বাইবেলকে কুরআন কি বিকৃত বলে না কি সংরক্ষিত বলে সত্যায়িত করে?
>>>>>দানিয়েল স্টিফেন।
মুসলিমরা প্রায়ই দাবী করেন বাইবেল বিকৃত হয়ে গিয়েছে। এই দাবী করতে গিয়ে তারা নিজেরাই যে কুরআনের বিরূদ্ধাচারণ করেন এটাও উপলব্ধি করতে পারেন না। কুরআন এবং হাদিস কখনোই বলেনা বাইবেল(কুরআনের ভাষায় তৌরাত ও ইঞ্জিল) বিকৃত বরং কুরআন বারবার বাইবেলকে সত্যায়ন করেছে। বরং কুরআন ঘোষণা করছে-
"সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ। তাঁর বাণী পরিবর্তন করার কেউ নেই। আর তিনি হলেন সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।"
(QS. Al-An'am 6: Verse 115)
এখানে মুহাম্মদ কুরআনের দ্বারা বলছেন, আল্লাহর বাণী পরিবর্তন হয় না। কিন্তু মুসলিমরা বলবে, এটা কুরআনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। বাইবেলের ক্ষেত্রে বলা হয় নি। মুসলিমদের এই কথা আমলে নিলে এটা মানতে হবে যে, আল্লাহ পূর্বের কিতাবসমূহ সংরক্ষণে অক্ষম ছিলেন বা গাফেল ছিলেন কিন্তু কিন্তু কুরআন নাজিলের সময় সক্ষমতা অর্জন করেছেন। এরকম আকিদা কিভাবে সৃষ্টিকর্তার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে তা যে কেউই বিবেচনা করে দেখবেন।
এখানে নাজিলের ক্রমানুসারে এ সংক্রান্ত কুরআনের আয়াতসমূহ দেয়া হল। এতে পূর্ববর্তী কিতাব সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্য আমাদের পরিস্কার হবে।কারণ এই ধারাবাহিকতার গুরুত্ব আয়াতের মাধ্যমে কুরআনে ব্যক্ত করা হয়েছে-
Al-Isra' ১৭:১০৬
Bengali - Bayaan Foundation
আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে।
নাজিল অনুসারে কুরআনের আয়াত দিয়ে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করার মূল কারণ হোল এই ধারাবাহিকতা থেকে আমরা বাইবেল বিকৃতি হয়েছে কি না এ ব্যাপারে কুরআনের সর্বশেষ মতামত জানতে পারব। অর্থাৎ সর্বশেষ নাজিল করা আয়াতগুলো যদি বাইবেলকে অবিকৃত হিসাবে স্বীকৃতি দেয় তাহলে মুসলমানদের বাইবেল বিকৃতির দাবী ভিত্তিহীন হয়ে পড়বে। এই নিবন্দ্ধে আলোচিত সুরাগুলোর নাজিলের ক্রম নিম্নে দেয়া হল-
সুরার নাম নাজিলের ক্রম বর্তমান কুরআনের ক্রম
ইউনুস ৫১ ১০
আল-বাকারা ৮৭ ২
আলে ইমরান ৮৯ ৩
আন-নিসা ৯২ ৪
আল-মায়েদা ১১২ ৫
এখানে এই আয়াতের ধারাবাহিকতাসমূহ নেয়া হয়েছে এই ওয়েবসাইট থেকে যা মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত -
https://tanzil.net/docs/revelation_order
১) "আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ পোষণ কর তাহলে তোমার পূর্বে থেকে যারা কিতাব পাঠ করে আসছে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রকৃত সত্য এসেছে। কাজেই তুমি কক্ষনো সন্দেহ পোষণকারীদের মধ্যে শামিল হয়ো না।"
(QS. Yunus 10: Verse 94)
এই আয়াতে মুহাম্মদকে কুরআনের প্রতি সন্দেহ থাকলে পূর্ববর্তী অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রীষ্টিয়ানদের কাছে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করতে বলা হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে সন্দেহ করতে মানা করা হয়েছে। প্রশ্ন হল, হযরত মুহাম্মদকে কেন মুসলিমদের ভাষায় যারা কিতাব বিকৃতি করেছে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে যেতে বলা হয়েছে যদি না কুরআন এই কিতাবকে অবিকৃত বলে স্বীকার করবে?
২) "তোমরা কি এই আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? অথচ তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত ও বুঝার পর জেনে শুনে তা বিকৃত করত।"
(QS. Al-Baqarah 2: Verse 75)
"সুতরাং অভিসম্পাত তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং নিকৃষ্ট মূল্য লাভের জন্য বলে এটা আল্লাহর নিকট হতে, তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য তাদের শাস্তি অবধারিত এবং তারা যা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি রয়েছে।"
(QS. Al-Baqarah 2: Verse 79)
এই আয়াত দুটির মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ (একদল, সবাই নয়) বাণী শুনে বিকৃত করত। অর্থাৎ মূল কিতাব পরিবর্তনের বিষয়ে এখানে বলা হচ্ছে না।
৩) এরপর কুরআনকে পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সমর্থক বলা হয়েছে। অর্থাৎ এগুলোকে অথেন্টিক বলে কুরআনে স্বীকার করা হয়েছে।⤵️
"আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তাতে ঈমান আন’; তারা বলে, ‘আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে আমরা বিশ্বাস করি’। অথচ পরবর্তী কিতাবকে (কুরআনকে) তারা প্রত্যাখ্যান করে, যদিও তা সত্য এবং যা তাদের নিকট আছে তার সমর্থক। বল, ‘যদি তোমরা বিশ্বাসী ছিলে তবে কেন তোমরা পূর্বে নাবীদেরকে হত্যা করেছিলে’?"
(QS. Al-Baqarah 2: Verse 91)
"বল, ‘যে ব্যক্তি জিবরাঈলের শত্রু হয়েছে, (সে রাগে মরে যাক) কেননা সে তো আল্লাহর হুকুমে তোমার অন্তরে কুরআন পৌঁছিয়ে দিয়েছে, যা এর পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং যাতে ঈমানদারদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ রয়েছে’।"
(QS. Al-Baqarah 2: Verse 97)
"এবং যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে রসূল আসল যে এদের নিকট যে কিতাব রয়েছে, সেই কিতাবের সমর্থক, তখন যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের একদল আল্লাহর কিতাবকে পিঠের পিছনে ফেলে দিল, যেন তারা কিছুই জানে না।"
(QS. Al-Baqarah 2: Verse 101)
৪) এরপর আবার একদলের কথা বলা হচ্ছে যারা জিহবা দ্বারা অর্থাৎ কিতাবকে ভুল ব্যাখ্যা করে বিকৃত করত যা আসলে কিতাবে নাই। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েও লিখিত কিতাব বিকৃত হয়েছে এটা বলা হচ্ছে না। ⤵️
"এদের মধ্যে একদল আছে যারা কিতাবকে জিহবা দ্বারা বিকৃত করে যাতে তোমরা তাকে কিতাবের অংশ বলে মনে কর, মূলতঃ তা কিতাবের অংশ নয় এবং তারা বলে, ‘এটা আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ, বস্তুতঃ তা আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ নয়, তারা জেনে শুনে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে।"
(QS. Ali 'Imran 3: Verse 78)
"ইয়াহূদীদের কতক লোক কথাকে প্রকৃত স্থান থেকে সরিয়ে বিকৃত করে এবং বলে, ‘আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম’ এবং শুনেও না শোনার মত আর নিজেদের জিহবা কুঞ্চিত ক’রে এবং দ্বীনের প্রতি দোষারোপ ক’রে বলে, ‘রাইনা’ (আমাদের রাখাল)। কিন্তু তারা যদি বলত ‘আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, শোন এবং আমাদের প্রতি লক্ষ্য কর, তবে তা তাদের জন্য উত্তম এবং সঙ্গত হত, কিন্তু তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত করেছেন, তারা স্বল্পসংখ্যক ব্যতীত ঈমান আনবে না।"
(QS. An-Nisa' 4: Verse 46)
৫) আবারও পূর্ববর্তী কিতাবগুলোকে কুরআনের সমর্থক হিসাবে অথন্টিক বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ধারাবাহিক বর্ণনায় এটি শেষ আয়াত যা দিয়ে কিতাবীদের হাতে থাকা বাইবেলকে পুনরায় সমর্থন করা হয়েছে। আর সপ্তম শতাব্দী ও তারও আগের বাইবেলই আমরা এখনো পড়ছি যাকে কুরআন পূর্ববর্তীদের হাতে থাকা অবিকৃত কিতাব হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ⤵️
"ওহে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, আমি যা নাযিল করেছি, তার উপর তোমরা ঈমান আন, যা তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থক আমি তোমাদের মুখগুলোকে বিকৃত করে সেগুলোকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে দেয়ার পূর্বে (ঈমান আন), কিংবা শনিবারওয়ালাদেরকে যেমন অভিসম্পাত করেছিলাম, এদেরকেও তেমনি অভিসম্পাত করার পূর্বে। বস্তুতঃ আল্লাহর হুকুম কার্যকরী হয়েই থাকে।"
(QS. An-Nisa' 4: Verse 47)
৬) এবার আমরা ইহুদীদের উদ্দেশ্য করে একটা আয়াত দেখব যা দেখলে মনে হতে পারে যে, তারা তাদের কিতাব(তাওরাত) বিকৃত করেছিল-
"তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে লা‘নাত করেছি আর তাদের হৃদয়কে আরো শক্ত করে দিয়েছি, তারা শব্দগুলোকে স্বস্থান থেকে বিচ্যুত করেছিল এবং তাদেরকে দেয়া উপদেশের বড় অংশ তারা ভুলে গিয়েছিল। তুমি অল্প সংখ্যক ছাড়া তাদেরকে সর্বদা বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে। কাজেই তাদেরকে ক্ষমা কর, মার্জনা কর, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।"
(QS. Al-Ma'idah 5: Verse 13)
কিন্তু মূলত এখানে লিখিত কিতাব নয় বরং মৌখিক বিকৃতির কথা বলা হয়েছে। কারণ ইবনে কাসিরও তাঁর তাফসিরে লিখিত বিকৃতির অভিযোগ আনেননি কারণ তিনিও অনুধাবন করেছেন এখানে আরবী ভাষায় লিখিত নয় বরং মৌখিক বিকৃতির কথাই বলা হয়েছে। আমরা এই আয়াতের তাফসিরের উল্লেখযোগ্য অংশটুকু দেখি-
"তারা ওয়াজ-নসীহতে মোটেই উপকৃত হলো না, তাদের বিবেক-বুদ্ধি বিগড়ে গেল, আল্লাহর কথাকে তারা হেরফের করতে লাগলো এবং ভুল ও মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে লাগলো। কালামুল্লাহর প্রকৃত ভাবার্থ যা হবে তা পরিবর্তন করে দিয়ে অন্য ভাবার্থ বুঝতে ও বুঝাতে লাগলো এবং আল্লাহর নাম নিয়ে ঐসব মাসআলা বর্ণনা করতে লাগলো যা আল্লাহ বলেননি।"
----সুরা ৫, আয়াত ১৩ এর তাফসির, ইবনে কাসির।
এরপরের আয়াতটি খ্রীষ্টিয়ানদের সম্পর্কে। এখানেও "উপদেশ ভুলে যাওয়া" এর অভিযোগ করা হয়েছে। লিখিত কিতাব বিকৃতির কোন অভিযোগ করা হয় নি।
"আর যারা বলে ‘‘আমরা খ্রীস্টান’’ আমি তাদের হতেও অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু তারা তাদের প্রতি উপদেশের একটা বড় অংশ ভুলে গিয়েছিল। কাজেই আমি কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ জিইয়ে দিয়েছি। তারা যা করছিল অচিরেই আল্লাহ তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন।"
(QS. Al-Ma'idah 5: Verse 14)
৭) ৬ নং পয়েন্টে যে মৌখিক বিকৃতির প্রসংগ এসেছিল সেই একই সুরার(আল মায়েদা) এর বেশ পরের একটা আয়াতে বিষয়টিকে আরো পরিস্কারভাবে "মৌখিক বিকৃতির" বিষয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত হয় যে পূর্বের ১৩ নং আয়াতে লিখিত নয় বরং মৌখিক বিকৃতির কথাই বলা হয়েছে-
"হে রসূল! কুফরীর ব্যাপারে তাদের প্রতিযোগিতা যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়, যারা মুখে বলে ঈমান এনেছি কিন্তু তাদের অন্তর ঈমান আনেনি। আর যারা ইয়াহূদী, তারা মিথ্যা কথা শুনতে বিশেষ পারদর্শী, তারা তোমার কথাগুলো অন্য সম্প্রদায়ের স্বার্থে কান পেতে শোনে যারা তোমার নিকট (কখনো) আসেনি, এরা আল্লাহর কিতাবের শব্দগুলোকে প্রকৃত অর্থ হতে বিকৃত করে। তারা বলে, তোমরা এ রকম নির্দেশপ্রাপ্ত হলে মানবে, আর তা না হলে বর্জন করবে। বস্তুত আল্লাহই যাকে ফিতনায় ফেলতে চান, তার জন্য আল্লাহর কাছে তোমার কিছুই করার নেই। ওরা হল সেই লোক, যাদের অন্তরাত্মাকে আল্লাহ পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য দুনিয়াতে আছে লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য আখেরাতে আছে মহা শাস্তি।"
(QS. Al-Ma'idah 5: Verse 41)
৮) "এরা তোমাকে কীভাবে বিচারক মানতে পারে যখন তাদের মাঝেই তাওরাত বিদ্যমান আছে, তার ভিতর আল্লাহর বিধান আছে, এর পরেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, বস্তুত তারা মু’মিনই নয়।"
(QS. Al-Ma'idah 5: Verse 43)
অব্যবহিত পূর্বে আলোচিত সুরা মায়েদার ৪১ নং আয়াত ও এরও পূর্বের ১৩ আয়াতের পর এই আয়াতে (মায়েদা, ৪৩) পরিস্কারভাবে তৌরাতের মাঝে থাকা আল্লাহর বিধানের প্রতি ইংগিত করে এই কিতাবকে অবিকৃত ও নির্ভরযোগ্য বলে কুরআন আবার ব্যক্ত করছে।
আমরা উপরের আয়াতের (মায়েদা ৪৩) পরের আয়াতে আরো গৌরবজনকভাবে 'সঠিক পথের দিশা ও আলো' হিসাবে তাওরাতকে অবিহিত করা হয়েছে। দরবেশ ও আলিমরা এই কিতাবের রক্ষক ও সাক্ষী হিসাবে ছিলেন এই কথাও এখানে বলা হয়েছে। পুরো বিষয়টিতে তাওরাতের যোগ্য সংরক্ষণ ও মর্যাদার কথা শক্তিশালীভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে-
"আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম, তাতে ছিল সঠিক পথের দিশা ও আলো। অনুগত নাবীগণ এর দ্বারা ইয়াহূদীদেরকে ফায়সালা দিত। দরবেশ ও আলিমরাও (তাই করত) কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল আর তারা ছিল এর সাক্ষী। কাজেই মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর, আর আমার আয়াতকে নগণ্য মূল্যে বিক্রয় করো না। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফির।"
(QS. Al-Ma'idah 5: Verse 44)
উপরের আয়াতের এক আয়াত পরেই সুরা মায়েদার ৪৬ নং আয়াতে ইঞ্জিলের প্রশংসা করে এই কিতাবকে তাওরাতের সত্যতার প্রতিপাদনকারী, সত্য পথের দিশা ও আলো হিসাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইঞ্জিলের বিশুদ্ধতা ও সত্যতাকে অবলীলায় স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। ৩ নং পয়েন্টে আলোচিত ২ নং সুরা, সুরা বাকারার ১০১ নং আয়াতে আমরা দেখতে পাই ইহুদী খ্রীষ্টিয়ানদের হাতে থাকা কিতাবকে অর্থাৎ বাইবেলের সমর্থক হিসাবে কুরআনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং এই আয়াত আমাদের মাঝে বিদ্যমান বর্তমান বাইবেলকেই নির্দেশ করে, কারণ মুহাম্মদেরও বহুপূর্বের মূল হিব্রু পুরাতন নিয়ম ও গ্রীক নতুন নিয়মের কপি আমাদের মাঝে বিদ্যমান।
"তাদের পশ্চাতে মারইয়াম পুত্র ‘ঈসাকে পাঠিয়েছিলাম তাদের সামনে তাওরাত কিতাবের যা কিছু ছিল তার সত্যতা প্রতিপাদনকারী হিসেবে। তাকে ইঞ্জিল দিয়েছিলাম, যাতে ছিল সত্য পথের দিশা ও আলো, এবং ইহা পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতকে সত্যায়নকারী এবং মুত্তাকীদের জন্য সঠিক পথের দিশা ও নাসীহাত।"
(QS. Al-Ma'idah 5: Verse 46)
৯) "ইঞ্জিলের অনুসারীগণ যেন আল্লাহ তাতে যে বিধান দিয়েছেন তদনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই ফাসিক।"
(QS. Al-Ma'idah 5: Verse 47)
ইঞ্জিলের অনুসারীদের(খ্রীষ্টিয়ানদের) ইঞ্জিলের বিধান অনুসারে বিচার ফয়সালা করার কথাই এখানে বলা হয়েছে, কিতাব বিকৃত হয়েছে বলে কুরআনের লেখক মনে করলে এই বক্তব্য আসতে পারে না।
১০) "আর আমি সত্য বিধানসহ তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী ও সংরক্ষক। কাজেই মানুষদের মধ্যে বিচার ফায়সালা কর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে, আর তোমার কাছে যে সত্যবিধান এসেছে তা ছেড়ে দিয়ে তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করো না। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি শরীয়াত ও একটি কর্মপথ নির্ধারণ করেছি। আল্লাহ ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে এক উম্মাত করতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন সেই ব্যাপারে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান। কাজেই তোমরা সৎকর্মে অগ্রগামী হও, তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকেই। অতঃপর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছিলে, সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।"
(QS. Al-Ma'idah 5: Verse 48)
উপরের আয়াতটি পুর্ববর্তী কিতাব(তাওরাত ও ইঞ্জিল) সংক্রান্ত কুরআনের সর্বশেষ আয়াত। এই আয়াতে কুরআনকে শুধু এই কিতাবসমূহের সত্যয়নকারীই শুধু নয়, সংরক্ষক হিসাবেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কুরআন যে কিতাবসমূহের সংরক্ষক বলে কুরআনেরই শেষ দিকে বলা হয়েছে, সেই সব কিতাবকে বিকৃত বলা কুরআন ও আল্লাহকে অবিশ্বাসের শামিল বলে সাধারণভাবেই বলা যায়।
হাদিসে কি মুহাম্মদ কোথায়ও তাওরাত ও ইঞ্জিলকে বিকৃত বলেছেন?
কুরআনকে ইসলামের নবীর চেয়ে ভাল কোন মুসলিম কখনও বুঝতে পারবেন না। সেই তিনি কি কখনও বাইবেলের বিরূদ্ধে এই অভিযোগ এনেছিলেন। এর সহজ উত্তর হল, না তিনি কখনও এমন অভিযোগ আনেননি। তাহলে পরবর্তী মুসলিমরা এই অভিযোগ কেন বার বার নিয়ে আসছে? এর সহজ উত্তর হল, বাইবেলকে অবিকৃত ও সত্য বলে স্বীকার করে নিলে কুরআনের কোন গ্রহণযোগ্যতাই থাকেনা। একারণেই বাইবেলকে বিকৃত বলার মাধ্যমে কুরআন ও আল্লাহকে তুচ্ছ করে মুসলিমরা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে প্রয়াস পায়। মুহাম্মদ একটি হাদিসেও তাওরাতের উপর বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করেছেন-
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা একদল ইয়াহুদী এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘কুফ্’ নামক উপত্যকায় যেতে আবেদন জানালো। তিনি তাদের এক পাঠাগারে উপস্থিত হলেন। তারা বললো, হে আবূল ক্বাসিম! আমাদের এক ব্যাক্তি জনৈকা মহিলার সঙ্গে যেনা করেছে। সুতরাং আপনি এদের সম্পর্কে ফায়সালা দিন। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য একটি বালিশ পেতে দিলো। তিনি তাতে বসে তাদের বললেনঃ তোমরা একখানি তাওরাত নিয়ে এসো। তাওরাত নিয়ে আসা হলে তিনি তাঁর নীচের বিছানো বালিশ টেনে নিয়ে তার উপর তাওরাত রাখলেন এবং বললেনঃ আমি তোমার প্রতি এবং তোমায় যিনি নাযিল করেছেন তার প্রতি ঈমান এনেছি। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যকার অধিক জ্ঞানী ব্যাক্তিকে নিয়ে এসো। অতএব এক যুবককে আনা হলো। অতঃপর তিনি (ইবনু ‘উমার) নাফি’ হতে মালিক সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ ‘রজম’ সম্পর্কিত ঘটনা বর্ণনা করেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৪৯
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
সুতরাং মুসলিমদের নবী যে কিতাবের উপর ঈমান এনেছেন সেই কিতাবকে মুসলিমরা কিভাবে বিকৃত বলতে পারে? তারা বাইবেলকে বিকৃত বললে কুরআন, ও মুহাম্মদের বিপরীতে অবস্থান করবে আর বাইবেলকে স্বীকার করলে কুরআন মিথ্যা হয়ে যায়। এ এক উভয়সংকট বটে।
0 coment rios: