Tuesday, October 5, 2021

ইহুদিরা তাওরাত বিকৃত করেছিল যিরমিয় ৮:৮;?


 ইহুদিরা তাওরাত  বিকৃত করেছিল যিরমিয় ৮:৮;?

লেখকঃ পাষ্টর জনসন সরকার।

জাবাবঃ “তোমরা কেমন করিয়া বলিতে পার, আমরা জ্ঞানী, এবং আমাদের কাছে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা আছে? দেখ, অধ্যাপকদের মিথ্যা-লেখনী তাহা মিথ্যা করিয়া ফেলিয়াছে। [1]

এখানে লেখা হয়নি যে  নবী মোশীর তোরাহ [তাওরাত] ইহুদিরা বিকৃত করেছিল বরং এখানে লেখা আছে ইহুদি অধ্যপকেরা তাদের মিথ্যা লেখনি ব্যবহার করেছিল এবং তাদের মিথ্যা লেখনির দ্বারা তারা ঈশ্বরের বাক্যেকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছিল একই কথা প্রভু যীশু খ্রীষ্টও ইহুদিদের বলেছিলেন, “তোমরা ঈশ্বরের আজ্ঞা ত্যাগ করিয়া মনুষ্যদের পরম্পরাগত বিধি ধরিয়া রহিয়াছ। তিনি তাহাদিগকে আরও কহিলেন, তোমাদের পরম্পরাগত বিধি পালনের নিমিত্ত তোমরা ঈশ্বরের আজ্ঞা বিলক্ষণ অমান্য করিতেছ।[2] এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন তারা ঈশ্বরের বাক্য বিকৃত করে নি বরং তারা নিজেস্ব ব্যাখ্যা এবং নিজেস্ব লেখনির দ্বারা এই কাজ করেছিল , কেননা মোশি বলিয়াছেন,  ‘‘তুমি আপন পিতাকে ও আপন মাতাকে সমাদর কর,” আর ‘‘যে কেহ পিতার কি মাতার নিন্দা করে, তাহার প্রাণদণ্ড হউক।” কিন্তু তোমরা বলিয়া থাক, মনুষ্য যদি পিতাকে কিম্বা মাতাকে বলে, ‘আমা হইতে যাহা দিয়া তোমার উপকার হইতে পারিত, তাহা কর্বান্‌, অর্থাৎ ঈশ্বরকে দত্ত হইয়াছে,’ তোমরা তাহাকে পিতার কি মাতার জন্য আর কিছুই করিতে দেও না। এইরূপে তোমাদের সমর্পিত পরম্পরাগত বিধি দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করিতেছ; আর এই প্রকার অনেক ক্রিয়া করিয়া থাক।[3] 

ইহুদিরা ঈশ্বরের গ্রন্থের পাশাপাশি নিজেরাও কিছু গ্রন্থ লিখেছিল যেমনঃ তালমূদ। তারা  নিজেদের লেখা অনুসারে  চলতে পছন্দ করত তাই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যিরমিয় নবীর মতন একই কথা বলেছেন। নবী যিরমিয় সেই কথায় বুঝিয়েছেন ঈশ্বর তাকে বলেছেন, “তুমি তাহাদিগকে বলিবে, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা যদি আমার কথা না শুন; আমি তোমাদের সম্মুখে যে ব্যবস্থা দিয়াছি, সেই পথে না চল; আমিই তোমাদের কাছে যাহাদিগকে পাঠাইয়া আসিতেছি, কিন্তু প্রত্যুষে উঠিয়া পাঠাইলেও যাহাদের কথা তোমরা শুন নাই, আমার দাস সেই ভাববাদীদের বাক্য না শুন;”[4]

যদি সেই সময়ে তোরাহ[তাওরাত] বিকৃত হতো তবে ঈশ্বর কেন নবী যিরমিয়ের দ্বারা মানুষদের বলেছেন তোমরা আমার ব্যবস্থা [তোরাহ]  অনুসারে চল? এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যিরমিয় ৮:৮; ভার্সে তোরাহ বিকৃত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় নি এবং ইহুদি অধ্যাপকদের নিজেদের হাতে রচিত সেই সব লেখার কথা বলা হয়েছে।

নবী দানিয়েল নবী যিরমিয়ের এই কথাটি উল্লেখ করেছেন,

“তাঁহার প্রথম বৎসরে, তাঁহার রাজত্বের প্রথম বৎসরে, আমি দানিয়েল গ্রন্থাবলি দ্বারা বৎসরের সংখ্যা বুঝিলাম, অর্থাৎ যিরূশালেমের উৎসন্ন-দশা সমাপনে সত্তর বৎসর লাগিবে, সদাপ্রভুর এই যে বাক্য যিরমিয় ভাববাদীর নিকটে উপস্থিত হইয়াছিল, তাহা বুঝিলাম।[5] নবী দানিয়েলের কাছে মূল তোরাহ  ছিল এবং তিনি জানতে পেরেছিলেন নবী যিরমিয় কথা এবং নবী যিরমিয় কি লিখেছেন তাও তিনি বুঝেছিলেন। নবী দানিয়েল সেই সময়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং  বলেছিলেন ঈশ্বর তার শাস্ত্র রক্ষা করেছেন, এবং তার বিধান অনুসারে ধর্মিকরা চলছে কিন্তু কিছু লোক তার পথ থেকে দূরে সরে গেছে,

“আর আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলাম, ও পাপ স্বীকার করিয়া কহিলাম হে প্রভু, তুমিই সেই মহান ও ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগান ঈশ্বর, যিনি তাহাদের সহিত নিয়ম ও দয়া রক্ষা করেন, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে ও তাঁহার আজ্ঞা পালন করে। আমরা পাপ ও অপরাধ করিয়াছি, দুষ্টামি করিয়াছি ও বিদ্রোহী হইয়াছি, তোমার বিধি ও শাসনপথ ত্যাগ করিয়াছি’;”[6]

এছাড়াও তিনি বলেছেন কিভাবে ইস্রয়েলীয়রা তার ব্যবস্থা অমান্য করেছিল,

“হাঁ, সমস্ত ইস্রায়েল তোমার ব্যবস্থা লঙ্ঘন করিয়াছে, তোমার বাক্যে অবধান করিবার অনিচ্ছায় বিপথগামী হইয়াছে, সেই জন্য ঈশ্বরের দাস মোশির ব্যবস্থায় লিখিত অভিশাপ ও শপথ আমাদের উপরে বর্ষিত হইয়াছে, কারণ আমরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি।[7] 

কিন্তু তিনি বলেন নাই তোরাহ পরিবর্তন হয়েছে, মোশির ব্যবস্থায় যেরূপ লিখিত আছে, তদনুসারে এই সমস্ত অমঙ্গল আমাদের উপরে আসিয়াছে, তথাপি আমরা আপন আপন অপরাধ হইতে ফিরিবার জন্য, ও তোমার সত্য সম্বন্ধে বুদ্ধি লাভ করিবার জন্য, আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করি নাই।”[8] 

নবী দানিয়েল বলেছেন, “তোরাহতে[মোশীর ব্যবস্থায়] যেরূপ লেখা আছে” তাই সেটা বিকৃত হলে তার রেফারেন্স তিনি দিতেন না, কারন তার কাছেও তোরাহ ছিল যার থেকে তিনি উদৃতি করেছেন। এছাড়াও নবী ইষ্রা তোরাহ পাঠ করছেন এবং তার অর্থ অন্যদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন,

তাহাতে সপ্তম মাসের প্রথম দিনে ইষ্রা যাজক সমাজের সম্মুখে, স্ত্রী-পুরুষ এবং যাহারা শুনিয়া বুঝিতে পারে, তাহাদের সম্মুখে সেই ব্যবস্থা-পুস্তক আনিলেন।[9] পরে ইষ্রা মহান ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিলেন। আর সমস্ত লোক হাত তুলিয়া উত্তর করিল, আমেন, আমেন, এবং মস্তক নমনপূর্বক ভূমিতে মুখ দিয়া সদাপ্রভুর কাছে প্রণিপাত করিল। আর যেশূয়, বানি, শেরেবিয়, যামীন, অক্কূব, শব্বথয়, হোদিয়, মাসেয়, কলীট, অসরীয়, যোষাবদ, হানন, পলায় ও লেবীয়েরা লোকদিগকে ব্যবস্থা-পুস্তকের অর্থ বুঝাইয়া দিল; আর লোকেরা স্ব স্ব স্থানে দাঁড়াইয়া রহিল। এইরূপে তাহারা স্পষ্ট উচ্চারণপূর্বক সেই পুস্তক, ঈশ্বরের ব্যবস্থা, পাঠ করিল, এবং তাহার অর্থ করিয়া লোকদিগকে পাঠ বুঝাইয়া দিল।[10]

আমরা জানি যে তোরাহ বিকৃত হয়নি বিকৃত হয়েছিল মূলত সেই সময়ের ইহুদি অধ্যাপকদের লেখা গুলো সেই জন্য ঈশ্বর নবী যিরমিয়ের কাছে তার বাক্য দিলেন এবং যিরমিয় সেই সব কিছু শুনে সঠিক ভাবে লিখলেন এবং সেটা ঈশ্বরের গৃহে পুনরায় প্রবেশ করালেনঃ

“পরে যিরমিয় নেরিয়ের পুত্র বারূককে ডাকিলেন; এবং বারূক যিরমিয়ের প্রতি কথিত সদাপ্রভুর সমস্ত বাক্য তাঁহার মুখে শুনিয়া এক জড়ান পুস্তকে লিখিলেন। পরে যিরমিয় বারূককে আজ্ঞা করিলেন, বলিলেন, আমি রুদ্ধ আছি, সদাপ্রভুর গৃহে যাইতে পারি না। অতএব তুমি যাও, এবং আমার মুখে শুনিয়া যাহা যাহা এই পুস্তকে লিখিয়াছ, সদাপ্রভুর সেই সকল বাক্য উপবাস-দিনে সদাপ্রভুর গৃহে লোকদের কর্ণগোচরে পাঠ কর, আর তুমি আপন আপন নগর হইতে আগত সমস্ত যিহূদার সাক্ষাতেও পাঠ করিবে। হয় ত, সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহারা বিনতি উপস্থিত করিবে এবং প্রত্যেক জন আপন আপন কুপথ হইতে ফিরিবে, কেননা সদাপ্রভু এই জাতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত ক্রোধের ও রোষের কথা বলিয়াছেন। পরে নেরিয়ের পুত্র বারূক যিরমিয় ভাববাদীর আজ্ঞানুসারে সমস্ত কার্য করিলেন, ঐ পুস্তকে লিখিত সদাপ্রভুর বাক্য সদাপ্রভুর গৃহে পাঠ করিলেন।[11]

এমন কি কুরআনেও বলা হয়েছে কুরআনকে খণ্ড খণ্ড করে কিছু মানুষে বিকৃত করেছেঃ

যেমন আমি নাযিল করেছি যারা বিভিন্ন মতে বিভক্ত তাদের উপর। যারা কোরআনকে খন্ড খন্ড করেছে। অতএব আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই ওদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।[12]

এই আয়তের ব্যাখ্যায় তারা বলে এখানে ইহুদি খ্রীষ্টানদের কথা বলা হয়েছে [যদিও মূল আরবীতে তা লেখা নাই] কারন এখানে বিভক্তের জন্য যে আরবি শব্দের ব্যবহার হয়েছে তার দ্বারাই বোঝা যায় এটা ইহুদি খ্রীষ্টানদের কথা বলে নি

১) عضين শব্দের অর্থ করা হয়েছে যার অর্থঃ জাদু, গল্প। [বাগভী] এ অর্থের সমর্থনে সীরাত গ্রন্থে এসেছে যে, ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাহ কুরাইশের এক সমাবেশে হাজির হয়ে বললঃ হজ্জের মওসুম শুরু হয়ে গেছে। চতুর্দিক থেকে মানুষ এখন তোমাদের কাছে আসবে। এদিকে তোমাদের সাথী (মুহাম্মদ) সম্পর্কে তারা জেনে গেছে। তাই তোমরা তার ব্যাপারে একজোট হয়ে একটি মত পোষণ কর। তারা বললঃ তুমিই বল। সে বললঃ তোমরাই বল। তখন তারা বললঃ আমরা বলব সে গণক। তখন সে বললঃ সে গণক নয়।-তাফসীরে জাকারিয়া[13] আরবী عضين শব্দের অর্থ যদি “জাদু” হয়!! তবে কুরআনের আয়াত নিয়ে কারা জাদু করে? ইহুদি- খ্রীষ্টানরা? নাকি মুসলিমরা!!!

তারা ৯১ নং আয়াতকে সেই ভাবে ব্যাখ্যা করবেন না যেভাবে তা লেখা আছে [যারা কোরআনকে খন্ড খন্ড করেছে] তখন তারা বলবেন এর অর্থ এটা নয়। তখন তারা অন্য আয়াতের সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

 



[1] যিরমিয়৮:৮;

[2] মার্ক৭:৮-৯;

[3] মার্ক৭:১০-১৩;

[4] যিরমিয়২৬:৪-৫;

[5] দানিয়েল :২;

 

[6] দানিয়েল :৪-৫

[7] দানিয়েল :১১;

[8] দানিয়েল :১৩;

[9] নহিমিয় ৮:২;

[10] নহিমিয় ৮:৬-৮;

[11] যিরমিয়৩৪:৪-৮;

[12] সূরা১৫:৯০-৯২;


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: