং গর্ভে বাচ্চা গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রেও ٱلْخَٰلِقِينَ (আল-খলিক্বীন) শব্দ দ্বারা "Best of Creators" (স্রষ্টাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ) উল্লেখ করা হয়েছে - যার (কুরআন ২৩:১৪ আয়াতের) কিছু ইংরেজি অনুবাদ নিম্নে উল্লেখ করা হল:


"Then We made the sperm-drop into a clinging clot, and We made the clot into a lump [of flesh], and We made [from] the lump, bones, and We covered the bones with flesh; then We developed him into another creation. So blessed is **Allah, the best of creators."**

(Quran 23:14, tr. Sahih International)


"Then We turned the sperm-drop into a clot, then We turned the clot into a fetus-lump, then We turned the fetus-lump into bones, then We clothed the bones with flesh; thereafter We developed it into another creature. So, glorious is **Allah, the Best of the creators."**

(Quran 23:14, tr. Mufti Taqi Usmani)


"Then We made the Nutfah into a clot (a piece of thick coagulated blood), then We made the clot into a little lump of flesh, then We made out of that little lump of flesh bones, then We clothed the bones with flesh, and then We brought it forth as another creation. So Blessed is **Allâh, the Best of creators."**

(Quran 23:14, tr. Mohsin Khan and Taqi-ud-Din al-Hilali)

___________________________________________________

- MyBeloved Yashu




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

2 comments:

  1. ত্রিত্ববাদের ধারণার কোরআন বাতিল করেছে এটা তো আপনার জানা থাকার কথা। পুরো আর্টিকেল টি একটি ব্যর্থ চেষ্টা। ত্রিত্ববাদ বাইবেলেও নেই। পুরোটাই আপনাদের বুঝার ভুল। আল্লাহ একক সত্ত্বা। রুহ আল্লাহর আলাদা একটি সৃষ্টি। কিন্তু আল্লাহ এবং রুহ ২ টা এক নয়। বরং রুহ আল্লাহর অধীন তথা আল্লাহর মুখাপেক্ষী। কিন্তু আল্লাহ রুহের মুখাপেক্ষী নয়। এই রুহ দ্বারা কেউ পরিচালিত হলে সেও রুহ হয়ে যায় না। এখানে ৩ স্বত্ত্বা আলাদা। এখন কেউ ৩ স্বত্তা কে এক ভাবলে সেটা তার সমস্যা।
    উদাহরন স্বরুপ বলা যায় রাজা, মন্ত্রি, প্রজা।
    মন্ত্রি রাজার সব কাজ করলেও মন্ত্রি রাজা হয় না এবং কেউ রাজা এবং মন্ত্রিকে একক ভাবে না। ঠিক তেমনি মন্ত্রি দ্বারা প্রজা পরিচালিত বা শক্তিশালী হলে সে সে মন্ত্রি হয়ে যায় না এবং প্রজাকেও কেউ মন্ত্রি ভাবে না। অবশ্য সেই প্রজা সম্মানের দিক দিয়ে অন্যান্য প্রজার থেকে এগিয়ে থাকবে। এখন কেউ যদি এই ৩ জনকে এক ভাবে সেটা তার সমস্যা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কুরআনের ঈশ্বর ত্রিত্ববাদ বুঝতেন না তাই তিনি ত্রিত্ববাদ নিয়ে ভুল দাবি করেছেনঃ
      ৫:৭৩ لَقَدۡ کَفَرَ الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰهَ ثَالِثُ ثَلٰثَۃٍ ۘ وَ مَا مِنۡ اِلٰهٍ اِلَّاۤ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ؕ وَ اِنۡ لَّمۡ یَنۡتَهُوۡا عَمَّا یَقُوۡلُوۡنَ لَیَمَسَّنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۷۳﴾لقد کفر الذین قالوا ان الله ثالث ثلثۃ ۘ و ما من اله الا اله واحد و ان لم ینتهوا عما یقولون لیمسن الذین کفروا منهم عذاب الیم ﴿۷۳﴾
      অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তিন জনের তৃতীয়জন’। যদিও এক ইলাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আর যদি তারা যা বলছে, তা থেকে বিরত না হয়, তবে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব স্পর্শ করবে। আল-বায়ান

      ত্রিত্ববাদ অনুসারে পিতা ঈশ্বর হলেন প্রথম যাকে আপনারা আপনাদের আল্লাহ মনে করেন (যদিও আমারা তার মনে করি না, কারন আমাদের পিতা ঈশ্বরের আপনাদের আল্লাহ নন) এখন পিতা ঈশ্বরকে পৃথিবীর কোন খ্রীষ্টান তৃতীয় হিসাবে বিশ্বাস করে বলুন ত? এটা ত প্রকাশ্য ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে প্রকাশ্য ভুল যা এড়ানোর কোন পথ নেই।

      Delete