যোহন ১০:৩০ পদ কি খ্রিস্টের ঈশ্বরত্বকে নির্দেশ করে না?
.
(মুসলিম প্রচারকদের অভিযোগসমূহের জবাব)
.
.
"আমি ও পিতা, আমরা এক।"
(যোহন ১০:৩০ (কেরী))
এক্ষেত্রে উক্ত পদকে কেন্দ্র করে প্রভু যীশু খ্রিস্টের ঈশ্বরত্ব অস্বীকার করার জন্য মুসলিমগণ বেশ কিছু অভিযোগ পেশ করার চেষ্টা করে।
এসকল অভিযোগের জবাব নীচে তুলে ধরা হল:
.
.
🔴 অভিযোগ ১: যীশু ঈশ্বর নন, কারণ এখানে কেবল একই উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে!
জবাব:
তাদের এই "উদ্দেশ্য" এর দাবি যদি মেনে নেওয়া হয়, তবে দেখুন তো এখানে উদ্দেশ্য কী ছিল?
২৮ পদে প্রভু যীশু বলছেন,
"আর আমি তাহাদিগকে অনন্ত জীবন দিই,
তাহারা কখনই বিনষ্ট হইবে না, এবং
কেহই আমার হস্ত হইতে তাহাদিগকে কাড়িয়া লইবে না।"
(যোহন ১০:২৮ (কেরী))
২৯ পদে পিতা ঈশ্বর সম্পর্কে বলা হচ্ছে,
"...কেহই পিতার হস্ত হইতে কিছুই কাড়িয়া লইতে পারে না।"
(যোহন ১০:২৯ (কেরী))
অর্থাৎ এখানে এটা স্পষ্ট যে,
✅ প্রভু যীশু অনন্ত জীবন দান করেন, কেউ তাঁর কাছ থেকে খ্রিস্টের প্রকৃত অনুসারীদের কেড়ে নিতে পারবে না;
✅ পিতা ঈশ্বরও অনন্ত জীবন দান করেন; পিতা ঈশ্বরের কাছ থেকেও কেউ কখনও প্রকৃত বিশ্বাসীকে কেড়ে নিতে পারবে না।
অর্থাৎ এই "অনন্ত জীবন" প্রদানের উদ্দেশ্যে পিতা এবং যীশু হলেন এক।
এখন, অনন্ত জীবন ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ দিতে পারেন না! নবী বা ভাববাদীরা কেবল অনন্ত জীবনের সংবাদ দিতে পারেন; কিন্তু অনন্ত জীবন প্রদানের ক্ষমতা তাদের নেই!
দেখুন, মুসলিমরা যে মুহাম্মাদকে নবী হিসেবে বিশ্বাস করেন, তার সম্পর্কে কী বলা হচ্ছে:
قُلْ مَا كُنتُ بِدْعًا مِّنَ ٱلرُّسُلِ وَمَآ أَدْرِى مَا يُفْعَلُ بِى وَلَا بِكُمْۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ وَمَآ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٌ مُّبِينٌ
"বল, ‘আমি রাসূলদের মধ্যে নতুন নই। আর আমি জানি না আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে। আমার প্রতি যা ওহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।"
(কুরআন ৪৬:৯, অনুবাদ: বায়ান ফাউন্ডেশন)
অর্থাৎ অনন্ত জীবন দানের ক্ষমতা মুহাম্মাদের নেই, কারণ তিনি কেবল একজন মানুষ আর ইসলামের দাবি অনুযায়ী আল্লাহর বার্তাবাহক!
ইসলামের দিক দিয়েও যদি বলা হয়, তবে জান্নাতের অনন্ত জীবন দান করার ক্ষমতা কেবল আল্লাহ ছাড়া আর কোনো নবীর কাছে নেই!
আর এখানেই প্রভু যীশু বলছেন,
"আর আমি তাহাদিগকে অনন্ত জীবন দিই..."
(যোহন ১০:২৮ (কেরী))
অর্থাৎ প্রভু যীশুর অনন্ত জীবন দানের ক্ষমতা প্রমাণ করে যে, প্রভু যীশু স্বয়ং ঈশ্বর!
এখানে আমরা যদি আরও খেয়াল করি, তবে যোহন ১০:৩০ পদের গ্রীকে আমরা পাই:
ἐγὼ καὶ ὁ Πατὴρ ἕν ἐσμεν
(এগো কাই হো পাতের হেন্ এসমেন্)
"I and My Father are one."
(John 10:30 (NKJV))
এখানে যদি ভালভাবে খেয়াল করা হয়, তবে:
১) খ্রিস্ট নিজেকে বলছেন ἐγὼ (এগো) - যা হল Personal Pronoun.
২) পিতাকে Definite Article সহ বলা হচ্ছে ὁ Πατὴρ (হো পাতের) যেখানে Πατὴρ (পাতের) হল পুরুষবাচক বিশেষ্য (Masculine Noun).
অর্থাৎ খ্রিস্টকে Personal Pronoun সহ ভিন্ন ব্যক্তি আকারে এবং পিতাকে Definite Article সহযোগে Masculine Noun এর মাধ্যমে ভিন্ন আরেক ব্যক্তি আকারে দেখানো হয়েছে - যা তুলে ধরে যে, পিতা ঈশ্বর এবং পুত্র যীশু খ্রিস্ট দুজন ভিন্ন ব্যক্তি।
কিন্তু যখন যোহন ১০:৩০ পদে বলা হচ্ছে ἕν (হেন) অর্থাৎ "এক", তখন এটা গ্রীকে ক্লীব-লিঙ্গ বা Neuter Gender যা Numerical One-কে তুলে ধরছে; কোনো পুরুষবাচক, স্ত্রীবাচক কোনো কিছুকে তুলে ধরছে না।
অর্থাৎ গ্রীকে ἕν (হেন) দ্বারা এক অভিন্ন সত্ত্বা (essence)-কে তুলে ধরা হচ্ছে - যে অভিন্ন একক সত্ত্বায় দুজন ভিন্ন ঐশ্বরিক ব্যক্তি পিতা ঈশ্বর ও পুত্র যীশু বিদ্যমান।
এক্ষেত্রে লক্ষ্য করুন যোহন ১৭:৩ পদে পিতাকে বলা হয়েছে, "একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর" (যোহন ১৭:৩ (BCV))।
অর্থাৎ, পিতা হলেন সমস্ত ঐশ্বরিকতার উৎস (source of all divinity)।
আর যখন যোহন ১০:৩০ পদে ἕν (হেন) দ্বারা Neuter এবং Numerical One-কে নির্দেশ করা হচ্ছে, তখন এটা প্রমাণ করছে যে, একক ঐশ্বরিক সত্ত্বায় যে পুত্রকে আমরা পাচ্ছি, সেই পুত্রের মধ্যে সেই একই ঐশ্বরিক সত্ত্বা বিদ্যমান - যে ঐশ্বরিক সত্ত্বা পিতার মধ্যেও বিদ্যমান!
.
.
.
🔴 অভিযোগ ২: যীশু ঈশ্বর নন কারণ পিতা ঈশ্বর যীশুর থেকেও মহান!
জবাব:
প্রভু যীশু পিতা সম্পর্কে বলেন,
"আমার পিতা...তিনি সর্ব্বাপেক্ষা মহান্..." (যোহন ১০:২৯ (কেরী))
কারণ এখানে ত্রিত্ববাদী (Trinity) ঈশ্বরের মধ্যে দুই ব্যক্তি - পিতা ও পুত্রের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা (role) প্রকাশ পাচ্ছে!
এক্ষেত্রে বিষয়টির সঙ্গে দুটি চরিত্র অন্তর্ভুক্ত:
১) দাসের চরিত্র;
২) ঐশ্বরিক প্রেমের চরিত্র।
এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি কিছুটা সহজ হতে পারে!
ধরুন, একজন অফিসে দুজন কর্মচারী রয়েছেন - একজন কর্মচারী হলেন সেই অফিসের বস বা প্রধান কর্মকর্তা এবং অপরজন সেই বসের অধীনে সাধারণ একজন কর্মকর্তা।
অফিসে দুজন ব্যক্তির কাজের ভূমিকা (role) ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ের!
কিন্তু তাদের মূল প্রকৃতি হল, তারা উভয়ই মানুষ!
একইভাবে ত্রিত্ববাদী (Trinity) এর মধ্যে পিতা হলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে (যোহন ১৭:৩ দ্রষ্টব্য) এবং তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা (যোহন ৫:৩০ দ্রষ্টব্য) আর তাঁর সিদ্ধান্ত পুত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ার জন্য পুত্র, পিতার সেই সিদ্ধান্তেরই অনুসরণ করে সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে থাকেন। এভাবে পিতার পর্যায় সর্বোচ্চ, পুত্রের ভূমিকা সেই পর্যায়ের অনুগামী এবং এভাবে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় (role) পিতা ও পুত্রের পর্যায় ভিন্ন ভিন্ন।
কিন্তু মূল প্রকৃতিতে পিতা ও পুত্র উভয়ই ঐশ্বরিক প্রকৃতিসম্পন্ন!
✅এক্ষেত্রে যীশু খ্রিস্টের দুটি চরিত্রে এই বিষয়টির দুরকম প্রকাশ হবে:
১) দাসের চরিত্র:
এক্ষেত্রে যখন পুত্র যীশু ঈশ্বর হয়েও মানবজাতির পাপ তুলে নিতে মনুষ্য হয়ে দাসের রূপ ধারণ করলেন, তখন সেই দাসের চরিত্র থেকে পিতা ঈশ্বর সত্ত্বাগতভাবে উর্ধ্বে। ফিলীপীয় এর পদে আমরা পাই:
"তিনি স্বভাবগতরূপে ঈশ্বর হয়েও ঈশ্বরের সমকক্ষ হওয়ার অবস্থান আঁকড়ে ধরে রাখার কথা ভাবেননি, কিন্তু নিজেকে রিক্ত করে দিয়ে, তিনি ক্রীতদাসের রূপ ধারণ করলেন, মানব-সদৃশ হয়ে জন্ম নিলেন ও মানবাকারে প্রত্যক্ষ হয়ে তিনি নিজেকে অবনত করলেন..."
(ফিলিপীয় ২:৬-৮ (BCV))
.
.
২) ঐশ্বরিক প্রেমের চরিত্র:
এই ঐশ্বরিক চরিত্রই প্রভু যীশু খ্রিস্টের মূল চরিত্র যা তাঁর মূল ঐশ্বরিক সত্ত্বা হতে আগত। আর এই ঐশ্বরিক চরিত্রে যখন তিনি পিতার নির্দেশের অনুগামী হন, তখন তাঁর এই অনুগামিতা কেবল ভূমিকাগত (role) অবস্থান এর পার্থক্যকে তুলে ধরে; কিন্তু সত্ত্বাগতভাবে (in essence) পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু একই পর্যায়ের ঐশ্বরিক সত্ত্বা।
একারণে ঐশ্বরিক পর্যায়ে যখন প্রভু যীশু, পিতা ঈশ্বরের অনুগামী হন, তবে সেখানে দাস ও প্রভুর সম্পর্ক কাজ করে না; বরং সেখানে কাজ করে ঐশ্বরিক প্রেমের সম্পর্ক!
খেয়াল করুন বাইবেল বলছে:
"যীশু তাদের উত্তর দিলেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে ব্যক্তি পাপ করে, সে পাপেরই দাসত্ব করে। কোনও দাস *পরিবারে* স্থায়ী জায়গা পায় না, কিন্তু *পরিবারে পুত্রের স্থান চিরদিনের।*
তাই *পুত্র যদি তোমাদের মুক্ত করেন,* তাহলেই তোমরা প্রকৃত মুক্ত হবে।”" (যোহন ৮:৩৪-৩৬ (BCV))
এখানে লক্ষ্য করুন - যীশু শিক্ষা দেওয়ার সময় তুলনা কীভাবে পেশ করছেন: "কোনও দাস পরিবারে স্থায়ী জায়গা পায় না, কিন্তু পরিবারে পুত্রের স্থান চিরদিনের"; অর্থাৎ এখানে খ্রিস্ট নিজেকে "পুত্র" এবং "পরিবার" এর সাথে তুলনা করেছেন আর তারপর নিজেকে মুক্তিদাতা হিসেবে ইঙ্গিত করেছেন। আর এই পুত্র এর সম্পর্ক কার সাথে?
যীশু নিজেই বলেন, "তাই এখন *পিতা, জগৎ সৃষ্টির পূর্বে তোমার কাছে* আমার যে মহিমা ছিল, তোমার সান্নিধ্যে আমাকে সেই মহিমায় ভূষিত করো।" (যোহন ১৭:৫ (BCV))
অর্থাৎ, বিশ্বজগৎ সৃষ্টির আগে থেকেই পিতা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রিস্টের মধ্যে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক বিদ্যমান এবং তা যেন এক পরিবারের মত!
অর্থাৎ যীশু এবং পিতা ঈশ্বরের সম্পর্ক হল অনন্ত প্রেমের সম্পর্ক! সন্তান যেমন মায়ের আজ্ঞা পালন করে ভালবাসার প্রকাশস্বরূপ, তেমনি যীশু খ্রিস্ট, পিতা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেন পিতা-পুত্রের অনন্ত প্রেমের সম্পর্কস্বরূপ হিসেবে! এতে অনন্ত অস্তিত্বের প্রকাশের দ্বারা খ্রিস্টের ঈশ্বরত্বই প্রমাণিত হয়, যীশুর মুসলমানত্ব এক্ষেত্রে প্রমাণিত হয় না!
একারণে যে যোহন, যোহন ১০:৩০ পদে পিতা ও পুত্রের এক হওয়ার উদ্ধৃতি দিয়েছেন, সেই একই যোহন তাঁর সুসমাচারের একেবারে শুরুতে "ঈশ্বরের বাক্য" হিসেবে উল্লেখ করে খ্রিস্টকে স্বয়ং ঈশ্বর বলে ঘোষণা করেছেন,
"আদিতে বাক্য (i.e খ্রিস্ট) ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন।" (যোহন ১:১)
পাশাপাশি এটাও তিনি দেখিয়েছেন যে, সেই বাক্য এর দ্বারাই সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে যা প্রমাণ করে যে, পিতা ঈশ্বরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই 'ঈশ্বরের বাক্য যীশু খ্রিস্ট' সেই সিদ্ধান্তের অনুগামী এবং তাই ভূমিকা পালন (role) এর ক্ষেত্রে পিতা ও পুত্রের পর্যায় ভিন্ন ভিন্ন:
"সকলই তাঁহার দ্বারা (i.e ঈশ্বরের বাক্য যীশু খ্রিস্টের দ্বারা) হইয়াছিল, যাহা হইয়াছে, তাহার কিছুই তাঁহা ব্যতিরেকে হয় নাই।" (যোহন ১:৩)
.
.
.
🔴 অভিযোগ ৩: যীশু ঈশ্বর নন কারণ খ্রিস্টের ক্ষেত্রে 'ঈশ্বর' কথাটি রূপক - যেহেতু যিহুদী বা ইহুদিদেরকেও ঈশ্বর বলে খ্রিস্ট উল্লেখ করেছেন!
জবাব:
যোহন ১০:৩৪-৩৫ পদে বলা হয়েছে:
"যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিলেন, তোমাদের ব্যবস্থায় কি লিখিত নাই, “আমি বলিলাম, তোমরা ঈশ্বর”?
যাহাদের নিকটে ঈশ্বরের বাক্য উপস্থিত হইয়াছিল, তিনি যদি তাহাদিগকে ঈশ্বর বলিলেন—আর শাস্ত্রের খণ্ডন ত হইতে পারে না" (যোহন ১০:৩৪-৩৫ (কেরী))
এখানে বিরোধীদের অযুহাত হল এই যে, যখন খ্রিস্ট, গীতসংহিতা ৮২:৬ পদের উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন যে, যাদের কাছে ঈশ্বরের বাণী এসেছিল, তারা রূপক অর্থে 'ঈশ্বর', তখন যোহন ১০:৩০ পদের "আমি এবং পিতা এক" বক্তব্যটিও আক্ষরিক নয়, বরং রূপক!
তা ঠিক কেমন রূপক? যদি বলা হয়, সেখানে পিতা ও পুত্রের একই উদ্দেশ্যের কথা বলা হচ্ছে - সেই ভঙ্গিতে এটা রূপক, তবে আমরা প্রথমেই দেখিয়েছি যে, যদি এই একই উদ্দেশ্য এর দিকটিও ধরা হয়, তবুও খ্রিস্টের ঐশ্বরিক প্রকৃতিই প্রমাণিত হয় তাঁর অনন্ত জীবন দানের প্রভুত্বের মাধ্যমে!
এক্ষেত্রে যোহন ১০:৩৪-৩৫ পদের আগের ও পরের বক্তব্যের দিকে নজর দিন:
"যিহূদীরা আবার তাঁহাকে মারিবার জন্য পাথর তুলিল।
যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিলেন, পিতা হইতে তোমাদিগকে অনেক উত্তম কার্য্য দেখাইয়াছি, তাহার কোন্ কার্য্য প্রযুক্ত আমাকে পাথর মার?
যিহূদীরা তাঁহাকে এই উত্তর দিল, উত্তম কার্য্যের জন্য তোমাকে পাথর মারি না, *কিন্তু ঈশ্বর-নিন্দার জন্য, কারণ তুমি মানুষ হইয়া আপনাকে ঈশ্বর করিয়া তুলিতেছ, এই জন্য।"*
(যোহন ১০:৩১-৩৩ (কেরী))
খেয়াল করে দেখুন যে, যিহূদী অর্থাৎ ইহুদিরা "আমি ও পিতা এক" বলার পর যীশুকে এই বলে পাথর মারতে এল যে, "তুমি মানুষ হইয়া আপনাকে ঈশ্বর করিয়া তুলিতেছ" (যোহন ১০:৩১-৩৩ (কেরী))
অর্থাৎ, ইহুদিরা যারা শাস্ত্র সম্পর্কে পরিচিত ছিল, তারা স্পষ্টই বুঝতে পারছিল যে, খ্রিস্ট নিজের ঐশ্বরিক প্রকৃতির দাবি তুলে ধরছেন। আর একারণে তারা খ্রিস্টকে হত্যা করার জন্য পাথর মারার সিদ্ধান্ত নিল!
এমনকি যখন খ্রিস্ট গীতসংহিতা ৮২:৬ পদের উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন যে, ইহুদিরাও রূপক অর্থে ঈশ্বর - কারণ তাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য এসেছিল (যোহন ১০:৩৪ অনুযায়ী), তখন এরপরও ইহুদিরা যীশুকে ধরে মারার চেষ্টা করল - যে সম্পর্কে যোহন ১০:৩৯ পদে বলা হচ্ছে,
"তাহারা আবার তাঁহাকে ধরিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু তিনি তাহাদের হাত এড়াইয়া বাহির হইয়া গেলেন।" (যোহন ১০:৩৯ (কেরী))
এথেকে বোঝা যায় যে, ইহুদিগণ যারা শাস্ত্র সম্পর্কে পরিচিত ছিল, তারা স্পষ্টই বুঝতে পারছিল যে, যীশু "আমি ও পিতা এক" বলার মাধ্যমে নিজেকে আক্ষরিকভাবে ঈশ্বর দাবি করেছেন; আর একারণেই যীশু ইহুদিদের রূপক অর্থে ঈশ্বর হওয়ার শাস্ত্রীয় বচন মনে করিয়ে দেওয়ার পরও ইহুদিরা যীশুকে ধরে মারার চেষ্টা করতে লাগল!
এখন ইহুদিদের রূপক অর্থে ঈশ্বর বলার পরের দুটি পদ লক্ষ্যণীয়। ৩৪ নং পদ থেকে পড়লে আমরা পাই:
"যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিলেন, তোমাদের ব্যবস্থায় কি লিখিত নাই, “আমি বলিলাম, তোমরা ঈশ্বর”?
যাহাদের নিকটে ঈশ্বরের বাক্য উপস্থিত হইয়াছিল, তিনি যদি তাহাদিগকে ঈশ্বর বলিলেন—আর শাস্ত্রের খণ্ডন ত হইতে পারে না—
তবে যাঁহাকে পিতা পবিত্র করিলেন ও জগতে প্রেরণ করিলেন, তোমরা কি তাঁহাকে বল যে, তুমি ঈশ্বরনিন্দা করিতেছ, কেননা আমি বলিলাম যে, আমি ঈশ্বরের পুত্র?
আমার পিতার কার্য্য যদি না করি, তবে আমাকে বিশ্বাস করিও না।"
(যোহন ১০:৩৪-৩৭ (কেরী))
এখানে, যোহন ১০:৩৪-৩৫ নং পদে খ্রিস্ট, গীতসংহিতার ৮২:৬ পদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইহুদিদের রূপক অর্থে "ঈশ্বর" বললেন যার ভাবার্থ হল, ইহুদিদের কাছে ঈশ্বরের বচন সম্বলিত শাস্ত্র রয়েছে।
কিন্তু যোহন ১০:৩৬-৩৭ নং পদ দুটি লক্ষ্য করুন। সেখানে কি যীশু নিজেকে গীতসংহিতা ৮২:৬ পদের সাথে তুলনা করলেন?
গীতসংহিতা ৮২:৬ পদটিতে দেখুন বলা হচ্ছে, "আমিই বলিয়াছি, তোমরা ঈশ্বর, তোমরা সকলে পরাৎপরের সন্তান" (গীতসংহিতা ৮২:৬ (কেরী))
কিন্তু যোহন ১০:৩৬ পদে যীশু নিজের ক্ষেত্রে বললেন,
"যাঁহাকে পিতা পবিত্র করিলেন ও জগতে প্রেরণ করিলেন" (যোহন ১০:৩৬ (কেরী))
এখানে, যোহন ১০:৩৬ পদে খ্রিস্ট নিজের ক্ষেত্রে ἁγιάζω (hagiazó) শব্দের উল্লেখ করেছেন - যার অন্যতম দুটি অর্থ: "পবিত্র হিসেবে গণ্য করা" (treat as holy), "পবিত্র হিসেবে পৃথক করা" (set apart as holy); source - https://bit.ly/3koMNAf
তাই অন্য অনুবাদে এভাবে আমরা পাই:
"তাহলে পিতা যাকে তাঁর আপনজনরূপে পৃথক করে জগতে পাঠিয়েছেন, তাঁর বিষয়ে কী বলবে?"
(যোহন ১০:৩৬ (বাংলা সমকালীন সংস্করণ))
"what about the one whom the Father set apart as his very own and sent into the world?"
(John 10:36 (NIV))
অর্থাৎ, প্রভু যীশু - ইহুদি এবং অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টি থেকে নিজেকে পৃথকভাবে পবিত্র আকারে উপস্থাপন করছেন - যা নির্দেশ করে, ইহুদিদের যেভাবে রূপকভাবে বর্ণনা করা হচ্ছিল, যীশু তার থেকে ভিন্ন প্রকৃতির - যেহেতু, তিনি সৃষ্টির সমস্ত অপবিত্রতা হতে পৃথক!
আর এরপরই প্রভু যীশু বললেন,
"তবে ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র,’ একথা বলার জন্য কেন তোমরা আমাকে ঈশ্বর-নিন্দার অভিযোগে অভিযুক্ত করছ?"
(যোহন ১০:৩৬ (BCV))
অর্থাৎ, খ্রিস্ট ইহুদিদের এটা স্পষ্ট করে বোঝালেন যে, যখন তোমরা সামান্য সৃষ্টি হওয়ার পরও তোমাদের কাছে ঈশ্বরের বচন আসার ফলে তোমাদেরকে সম্মানার্থে রূপকভাবে "ঈশ্বর" পর্যন্ত বলা হচ্ছে, তখন যাঁর চূড়ান্ত প্রকৃতি সকল সৃষ্টির অপবিত্রতা থেকে মুক্ত ও পৃথক, সেই খ্রিস্ট যখন নিজেকে আক্ষরিক অর্থে "ঈশ্বরের পুত্র" হিসেবে দাবি করছে, তখন কেন একে তোমরা ঈশ্বর-নিন্দা মনে করছো??
আর এতে ইহুদিগণ ক্রুদ্ধ হয়ে যীশুকে আবারও ধরে মারার জন্য প্রচেষ্টা চালায়:
"তাহারা আবার তাঁহাকে ধরিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু তিনি তাহাদের হাত এড়াইয়া বাহির হইয়া গেলেন।" (যোহন ১০:৩৯ (কেরী))
.
.
.
🔴 অভিযোগ ৪: যীশু ঈশ্বর হলে মোট ঈশ্বরের সংখ্যা হবে ১৪ জন!
জবাব:
খ্রিস্টবিরোধীদের অভিযোগ হল, যোহন ১০:৩০ পদে যীশু ও পিতাকে একক ধরা হলে একই যুক্তিতে ১৪ জনকে মিলে এক ঈশ্বর ধরতে হবে। কারণ যোহন এর সুসমাচারে পিতা, যীশু এবং ১২ জন শিষ্যকে এক বলা হয়েছে:
"সেদিন তোমরা উপলব্ধি করবে যে, আমি পিতার মধ্যে বিরাজ করি, তোমরা আমার মধ্যে এবং আমি তোমাদের মধ্যে বিরাজ করি।" (যোহন ১৪:২০ (BCV))
"...আমরা যেমন এক, তারাও যেন তেমনই এক হতে পারে।" (যোহন ১৭:১১ (BCV))
বিষয়টি বোঝার জন্য একটা সহজ উদাহরণ দেখুন।
মনে করুন, আপনি একটি ঘরে প্রবেশ করলেন। এবার আপনি কি ঘর হয়ে যাবেন নাকি মানুষই থাকবেন?
অবশ্যই মানুষই থাকবেন।
তাই ঘরের মধ্যে থাকার পরও আপনার নিজস্ব সত্ত্বা পৃথকভাবে বজায় থাকবে।
একইভাবে যখন খ্রিস্টের শিষ্যরা ঈশ্বরের সঙ্গে এক হবে, সেই এক হওয়ার পরও শিষ্যদের নিজস্ব সত্ত্বা পৃথকভাবেই বজায় থাকবে। কারণ শিষ্যরা হলেন সৃষ্ট সত্ত্বা।
কিন্তু প্রভু যীশু যখন পিতার সঙ্গে এক হয়ে বিদ্যমান রয়েছেন, তখন এই এক হওয়া শিষ্যদের থেকে ভিন্নতর। কারণ প্রভু যীশু স্বয়ং ঈশ্বরের বাক্য বা কালাম - যা ঈশ্বরের সত্ত্বার সঙ্গেই একীভূত হওয়ায় তা স্বয়ং ঐশ্বরিক:
"আদিতে বাক্য ছিলেন, সেই বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন এবং বাক্যই ঈশ্বর ছিলেন।" (যোহন ১:১ (BCV))
এক্ষেত্রে তাই যদি আমরা ভালভাবে খেয়াল করি, তবে দেখব যে, যোহন ১৭:১১ পদে শিষ্যদের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে,
"আমরা যেমন এক, তারাও যেন তেমনই এক হতে পারে।" (যোহন ১৭:১১ (BCV))
অর্থাৎ এক্ষেত্রে সহভাগিতায় এক হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। যেমনভাবে পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু অনন্তকালীন ধরে সহভাগিতা করেন, তেমনিভাবে এক ত্রিত্ববাদী ঈশ্বর সৃষ্ট মানুষের সঙ্গেও এরূপ স্বর্গীয় সহভাগিতা করতে চান। একারণে যোহন তাঁর পত্রে ব্যাখ্যা করে বলছেন,
"আমরা যা দেখেছি ও শুনেছি, তাই তোমাদের কাছে ঘোষণা করছি, যেন তোমরা আমাদের সঙ্গে সহভাগিতা স্থাপন করতে পারো। আর আমাদের সহভাগিতা পিতা ও তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে।" (১ যোহন ১:৩ (BCV))
"তাঁর সঙ্গে আমাদের সহভাগিতা আছে, এমন দাবি করেও যদি অন্ধকারে চলি, তবে আমরা মিথ্যা কথা বলি, সত্যে জীবনযাপন করি না। কিন্তু তিনি যেমন জ্যোতিতে বিদ্যমান, আমরা যদি তেমনই জ্যোতিতে বিচরণ করি, তাহলে পরস্পরের সঙ্গে আমাদের সহভাগিতা আছে এবং তাঁর পুত্র যীশুর রক্ত সব পাপ থেকে আমাদের শুচিশুদ্ধ করে।"
(১ যোহন ১:৬-৭ (BCV))
অর্থাৎ, প্রকৃতপক্ষে এখানে স্বর্গীয় সহভাগিতার কথা বোঝানো হয়েছে - যেখানে পিতা ঈশ্বর ও পুত্র খ্রিস্টের মধ্যে যেমন আধ্যাত্মিক সম্পর্ক, অনন্ত প্রেমের সম্পর্ক বিরাজমান, তেমনিভাবে অনন্ত জীবন লাভের পর খ্রিস্টের কেবল ১২ জন শিষ্যই নয়, বরং পরিত্রাণপ্রাপ্ত সকল বিশ্বাসীই সেই অনন্ত প্রেমযুক্ত ঐশ্বরিক সহভাগিতার অন্তর্ভুক্ত হবে!
.
.
=======================================
MyBeloved Yashu
0 coment rios: