Friday, June 10, 2022

স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা রাখত?

লেখকঃ পাষ্টর জনসন সরকার।

সমালোচকের দাবিঃ ‘‘যীশুর শেষ বাক্য থেকে জানা যায় যে, স্ত্রীও স্বামীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা রাখত। কিন্তু ইহুদি আইন বা তৌরাতের বিধান অনুসারে স্বামীকে তালাক দেওয়ার কোনো ক্ষমতা স্ত্রীর ছিল না। তবে রোমান আইনে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারত। মার্কের লেখক ভুলক্রমে ভেবেছেন যে, ইহুদি আইনও বোধহয় রোমান আইনের মতই ছিল। এটা প্রমাণ করছে যে, মার্কের ইঞ্জিলের লেখক ফিলিস্তিনের অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। কোনো ফিলিস্তিনি ইহুদির পক্ষে এরূপ ভুল করা সম্ভব নয়।’’

জবাবঃ

প্রথমত আমরা দেখব যে সুসমাচারে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে,

“তখন ফরীশীরা নিকটে আসিয়া পরীক্ষা করিবার জন্য তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, স্ত্রী পরিত্যাগ করা কি পুরুষের পক্ষে বিধেয়? তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, মোশি তোমাদিগকে কি আজ্ঞা দিয়াছেন? তাহারা কহিল, ত্যাগপত্র লিখিয়া আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিবার অনুমতি মোশি দিয়াছেন।-মার্ক১০:২-৪;

এখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত  রয়েছে যে ইহুদি আইনে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। এখানে সুসমাচার লেখক কোন ভুল করে নি।

দ্বিতীয়ত ইহুদিদের সাথে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের কথাবার্তার পরে শিষ্যরা যখন প্রভুকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তখন প্রভু তার শিষ্যদের বলেন,  

পরে শিষ্যেরা গৃহে আবার সেই বিষয় তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্য স্ত্রীকে বিবাহ করে, সে তাহার বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে; আর স্ত্রী যদি আপন স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়া আর একজনকে বিবাহ করে, তবে সেও ব্যভিচার করে।মার্ক১০:১০-১২;

এখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, যে কেহ” এখানে তিনি ইহুদিদের বিষয়ে নয় বরং সমগ্র মানব জাতির বিষয়ে বলেছেন। আর প্রভু যীশু নূতন নিয়ম এনেছেন আর তিনি তার শিষ্যদের তার আইন সম্পর্কে জানাচ্ছিলেন, কারন তার আইন এবং শিক্ষা শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য ছিল না বরং সমগ্র মানব জাতির জন্য। তাই এখানে কোন ভূল নেই।

ইহুদি জাতি সেই সময়ে রোমানের দ্বারা পরিচালিত হতো আর রোমানদের নিয়মে স্ত্রীও স্বামাকে তালাক দিতে পারত। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। এমন কি ইহুদিদের নিয়মেও স্ত্রী তার স্বামীকে রাব্বানিক আদালতে মামলার মধ্যমে তালাক দিতে পারেঃ

Halakha (Jewish law) allows for divorce. The document of divorce is termed a get. The final divorce ceremony involves the husband giving the get document into the hand of the wife or her agent, but the wife may sue in rabbinical court to initiate the divorce.[1]

মুসলিম আইনে স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে তালাক দিতে পারে না, তাই বলে কি মুসলিম সমাজে স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে তালাক দিচ্ছে না? অবশ্যই দিচ্ছে!!! এমন কি বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শায়খ সালিহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ তার এক ফতোয়ায় উল্লেখ করেছেন, ‘যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রী থেকে ছয় মাসের বেশি দূরে থাকে আর তার স্ত্রী তাকে ঘরে ফেরার জন্য অনুরোধ করে; তাহলে তার জন্য ঘরে ফিরে আসা বাধ্যতামূলক।

স্বামী যদি এমন কারণে সফরে থাকে যা তার জন্য ফরজ; যেমন- ফরজ হজ পালন বা বাধ্যতামূলক জেহাদে যোগদান, কিংবা (কোনো কারণে) তার জন্য ঘরে ফিরে আসা সম্ভব না হয়, তবে সেক্ষেত্রে (স্বামীর জন্য) ঘরে ফিরে আসা আবশ্যক নয়।

যদি বৈধ কোনো কারণ ছাড়া স্বামী ঘরে ফিরে আসতে অস্বীকার করে আর তার স্ত্রী খুলা (তালাক) দাবি করে, তবে কাজী/বিচারক স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তাদেরকে পৃথক করে দেবে। কারণ এই ব্যক্তি (স্বামী) তার স্ত্রীকে অত্যাবশ্যকীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। (আল-মুলাখ-খাস আল-ফিকহি ২/২৯০)[2]


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: