Thursday, October 31, 2019

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি দাউদ নবীর বিষয়ে ভূল তথ্য দিয়েছেন?

মি.জনসন সরকার

সমালোচকের দাবিঃ  


 গ্রন্থঃ কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসাই ধর্ম, পৃষ্টাঃ ২৭;
                                                                   
সমালোচকের দাবির যৌক্তিক জাবাবঃ
এখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে এক মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
১ম অভিযোগ হলোঃ ‘দর্শন রুটি’ ভোজন কারার সময়ে দায়ুদ ‘একা’ ছিলেন তার সাথে কেউ ছিলেন না এবং তিনি তার সঙ্গিকে তা খেতে দিয়েছিলেন কথাটি ভুল।
২য় অভিযোগ হলোঃ ‘অবিয়াথর’ নামক কোন নামে সেই সময়ে কোন যাজক ছিলেন না।          
আসুন আমার দেখি এটা পবিত্র আত্মার লেখনির ভুল নাকি সমালোচক মহাদয়ের ভুলঃ
অভিযোগের জবাবঃ 
প্রথমত, লেখক মহাদয় ১ শমূয়েল ২১ অধ্যায় এবং ২২ অধ্যায়ের কথা লিখেছেন,  কিন্তু পদ সংখ্যা কত?  তিনি উল্লেখ করেন নি, হয় ত জানতেন না।
দ্বিতীয়ত, তিনি উল্লেখ করেন নি ১শমূয়েল ২১ অধ্যায় এবং ২২ অধ্যায়ের আসলে কি লেখা রয়েছে! এ থেকে বোঝা যায় এটা তিনি নিজের মত করে বানিয়ে লিখেছেন।
১শমূয়েল ২১:২-৭; লেখা আছে,  
 দায়ূদ নোব শহরে যাজক অহীমেলকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন|অহীমেলক দাযূদের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে এলেন| তিনি তো ভয়ে কাঁপছিলেন| তিনি দায়ূদকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার, তুমি একা কেন? তোমার সঙ্গে কাউকে দেখছি না কেন?” দায়ূদ বললেন, “রাজা আমাকে একটি বিশেষ আদেশ দিয়েছেন| তিনি আমাকে বলেছেন, ‘এই আসার উদ্দেশ্য নিয়ে তুমি কাউকে কিছু জানাবে না| আমি তোমাকে কি বলছি কেউ যেন জানতে না পারে|’ আমার লোকদের বলছি কোথায় ওরা আমার সঙ্গে দেখা করবে| এখন বলো, তোমার সঙ্গে কি খাবার আছে? তোমার কাছে থাকলে পাঁচটি গোটা রুটি আমাকে দাও, না হলে অন্য কিছু খেতে দাও|”
যাজক বললেন, “আমার কাছে তো সাধারণ কোন রুটি নেই, কিন্তু পবিত্র রুটি আছে| তোমার লোকরা তা খেতে পারে, অবশ্য যদি কোন নারীর সঙ্গে তাদের য়ৌন সম্পর্ক না থেকে থাকে|”
 দায়ূদ যাজককে বললেন, “না, এরকম কোন ব্যাপার নেই|” যুদ্ধে যাবার সময় এবং সাধারণ কাজের সময়ও তারা তাদের দেহগুলিকে শুদ্ধ রাখে| তাছাড়া এখন আমরা একটি বিশেষ কাজে এসেছি, সুতরাং অশুদ্ধ থাকার প্রশ্নই ওঠে না|” পবিত্র রুটি ছাড়া সেখানে অন্য কোন রুটি ছিল না| যাজক দায়ূদকে তা- দিলেন| এই রুটিই তারা প্রভুর সামনে পবিত্র টেবিলে রেখে দিত| প্রতিদিন তারা এগুলো বদলে টাটকা রুটি রেখে দিত
এবং ১শমূয়েল ২২:১৯-২০; পদ থেকে জানা যায়,  রাজার আদেশে সেই দিন ৮৫ জনকে হত্যা করা হয়েছিল যাদের মধ্যে অহীমেলকও ছিলেন। শুধু বেঁচে গিয়েছিলেন অবিয়াথর, যিনি অহিমেলের পুত্র ছিলেন এবং অহিমেলকের পিতা ছিলেন অহীটুব|
নোব ছিল যাজকদের শহর| শহরের সকলকেই দোযেগ হত্যা করল| পুরুষ, নারী, শিশু সকলকেই সে তরবারির কোপে শেষ করে দিল| সেই সঙ্গে মেরে ফেলল তাদের গরু, গাধা আর মেষগুলোকেও|
 সেই সময়ে অহীটুবের পুত্র অহীমেলকের  একটি মাত্র পুত্র রক্ষা পাইলেন; তার নাম  অবিয়াথর|  তিনি দাযূদের কাছে  পালিয়ে গেলেন।”

সমস্ত লোকের মুত্যুর পর একমাত্র অহীমেলক যাজকের পুত্র অবিয়াথর জীবিত ছিলেন আর এই বিষয়ে ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন আর ঠিক তাই ঘটে ছিল,  একজন মানুষকে [অবিয়াথরকে] আমি বাঁচাব| সেই আমার বেদীতে যাজকের কাজ করবে| সে দীর্ঘজীবী হবে| যতদিন পর্য়ন্ত তার দৃষ্টিশক্তি থাকবে, শরীরে শক্তি থাকবে ততদিন সে বেঁচে থাকবে| তোমার উত্তরপুরুষরা তরবারির কোপে মরবে| আমি তোমাকে এমন একটি চিহ্ন দেখাব যাতে বুঝতে পারবে যে এইসব কথা সত্য| একই দিনে তোমার দুই পুত্র হফ্নি আর পীনহস মারা যাবে| নিজের জন্য আমি একজন বিশ্বস্ত যাজক মনোনীত করব| সে আমার কথা শুনবে এবং আমি যা চাই তাই করবে| আমি তার পরিবারকে শক্তিশালী করব| আমার মনোনীত রাজার সামনে এই যাজক সর্বদা আমার সেবা করবে|”- [১শমূয়েল ২:৩৩-৩৫;]

তাই তিনি তার পিতার স্থানে বসে ছিলেন এবং মহাযাজক হয়ে ছিলেন “যখন অবিয়াথর দাযূদের কাছে গিয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁর সঙ্গে একটা এফোদ নিয়েছিলেন|[১শমূয়েল ২৩:৬;]  এফোদ মহাযাজকের পোষাক [যাত্রাপুস্তক ২৮:৪; ২৯:৫; ৩৯:২; লেবীয় পুস্তক ৮:৭;] এছাড়াও অবিয়াথরকে সরাসরিভাবে ‘যাজক’ বলা হয়েছে [১শমূয়েল ২৩:৯; ৩০:৭; ১রাজাবলি ১:১৯;]  অবিয়াথর যাজকের দায়িত্ব পালন করতেন [১রাজাবলি ৪:৪;]
এবং পবিত্র শাস্ত্রে এই নিয়ম বর্ননা করা হয়েছে যে, প্রথম পুত্র জন্মগত ভাবেই ইয়াওয়ে এলোহীমের [সদাপ্রভু ঈশ্বরের] সেবার জন্য বেছে নেওয়া হয়ছে [যাত্রাপুস্তক ১৩:২; ২২:২৯; ৩৪:১৯; গণনাপুস্তক ৩:১৩; ৮:১৭-১৮;]। তাই তারা জন্মগত ভাবেই ইয়াওয়ে এলোহীমের সেবাকারি [যাজক]।  

এই ঘটান গুলো থেকে আমরা যে তথ্য পাই তা হলোঃ
*যাজক অহীমেলক দায়ূদকে সাহায্য করার জন্য তার প্রান দন্ড হয়েছিল [১শমূয়েল ২২:১২-২০;] তাই তার পুত্র  অবিয়াথর তার যাজকত্ব লাভ করে ছিলেন [গণনাপুস্তক৮:১৭-১৮;১শমূয়েল ২৩:৬;১শমূয়েল ২৩:৯; ৩০:৭; ১রাজাবলি ১:১৯; ১শমূয়েল ২:৩৩-৩৫;]  
*যাজকের কাছে দায়ূদ  একা গিয়েছিলেন তার নিজের এবং তার সঙ্গিদের খাবারের ব্যবস্থা করতে। [১শমূয়েল ২১:৪-৭;]
*যাজক দায়ূদকে পবিত্র রুটি দিলেন যেন তিনি এবং তার সঙ্গিরা তা খেতে পারেন। [১শমূয়েল ২১:৪-৭;]

১শমূয়েল ২১:২-৭; অনুযায়ি দায়ুদ তার নিজের এবং তার  সঙ্গিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন,
তিনি তাদের বললেন, দাযূদ তাঁর সঙ্গীরা খাবারের অভাবে ক্ষুধার্ত হয়ে কি করেছিলেন তোমরা কি পড় নি? অবিযাথর যখন প্রধান যাজক ছিলেন সেই সময় দাযূদ কেমন করে ঈশ্বরের গৃহে গিয়ে য়ে রুটি যাজক ছাড়া অন্য আর কারো খাওযা বিধি-সম্মত ছিল না, তা নিজে খেয়েছিলেন তাঁর সঙ্গীদের খাইয়েছিলেন?’ মার্ক ২:২৫-২৬;
প্রভু যীশু খ্রীষ্ট অবিযাথর যাজকের নাম উল্লেখ করেছেন কারন তিনিই জন্মগত ভাবেই[গণনাপুস্তক ৮:১৭-১৮;]  ছিলেন ইয়াওয়ে এলোহীমের [সদাপ্রভু ঈশ্বরের] মনোনিত মহাযাজক, কারন তার জন্মের বিষয়ে এবং তার যাজকত্বের বিষয়ে ইয়াওয়ে এলোহীমে একটি গুরুত্বপূর্ন ভবিষ্যৎবনী করেছিলেন [১শমূয়েল ২:৩৩-৩৫;] এবং সেই ভবিষ্যৎবনী হুবহু পূর্নতা লাভ করেছিল [১শমূয়েল ২২:১২-২০;]
প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কোথায় বলেছেন যে, দায়ূদ এবং তার সঙ্গীরা ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করেছিলেন?
বরং তিনি এটা বলেছেন, দায়ূদ একা ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করেছিলেন এবং তার সঙ্গীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে ছিলেন এবং তারা উভয়ে তা খেয়েছিলন।
১শমূয়েল ২১:৪-৭; আমরা মিলিয়ে দেখতে পারিঃ
যাজক বললেন, “আমার কাছে তো সাধারণ কোন রুটি নেই, কিন্তু পবিত্র রুটি আছে| তোমার লোকরা তা খেতে পারে, অবশ্য যদি কোন নারীর সঙ্গে তাদের য়ৌন সম্পর্ক না থেকে থাকে|”
 দায়ূদ যাজককে বললেন, “না, এরকম কোন ব্যাপার নেই|” যুদ্ধে যাবার সময় এবং সাধারণ কাজের সময়ও তারা তাদের দেহগুলিকে শুদ্ধ রাখে| তাছাড়া এখন আমরা একটি বিশেষ কাজে এসেছি, সুতরাং অশুদ্ধ থাকার প্রশ্নই ওঠে না|” পবিত্র রুটি ছাড়া সেখানে অন্য কোন রুটি ছিল না| যাজক দায়ূদকে তা- দিলেন| এই রুটিই তারা প্রভুর সামনে পবিত্র টেবিলে রেখে দিত| প্রতিদিন তারা এগুলো বদলে টাটকা রুটি রেখে দিত
তাই এখান থেকে সুস্পষ্টরূপে বোঝা যাচ্ছে যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, পবিত্র আত্মা কেউই ভুল তথ্য দেন নি, বরং সমালোচক মহাদয় নিজেই সম্পূর্ন ভুল তথ্য দিয়েছেন তা প্রমানিত।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.