Thursday, November 4, 2021

নারী,শিশুদের হত্যা? ১শমূয়েল১৫ অধ্যায়১-৩!

লেখকঃ পাষ্টর জনসন সরকার।

অনেকে প্রশ্ন করেন ১শমূয়েল১৫ অধ্যায়১-৩ পদে ঈশ্বর কেন নারী শিশুদের হত্যার অনুমোদন দিলেন? পবিত্র বাইবেল বর্নীত কোন ঘটনাকে বুঝতে গেলে আমাদের সব সময়ে Context এর উপরে নজর দিতে হবে।   

আর শমূয়েল শৌলকে কহিলেন, সদাপ্রভু আপন প্রজাদের উপরে, ইস্রায়েলের উপরে তোমাকে রাজপদে অভিষেক করিতে আমাকেই প্রেরণ করিয়াছিলেন; অতএব এখন তুমি সদাপ্রভুর বাক্যের রবে কর্ণপাত কর। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েলের প্রতি অমালেক যাহা করিয়াছিল, মিসর হইতে উহার আসিবার সময়ে সে পথের মধ্যে উহার বিরুদ্ধে যেরূপ ঘাঁটি বসাইয়াছিল, আমি তাহা লক্ষ্য করিয়াছি।এখন তুমি গিয়া অমালেককে আঘাত কর, ও তাহার যাহা কিছু আছে, নিঃশেষে বিনষ্ট কর, তাহার প্রতি দয়া করিও না; স্ত্রী ও পুরুষ, বালক-বালিকা ও স্তন্যপায়ী শিশু, গরু ও মেষ, উষ্ট্র ও গর্দভ সকলকেই বধ কর।”[1]

উক্ত ঘটনায় একটি লক্ষনীয় বিষয় রয়েছে আর তা হচ্ছে, পিতা ঈশ্বর বলছেন “ইস্রায়েলের প্রতি অমালেক যাহা করিয়াছিল, মিসর হইতে উহার আসিবার সময়ে সে পথের মধ্যে উহার বিরুদ্ধে যেরূপ ঘাঁটি বসাইয়াছিল, আমি তাহা লক্ষ্য করিয়াছি।”ইস্রায়েল সন্তানগন যখন মিসর দেশ হতে চলে আশছিল যাত্রা পথে  তাদের উপরে অমালেক এবং তার দলবল অত্যাচার করেছিল। এর ফলে ইস্রায়েলীয়দের সাথে অমালেক এবং তার দলবলের যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধে অমালেক এবং তার দলবল ইস্রায়েলীয়দের হাতে পরাস্ত হয়। পিতা ঈশ্বর তখন নবী মোশীকে আদেশ করেন যেন তিনি এই ঘটনাটি লিখে রাখেন এবং সেই সময়ে পিতা ঈশ্বর বলেন, “তিনি অমালেকের নাম [বংশ] পৃথিবী থেকে উচ্ছিন করবেন” যেহেতু সে ইস্রায়েলীয়দের উপরে অত্যাচার করেছিল আর এই বিষয়ে শাস্ত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত রয়েছে,

ঐ সময়ে অমালেক আসিয়া রফীদীমে ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিল। তাহাতে মোশি যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি আমাদের জন্য লোক মনোনীত করিয়া লও, যাও, অমালেকের সহিত যুদ্ধ কর; কল্য আমি ঈশ্বরের যষ্টি হস্তে লইয়া পর্বতের শিখরে দাঁড়াইব। পরে যিহোশূয় মোশির আজ্ঞা অনুসারে কর্ম করিলেন, অমালেকের সহিত যুদ্ধ করিলেন; এবং মোশি, হারোণ ও হূর পর্বতের শৃঙ্গে উঠিলেন। আর এইরূপ হইল, মোশি যখন আপন হস্ত তুলিয়া ধরেন, তখন ইস্রায়েল জয়ী হয়, কিন্তু মোশি আপন হস্ত নামাইলে অমালেক জয়ী হয়। আর মোশির হস্ত ভারী হইতে লাগিল, তখন উঁহারা একখানি প্রস্তর আনিয়া তাঁহার নিচে রাখিলেন, আর তিনি তাহার উপরে বসিলেন, এবং হারোণ ও হূর একজন এক দিকে ও অন্য জন অন্য দিকে তাঁহার হস্ত ধরিয়া রাখিলেন। তাহাতে সূর্য অস্তগত না হওয়া পর্যন্ত তাঁহার হস্ত স্থির থাকিল। আর যিহোশূয় অমালেককে ও তাহার লোকদিগকে খড়্‌গধারে পরাজিত করিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, এই কথা স্মরণার্থে পুস্তকে লিখ, এবং যিহোশূয়ের কর্ণগোচরে শুনাইয়া দেও; কেননা আমি আকাশের নিচে হইতে অমালেকের নাম নিঃশেষে লোপ করিব।পরে মোশি এক বেদি নির্মাণ করিয়া তাহার নাম যিহোবা-নিঃষি [সদাপ্রভু আমার পতাকা] রাখিলেন। আর তিনি কহিলেন, সদাপ্রভুর সিংহাসনের উপরে হস্ত [উত্তোলিত হইয়াছে]; পুরুষানুক্রমে অমালেকের সহিত সদাপ্রভুর যুদ্ধ হইবে।[2]

অমালেক ইস্রায়েলের দূর্বলদের [নারী,শিশু, কিশোর] উপরে আক্রমন করে যখন তারা ক্লান্ত অবস্থায় মিশর  থেকে বের  হয়ে  যাত্র করছিল, সে পিতা ঈশ্বরকে ভয় করত না যার করনে সে এই দুঃসাহস করেছিল। তাই পিতা ঈশ্বর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তাকে এবং তার বংশধরদের তিনি ধ্বংস করে দেবেন,

স্মরণে রাখিও, মিসর হইতে তোমরা যখন বাহির হইয়া আসিয়াছিলে, তখন পথে তোমার প্রতি অমালেক কি করিল; তোমার শ্রান্তি ও ক্লান্তির সময়ে সে কি প্রকারে তোমার সহিত পথে মিলিয়া তোমার পশ্চাদ্বর্তী দুর্বল লোক সকলকে আক্রমণ করিল; আর সে ঈশ্বরকে ভয় করিল না। অতএব তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশ স্বত্বাধিকারের জন্য তোমাকে দিতেছেন, সেই দেশে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু চারিদিকের সকল শত্রু হইতে তোমাকে বিশ্রাম দিলে পর তুমি আকাশমণ্ডলের নিচ হইতে অমালেকের স্মৃতি লোপ করিবে; ইহা ভুলিয়া যাইও না।[3]

 

নবী শমূয়েল অমালের রাজা আগাগকে হত্যা করেন কারন আমালের দলবল ইস্রায়েলীয় দুর্বল স্ত্রীলোকদের, শিশুদের হত্যা করেছিল যখন তারা মিসর বের হয়ে যাত্রা পথে ছিল,

“পরে শমূয়েল কহিলেন, তোমরা অমালেকের রাজা অগাগকে এই স্থানে আমার নিকটে আন। তাহাতে অগাগ পুলকিত মনে তাঁহার নিকটে আসিলেন, তিনি বলিলেন, অবশ্য মৃত্যুর তিক্ততা অতীত হইল। কিন্তু শমূয়েল কহিলেন, তোমার খড়্‌গ দ্বারা স্ত্রীলোকেরা যেমন সন্তানহীনা হইয়াছে, তদ্রূপ স্ত্রীলোকদের মধ্যে তোমার মাতাও সন্তানহীনা হইবে; তখন শমূয়েল গিল্‌গলে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে অগাগকে খণ্ডবিখণ্ড করিলেন।”[4]

এখন আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন পিতা ঈশ্বর কেন সেই এমন কথা বলেছেন, সমালোচকেরা আপনাকে একটি ঘটনা দেখিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে কিন্তু তারা সেই ঘটার আগে কিছু ঘটে ছিল তা বলে নি এবং কেন এমন প্রেক্ষাপটের সৃষ্টি হলো তা আপনার কাছে লুকিয়ে রাখল।

একটা জাগতিক উদাহরন দ্বারা বিষয়টি আরো পরিস্কার করছি, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা বাংলার মানুষদের গুলি করে যে সময়ে বাংলার মানুষের প্রস্তুত ছিল না, আর সেই সময়ে তারা অনেক নারী শিশুর হত্যা করে, তার ফলে পরে বাংলার মানুষ তাদের যা আছে তা নিয়ে পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং অনেক পাকিস্তানিদের হত্যা করে। এখন যদি কেউ আপনাকে বলে বাংলার লোকের পাকিস্থানিদের হত্যা করেছে, তাদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে যা অন্যায় বাংলার লোকেরা অন্যায় করেছে! আপনার কাছে বিষয় নিশ্চই গ্রহন যোগ্য হবে না ঠিক তেমনি অমালেক আর তার দলবল নীরীহ ইস্রায়েলীয় নারী-শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল এবং পরে তার অন্যায়ের প্রতিকার করা হয়েছিল। তাই আমরা যদি Context না বুঝে ঘটনা পড়ি তবে আমরা বিভ্রান্ত হতে পারি কিন্তু আমরা যদি Context বুঝে পবিত্র শাস্ত্র পড়ি তবে আমাদের কেউ বিভ্রান্ত করতে পারবে না।



[1] ১শমূয়েল১৫:১-৩;

[2] যাত্রাপুস্তক১৭:৮-১৬;

[3] দ্বিতীয় বিবরন২৫:১৭-১৯;

[4] ১শমূয়েল১৫:৩২-৩৩;


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: