লেখকঃ পাষ্টর জনসন সরকার।
অভিযোগঃ বাইবেলে মক্কা নগরীকে “বাক্যা” নামে উল্লেখিত রয়েছে
“Who passing
through the valley of Baca make it a well; the rain also filleth the pools.”- Psalm 84:6;
জবাবঃ পবিত্র বাইবেলের গীতসংহিতা ৮৪
অধ্যায় ৬ পদে “মক্কা” নামক নগরির বিষয়ে কিছুই বলা হয় নি এই দাবিটি সম্পূর্ন বানোয়াট।
প্রথমত, আমরা যদি প্রশঙ্গ (Context) পড়ি
তখন আমরা দেখতে পাই উক্ত অধ্যায়ে “মক্কা” নামক নগরীর বিষয়ে কিছুই বলা হয় নি,
“হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তোমার আবাস কেমন
প্রিয়! আমার প্রাণ সদাপ্রভুর প্রাঙ্গণের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে, এমন কি, মূর্চ্ছিত হয়, আমার
হৃদয় ও আমার মাংস জীবন্ত ঈশ্বরের উদ্দেশে উচ্চধ্বনি করে। সত্য, চটকপক্ষী এক কুলায় পাইয়াছে,
খঞ্জনপক্ষী নিজ শাবক রাখিবার এক বাসা পাইয়াছে; তোমার বেদিই
সেই স্থান, হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, আমার রাজন্, আমার ঈশ্বর। ধন্য তাহারা, যাহারা তোমার গৃহে বাস করে, তাহারা সতত তোমার
প্রশংসা করিবে। [সেলা] ধন্য সেই ব্যক্তি, যাহার বল তোমাতে, [সিয়োনগামী] রাজপথ যাহার হৃদয়ে রহিয়াছে।তাহারা
ক্রন্দনের তলভূমি দিয়া গমন করিয়া তাহা উৎসে পরিণত করে;প্রথম বৃষ্টি
তাহা বিবিধ মঙ্গলে ভূষিত করে। তাহারা
উত্তর উত্তর বলবান হইয়া অগ্রসর হয়,প্রত্যেকে সিয়োনে ঈশ্বরের
কাছে দেখা দেয়।” -গীতসংহিতা৮৪:১-৭;
(কেরী)
পবিত্র বাইবেলে ইয়াওয়ের (সদাপ্রভুর) গৃহ বলতে জেরুশালেম উপাসনালয়কে বোঝায় (গীতসংহিতা২৩:৬,২৭:৪,৬৫:৪;) মক্কাকে বোঝায় না, তাঁর আবাস ভূমি বলতে সিয়োনকে বোঝায় (গীতসংহিতা৪৩:৩;) মক্কাকে বোঝায় না।
দ্বিতীয়ত, আমরা যদি এর শব্দার্থ
দেখি তবে মোটেই “মক্কা” নগরীর বিবরণ পাই না,
Who passing through the valley
of Baca make it a well; the rain also filleth the pools.- King James Bible (Psalm
84:6)
হিব্রু বাক্যা ( בָּכָא)
শব্দের অর্থ হলোঃ "weeping"/a valley in Palestine[1] যা মোটেই “মক্কা” নয় কারন মক্কা শব্দের অর্থ “the holy city of Islam in Saudi Arabia, a place to which many people are attracted”[2]
"weeping"/a
valley in Palestine” আর “the holy city of Islam in Saudi Arabia, a place to which many people are attracted” কিভাবে এক জায়গা হতে পারে? শব্দার্থ
অনুসারেও এই দুটি স্থান মেলে না।
তৃতীয়ত, পবিত্র বাইবেলে অন্য স্থানেও বাক্যা ( בָּכָא)/ "weeping"/a
valley in Palestine” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যা মুসলিম দাঈদের (প্রচারকদের)
মিথ্যাচার চুরমার করে দেয়,
সেই সকল বাকা বৃক্ষের (הַבְּכָאִ֖ים (hab·bə·ḵā·’îm)) শিখরে সৈন্যগমনের মত শব্দ শুনিলে তুমি
উদ্যোগ করিবে; কেননা তখনই সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের
সৈন্যকে আঘাত করিবার জন্য তোমার সম্মুখে অগ্রসর হইয়াছেন।
-২শমূয়েল৫:২৪;
King James Bible
And let it be, when thou hearest the sound of a
going in the tops of the mulberry trees(הַבְּכָאִ֖ים (hab·bə·ḵā·’îm)), that
then thou shalt bestir thyself: for then shall the LORD go out before thee, to
smite the host of the Philistines.
এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় পবিত্র বাইবেলে মোটেই মক্কা নগরীর
বিষয়ে কিছু বলা হয় নি এটা সম্পূর্ন মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু না।
ইসলাম এই বিষয়ে কি বলে?
ইসলামে মক্কা নগরীর অবস্থান এবং কাবা ঘরের অবস্থান নিয়ে বৈপরীত্য রয়েছে। হযরত মুহাম্মদের জন্মের পূর্বেই আল মক্কা নগরী ছিল কিন্তু তা আরবের মক্কা নয় বরং সাবেঈণ সম্প্রদায়ের মন্দির যা ইয়েমেনে অবস্থিত এবং আরবে এবং তার আসেপাশে অনেক কাবা ঘর ছিল যা মূলত মূর্তিপূকজদের সাবেঈন সম্প্রদায়ের উপাসনায় ছিল।
Almaqah or Almuqh (Sabaean: Arabic: المقه) was the Moon god of the ancient Yemeni kingdom
of Saba'. He was also worshipped in Dʿmt and Aksum in Ethiopia and Eritrea.[3]
১। কাবা ঘর ইব্রাহীমের তৈরী করা নির্ধারিত স্থানে পুরা নির্মান
করা হয় নি,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০/ আম্বিয়া কিরাম ('আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) - 60/ Prophets ৩৩৬৮
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
[আয়িশা (রাঃ)-কে বলেছেন, তুমি কি জান তোমার কাউম যখন কা’বা ঘর নির্মাণ করেছে, তখন তারা ইবরাহীম (আঃ)-এর
ভিত্তি হতে তা ছোট করেছে? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি তা ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির উপর পুনর্নির্মাণ
করবেন না? তিনি বললেন, যদি তোমার
কাওম কুফরী হতে অল্পকাল আগে আগত না হতো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, যদি ‘আয়িশাহ
(রাঃ) এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনে থাকেন,
তবে আমি মনে করি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতীমে
কা’বার সংলগ্ন দু’টি কোণকে চুমু দেয়া
একমাত্র এ কারণে পরিহার করেছেন যে, কা’বার
ঘর ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির উপর পুরাপুরি নির্মাণ করা হয়নি। রাবী ইসমাঈল (রহ.) বলেন, ইবনু আবূ বকর হলেন,
আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর। (১২৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ
৩১১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১২৬)[4]
২। হযরত মুহাম্মদের জন্মের পূর্বেও কাবা ছিল যা ইয়েমের আল
মক্কা শহরে অবস্থিত ছিল, কিন্তু হযরত মুহাম্মদ তার অনুসারি পাঠীয়ে তা ধ্বংস করেছিলেন,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪/ মাগাযী [যুদ্ধ] (كتاب المغازى) - 64/ Military Expeditions
led by the Prophet (pbuh) (Al-Maghaazi)
৪৩৫৫ জারীর (ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ বাজালী) (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে একটি ঘর ছিল যাকে
‘যুল খালাসা’, ইয়ামানী কা‘বা এবং সিরীয় কা‘বা৭৯ বলা
হত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে
বললেন, তুমি কি যুল-খালাসা থেকে আমাকে স্বস্তি দেবে না?
এ কথা শুনে আমি একশ’ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী নিয়ে
ছুটে চললাম। আর এ ঘরটি ভেঙ্গে টুকরা করে দিলাম এবং সেখানে যাদেরকে পেলাম তাদের
হত্যা করে ফেললাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে এসে তাঁকে এ সংবাদ জানালাম। তিনি আমাদের জন্য এবং (আমাদের
গোত্র) আহমাসের জন্য দু‘আ করলেন। [৩০২০] (আধুনিক প্রকাশনীঃ
৪০০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১৩)[5]
তাই আমরা দেখতে পাই ইসলামে মক্কা নগরীর অবস্থান এবং কাবা ঘরের
অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে তাই পবিত্র বাইবেলের উপরে প্রশ্ন করার আগে তাদের
নিজেদের ধর্ম নিয়ে চর্চা করা উচিত।
0 coment rios: