Tuesday, December 31, 2019

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ছাড়া কেউ কি স্বর্গে যান নাই?

লেখকঃ মি. জনসন সরকার।
সমালোচকদের দাবিঃ ঈসা মসীহ বলেছেন, “আর স্বর্গে কেহ ঊঠে নাই; কেবল যিনি স্বর্গ হইতে নামিয়াছেন, সেই মনুষ্যপুত্র যিনি স্বর্গে থেকেন।”-যোহন (৩:১৩;)
একটি ভুল; কারন হনোক(ইদরীস) এবং এলিও (আল-ইয়াসা) উভয়ে স্বর্গে গমন করেছেন(আদিপুস্তক ৫:২৩-২৪; ২রাজাবলি ২:১-১১;) অর্থাৎ পবিত্র আত্মা একেবারেই অজ্ঞ ছিলন।
সমালোচকদের অভিযোগের যৌক্তিক জাবাবঃ
পবিত্র বাইবেল কখনই এমন শিক্ষা দেয় না যে স্বর্গের মাত্র একটি স্তর রয়েছে, যদিও সমালোচকেরা নিজেরাই এমন বিভ্রান্তকর মন্তব্য করে বসেছেন। প্রেরিত পৌল এই বিষয়ে বলেছেন , “আমি  খ্রীষ্টের আশ্রিত এক ব্যক্তিকে জানি , চৌদ্দ বৎসর হইল- সশরীরে কি না, জানি না; অশরীরে কি না, জানি না; ঈশ্বর জানেন-এমন বক্তি তৃতীয় স্বর্গ পর্যন্ত নীত হইয়াছিল। আর এমন এক ব্যক্তির বিষয়ে আমি জানি -সশরীরে কি অশরীরে, তাহা জানিনা , ঈশ্বর জানেন- সে পরমদেশে নীত হইয়া অকথনীয় কথা শুনিয়াছিল, তাহা বলা মানুষের বিধেয় নয়।” - ২করিন্থীয় ১২:-;
প্রেরিত পৌলের কথায় এটা সুস্পষ্টরূপে প্রমানিত হয় যে, স্বর্গের অনেক স্তর রয়েছে তার মধ্যে একটি  হলো παραδείσ (পেরাডাইসো),যার বাংলা অনুবাদ হলোঃ “পরমদেশ”।
ক্রুশবিদ্ধ  হওয়ার সময়ে একজন দস্যু প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করেছিল, আর সেই  ব্যক্তি প্রভুর কাছে অনুরোধ করেছিল, যীশু আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন।[লূক ২৩:৪২]
যেহেতু সেই দস্যু পাপি হওয়া সত্বেও তার মৃত্যুর পূর্বে, প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করেছিল তাই প্রভু তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে তার পাপা ক্ষমা করলেন এবং তাকে বললেন, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সহিত উপস্থিত হইবে।[লূক ২৩:৪৩]
অনেকে মনে করে থাকেন যীশু তাকে সেই দিনই পিতা ঈশ্বরের কাছে নিয়ে গেছিলেন। কিন্তু পবিত্র বাইবেল থেকে জানা যায় প্রভু যীশু সেই দিন পিতার নিকটে  যান নাই। কারন মরিয়ম যখন প্রভু যীশুকে স্পর্শ করতে গেলেন তাখন প্রভু যীশু তাকে বললেন, আমাকে স্পর্শ করিও না, কেননা এখনও আমি উর্ধে পিতার নিকটে যাই নাই।[যোহন ২০:১৭]
প্রভু যীশু তাকে পরমদেশের প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন,  কিন্তু যেখানে সর্বশক্তিমান পিতা ঈশ্বর থাকেন[প্রকাশিত বাক্য ;-১১;] সেখানকার নয় কারন সেটি সমস্ত স্বর্গের উর্ধে পরমদেশের গ্রীক শব্দ হলো: παραδείσ (পেরাডাইসো) যা ইংরেজি অনুবাদে, “পেরাডাইসবলে। কিন্তু বাইবেলে লেখা আছে স্বর্গের অনেক স্তর রয়েছে, যিনি নামিয়াছিলেন, তিনিই সকল স্বর্গের উর্দ্ধে উঠিয়াছেন, যেন সকলই পূরণ করেন। (ইফিষীয় ;১০;) এখানে স্বর্গের জন্য যে গ্রীক শব্দ ব্যবহৃত হয়ছে তা হলঃ ορανν [আওরাএনন] যা বহুবচনে পবিত্র বাইবেলে আমাদের পরিস্কার ভাবে জানায় স্বর্গের স্তরের কথা। যেমনঃ
“ভাল, আমাদের এক মহাযাজককে পাইয়াছি, যিনি স্বর্গ সকল দিয়া গমন করিয়াছেন, তিনি যীশু, ঈশ্বরের পুত্র।” - ইব্রীয় :১৪;
Seeing then that we have a great high priest, that is passed into the heavens, Jesus the Son of God, let us hold fast [our] profession.” – Hebrews 4:14; King James Version

পরমদেশটা আসলে কোথায়?
এর ব্যাখ্যা প্রভু যীশু সয়ং দিয়েছেন। তিনি সেই ধনী ব্যক্তি এবং দরিদ্র লাসারের গল্পের দ্বারা তা উপস্থাপন করেছিলন। তিনি বলেছলিনে সেই দরিদ্র ব্যক্তি লাসারকে মৃত্যুর পর, স্বর্গদূতগণ তাহাকে লইয়া অব্রাহামের কোলে বাসাইলেন।[লূক ১৬;২২] এবং সেই ধনবান ব্যক্তি দূরে অব্রাহামের কোলে লাসারকে দেখতে পাচ্ছিল(লূক ২৬:২৩)
কিন্তু সেই ধনি ব্যক্তির ক্ষমতা ছিলনা সেখানে যাবার। কারন সেই স্থানে এক গভীর খাদ বা গহব্বর আছে যার জন্য অব্রাহামের পাশের লোক সেই ধনবানের যাতনাময় স্থানে যেতে পারবেনা এবং ধনবানের স্থান থেকেও কেউ অব্রাহামের স্থানে যেতে পারবেনা(লূক ১৬:২৬) এই অব্রাহামের কোলকে’ পরমদেশ বলা হয়। কারন মৃত্যুর পরে ভাল আত্নারা সেখানেই স্থান পায়। কিন্তু মন্দ লোকের আত্নারা সেই যাতনাময় স্থানে স্থান পায় এবং কষ্ট ভোগ করে [লূক ২৬:২৪]
যেখানে তিনি মৃত্যুর পর ৪০ দিন ছিলেন এবং তিনি তার পূর্বের লোকেদের কাছে [*অর্থাৎ যারা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পৃথিবীতে আগমনের পূর্বেই মর্ত্যু বরন করেছিলেন তাদের কাছে]  পরিত্রানের সুসমাচার প্রচারিত করেছিলেন,
কারন খ্রীষ্টও একবার পাপ সমূহের জন্য দুঃখভোগ করিয়াছিলেন সেই ধার্মিক ব্যক্তি অধার্মিকদের নিমিত্ত- যেন আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যান। তিনি মাংসে হত, কিন্তু আত্মায় জীবিত  হইলেন। আবার আত্মাতে গমন করিয়া কারাবদ্ধ সেই আত্মাদের কাছে ঘোষনা করিলেন,”- ১ পিতর ৩:১৮-১৯;  

পবিত্র বাইবেল এটা সুস্পষ্ট ভাবে বলেছে যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সকল স্বর্গ অতিক্রম করে উপরে পিতার কাছে গিয়েছেন যেখানে তিনি থাকেন। সেখানে  হনোক , এলিও যান নি বরং তারা স্বর্গের কোন স্তরে অবস্থান করছেন করন একমাত্র পুত্রই সকল স্বর্গের উপরে পিতার দক্ষিন পাশে উপবিষ্ট রয়েছেন [প্রেরিত ৭:৫৫-৫৬; রোমীয় ৮:৩৪;মার্ক ১৪:৬২;]। তাই পবিত্র আত্মা ভুল লেখেননি বরং সমালোচকেরা যে পবিত্র বাইবেল সম্পর্কে অজ্ঞ সেটা প্রামানিত হলো। 

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.